মাশরুম
মাশরুম
ল্যাবে টেস্ট করতে দিয়ে কেবিনের দরজায় নক করলো শ্রেয়া মিত্র। ভিতর থেকে গম্ভীর স্বরে 'কাম-ইন' শব্দটা পেতেই দরজা ঠেলে ঢুকতেই আবার স্বরটা বললো, "কাজ কতদুর? আর স্যাম্পলস গুলোই বা কবে পাবো?" দেওয়ালের দিকে ঘোরানো চেয়ারটার উদ্দ্যেশে শ্রেয়া বলল, "আজ সকালেই স্যাম্পলস গুলো পেয়েছি আমরা আর আপনার গতো নির্দেশ অনুযায়ী সেটাকে টেস্ট করার জন্য আমি ল্যাবে পাঠিয়ে দিয়েছি"। চেয়ারটা একশো আসী ডিগ্রি ঘুড়ল আর দেবেন্দ্র কুমার টেবিলে একটা চাপর মেরে বললো, "আমার টেবিলে নিয়ে আসার কথা ভুলেই গেল"। শ্রেয়া কি বলবে ভাবছে এমন সময় দেবেন্দ্র কুমার নিজেই বললো, "ভালো করেছো ডিরেক্ট টেস্টের জন্য পাঠিয়ে। এমনিতেও আমি কথার থেকে বেশি কাজে বিশ্বাসী তুমি ত সেটা জানোই"। শ্রেয়া জানে ডি.কে. মানুষটা কেমন। প্রথমে নিজেই নির্দেশ দেবে তারপর চাকরি খাওয়ায় ভয় দেখাবে। অবশ্য শ্রেয়া এই চাকরি করতেও চায়না। একবার সৌম্য ফিরুক দুজনেই একসাথে রিজাইনেশন লেটার দেবে। ডি.কে. ততক্ষণে উঠে দাঁড়িয়েছে শ্রেয়ার পাশে। ওর কাঁধে একটা হাত রেখে বলে, "তাহলে আজ তো আর কোনো কাজ নেই ডিয়ার, চলো একটু বেরোনো যাক নাকি"। শ্রেয়া জানে বেরোনো যাক বলে তাকে কথায় নিয়ে যাবে ডি.কে.। সেই জন্যেই সে এই চাকরি ছাড়তে চায়। কিন্তু যতদিন সৌম্য ব্যবসাটা দাঁড় না করাচ্ছে ততদিন চাকরিটা তাদের দুজনকেই টেকাতে হবে। শ্রেয়া বলে, "আজ বিকেলের মধ্যেই টেস্টের রিপোর্ট গুলো এসে যাবে, তাই আজকে না গিয়ে যদি কাল......"। ওর বাকি কথাগুলো শেষ করতে না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করলো ডি.কে.। "কাল ওপদি তোমার চাকরিটা বাঁচাতে পারবে তো। যা স্যালারী পাও তার থেকে বেশি তোমার আপাহিচ বাবার চিকিৎসা করাতে ব্যায় হয়। আর ভুলে গিয়ে যদি আমায় রাগিয়ে দাও......"। আবহাওয়া গরম বুঝতে পেরে শ্রেয়া তারাতারি বলে, "আসলে আমি বলতে চাইছিলাম, মানে আপনি আমায় যেমনটা আগেই বলেছিলেন যে রিপোর্ট জানা মাত্রই আপনাকে জানতে, কিন্তু আমরা দুজনেই বেরিয়ে গেলে রিপোর্টের কি হবে। এটা ভেবেই বলছিলাম আর কি"। দেবেন্দ্র একটু মজাই পায়। মুখ টিপে হেসে বলে, "রীলাক্স বেব্। অত চাপ নিওনা"। অতঃপর দুজনেই বেরিয়ে যায়।
নিশান্ত তাবু থেকে বেরিয়ে যায়। পিছনে কটা পৃষ্ঠা ছেরা নোটপ্যাডটা পড়ে থাকে। সৌম্যর কাঁধে আচমকা হাতটা রাখতেই ছেলেটা চমকে ওঠে। ওর পাশে এসে লকেটটা দেখে নিশান্ত বলে, "শ্রেয়ার জন্য?" জিনিসটা পকেটে ঢোকাতে ঢোকাতে সৌম্য উপর নিচ মাথা নাড়ে।
গাড়িতে বসে সিট বেল্টটা সবে বেঁধেছে শ্রেয়া, তখনই মেসেজ টোনটা বেজে ওঠে। মোবাইলের স্ক্রিন আনলক করে দেখে বড়সড় অঙ্কের টাকা ঢুকেছে তার অ্যাকাউন্টে। ট্রান্সফারটা যে ডি.কে. করেছে সেটা সে জানে।
নিশান্ত একটু কৌতুকের সুরে বলে, "লুকচ্ছিশ কেনো, আমাকে দেখা"। তারপর কিছুক্ষন আশপাশের কথা বলে, কাজের কথাটা পেরেই ফেলে নিশান্ত। সে বলে, "তুই কি জানিস তোর জন্যে কত মানুষের উপকার হবে। তোর ডাইরি থেকে অবজারভেশনের নোটস গুলো পড়ছিলাম, তখনই বুঝলাম তুই একদিন অনেক বড় রিসার্চার হবি"। সৌম্য শুধু হাসে। সেটা দেখে নিশান্ত বলে, "হাসছিস কেনো? আমি মজা করছি না, আই এম সিরিয়াস"। সৌম্য বলে, "হাসছি কারণ আমি তো এখানে কন্টিনিউ করবো না"। নিশান্ত হাত নেড়ে বলে, "তাতে কি দুনিয়ার যে প্রান্তেই কাজ করিস না কেনো সেখানেই সাইন করবি। বাই দা ওয়ে, জব সুইচ্ করার ডিসিশন কবে নিলি, একবারও জানালি না তো?"
গাড়িটা 'বিয়ার্স অ্যান্ড বারের' সামনে এসে দাঁড়ালো। গাড়ি থেকে নামার আগে ব্যাগের ভিতরে হাতড়ায় শ্রেয়া। ঔসধের ফয়েলটা হাতে নিয়ে দেখলো এখনো চারটে ট্যাবলেট আছে। পনেরো মিনিটের মধ্যেই সেই ডুম আলোর কামড়ায় পৌঁছে যায় তারা যেটা দেবেন্দ্র বুক করে যখনই তার শ্রেয়াকে ভোগ করতে ইচ্ছা করে।
সৌম্য বলে, "ভাই তুই তো জানিস ডি.কে. লোকটা সুবিধার নয়। আর ওর নজরটা আমার শ্রেয়ার উপরে। ওদেরকে নিয়ে অফিসে অনেক কোথাও হয় শুনেছিস নিশ্চই। তাই আমি চাই বিপদ কিছু হওয়ার আগে সেখান থেকে সরে যেতে"। নিশান্ত বলে, "কোন বিপদের কথা বলছিস? হ্যাঁ ডি.কে. লোকটাকে নিয়ে অনেক আলোচনা শুনেছি। লোকটা নাকি টাকার জন্য মানুষ খুনও করতে পারে এমনও শুনেছি। তাই বলে শ্রেয়া? ওর নাম কেনো জড়াবে ডি.কে.র সাথে?" সৌম্য বলে, "তুই শুনিসনি অফিস ক্যান্টিনে কত কথা হয় এই নিয়ে। তাছাড়া শ্রেয়া নিজেই আমায় বলেছে ওর অসহায়তার সুযোগ নিতে চায় হারামিটা। আসলে হারামিটা জানে ওর চাকরিটা কতটা দরকার। কিন্তু আমি এসব বেশিদিন চলতে দেবো না। নতুন সম্প্লেস গুলো যা পেয়েছি এগুলোই শেষ। আর খোঁজ করবো না। তাছাড়া আগামীকালই আমরা এখন থেকে বেরোবো"। নিশান্ত বলে, "হুম্, সে তো বুঝলাম কিন্তু চরকি ছেড়ে করবি টা কি, ব্যবসা?"
আকন্ঠ মদ্যপান করে নিলো দেবেন্দ্র। তারপর শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে সেক্স স্টিকটা বের করলো।ফ্লাই ফ্লাপের মতো জিনিসটার ব্যবহার করে রিসেপশনে ফোন করে আরো দুটো বোতলের অর্ডার দেয় সে, কারণ নেশাটা কেটে গেলে খুব মুশকিল।
"হ্যাঁ! তাতে শান্তিতে তো থাকতে পারবো" বলে সৌম্য। নিশান্ত বলে, "কিসের ব্যাবসা করবি? আর ব্যাবসা যে করবি, তার জন্য ট্রেড লাইসেন্স দরকার। সেটা কি আছে তোর? বাই দা ওয়ে, ক্যাপিটালও তো দরকার......"। নিশান্ত হয়তো আরো কিছু বলতো, কিন্তু সৌম্যকে উঠতে দেখে সেও উঠে পড়ল। সৌম্য বললো, "সব জোগাড় হয়ে যাবে ভাই। শ্রেয়া আমার সাথে থাকলে জীবনের সব বাধা পেরিয়ে যাবো"। এই কথা বলে যেইনা তাবুতে ঢোকে, চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায়।
এই নিয়ে তৃতীয়বার, নরকের কীটটা তার উপরে উঠেছে। তার শরীরটাকে ছিঁড়ে খাচ্ছে। যদিও শ্রেয়া এই উলঙ্গো শরীরটাকে ঘেন্না করে, তাউ সে নিরুপায়। ওই চোখদুটো সবসময় তার দিকে ক্ষুধার্থ জন্তুর মতো তাকিয়ে থাকে। ওই চোখদুটোই তাকে সবসময় বুঝেছে, যে সে একটা ভোগ বিলাসিতার বস্তু ছাড়া আর কিছু না। কিন্তু সৌম্যর সাথে তার এমন কখনো মনে হয়নি। যতবারই তারা খেলায় মেতেছে, ততবারই সৌম্যর ছোঁয়া তাকে ভালবাসার সাগরে ভাসিয়েছে।
খোলা নোটপ্যাডটা হাতে নিয়ে সৌম্য চেঁচিয়ে ওঠে বলে, "একি পাতা গুলো ছেঁড়া কেনো? কিকরেই বা ছিঁড়ল? প্রতিদিনের অবসারভেশন এখানে নোট করা ছিলো"। তারপর তন্য তন্য করে খুঁজলো, কিন্তু পেলনা। আবার নোটপ্যাডটা হাতে নিলো সৌম্য আর একটা সম্ভবনা ওর মাথায় খেলে গেলো। উঠে দাঁড়িয়ে নিশান্তর উদ্দেশ্যে বললো, "গত কএকদিনের যাবতীয় অবসারভেশনে তুই ছাড়া তৃতীয় কোনো ব্যক্তি আমায় ইন্সিস্ট করতে আসেনি"। তারপর ছেড়া পৃষ্ঠার জায়গা দেখিয়ে বললো, "সত্যি কথা বল। তুই নিয়েছিস তাইনা? আমার আবিষ্কার তুই চুরি করলি নিশান্ত। তোকে আমি ভাই বলেছি, আর তুই আমার পিঠে ছুরি মারলি"। নিশান্ত তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে, "নিজের ভাই, ভাই হয়না, আর তুই তো সেদিনের চেনা। তাছাড়া সম্পর্ক পাতালে ভাত জুটবে নাকি, তার জন্য টাকা লাগে। দিবি তুই বল"। সৌম্য নিশান্তর কলার চেপে ধরে বলে, "কতো টাকা পেয়েছিস এই কাজটা করার জন্য? ছি ছি শেষে তথ্য চুরি করলি। জানিস ওতে কতো মানুষ উপকৃত হতো? রেয়ার মাশরুম ওইগুলো। বিদেশীরা আমাদের দেশে আসে ঔসধিক গাছ আর উদ্ভিদের খোঁজে, আর তুই কিনা তাদের কাছেই......"। পুরোটা না শুনেই থামিয়ে দেয় তাকে নিশান্ত। তারপর জামা ঠিক করে বলে, "ভুল করছিস তুই, আমি কোনো বিদেশীর কাছে বেচিনি। তোর প্রেমিকার ভাতারের কাছেই বেচেছি"। সৌম্য রাগে চেঁচিয়ে ওঠে। তাকে থামিয়ে নিশান্ত আবার বলে, "এইটুকুতেই পাগলা ষাঁড় হয়ে গেলি, তাহলে ভাব আমি ওকে যে আপত্তিকর অবস্থায় দেখেছি সেটা যদি তুই দেখতিশ তখন তো খুনই করে ফেলতিশ"। সৌম্য একটা জোর ধাক্কা খায় বুকে, তারপর বসে পরে জিজ্ঞেস করে, "কিসব বলছিস বলতো। আপত্তিকর অবস্থায় মানে?" নিশান্ত একটা হাত বুলিয়ে নেয় ঠোটের নিচের ছোটো দাঁড়িটায়, তারপর বলে, "ঐতো পার্ক স্ট্রিটের একটা হোটেলে......, যাকগে ছার"। সৌম্য জিজ্ঞেস করে, "ছাড়বো কেনো বল। প্লীজ তোকে আজ বলতেই হবে, পার্ক স্ট্রিটের একটা হোটেলে কি?" নিশান্ত হাত নেড়ে বলে, "কি আবার! শ্রেয়া"। উত্তেজিত হয়ে সৌম্য প্রশ্ন করে, "শ্রেয়া কি?" নিশান্ত বলে, "কি আবার! ডি.কের গাড়ি থেকে নেমে......, অবশ্য এরকম আমি বহুবার দেখেছি। জানিসই তো অফিসের পর, সারাদিনের স্ট্রেস কমাতে আমি একটু রিফ্রেশ হতে যাই ডিস্কে। তখনই দেখেছি আর কি। যদিও শ্রেয়া কোনোদিনই আমায় খেয়াল করেনি"। সৌম্য রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে বলে, "আমি এসবের একবর্নও বিশ্বাস করিনা। তুই ফ্রড। তুই আমাদের সম্পর্কটা ভাঙতে চাষ। এগুলো তুই শুধু হিংসার থেকে বলসিশ"। নিশান্ত হাসে, তারপর বলে, "হিংসা! কাকে হিংসা করবো, তোকে না শ্রেয়াকে? যে গ্রামের বাড়ি বন্দকের টাকা মেটাতে গিয়ে বোনের বিয়ে দিতে পারেনা। আর বোনের বিয়ে দিতে গিয়ে তিন মাসের মেসের ভাড়া বাকি রেখে দেয়। আর শ্রেয়ার কথা যদি বলিস ওকে দয়া করা যেতে পারে, হিংসে না। বেচারি তো ডবল ডিউটি, ওভারটাইম করেও এখনও পর্যন্ত আংকেলের অপারেশনটা করিয়ে উঠতে পারলো না। তাছাড়া ওর বেপারে তো তুই সবটাই জানিস, আমার কাছে আর নতুন করে কি শুনবি"। সৌম্য নোটপ্যাডের বেপারে বেবাগ ভুলে গিয়ে একটু অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করে, "তার মানে! ও তো আমায় কোনোদিন বলেনি, ডবল ডিউটি বা ওভারটাইম করার কথা। তোকে কবে বললো?" নিশান্ত বলে, "আমায়ও বলেনি। আসলে আমিতো ডি.কের কাছের লোক, তাই তার মিস্ট্রেসের বেপারে জনকারি রাখাটা আমার জন্যে খুব কষ্টের না"। একথার পরে সৌম্য আর কিছু বলেনা ঠিকই, কিন্তু নিশান্তের সাথে হাতাহাতি বেধে যায়।
ড্রেসআপ করে শ্রেয়া একবার তাকায় নোংরা লোকটার দিকে। যৌনসংযমের পরবর্তিতে সে তখন ক্লান্তির ঘুম দিচ্ছে। শ্রেয়া মনেমনে ভাবে, এতবার তার শরীরটা লালসার শিকার হয়েছে, যে এখন তার শরীরে আর সার নেই। কিন্তু এবারই শেষ। একবার শুধু সৌম্য ফিরুক।
তিনদিন পরের একটা সকাল। নিশান্তকে কেফের সামনে খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়না। সিগনাল ছেড়ে দিতেই স্কুটিতে স্পিড তুলে দেয় শ্রেয়া। তারপর ক্লান্তিমাখা একটা গুড মর্নিং উইশ করে নিশান্তকে। দুজনে কেফেতে ঢুকে পরে ঠিকই কিন্তু নিশান্তর মনে একটা দ্বিধা কাজ করতে থাকে। তার বারবার মনে হতে থাকে এই বুঝি সৌম্যর কথা জিজ্ঞেস করবে শ্রেয়া। কিন্তু শ্রেয়া সেসব কিছুই করেনা, উল্টে তাকেই প্রস্তাব দিয়ে বসে। নিশান্ত একটু ঘাবড়ে যায় কিন্তু শ্রেয়া তাকে আশ্বস্ত করে সময় নিতে বলে। নিশান্ত তখন সৌম্যর সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তুললে সে জানায় তাদের মধ্যে অনেকদিন ধরেই মতবিরোধ চলছে আর তাই সে ঠিক করেছে এই সম্পর্ক থেকে সে বেরিয়ে আসবে। তাছাড়া সৌম্যর সাথে কোনো ভবিষ্যত নেই। সে প্রচুর টাকা চায়। স্বচ্ছ জীবন চায় যেটা সৌম্য কোনোদিনই তাকে দিতে পারবে না। এই কথা শুনে নিশান্ত একটু বাথরুম ইউজ করবে বলে বেরিয়ে যায়। টয়লেটে গিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে নিজেই নিজের সাথে কথা বলে। "ডি.কে.র পতিতা হয়ে অনেক ক্যাশ খাচ্ছো শ্রেয়া তাই তোমার সৌম্যকে আর পছন্দ হচ্ছে না। আর সেটা হওয়ায় স্বাভাবিক। টাকার গন্ধ পেলে মানুষ অনেক নিচে নামতে পারে। আর এখন আমি তোমার নেক্সট টার্গেট। ঠিক আছে সুযোগ যখন তুমিই দিচ্ছো আমি তখন একটু এনজয় করি তোমার সাথে, ক্ষতি কি। অত ভোরে তোমার ফোন আসায় আমার বোঝা উচিত ছিলো, তোমার মত হাভাতে ঘরের মেয়ে টাকা পেলে ভাত ছেড়ে নোটই খেতে শুরু করে দেয়। আর আমি ডি.কে.র এত কাছের মানুষ তাই এখন তোমার হঠাৎ করে আমায় খুব পছন্দ হচ্ছে, তাউ কিনা নিজের উড বি-র বেস্ট ফ্রেন্ডকে"।
এরপর আরো চারদিন কেটে যায়। লাশটার থেকে এত দুর্গন্ধ বেরোচ্ছিল যে ইনভেস্টিগেটিং অফিসার নিজেই সেখানে বমি করে ফেলেছিল। তার এতো দিনের অভিজ্ঞতা এরম পচন ধরা মৃতদেহ দেখা, তা সত্বেও ডি.কে.র মৃতদেহ থেকে যে গন্ধটা বেরোচ্ছিল তাতে সে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। বেলা বাড়লে একটু সুস্থ মনে হয় নিজেকে, তারপর মোবাইল চেক করে জানতে পারে শেষবারের মতো সে নিশান্ত নামের কোনো বেক্তিতে ফোন করেছিল আর মোটা অঙ্কের টাকা অনলাইনে পাঠিয়েছিল শ্রেয়া নামের কোনো মেয়েকে। যদিও এই দুজন মানুষ অনেকক্ষণ আগেই একসঙ্গে বিরপুরের জঙ্গলের পারি দিয়েছে।
নিশান্ত সপ্তাহ খানেক আগেই এই জঙ্গলে ইতিহাস রচনা করে শহরে ফিরেছিল। তখন সে একবারও ভাবেনি যে তাকে আবর এখানে ফিরতে হবে। এখন ব্যাথাটা অনেক কম লাগছে, একটু জল পেলে ভালো হয়। কিন্তু জল সে পায়না, তার বদলে শ্রেয়াকে সামনে দেখতে পায়, আর নিজেকে বন্ধি অবস্থায় আবিষ্কার করে। শ্রেয়া বলে, "তোমার যেকোনো প্রশ্নের উত্তরে আমি এটাই বলবো যে আজ তোমার শেষ দিন তাই কোনো ভনিতা না করে সবটা বলো আমায়, কারণ আমি খুব ভালো করে জানি যে তোমরাই আমার সৌম্যর সাথে কিছু করেছো"। নিশান্ত বলে, "ও একটা বোকা ছেলে ছিল। কোনোদিন নিজের ভালোটা বুঝলোই না"। এইটুকু বলাতেই কোথা থেকে একটা পিস্তল বের করে তার কপালে ঠেকায় শ্রেয়া। তারপর বলে, "একদম কথা ঘোরানোর চেষ্টা করবে না। গত শুক্রবার সম্প্লেলস গুলো তুমিই পাঠিয়েছিলে ল্যাবে যাতে তোমার কাজে খুশি হয় ডি.কে., তাতে তোমার নতুন একটা ব্যাংক একাউন্ট তৈরি হবে আর ডি.কে.র হবে আরো নাম। বিদেশে কনফারেন্স মিট-এ যাবে, ব্রাঞ্চ অফিস খুলবে, আরো কতো কি। কিন্তু তাতে সৌম্যকে কেনো ইনভলভ করলে তোমরা। সবটা নেবে তোমরা কিন্তু ওর স্কিলস, ওর মেধা, ওর থেওড়ি, সব ওর থেকে নেবে আর শেষে ওকেই গায়েব করে দেবে। ও তোমাদের কি ক্ষতি করেছিল বলতে পারো"। নিশান্ত বলে, "এতো কিছু যখন জানো তাহলে এটাও জানবে যে এই দুনিয়ায় টাকা ছাড়া কিছু হয়না। যার টাকা থাকেনা তার অস্তিত্বই থাকেনা। আর আমি টাকার জন্যে সব করতে পারি। তাছাড়া জার পতিতা হয়ে তুমি অফিসের পাশাপাশি দ্বিতীয় রোজগার করছো, তোমার আপাহিচ বাবার চিকিৎসার জন্য, তোমার মেন্টাল ইন্সটেবল মায়ের জন্য, তোমার ভাইয়ের পড়াশুনা বন্ধ না হওয়ার জন্য, ঠিক তেমনই কোনো কারণ না হলেও ব্যাক্তিগত কারণের জন্য আমি সৌম্যকে ব্যাবহার করেছি দ্বিতীয় রোজগার করার জন্য। আর একটা গোপন খবর দি, যেমন তুমি অবাক হচ্ছো তোমার আর ডি.কে.র গোপন সম্পর্কের কথা আমার মুখ থেকে শুনে, তেমনই সৌম্যও খুব অবাক হয়েছিল তার গার্লফ্রেন্ডের গোপন সম্পর্ক শুনে। মালটা আমায় অ্যাটাক পর্যন্ত করেছিল। এমন শান্ত শিষ্ট ছেলে আমায় খুন করতে গিয়েছিল। অতএব আত্যরক্ষার জন্য আমি ওকেই নিশ্চিহ্ন করে দি। তাছাড়া ওকে ডি.কে.র বা আমার আর কোনো প্রয়োজন ছিলোনা আর ও কাউকে আমাদের এই প্ল্যানের কথাও বলছিলো, তাই ওকে বাঁচিয়ে রেখে আর রিস্ক নিতে চায়নি আমরা"।
সকালের সেই আঘাতটার মতো আবার একটা আঘাত। নিশান্ত আবার জ্ঞান হারায়। কাথ হয়ে পড়ে থাকে সে ঠিক সকালে যেমনভাবে পরেছিল। তখনও শ্রেয়ার আঘাতে তার এই অবস্থা হয়েছিল আর এবারও হলো। গাড়ি থেকে বেরিয়ে গঙ্গলের দিকে যায় শ্রেয়া। কিছুদূর যেতেই ন্যাতা হয়ে যাওয়া একটা তাবু চোখে পড়ে। তাবুর কাপড়টা ঝড় বা কোনো হিংস্র জন্তুর জন্যেই এমন ন্যাতায় পরিণত হয়েছে। তাবুর ভিতরে সবার আগে যেটা শ্রেয়ার চোখে পড়লো সেটা একটা লোকেট। শেষ কথা সৌম্যর সাথে তার গত শুক্রবার ভোরের দিকে হয়েছিল। তখন সে তাকে এই লকেটটা দেবে বলেছিল, তাদের ভালোবাসার সৃতি হিসেবে। লকেটটা হাতে নিয়ে সে বিলাপ করতে থাকে। আজ আর দেখার কেউ নেই। মনের মধ্যে চেপে থাকা কষ্টটা আজ সে অশ্রুর সাহায্যে বের করে দেয়। তাছাড়া কাড়বে নাই বা কেনো সে, তার তো সব হারিয়ে গেলো। বিয়ার্স অ্যান্ড বারেই ডি.কে.র মদে ড্রাগ মিশিয়েছিল সে, তাকে স্লো পয়েশন করে মরার জন্য। বিশটা শরীরের সমস্ত কোষে ছড়াতে ছিয়ানব্বই ঘণ্টা নেয়, তারপরই হোস্ট মুখ দিয়ে গেজলা উঠে মারা যায়। সবটা কনফার্ম করতে চুপিসারে ডি.কে.র বাগান বাড়িতেও গিয়েছিল, আর সফলও হয়েছিল। তার ডানহাতও কোনো ভাবে জানতে পারেনি এই বিষয়ে। অবশ্য জানবেই বা কিভাবে, তার তো তখন শ্রেয়াতে মিন ছিলো। কীকরে নিজের খিদে মেটাবে শ্রেয়াকে দিয়ে সেই নিয়েই ছিল তার চিন্তা। এই এক সপ্তাহ ধরে সে এটাই করেছে।
এতো কথা ভাবতে ভাবতে কখন চোখ লেগে গিয়েছিল বুঝতেই পারেনি সে। ঘুম ভাঙ্গতেই কিছু অসঙ্গতি বুঝতে পেরে উঠে বসার চেষ্টা করে শ্রেয়া। একটু চেষ্টা করে উঠে বসতেও পারে, কিন্তু ঘুম ভেঙে সে নিজেকে বন্দিনী অবস্থায় আবিষ্কার করে। সামনে বসে নিশান্ত বলে, "কারোর পৌষ মাস কারোর ছড়ানো আস। চাল পাল্টে গেছে শ্রেয়া"। "কিসের চাল, আর কিসের আস?" বলে ওঠে শ্রেয়া। নিশান্ত বলে, "এই যে তোমার মৃত প্রেমিকের মৃত্যুর বদলা নিতে এসে তুমি নিজেই ফেঁসে গেছো, তোমার সেই চালটার কথা বলছি"। শ্রেয়া বাঁধন মুক্ত হওয়ার বৃথা চেষ্টা করে। নিশান্ত আবার বলে, "তবে তোমার এই চেষ্টা আমি বিফলে যেতে দেবোনা। তোমার বিলুপ্তির আগেই তোমায় সৌম্যর বিলুপ্তির বিস্তারিত বলেই দেবো"। তারপর আচমকা শ্রেয়ার বাহুতে ইনজেকশন পুশ করে নিশান্ত। শ্রেয়া কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঠোঁট দুটো শুকনো মনে হয়। জিভ দিয়ে ঠোঁট চাটে সে, তারপর জিজ্ঞেস করে, "কি করছো! সাইকো"। নিশান্ত বিদঘুটে একটা হাসি হেসে বলে, "সাইকো না হলে তোমার চালটা বুঝতাম কীকরে বলো। তবে যাই হোক তোমার সৌম্য তো আমার একটা ঘুষিতেই কাত হয়ে গিয়েছিল। তারপর এই ইনজেকশনটা ওকেও দিয়েছিলাম"। শ্রেয়ার মুখ দিয়ে গেজলা বের হতে দেখে নিশান্ত বলে ওঠে, "সৌম্যর অবস্থাও তোমারই মতো হয়েছিল। তোমার থেকে ওকে সরিয়ে ফেলে তোমায় একা করে দিয়েছিলাম শ্রেয়া। ওউ তোমায় হারিয়ে একা ছিল কদিন। কিন্তু এবার তোমরা একসঙ্গেই থাকবে। এই বলে নিশান্ত গ্লাপস পরে নেয়। তারপর শ্রেয়ার লাশটা টেনে নিয়ে যায় যেখানে সৌম্যর মৃতদেহটা পুতেছিলো। সেই জায়গায় গিয়ে নিশান্ত আবিষ্কার করে সৌম্যকে পুতে ফেলা জমিটার উপর ছোটো ছোটো মাশরুম হয়েছে। সে আর দেরি করেনা মুনাফা লাভের আশায় শ্রেয়ার দেহটাও পূতে ফেলে সৌম্যর বাঁদিকে। তারপর ছোটো ছোটো বিষাক্ত মাশরুম গুলো তুলে নিয়ে শহরের দিকে গাড়িটা ঘুরিয়ে দেয়। মনেমনে ভাবে ফিরিঙ্গীদের সাথেই এবার থেকে ডিলটা করতে হবে। ড্রাইভ করতে করতে তার খেয়াল হয় যে, সে এখনো গ্লাপ্সঃ খোলেনি। খুলতে যাবে এমন সময় তার ফোনটা বেজে ওঠে। ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কেউ বলে, "এই রেয়ার মাশরুম গুলো সংক্রমক রোগ ছড়াতে পারে। বড়ো গ্রাম থেকে শুরু করে এই মাশরুমের প্রকোপে ছোটো একটা শহরেও মহামারী ছড়াতে পারে"। তারপরই নেটওর্য়াকের অভাবে ফোনটা কেটে যায়। নিশান্ত দুবার রিং ব্যাক করলো কিন্তু আঁনরিচেবেল বলায় সে আর ফোন করে না। সেটাকে পকেটে পুড়ে রাস্তার পাশের চায়ের দোকানে এক কাপ চায়ের সাথে বিস্কুট খায়। দোকানদার নিশান্তকে হাত ধুতে বিস্কুট খেতে বলে, কিন্তু সে বলে তার অনেক তারা আছে, ধোয়া মোছায় সময় নষ্ট করতে পারবে না সে। তারপর দুটো চার টাকার কোয়েন দোকানিকে দিয়ে সে গাড়িটা চালু করে দেয়। দোকানীও কোয়েন দুটো লুঙ্গিতে বেঁধে কাজ শুরু করে দেয়। কিন্তু সে যেটা লক্ষ্য করেনা সেটা যদি লক্ষ করতো তাহলে দেখতে পেত নিশান্ত যে কাপে চা খেয়েছে সেই কাপের ভিতরে চায়ের দানার আকারের মাশরুম পরে আছে। যদিও সেটা দেখে বোঝার উপায় নেই যে সেটা মাশরুম দানা।
বেশ কিছুক্ষন গাড়ি চালিয়ে সজোরে ব্রেক কসলো নিশান্ত। রেয়ার ভিউ আয়নায় তাকিয়ে নিজের ঠোঁটের ওপর হাত বোলায়। গোটা গোটা কিজেনো হয়েছে। এতক্ষণ তো ছিলনা, হটাৎ কি হলো বোঝার জন্যেই আয়নার আরো কাছে এগোতেই সে দেখতে পায় মিক্রস্কপের বস্তু দেখার সাইজের মাশরুমের জন্ম হয়েছে তার ঠোঁটের উপর।
