Manab Mondal

Classics romance abstract inspirational

4  

Manab Mondal

Classics romance abstract inspirational

মধুচন্দ্রিমা

মধুচন্দ্রিমা

5 mins
501


সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরে যা হয় আরকি। আমাদের ভালোবাসা স্বীকৃতি দিয়ে দুই পরিবার থেকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হলো। ভালো চাকরি জোটে নি নড়বড়ে অবস্থা। প্রথম বিবাহ বার্ষিকীতে মধুচন্দ্রিমা নিয়ে যাওয়া জন্য পরিবারের সবাই চাপ দিতে থাকলো।

গ্যাংটক,গোয়া বা অন্যান্য প্রথাগত জনপ্রিয় ডেস্টিনেসনগুলোতে গিয়ে মধুচন্দ্রিমা সারার মতো সামর্থ্য  বা সময় কোনোটাই ছিল না আমার কাছে। আর দোলের সময় হওয়ায় দীঘা,পুরী বা শান্তিনিকেতনে  হোটেল পাওয়া দুঃসাধ্য ছিল।তাই অনেক খুঁজে পেতে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম মধুচন্দ্রিমায় সুন্দরবন যাবো। তবে সবার মত গোসাবা হয়ে সজনেখালীর দিকে না গিয়ে অপেক্ষাকৃত কম জনপ্রিয় যোগেশগঞ্জ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কারণ ওখানে এক বছর থাকার সুবাদে জায়গাটার প্রতি আমার বিশেষ দুর্বলতা একটু ছিলই। 

আর মধুচন্দ্রিমা শব্দটি র উৎস সন্ধানে গেলে জানতে পারবেন। এক চন্দ্রমাস বিবাহিত পুরুষ ও মহিলা কে জঙ্গলে পাঠানোর নিয়ম ছিলো আগে। তাছাড়া ওকে এতো গল্প শুনিয়েছি জায়গাগুলোর ,ওকে সঙ্গে নিয়ে জায়গাগুলো ঘুরিয়ে দেখানোও আমার কাছে একটা চ্যালেঞ্জ ছিল।তাছাড়া আমার মত আর এক জঙ্গল পাগল মানুষ জন্য ওটা আদর্শ জায়গা।তাই একে দুয়ে  চার করেই দোলের দিন সব নিষেধ উপেক্ষা করে বেরিয়ে পড়লাম আবার অরণ্যে।খুব সকাল সকাল বেরিয়ে পড়েছিলাম বলে   সহজেই ট্যাক্সি নিয়ে শিয়ালদা স্টেশনে পৌঁছে গেছিলাম।

কিন্তু দোলের জন্য সকাল 8.20র হাসনাবাদ লোকাল না থাকায় পরের ট্রেনের জন্য ঘন্টাখানেক অপেক্ষা করতে হলো।যাইহোক পরের ট্রেন ধরে 11.30 নাগাদ নির্বিঘ্নে পৌঁছলাম হাসনাবাদ।ওখান থেকে ম্যাজিক ভ্যানে লেবুখালি, সেখান থেকে বোট পেরিয়ে দুলদুলি তারপর আবার অটো ধরে প্রায় দুটো নাগাদ পৌঁছলাম যোগেসগঞ্জ বাজারে।আসার পথে কাঁটাখালি ব্রিজ থেকে বাংলাদেশ দেখলাম সঞ্চারীকে। যাইহোক খিদেয় পেট চোঁ চোঁ করায় বাজারে টাইম নষ্ট না করে একটা ইঞ্জিন নিয়ে পৌঁছে গেলাম  গেস্ট হাউসে।

হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেস হতেই পৌঁছে গেলো খাবার, পোস্ত দিয়ে আলুভাজা ডাল, শুক্তো,খাসির মাংস চাটনি আর পাঁপড় সহযোগে ভুঁড়িভোজ সারলাম বারান্দায় বসে। পেটের খিদে মিটতেই চোখ টানলো বাগানবাড়ির সৌন্দর্য। মাটির বাড়ি,খড়ের চাল,বাঁশের কাজ করা বারান্দা,সামনে ফুলের বাগান গাছপালা ঘেরা,সর্বোপরি প্রতিটি কটেজের দেওয়াল ও সামনের রাস্তায় সাদা রঙ দিয়ে আল্পনা আঁকা পরম যত্নে।জিজ্ঞেস করে জানলাম  সুন্দরবন বেড়াতে এসে প্রেমে পড়ে যায় জঙ্গলের ও জঙ্গলপ্রেমী দম্পতি । জঙ্গলের নিবিড় সৌন্দর্য উপভোগ করতে বানিয়েছে নিজের নৌকো জলেরবাড়ি মোটামুটি চল্লিশ জনের ব্যবস্থা রয়েছে। সেটাই এই গেষ্ট হাউজ আকর্ষণ।

বিকেলে ওকে নিয়ে ইঞ্জিন ভ্যানে করে বেরিয়ে পড়লাম হেমনগর কোস্টাল জেটি ঘাটের উদ্যেশ্যে। ঘাটের সিঁড়িতে বসে দেখলাম বিশাল লাল সূর্যটা একটু একটু করে ডুবে গেল রায়মঙ্গলের জলে।গোধূলির কনে দেখা আলো আর ছলাৎ ছলাৎ ঢেউয়ের সুর এক অদ্ভুত বিষাদ সুন্দর মুহূর্তের সৃষ্টি করেছিল।অদ্ভুত এক পরিতৃপ্তি নিয়ে ফিরেছিলাম দুজনে।ফেরার পথে নিমাই কাকার খটিতে গল্প হলো পুরোনো লোকজনদের সঙ্গে গল্প হলো অনেক।রাতের মেনুতে ছিল বাগদা চিংড়ি।পরের দিন সকালে জলের বাড়ি সওয়ারী হয়ে ভেসে পড়লাম রায়মঙ্গলের বুকে আদিম অরণ্যের হাতছানিতে। বোটের ছাদে বসে প্রাতরাশ সেরে জঙ্গল দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম ঝিঙেখালী ফরেস্ট অফিসে।দলবেঁধে নামলাম সবাই। আগে দুয়েকবার যাওয়ার সুবাদে জায়গাটা চেনা ছিল।তাই বাকি টুরিস্টদের সঙ্গে না গিয়ে ওকে নিয়ে ঘুরিয়ে দেখলাম জঙ্গলের আনাচে কানাচে।অনুভব করলাম জঙ্গলের রূপ,রস,গন্ধ,বর্ণ,জঙ্গলের নিজস্ব নিস্তব্ধতা।নৌকায় ফিরে দেশী মুরগি সহযোগে দুপুরের খাওয়া সেরে পরের জঙ্গল বুড়িরডাবরীতে(ডাবরী শব্দের অর্থ জঙ্গল) পৌঁছলাম। এটা কিন্তু খুব ঘন জঙ্গল। জালের বেড়া দিয়ে ঘেরা একটা সরু রাস্তা ধরে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে অনেকটা হেটে পৌঁছলাম ওয়াচ টাওয়ারের কাছে।একদম টপ ফ্লোরে গিয়ে মন্ত্রমুগ্ধ হলাম, যেদিকে তাকাই শুধু জঙ্গল আর জঙ্গল।দূরে নদীর ওপারে বাংলাদেশ। সে এক অন্যন্য অভিজ্ঞতা।যাইহোক ফেরার পথে নৌকার সামনের মাথায় বসে সূর্যাস্ত দেখা সত্যিই উপভোগ্য।রাতের মেনুতে ছিল ফ্রায়েড রাইস আর চিলি চিকেন।পরেরদিন সকালটা আশেপাশে ঘোরাঘুরি করে কাটলো। দুপুরে সামুদ্রিক কাঁকড়া দিয়ে জবরদস্ত খাওয়া দাওয়া সেরে বিকেলবেলা বেরিয়ে পড়লাম সামসেরনগরের উদ্যেশ্যে।নদীর একদিকে ভারতবর্ষ ওপারে বাংলাদেশ। এপারে তুলসীতলায় সন্ধ্যাপ্রদীপ শঙ্খধ্বনি ওপারে সন্ধ্যার আজানের সুর। সবকিছু ছাপিয়ে ঘরেফেরা পাখিদের কুজন।সে এক অন্যন্য অবিজ্ঞতা। রাত্তিরে কাকার খটি থেকে এনেছিলাম বড় বড় গলদা আর একটা টাটকা ভেটকি। আর লোভ সামলাতে পারলাম না। হেঁসেলে ঢুকলাম গলদা চিংড়ির মালাইকারি বানাতে।তারপর মজলিসি আড্ডায় আমার হেঁড়ে গলায় আবৃত্তি,সঞ্চারীর মন ছুঁয়ে যাওয়া গান, সঙ্গে খাওয়া দাওয়া। আহা! এরকম রাত বারে বারে কেন আসে না!! পরেরদিন এক চিমটে মন খারাপ অনেকটা পরিতৃপ্তি আর আবার আসার সাদর আমন্ত্রণ সঙ্গে নিয়ে সর্দারপাড়া থেকে ফেরার বোট ধরলাম।

      


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics