Ignite the reading passion in kids this summer & "Make Reading Cool Again". Use CHILDREN40 to get exciting discounts on children's books.
Ignite the reading passion in kids this summer & "Make Reading Cool Again". Use CHILDREN40 to get exciting discounts on children's books.

Rimi Ghosh

Tragedy Others

3.7  

Rimi Ghosh

Tragedy Others

সার্থপর

সার্থপর

4 mins
637


পারমিতা: হ্যাঁ আমার বাবার দেওয়া আদরের নাম আমার পারমিতা। তখন আমি সদ্য এই পৃথিবীর আলো দেখলাম। মা - বাবার একমাত্র মেয়ে সন্তান। বাবার সবচেয়ে আদরের ছিলাম আমি। যখন যা চেয়েছি তাই পেয়েছি। কখনো না শুনতে হয়নি।


ঠাম্মার থেকে শুনেছি মেয়ে সন্তান হয়ছে বলে নাকি বাবা সেরম খুশি ছিল না। কিন্তু যখন আমায় প্রথম দেখল , তখন বাবার দু চোখ থেকে জল পড়া থামেনি। বাবা নাকি বাড়ি এসে বলতো কবে আসবে বাড়িতে। তারপর সেই দিনটি এল যেই দিন আমি প্রথম বাবার কোলে করে নিজের বাড়ি তে আসলাম। আমি বাড়ি তে আসার পর দিন কেই বাবার জয়েনিং লেটার আসে। বাবা বলতো আমি নাকি বাবার একমাত্র লক্ষি। মা বলতো বাবা এমন হয় উঠেছিল যেন তোর জন্যেই বাবা বেঁচে আছে। বাবাকে ঘিরে শুধুই তুই।


তারপর আমার বড় হয়ে ওঠা আস্তে আস্তে । ছোট থেকেই আমি একটু নরম প্রকৃতির ছিলাম। কোথাও একটু ব্যথা লাগলে বাবা সারা বাড়ি মাথায় করতো। আমার জ্বর হলে বাবা অসুস্থ হয়ে পড়তো। বাবা আমায় রাজকুমারীর মতন রাখতো। মুখ থেকে যখন যেটা বার করতাম সেটা তখন হাজির। আমার জিবনে আমার নিঃশ্বাসের থেকে বেশি বাবা শব্দটি আমার জিবনে আছে। আমি বাবা ছাড়া এই পৃথিবীতে কিছু চিন্তাম না। মা শুধু বলতো কেন এতো কিছু এনে দিচ্ছো....... বাবা শুধু বলত আমার লক্ষী যা চাইবে আমি তাই দেবো। আমি ২ বছর বয়স থেকেই নাচ করতে খুব পছন্দ করতাম। যথারিতি বাবা নাচের ইস্কুলে ভর্তি করে দিল, নাচের পরিক্ষা খুব ভালো দিলাম, সবাই নাচের ইস্কুলে বাবাকে বলতো মেয়ে কিন্তু নাচটা দারুন করে, নাচটা কোন দিন ছাড়িয়ে দিও না। নাচ আমার জিবন ছিল, খুব ভালো বাসতাম নাচ করতে। আমার বাবা আমাকে ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করবে সিদ্ধান্ত নিল, আমাদের পরিবারের কোন সদস্য কোন দিনও ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে যায়নি, আমি প্রথম যে ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে যাচ্ছি। প্রশ্মের জোয়ার বাবাকে ঘিরে ধরলো.... কেন?? কি দরকার ইংরেজি স্কুলে পড়ানো??

কিন্তু বাবা সব প্রশ্ম পিছনে ফেলে বলে ছিল - না আমার যত কষ্ট হোক আমি আমার মেয়ে কে মানুষের মতো মানুষ করবো। আমি ছোট থেকেই মেধাবী ছাত্রী ছিলাম। আস্তে আস্তে বড় হলাম।


তখন আমি ক্লাস এইটে, স্কুলে যাওয়ার পথে রোজ একটি ছেলেকে চোখে পরতো।দুজন দুজনকে দেখে হেসে আবার যে যার মতো চলে যেতাম। এরম ভাবে অনেকটা সময়, অনেকটা বছর চলে গেল, কিন্তু কেউ কাউকে কিছু বলতে পারিনি। দেখতে দেখতে আমি উচ্চমাধ্যমিক পাশ করলাম, বাবাও খুব খুশি আমার পরিক্ষার ফল দেখে।


এরপর আমার কলেজ যাওয়ার সময় এল, আবার কলেজে গিয়ে সেই ছেলেটিকে দেখলাম। একটু সাহস করে সে আমাকে বললো সে নাকি আমায় খুব ভালোবাসে। তখন জানতে পারলাম তার নাম সুভেন্দু। সে সেরম কোন কাজ করত না। আস্তে আস্তে দুজন দুজনকে চিনলাম, তার আর আমার স্ট্যানডাড অনেকটাই আলাদা। ও আমায় বলেছিল যে আমি গরিব ঘরের ছেলে ,কিন্তু তোমায় সব সুখ আমি দেব। সুভেন্দুর জন্য মনটা দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে। আমি বাড়ি গিয়ে অনেক ভাবলাম, মা ও বাবা কে বলতেও চেষ্টা করলাম কিন্তু সাহস কুলতে পারলাম না,আর এটাও জানতাম যে তারা কোন দিনও সুভেন্দু কে মেনে নেবে না। শেষ পর্যন্ত আমি আর সুভেন্দু সিদ্ধান্ত নিলাম যে আমরা বিয়ে করবো , তাই করলাম। আমার বাবার সামনে দাঁড়ানোর সাহস ছিল না। ফোন করেই জানালাম, ..বা...বা...বাবা ....... আমি বিয়ে করেছি।


বাবা এই কথাটা সহ্য করতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পড়ে ও বাবা কে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছিল। আমি না থাকতে পেরে দৌড়ে বাবার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম আর কাঁপা গলায় ডাকলাম "বাবা"...... কিন্তু বাবা একবারের জন্য আমার দিকে তাকালো না।"বলল -আমি তোকে চিনি না। আমার সামনে কোন দিনও আসবি না। তুই আমার জন্য মরে গেছিস‌"। এই কথাটা শুনে অভিমান করে চলে গেলাম। আস্তে আস্তে সব ভুলে সংসারে মন দিলাম..রান্না বান্না সব শিখে পুরো গিন্নি হয়ে উঠলাম। সংসার , নাচ নিয়ে সব ঠিকি চলছিল। রোজ সকালে বিকালে ফোন আসতো কেউ কথা বলতো না ,রং নাম্বার হয়তো বিরক্তি কর কাজের সময় কে যে ফোন করে ......


আজ প্রায় ২ বছর কেটে গেল ,খবর পেলাম আমার বাবা বিছানায় শয্যা নিয়েছেন , অনেক বার বাবার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছি কিন্তু বাবা বলেনি। আমিও সেরকম চেষ্টা করেনি আর।


হঠাৎ একদিন একটা ফোন বেজে উঠল.....ফোনের ওপার থেকে একটা কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে..... বুঝলাম 'মা' কিন্তু 'মা এর সেই কথাটা আজকেও কানে লাগে '    -  "বাবা আর নেই"    


আ...... আমি সত্যি যেন চোখের সামনে সব অন্বকার দেখছি...... আমার চিৎকার যেন  থামছেই না--আমার চিৎকার শুনে সুভেন্দু আমার সামনে এসে কি যেন বলছে , আমি কিছু শুনতে পারছি না....... আমি দৌড়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে বাড়ির গেটের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম--------"সব শেষ‌  সব শেষ" আর কিছু নেই।

দেখলাম বাবা সাদা চাদরের নিচে শুয়ে,মা কে বললাম মা ...বাবা যে সাদা চাদর পছন্দ করে না। চারিদিক নিস্তব্ধ, বাবার সামনে বসে বাবার দিকে অনেক্ষন তাকিয়ে ছিলাম, আমার মনে হচ্ছে বাবা যেন আমায় কিছু বলতে চেয়েছিল -আমার আর শোনা হল না।

সুভেন্দু আমায় নিয়ে চলে গেল, আমি যেন একটা মৃত মানুষ হয়ে গেলাম কিছু বলতে পারলাম না।


এখন শুধু একটাই প্রশ্ন আমায় ঘিরে আছে" বাবা তবে কি তুমি আমাকে রোজ ফোন করতে, কিন্তু কোনো কথা বলতে না, তুমি আমার গলায় আওয়াজ শুনতে"। আমি কেন বুঝলাম না তোমায় বাবা-   কেন! কেন!


সেই দিন যদি আমি অভিমান না করে তোমায় আমি জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চাইতাম আজ তুমি আমার সাথে থাকতে। বাবা..ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে পড়েও আমি মানুষ হতে পারলাম না।।

কেন করলাম?......

কি করলাম?......

জীবনে আর কোন দিন পায়ে ঘুঙুর পরবো না।

বাবা....... বাবা....... বাবা কোথায় তুমি ?? ফিরে আসো.......

আমি স্বার্থপর .......



Rate this content
Log in