Rinki Banik Mondal

Classics

3  

Rinki Banik Mondal

Classics

মধুর কল্পনায় দেশের কঠিন বাস্তব

মধুর কল্পনায় দেশের কঠিন বাস্তব

4 mins
900


স্বর্গের সবচেয়ে বড় 'কৈলাস ইন্ডাস্ট্রির' তিন পার্টনার, ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর। আরো ছোট ছোট ইন্ডাস্ট্রি রয়েছে যেরকম গণেশ ইন্ডাস্ট্রি, লক্ষ্মী ইন্ডাস্ট্রি।

সরকারি চাকরির হেড হলেন স্বয়ং যমরাজ।

আজ আমার কৈলাসে একটা ইন্টারভিউ আছে। সকাল সকাল রেডি হয়ে গেছি। আমার সাথে আমার এক বন্ধু মিন্টু থাকে। ওর আবার বেসরকারি চাকরির প্রতি কোন ইন্টারেস্ট নেই, সরকারি চাকরির জন্য পরীক্ষা দিচ্ছে, এর জন্য 'সরস্বতী ইনস্টিটিউট' থেকে প্রিপারেশন নিচ্ছে।

ইন্টারভিউ এর সময় এসে উপস্থিত। কত ছেলে, মেয়ে এসেছে ইন্টারভিউ দিতে। 'কৈলাস ইন্ডাস্ট্রি'র বেশ নামও আছে, খবরেও পড়েছি, 'নারায়ণ আনন্দ' টিভির চ্যানেলটাতে সব সময় অ্যাড দেয়। সবার শেষে আমার ডাক এলো।

  ------'মে আই কাম ইন?'

ভেতরে গিয়ে দেখি ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর তিনজন চেয়ারে বসে আছেন।

  ------'ইয়েস, প্লিজ বি সিটেড। ইওর নেম?'-(দেবতাগণ)

  ------'অভিরাজ মুখার্জি।'

  ------'হুমম.. মুখার্জি মানে ব্রাহ্মণ।'এম.বি.এ' ও করেছো দেখছি। তা মর্ত্য থেকে পালিয়ে এলে কেন?'-(বিষ্ণু)

  ------'আসলে... '

  ------'থাক্। বায়োডাটা দেখে নিয়েছি, তা সরকারি চাকরির চেষ্টা করছো?'-(মহেশ্বর)

  ------'হ্যাঁ, করছি যদি হয়..'

  ------'তা ভালো। কিন্তু যেহেতু সুইসাইড কেস তাই তোমার সরকারি চাকরি হওয়াটা একটু চাপের।'-(দেবতাগণ) 

এই টুকিটাকি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে কৈলাস ইন্ডাস্ট্রির ইন্টারভিউটা দিয়ে এলাম। পরের মাস থেকে আবার জয়নিং।


জয়েন করলাম স্বর্গের নতুন চাকরিতে। বেসরকারি চাকরি, খাটনি তো আছেই। চাকরিটা হল সেলস্ এর। কাজটা হল মর্ত্যে গিয়ে ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর এর পূজার প্রচার। যতগুলি পূজা হবে তাতে আবার ইন্সেন্টিভ আছে। যজ্ঞ করাতে পারলে এক্সট্রা বোনাস। আর না হলে চাকরি থাকাটাই দায় হয়ে যাবে। শুনতে হবে স্যারদের শিক্ষিত ভাষার গালিগালাজ।


একদিন অফিস থেকে ফেরার পথে আমাদের মর্ত্যের পাড়ার এক পিসি ঠাকুমার সাথে দেখা হল।

------'আরে, পিসিমা তুমি এখানে কোথায় থাকো?'

------'তুই কবে এলি এখানে? কিভাবে এলি? '

------'দু'মাস হয়ে গেলো। সেইসব পরে একদিন বলবো, সময় করে'

------'আমি তো ইন্দ্র কমপ্লেক্সের ওখানে যে ঝুপড়িটা আছে, ওখানে থাকি। দুর্গাদেবীর বাড়ি কাজ করি।'

------'দুর্গাদেবী মানে...এম.এল.এ দুর্গতিনাশিনী। শুনেছি উনার কথায় অসুর ওঠে আর বসে। উনি তো আমাদের অফিসের এক বসের স্ত্রী। দুর্গা দেবীকে একটু বলে দেখোনা, অসুরকে বলে আমায় একটা সরকারি চাকরি পাইয়ে দিতে।'

------'তুই যখন বলছিস, দুর্গাদেবীর সাথে দেখা হলে বলবো। উনার বাড়িতে কাজ করলেও উনার সাথে দেখা হওয়াটা খুব চাপের, তাও চেষ্টা করবো।'

পিসিমাকে তো বললাম দুর্গা দেবীকে বলার কথা। যদি সরকারি চাকরিটা হয়ে যায় তাহলে কত ভালো হয়! 'কৈলাস ইন্ডাস্ট্রি'তে চাকরিটাতে ভালো স্যালারিই পাচ্ছি। কিন্তু খুব খাটনি। তারপর আবার আজ অডিট, কাল মিটিং লেগেই আছে।তারমধ্যে মাঝে মাঝেই সেলস রিপোর্ট বানাতে অফিসের নাইট ডিউটি। ভালো লাগে না ছাই। এ তো দেখছি স্বর্গে আর মর্ত্যে একই অবস্থা। যাই বাবা! তাড়াতাড়ি ঘরে যাই। ঘরে গিয়ে আবার রান্না করতে হবে।


ঘরে এসে দেখি আমার বন্ধু মিন্টু সব রান্না করেই রেখেছে।

  ------'কি ব্যাপার, আজকে তুই একা একা সব রান্না করে নিলি?'

  ------'আমি সরকারি চাকরি পেয়ে গেছি।'

  ------'এতো দারুন খবর! তা কোন ডিপার্টমেন্টে চাকরি পেলি?'

  ------'ইমপোর্ট এক্সপোর্ট ডিপার্টমেন্টে জুনিয়ার একাউন্টেন্ট।'


মিন্টুর তো হিল্লে হয়ে গেল। সরকারি চাকরি হয়ে গেছে ওর। কত ভালো পোস্টে চাকরি হয়ে গেল। দিনে কটা মানুষ স্বাভাবিকভাবে মর্ত্য থেকে স্বর্গে আসছে, কজন সুইসাইড করছে, কজন অ্যাক্সিডেন্ট করছে, এইসব হিসেবই তো রাখতে হবে।এরকমই একটা চাকরি তো আমি খুঁজছি। কিন্তু আমার কপালই খারাপ, সরকারি চাকরি আমার কপালে নেই।


অফিসে কনক নামে মেয়েটাকে বেশ মনে ধরেছিল। কিন্তু ওর মা উর্মিলা দেবী তো সরকারি চাকরিওয়ালা ছেলের সাথেই উনার মেয়ের বিয়ে দেবে। কৈলাস ইন্ডাস্ট্রির মতো এতো বড় কোম্পানিতে আমি চাকরি করি। তবুও আমাকে তার পছন্দ নয়, কারণ চাকরিটা তো বেসরকারি। ধুর! ভালো লাগে না। জীবন মরণ দুটোই বেকার।

ওরে বাবা! সকালবেলা যে রথে করে পিসিমার আগমন। পিসিমার কথায় এম.এল.এ দুর্গতিনাশিনীর ছেলে মিঃ কেতো আমায় দেখা করতে বলেছে।


পরেরদিন গেলাম মিস্টার কেতোর সাথে দেখা করতে।

  ------'আপনাকে সরকারি চাকরিটা করিয়ে দেব মাকে বলে,.. কিন্তু... '

  ------'কিন্তু কি?' 

  ------'একশো বাড়ি গিয়ে মর্ত্যে কার্তিক পুজোর আগে কার্তিক ফেলে আসতে হবে। আজকাল মর্ত্যের মানুষ এত ব্যস্ত হয়ে গেছে যে, কার্তিক ঠাকুর কিনে অন্যের বাড়ি রেখে আসার সময়ই পায় না। আমি তোমার চাকরির অফার লেটারটা রেডি করে রাখবো।'


মিস্টার কেতোর কথা শুনে বুঝতে পারলাম উনাকে এক ধরনের ঘুষই দিতে হবে। তাতেই রাজি হলাম।

যাক্ বাবা! এম.এল.এ দুর্গতিনাশিনী যমরাজকে বলে আমার সরকারি চাকরিটা করিয়ে দিয়েছেন। মিস্টার কেতো কিন্তু তার কথা রেখেছে। সরকারি ব্যাঙ্কে চাকরি হয়েছে আমার, 'অসুররাজ ব্যাঙ্ক অফ যমলোক'। মর্ত্য থেকে আনা কত টাকা-পয়সা, সোনা-গয়না, দেব দেবীরা জমা রাখেন এখানে। সাধারণ অমানুষরাও এই ব্যাঙ্কে তাদের টাকা জমা রাখেন, কিন্তু কম।বেশিরভাগ অমানুষরাই তাদের টাকা পয়সা 'সরস্বতী ব্যাঙ্ক অফ দেবালয়'তে রাখে। সে যাই হোক আমি তো সরকারি চাকরিটা শেষমেষ পেয়েই গেলাম।


মর্ত্যে আমি সুতপা বলে একটি মেয়েকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু একটা প্রাইভেট সেক্টরে কাজ করতাম দেখে ওর বাবা আমার সাথে সুতপার বিয়ে দিতে চাননি। সুতপা ওর বাড়ির লোকের কথায় একটি সরকারি চাকরিওয়ালা ছেলেকে বিয়ে করে নেয়। তাই তো আমি সুইসাইড করে মর্ত্য থেকে স্বর্গে এলাম। সে যাই হোক, পাস্ট ইজ পাস্ট। তবে নামটা আমার এখানে এসে পাল্টায়নি। মর্ত্যে ভালো মানুষ ছিলাম দেখে স্বর্গে আমার স্থান হয়েছে। এখন শুধু মানুষ থেকে অমানুষ হয়ে গেছি। স্বর্গে এসে সরকারি চাকরি পেয়ে এবার আমি নর্তকী উর্মিলাদেবীর একমাত্র মেয়ে কনককে বিয়ে করতে পারবো।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics