সত্যি কি স্বাধীন
সত্যি কি স্বাধীন


এই মেয়ে.......শোন
দাঁড়া ....দাঁড়া .....বলছি
কি নাম রে তোর?
সবাই ডাকে দুগ্গা
কোথায় থাকিস রে তুই?
ওই....গ্ৰামে
কোন বাড়ির মেয়ে রে তুই?
বাড়ি....... সেটা আবার কি??
তোর বাপের নাম কি?
বাপ!... মা বলেছিল হারান
তোর মায়ের নাম কি?
মা! মায়ের নাম সতি
ও মা!!!! তোর দেখি বিয়ে হয়ে গেছে
হ্যাঁ গো হ্যাঁ
তা তোর বয়স কত?
জানিনে গো...সবাই বলে ৯ কি ১০
তোর শশুর বাড়ি কোথায় রে?
বললাম তো ওই গ্ৰামে, শশুর ঘর ই তো মেয়েদের আসল ঘর, তুমি জানো না?
কয় ভাই বোন আছে তোর?
আমার?.... আমার কেউ নেই গো মা মরেছে, বাপ মরেছে ভাই বোন সাতকুলে কেউ নাই
তালে কার কাছে মানুষ হোলি তুই?
ওই এক আমার রাঙা পিসির কাছে গো
বাব্বা ! তোর কেউ নাই?
না গো , রাঙা পিসি বলেছিল আমার বাপ নাকি আমায় জন্মের সময় মেরে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু মা বাঁধা দিয়েছিল।তাই আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছে।
কি বলিস রে পাগল মেয়ে একটা?
হ্যাঁ গো বিশ্বাস করো সত্যি বলছি
তা কেন শুনি?
আরে জানো না আমি তো মেয়ে গো, আমার বাপ তো ছেলে চেয়েছিল।
তা, তুই এই রাতের অন্ধকারে কোথায় গেছিলি শুনি?
আমি..... ওই যে.. ওই গ্ৰামের যে মণিবালা ঠাকুরন আছে, তার বাড়িতে তো আমি সব ঘরের কাজকর্ম করি গো। যানো আমায় কাজের ফাঁকে ইতিহাসের গল্প শোনায়।
এতো রাতে মেয়ে মানুষদের ঘরের বাইরে বেরতে নেই...বুঝলি?
কেন গো? কি হবে বেরোলে?
এই এতো প্রশ্ন কিসের রে?
এত ছোট বয়সে তুই লোকের বাড়ি কাজ করিস?
বা রে!! তো করবো না, না করলে টাকা দেবে কে? ঘরে টাকা না নিয়ে গেলে খাবো কি, শাশুড়ি তো মারবে।
কেন তোর স্বামী কি করে? নাম কি তার?
ধুর! যেদিন আমায় বিয়ে করে এনেছে সেদিন থেকে আর দেখিনি। তার নাম পরেশ।
তা তুই কাউকে জিজ্ঞেস করিস নি তার কথা?
হ্যাঁ করেছিলাম তো, শাশুড়ি বলে সে নাকি কাজের খোঁজে শহরে গেছে।
এতো ছোট বয়সে সে কাজের খোঁজে চলে গেল?
বারে যাবে না, আমাদের তো পয়সা নেই , খাবো কি ?
তালে তুই থাকিস কার কাছে?
কেন আমার শাশুড়ির কাছে।
দুগ্গা তুই পড়াশুনা জানিস?
না গো, পড়াশুনা করে হবে কি? রাঙা পিসি বলেছিল মেয়ে মানুষেরা পড়াশুনা করে না।
তুই নিজের নাম টাও লিখতে পারিস না?
না গো, জীবনে কোন দিনও কলম ই ধরি নি।
এই মেয়ে তোর হাতে রক্ত কেন রে?
ওই দিকে পেয়ারা গাছে পেয়ারা পাড়তে গিয়ে পড়ে কেটে গেছে।
ইস!! কতটা কেটেছিস...এই দিকে আয় মলম লাগিয়ে দি
না গো না থাক , আমাদের দেশে অনেকেই আমরা কোনো দিনও কেউ মলম লাগাইনা, এমনি এমনি কমে যায়। আরে সেপটিক হয়ে যাবে যে.....হা হা... না গো
দুগ্গা তুই জানিস আজকে কি?
আজকে? কি গো?
আজ হল ১৫ই আগষ্ট স্বাধীনতা দিবস
স্বাধীনতা দিবস সেটা আবার কি?
তুই স্বাধীনতা দিবস মানে জানিস না?
না,বলো না গো স্বাধীনতা দিবস মানে কি?
শোন তবে
আমাদের দেশ ১৫ ই আগস্ট ১৯৪৭সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল।
যেমন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, মহাত্মা গান্ধী, ক্ষুদিরাম , চন্দ্রশেখর আজাদ আরো অনেক বিরপুরুষেরা আমাদের দেশ স্বাধীন করেছিল যাতে আমরা স্বাধীন ভাবে বাঁচতে পারি। তারা নিজেদের জীবন দিয়ে রক্ত দিয়ে আমাদের দেশ কে স্বাধীন করেছে।যাতে আমরা সবাই শান্তিতে স্বাধীন ভাবে বাঁচতে পারি।
কি রে কিছু মাথায় ঢুকলো?
ম.......... ধুর না কিছু বুঝি নাই।
তবে তুমি যে বললে দেশ স্বাধীন হয়েছে ১৯৪৭ সালে । হ্যাঁ হয়ছে তো।
আমরা তো এখন ২০২০ সালে দাঁড়িয়ে ,
তালে যদি দেশ স্বাধীন হয়ে থাকে তাহলে আমায় কেন পড়াশুনা করতে দিলো না?আমায় কেন আমার বাপ মেরে ফেলতে চেয়েছিল?আমায় কেন ঠাকুরণের বাড়ি তে কাজ করতে জেতে হয় যেখানে আমায় স্কুলে নিয়ে যাওয়া উচিত? কেন আমাদের ব্যাথা লাগলে ওষুধ দেয় না? কেন মেয়েদের ছোট বয়সে বিয়ে দিয়ে দেয়? তোমার মতো কেন মেয়েদের কে রাতে বেরোতে দেওয়া হয় না? কিসের ভয়? ধর্ষনের ভয়?
ইতিহাসের বইতে গল্প শুনেছি নাকি আমাদের দেশ বাচেন্দ্রী পাল, রানী লক্ষ্মীবাই, সরোজিনী নাইডুর মতো মহান ব্যাক্তিদের জন্ম দিয়েছিল তারা প্রত্যেকেই স্ত্রী ভ্রূণ হত্যা ঘটনার সাক্ষী ছিলেন , কিন্তু এই ঘটনা তো ২০২০ সালে ও চলে আসছে , আমার মতো অনেক দুগ্গা আছে যারা এখনো শিক্ষা থেকে বঞ্চিত, আমরা সাধারণ স্বাস্থ্য সেবা টুকু পাই না।
কি গো বলো না গো, তালে তো আমরা সেই বিরপুরুষদের জীবন দিয়ে দেশ স্বাধীন করাকে মর্যাদা দিতে পারিনি।
বলো "আমরা কি সত্যি স্বাধীন"?
কি গো চুপ কেন? কোথায় গেলে?..কোথায় গেলে তুমি?......শুনছো ... শুনতে পারছো আমার কথা?
একি....কিসের গান বাজছে?? এতো আমাদের দেশের জাতীয় সংগীত.... জানলার ফাঁকা দিয়ে দেখলাম আমাদের সবার গর্বের পতাকা উত্তোলন হচ্ছে।
এতো নতুন একটি সকাল। এতো পাখিদের ডাক।
তবে কি স্বপ্ন ছিল?
চোখ দুটি সোজা গেল ক্যালেন্ডারে,দেখলাম বড় বড় করে লেখা ১৫ই আগস্ট ২০২০
সত্যি,যদি এই নতুন সুন্দর সকালের মত আমাদেরকে আর খবরের কাগজে বাজে কিছু না পড়তে হয় ,কোথাও মারামারি হিংস্রতার ছবি না দেখতে হয় , সেই দিন আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিকের পরিচয় পাবো।
"আশা রাখছি ভবিষ্যতে আমরা প্রত্যেকটি দিন যেন সুন্দর ভাবে মারামারি ও হিংস্রতা ছাড়া ১৫ই আগস্ট স্বাধীনতা দিবসের মতো আমরা স্বাধীন ভাবে উপভোগ করতে পারি"।