লটারি
লটারি
যশোদার সাথে মিসেস মুখার্জীর আলাপ হয় শ্যামার মাধ্যমে | শ্যামা একটা নামী ও দামী নার্সিংহোমের নার্সিং স্টাফ | যশোদা তার ছোট বেলার বন্ধু | বরের সাথে সদ্য ডিভোর্স হয়েছে যশোদার | এক মাত্র মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়িতে উঠলে দাদারা ঠাঁই দিতে চায়নি তাদের একমাত্র ছোট বোনকে | কারণ, তাদের মনে হয়ে ছিল, তাদের বোন যশোদা অতিরিক্ত নারীবাদী | অতএব, নিজের নারীবাদীত্ব দেখানোর খেসারত তাকে নিজেকেই দিতে হবে |
যশোদা কোনো প্রতিবাদ করেনি দাদাদের কথায় | দাদারা তো তার অগ্রজ , তারা তো কোনো ভুল মন্তব্য করতেই পারে নিজেদের বোনের প্রতি | কিন্তু মা যখন বলে ছিল যশোদাকে, " আর একটু কী মানিয়ে নিতে পারতিস না তু্ই ?? "
তখন যশোদা বলে ছিল, " জীবন টা তো আমার মা, তাই আমার আত্মসম্মানটাতে আঘাত লাগলে, আমারই ব্যথা লাগবে বেশি | তোমরা সেটা বুঝবে না | আর আমিও তোমাদের বোঝাতে চাই না | আমার স্বামী রাতের পর রাত, দিনের পর দিন তার বৌদির সাথে সহবাস করে আমারই পাশের ঘরে, আর আমি তার প্রতিবাদ করলে নারীবাদী হয়ে যাই, তাই আমার সেই লড়াই, সেই প্রতিবাদকে আমি নিজেই কুর্নিশ জানাই মা | আমার ভাসুর বিদেশ বিভূঁইয়ে পড়ে আছেন, তাঁর হয়তো স্ত্রীয়ের এই অরাজকতায় কোনো অসুবিধে হয় না, কিন্তু আমার ভীষণ অস্বস্তি হয় এমন নোংরামি দেখে | যে বাড়িতে বিয়ের আগে চব্বিশটা বছর কাটিয়ে গিয়েছি, সেই বাড়িটাও যে আমার নিজের থাকবে না, সেটা বুঝতে পারিনি গো | আমাকে একটু সময় দাও, আমার ঠিকানা আমি ঠিক খুঁজে নেবো |"
একজন নাম করা ফ্যাশন ডিজাইনারের একাউন্টস সেকশনে কাজ করতো যশোদা | শ্যামা যশোদার সব কিছু শুনে বলে ছিল, " তু্ই চাইলে আমার কাছে এসে থাকতে পারিস, যশোদা | আমার বাবার করা বাড়িতে আমি আর আমার বিধবা মা একা থাকি | তু্ই যদি চাস, এসে থাক | "
যশোদা মেয়েকে নিয়ে একটা ভাড়া বাড়ি খুঁজছিলো | শ্যামার প্রস্তাবে হাতে স্বর্গ পেলো যেন | শ্যামার মা লতিকা কাকিমা ছোট বেলা থেকেই যশোদাকে বেশ স্নেহ করেন | তিঁনিও বললেন, " তু্ই আমার বাড়িতেই এসে থাক, যশোদা | আমিও একটাই নাতনি পাই তাহলে | "
যশোদা বলল, " বেশ, যাবো, তবে এমনি যাবো না শ্যামা, ভাড়া যাবো | "
শ্যামা জোর করলো না এ বিষয়ে | সে জানে, তার বন্ধুর আত্মসম্মানটা বরাবরই একটু বেশি | মেয়েদের এই আত্মসম্মানটুকুই তো জীবনে বেঁচে থাকার ভরসা | এই আত্মসম্মানটুকু কে বজায় রাখার জন্যই তো দীপঙ্করের সাথে তার চিরকালের বিচ্ছেদ হয়ে গেলো |
বহুদিনের প্রেম ভেঙে গেলো এক অসুস্থতার কারণে | দীপঙ্কর সে অসুস্থতার নাম দিলো শ্যামার মা হবার অক্ষমতা | কিন্তু শ্যামার কাছে গল্পটা লাগলো অন্য |
শ্যামা একবার গাইনোকোলোজিক্যাল ট্রিটমেন্ট করাতে গিয়ে ধরা পড়ে , শ্যামা কোনোদিন মা হতে পারবে না | দীপঙ্করকে সব কিছু সততার সাথে জানিয়ে ছিল শ্যামা, বিশ্বাস ছিল, দীপঙ্কর সব শুনে খোলা মনে দুহাত বাড়িয়ে শ্যামাকে তার বুকে আগলে রাখবে |
কিন্তু হোলো উল্টোটা | দীপঙ্কর তার মায়ের অজুহাত দেখিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলো | শ্যামা হাসি মুখে তাকে যেতে দিলো | শুধু যেতে দেওয়ার আগে দীপঙ্করকে বলল, " যদি, আমার জায়গায় তুমি থাকতে দীপঙ্কর, তবে আমি কিন্তু তোমার হাতটা ছাড়তাম না | আমি শারীরিক ভাবে অক্ষম যেটা আমার হাতে নেই | তবে তুমি আমার হাত ছেড়ে দেখিয়ে দিলে, অক্ষমতা তোমারও আছে, তুমি মানসিক ভাবে অক্ষম | এর পরে ঈশ্বর না করুন, তোমার স্ত্রী যদি আমার মতো অক্ষম হন, তবে তখন তুমি তোমার অক্ষমতা দেখিও না যেন | তখন তোমার স্ত্রীয়ের পাশে থাকার একটু চেষ্টা কোরো | "
দীপঙ্কর মাথা নিচু করে পালিয়ে গেলো | তার তখন শ্যামার জীবন থেকে দূরে চলে যাওয়ার বড্ড তাড়া!! তাই লতিকা কাকিমা সাদরে গ্রহণ করেছিলেন যশোদাকে, লোভ ছিল একটাই, দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাবেন | নিজের মেয়ের ঘরে সন্তান নেই তো কী হয়েছে | যশোদাও তো তার সন্তানের মতনই | যশোদার মেয়েকে বুকে জড়িয়েই নাতনি সুখ উপভোগ করবেন তিঁনি |
তাই যশোদা যখন শ্যামাদের বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে আসতে চাইলো, তখন লতিকা কাকিমা বললেন, " ভাড়া নয়, যশোদা, তু্ই পেয়িং গেস্ট থাক আমার কাছে | আমার কাছেই খাবি, দাবি, আমার ঘরের সব কিছুই ব্যবহার করবি | তোর যা ইচ্ছে হয়, তু্ই দিস | রমা এসে আমাদের দুজনের জন্য রান্না করে, আর না হয় তোদের দুজনের জন্যও রান্না করবে | অসুবিধে কী আছে ?? তাহলে আমি একটু তোর মেয়ের সান্নিধ্য পাবো | তুইও নিশ্চিন্তে চাকরি করতে পারবি | "
যশোদা আর আপত্তি করেনি কাকিমার কথার | কাকিমার দেওয়া যুক্তি তার জন্যও ভীষণ ভালো সুযোগ | তাই ডিভোর্স হওয়ার অনেক আগেই শ্যামাদের বাড়িটাকে ঠিকানা করলো যশোদা |
যশোদার ডিভোর্স নেওয়াতে বড়ো জলদি ছিল | কারণ, এমন স্বামীর নাম জীবনে বয়ে বেড়ানোও একটা বিরাট দায়ভার তার কাছে | তাই মিউচুয়াল ডিভোর্সের পথে হাঁটলো সে | যশোদার স্বামী সুযোগ বুঝে মেয়ের দায়িত্ব নেওয়া থেকেও সরে দাঁড়াতে চাইলো | যশোদা তাতেও আপত্তি করলো না | তার লড়াইটা তার আত্মসম্মান বাঁচানোর লড়াই | কোর্ট কাছারি করতে গিয়ে যদি আত্মসম্মানটা কখনো ঠুনকো হয়ে যায়, তবে সেটাই হবে তার সবচেয়ে বড়ো হার !! তাই, সেই হারের চেয়ে এই ভালো | মেয়ের সব দায়িত্ব মাথা পেতে নিয়ে স্বামী, পরিবার, বাপের বাড়ি সব কিছু ছেড়ে নিজের একটা আলাদা জীবন বেছে নিলো যশোদা |
দিন কম বেশি ভালোই কাটছিলো | একদিন যশোদা বন্ধুকে বলল, " ভাবছি, লটারী কাটবো, বুঝলি শ্যামা | "
শ্যামা খুব হাসলো, বলল, " তোর মনে হয়, আমার - তোর পোড়া ভাগ্যে লটারী লাগতে পারে !! "
যশোদা বলল, " একবার ভাগ্য বিচার করে দেখতে ক্ষতি কী , বল?? যদি কিছু এককালীন টাকা পাই, তাহলে রিয়ার ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করে রাখতে পারি | আমার যা রোজগার, তাতে মাসের খরচের পরে আর কত টুকু সঞ্চয় করতে পারি?? "
শ্যামা হেসে বলল, " তাহলে আর কী !!, লেগে পড়ো বন্ধু ভাগ্য উত্তরণে | "
এর বেশ কিছু সপ্তাহ পরে একদিন ডক্টর মজুমদারের ঘরে ডিউটি পরে শ্যামার | ডক্টর শেফালী মজুমদার একজন আই.ভি.এফ স্পেশালিস্ট | সেদিন চেম্বারে মুখার্জী দম্পতি প্রায় কেঁদে ফেলে ছিলেন একটা সন্তানের জন্য | আই. ভি. এফ. পদ্ধতিও যখন ব্যর্থ হয়ে গেলো, তখন মুখার্জী দম্পতি একটা গর্ভের খোঁজ করলেন, যে তার সন্তানকে জঠোর ঘরের জন্য ভাড়া দেবে |
মুখার্জী দম্পতি প্রায় পায়ে পড়ে গেলেন ডক্টর মজুমদারের, " আমাদের একটা সরোগেট মাদার খুঁজে দিন প্লিজ | "
ডক্টর মজুমদার বললেন, " আমি কোথায় খুঁজে পাবো?? খুঁজবেন তো আপনারা | আপনারা খুঁজে নিয়ে আসলে আমি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে এটুকু বলে দিতে পারি, সেই ভদ্রমহিলা আপনাদের বাচ্চা ধারণের জন্য সক্ষম হবেন কী না | "
সামনে দাঁড়িয়ে ডক্টর মজুমদার ও মুখার্জী দম্পতির সব কথা শুনছিলো শ্যামা | তখনই মনে হোলো তার, এ সুযোগ তো যশোদা নিতেও পারে, দিতেও পারে !! এই সুযোগটা লটারীর চেয়ে তো কম কিছু নয় !!
তাই ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরোবার পরে, মিসেস মুখার্জীকে শ্যামা বলে, " আমার এক বন্ধু আছে | ডিভোর্সি সে, তার কিছু টাকার দরকার, তার সন্তানের জন্য | আমি জানিনা, সে তার গর্ভ ভাড়া দেবে কী না, কিন্তু আপনারা চাইলে আমি তার সাথে কথা বলতে পারি একবার | "
মিসেস মুখার্জী যেন হাতে চাঁদ পেলেন !! বললেন, " নিশ্চয়ই, আমরা একদম রাজী | "
শ্যামা বলল, " কত টাকা দেবেন আপনারা ?? "
মিস্টার মুখার্জী বললেন, "যা চাইবেন, তাই দেবো |"
শ্যামা জবাবে বলল, " বেশ, আপনাদের ফোন নম্বরটা দিয়ে যান আমার কাছে | পসিটিভ, নেগেটিভ যাই উত্তর হোক আমার বন্ধুর, আমি আপনাকে জানিয়ে দেবো | "
রাত্রি বেলা বাড়ি ফিরে বন্ধুকে সব বলল শ্যামা | লতিকা সব শুনে বললেন, " তোর কী মাথা খারাপ হয়ে গেছে শ্যামা!! সমাজ মানবে এসব ?? "
শ্যামা বলল, " সমাজের মানা, না মানায় কী আছে মা ?? সমাজ তো আর দায়িত্ব নিয়ে রাখেনি যশোদার আর রিয়ার | ওদের ভালো মন্দের দায়িত্ব যখন যশোদার উপরেই পুরোটা বর্তায়, তখন সমাজের কী বলার আছে ?? আর যশোদা তো এখন নিজের পরিচয়ে বাঁচছে, অতএব ওর ভালো মন্দের কোনো কিছুই কারোর গায়ে লাগবে না | জীবনটা যখন যশোদার, দায়িত্বটা যখন যশোদার একার, তখন এ বিষয়ে সিদ্ধান্তটাও যশোদার একারই হওয়া উচিত | তাই নয় কী?? "
তারপর বন্ধু যশোদার উদ্দেশ্যে বলল, " তু্ই সময় নিয়ে ভাব যশোদা | তু্ই যেটা সঠিক ভাববি, সেটাই করবি | তবে দশ মাস নিজের মাতৃত্বকে যদি ভাড়া দিস অন্য কারোর জন্য, তবে দুজনেই লাভবান হবে, তুইও লাভবান হবি, সাথে মিসেস মুখার্জীও একটা সন্তান পাবেন |"
যশোদা দিন দুই মন মস্তিষ্কের সাথে খুব লড়াই করলো | তারপরে মন আর মস্তিষ্কের সম্মতি নিয়েই মুখার্জী দম্পতির সন্তানের জন্য নিজের গর্ভটা ভাড়া দিলো | ঠিক হোলো, লাখ দুই টাকা দিতে হবে যশোদাকে তাঁর গর্ভধারণের বিনিময়ে |
শ্যামা বলে ছিল, " তু্ই চাইলে আরও টাকা চাইতে পারিস যশোদা, উঁনারা কিন্তু দিতে প্রস্তুত | "
যশোদা বলে ছিল, " না রে, কারোর অসহায়তার ফায়দা তুলতে মন চায় না | তবুও, হাত পেতে টাকাটা নেবো শুধু রিয়ার ভবিষ্যতের জন্য | ওটুকু টাকা ডিপোজিট করে রাখলে প্রাথমিক ভাবে একটা সঞ্চয় তো আমার হাতে থাকলো | তারপরে তো আমার লটারী রইলই | দেখি না, ভাগ্যে সিঁকে ছেড়ে কী না | ভাগ্য তো ভালো কিছুই দেয়নি, যদি কখনো প্রসন্ন হন | "
শ্যামা হাসলো | বলল, " আশায় মরে চাষা | ভালো, দেখ, লটারীতে কবে সিঁকে ছেড়ে তোর | "
"আসবে, আসবে,, কিছু পুণ্য তো করেছি রে শ্যামা | নাহলে কী আর তোর মতো বন্ধু আর কাকিমার মতো একজন মাতৃসম মানুষের সান্নিধ্য পাই, বল !! এটাও তো একটা লটারী পাওয়াই | জীবনের যা কিছু ভালো আছে তার সবটাই তো লটারী পাওয়া রে | "
যশোদার শর্ত মতো মুখার্জী দম্পতি এক লাখ টাকা যশোদার একাউন্টে ট্রান্সফার করে দিলো | আর ঠিক হলো, বাকি টাকাটা বাচ্চা হওয়ার পরে দেবেন | আর মাঝখানে এই মধ্যবর্তী সময়ে যশোদার চিকিৎসার সমস্ত টাকা উঁনারাই বহন করবেন | আরেকটা বিষয় ঠিক হোলো, প্রেগনেন্সির শেষের যে কটা দিন যশোদা অফিস করতে পারবে না, তার সেই কদিনের মাইনেটাও মুখার্জী দম্পতি দিয়ে দেবেন |
শুরু হোলো সন্তান ধারণের প্রস্তুতি | কিছু চিকিৎসার পরে একদিন সকালে প্রেগন্যান্সির কিট জানান দিলো, মুখার্জী দম্পতির সন্তান যশোদার গর্ভে জায়গা করে নিয়েছে | এবার শুধু তাকে সযত্নে নিজের রক্ত মাংস দিয়ে নিজের মধ্যেই বড়ো করে তোলা |
এসবের মধ্যেও মাসে তিনটে করে লটারী কিনতে ভোলে না যশোদা | তার বিশ্বাস, তার ভাগ্যে একদিন মা লক্ষ্মী নিশ্চয়ই ধরা দেবেন |
এভাবে আট মাস কেটে গেলো | একদিন হঠাৎ করে প্রচন্ড প্রসব বেদনা উঠলো যশোদার | সঙ্গে সঙ্গেই নিয়ে যাওয়া হোলো ডক্টর মজুমদারের কাছে | ডক্টর মজুমদারের কাছে গেলে উঁনি খুব অবাক হন, "এতো তাড়াতাড়ি কী ভাবে প্রসব বেদনা উঠলো ?? কিন্তু এটা তো পার্ট অফ দা প্রেগন্যান্সি | যশোদার অবস্থা দেখে সিদ্ধান্ত হোলো, সিজার করে এখনই বাচ্চা বার করতে হবে | সে সময় মুখার্জী দম্পতি শহরে ছিলেন না, টাটা গিয়ে ছিলেন এক বিশেষ কাজে | যশোদার ডেলিভারির কথা কানে যেতেই উঁনারা ডক্টর মজুমদারকে বললেন, "আমরা এক্ষুনি ফিরছি, আপনি যশোদার অপারেশনের ব্যবস্থা করুন | "
মুখার্জী দম্পতি নার্সিংহোমে ঢোকার আগেই যশোদা একটি কন্যা সন্তানকে জন্ম দেয় | মিসেস মুখার্জী এসেই ডক্টরকে বললেন, " বাচ্চার মায়ের জায়গায় আমার নামটা রেখেছেন তো ডক্টর মজুমদার | "
ডক্টর মজুমদার বললেন, " হ্যাঁ, নিশ্চয়ই | বাচ্চা যখন আপনার, তখন বাচ্চার মা তো আপনিই হবেন | আগে আসুন, আপনার বাচ্চাকে দেখবেন আসুন | "
মুখার্জী দম্পতি যতটা আনন্দ নিয়ে বাচ্চাকে দেখতে ঘরে ঢুকে ছিলেন, ঠিক ততটাই মনমরা হয়ে বেরিয়ে আসলেন | এ কেমন সন্তান জন্ম দিয়েছে যশোদা !! ঠোঁট আর নাক পুরো কাটা !! সাথে ডান হাতের পাতাটা তৈরিই হয়নি!! আঁতকে উঠলেন মুখার্জী দম্পতি এমন সন্তান দেখে |
মিসেস মুখার্জী বললেন, " না, না, এমন বাচ্চার মা আমি হতে পারবো না | এমন বাচ্চা হোলো কী করে ?? "
ডক্টর মজুমদার বললেন, "এটা একটা এক্সিডেন্ট মিসেস মুখার্জী | এমবিলিকাল কর্ডটা বাচ্চার সাথে এমন ভাবে জড়িয়ে গিয়ে ছিল যে বাচ্চার নাক আর ঠোঁটটা তৈরীই হয়নি | হাতের পাতাটাও একই কারণে গঠন হয়নি | তাই বলে আপনারা এই সন্তানকে অগ্রাহ্য করতে পারেন না | মেয়েটা তো আপনাদেরই মেয়ে !! আপনাদের শরীরের অংশ থেকেই তো মেয়েটা তৈরী হয়েছে !! "
মিস্টার মুখার্জী বললেন, " বি প্রাকটিক্যাল ডক্টর মজুমদার | এ বাচ্চা নিয়ে কী করবো আমরা | সমাজে চলা যাবে এই বাচ্চা নিয়ে ?? না, না, আপনি এই বাচ্চার অন্য ব্যবস্থা করুন | "
বাইরের ঘরে হট্টগোল শুনে শ্যামা বেরিয়ে এলো | সব কিছু শুনলো পাশ থেকে দাঁড়িয়ে | সব কিছু জেনে একরাশ আতঙ্ক নিয়ে ছুটে গেলো বন্ধুর কাছে | "এখন কী হবে যশোদা !! এ বাচ্চার দায়িত্ব কে নেবে ?? বাচ্চাটাকে তো বোধহয় কোনো অনাথ আশ্রমে দিয়ে দেওয়ার কথা বলছেন মিস্টার এন্ড মিসেস মুখার্জী | এবার কী করবি ?? কী নিষ্ঠুর রে এঁরা?? নিজের সন্তানটাকে এভাবে আস্তাকুড়ে ফেলে দিতে একবারও মন কাঁদছে না এদের ?? "
এক নাগাড়ে অনেক গুলো প্রশ্ন করে বসলো শ্যামা, বিছানায় শায়িত যশোদাকে | যশোদা সব কিছু শুনলো চুপ করে | সন্তানটা কী শুধুই মুখার্জী দম্পতির?? নিজের রক্ত মাংস দিয়ে সেও তো বড়ো করে তুলেছে তার ভিতরে ওই সদ্যজাতকে | এই বাচ্চাটা তো তারই নাড়িকাটা ধন | তাহলে নিজের মা থাকতে এই সন্তান অনাথ কেন হবে ??
ডক্টর মজুমদারকে ডেকে নিজের মনের কথা জানাবে বলে ঠিক করলো যশোদা | শ্যামা বিরোধ করলো বন্ধুর সিদ্ধান্তের | সে বলল, " তু্ই তোর একটা বাচ্চাকে সুন্দর ভবিষ্যত দেওয়ার জন্য এই পথে পা বাড়িয়ে ছিলি | তাহলে আরেকটা বাচ্চার দায়িত্ব তু্ই নিবি কী করে যশোদা ?? এতো বড়ো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একটু ভাব!! .... প্লিজ !! "
যশোদা হেসে বলল, " মিসেস মুখার্জী কী নেবেন না ওদের বাচ্চাকে, ডক্টর মজুমদার ?? "
ডক্টর মজুমদার কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বললেন, " কী বলি, বলুন তো?? নিজের সন্তানকে দেখে একটুও মায়া জন্মালো না ?? কেমন অবলীলায় বলে দিলেন, " অন্য কারোর কাছে দিয়ে দিন | এককালীন খরচপাতি যা লাগে, আমরা দিয়ে দেবো | " ভাবুন এটা কোনো কথা হোলো?? "
যশোদা কিছুক্ষন ভাবলো কিছু একটা | তারপরে ডক্টর মজুমদারকে বলল, " ডক্টর মজুমদার, আপনার কাছে একটা জিনিস চাইবো, বিশ্বাস করে দিতে পারবেন ?? "
ডক্টর মজুমদার বললেন, " বলুন, কী চান ?? "
যশোদা বলল, " আমাকে দেড় লাখ টাকা ধার দিতে পারবেন | আমি একটু সুস্থ হয়েই আপনাকে টাকাটা শোধ দিয়ে দেবো | আপনি তো জানেনই, মিসেস মুখার্জীর দেওয়া এক লাখ টাকা আমার কাছে রাখা আছে | সেই টাকাটা আমি সার্টিফিকেট করে রেখে দিয়েছি | একটু সুস্থ হয়ে ব্যাংকে গিয়ে সার্টিফিকেটটা ভেঙেই আপনাকে আপনার টাকাটা ফেরত দিয়ে দেবো | দেবেন আমাকে ধার বিশ্বাস করে?? টাকাটা কিন্তু আজকেই আমার একাউন্টে ট্রান্সফার করতে হবে আপনাকে |"
ডক্টর মজুমদার, শ্যামা দুজনেই খুব অবাক হলেন যশোদার কথায় | এতো গুলো টাকা এই মুহূর্তে কেন প্রয়োজন পড়ছে যশোদার ?? কিন্তু উত্তর জানা নেই কারোরই |
শ্যামা আশ্চর্যের সাথে জিজ্ঞেস করলো বন্ধুকে, " তু্ই কী করবি এতো গুলো টাকা নিয়ে ?? কী কাজে লাগবে তোর ?? "
যশোদা বন্ধুকে থামিয়ে দিয়ে বলল, " প্রয়োজন ছাড়া কী কেউ ধার চায় রে ?? প্রয়োজন তো নিশ্চয়ই আছে আমার | "
তারপর আবার ডক্টর মজুমদারকে বলল, " দেবেন ধার আমাকে?? "
ডক্টর মজুমদার বললেন, " আপনার একাউন্ট ডিটেইলস দিন, ট্রান্সফার করে দিচ্ছি দেড় লাখ টাকা | "
কথা গুলো বলে ডক্টর মজুমদার বেরিয়ে যাচ্ছিলেন ঘর থেকে | যশোদা বলল, " যাবেন না ডক্টর মজুমদার, একটু দাঁড়ান | " ...... তারপরে শ্যামাকে বলল, " মিস্টার আর মিসেস মুখার্জীকে এই ঘরে ডাক তো শ্যামা | বল, আমি ডাকছি | "
ঘরের মধ্যে উপস্থিত দুজনের কেউই বুঝতে পারলো না, যশোদা কী করতে চাইছে | শ্যামা গিয়ে ডেকে নিয়ে আসলো মুখার্জী দম্পতিকে |
মিসেস মুখার্জী ঘরে ঢুকেই যশোদাকে বললেন, " আপনি চিন্তা করবেন না, যশোদা | আপনার বাকি এক লাখ টাকা আপনাকে দিয়ে দেবো আমরা | আমাদেরই কপালের দোষ, এমন বাচ্চা জন্ম নিলো | শুনেছেন তো, কেমন বাচ্চা জন্ম নিয়েছে!! "
যশোদা ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি এনে বলল, " শুনবো কী মিসেস মুখার্জী, আমিই তো ওকে প্রথম দেখেছি | সারোগেট হলেও আমি তো ওকে জন্ম দিয়েছি | কোথাও না কোথাও তো আমিও ওর মা, তাই না?? আপনাদের মনের অবস্থা বুঝতে পারছি আমি | কিন্তু সন্তানটা তো আপনাদেরই | তাকে তো আর ফেলে দিতে পারবেন না | "
মিসেস মুখার্জী বললেন, " না, না, এরকম প্রতিবন্ধী বাচ্চা আমাদের চাই না | আমরা ডক্টর মজুমদারকে বলে দিয়েছি, উঁনি ওই বাচ্চাটার কিছু একটা ব্যবস্থা করে দেবেন | খরচপাতি যা লাগবে, আমরা এককালীন দিয়ে দেবো | "
মিসেস মুখার্জীর কথায় খুব হাসলো যশোদা | বলল, " আসলে নিজের শরীরে বড়ো করে তোলেননি তো বাচ্চাটাকে, তাই এতো সহজে ঝেড়ে ফেলতে পারছেন আপনি | এখন, বুঝতে পারছেন তো, ভগবান কেন আপনাকে মা হওয়ার ক্ষমতা দেননি | যাক গে, ছাড়ুন ওসব কথা | ওই টুকু শিশুর কথা আপনাকে ভাবতে হবে না | আপনি শুধু দুটো কাজ করবেন | মিস্টার মুখার্জী, আপনিও ভালো করে শুনুন | আপনারা আপনাদের যে কোনো একজনের ব্যাঙ্কের একাউন্ট ডিটেইলস দেবেন আমাকে, আজই | আপনি যে এক লাখ টাকাটা আমাকে দিয়েছিলেন আপনার সন্তানকে পৃথিবীতে আনার জন্য, সেই টাকাটা সুদ সমেত ফেরত দেবো আপনাকে |.... আর হ্যাঁ, একজন উকিলের সাথে কথা বলে পাকাপাকি ভাবে আইনগত আপনাদের মেয়েকে আমার করে দেবেন | ওই মেয়ের উপরে আপনার আর কোনো অধিকার রইল না | "
যশোদার কথা শুনে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো মুখার্জী দম্পতি | তাঁরা যশোদাকে বললেন, " টাকা কেন ফেরত দেবেন আপনি?? বরং আমরা আপনাকে আরও বেশি কিছু টাকা দিচ্ছি | "
যশোদা হেসে বলল, " না থাক, মিস্টার মুখার্জী | আমি টাকাটা নিয়েছিলাম আপনাদের সন্তানকে নিজের গর্ভে কিছু মাস থাকার জন্য | সে যখন আপনাদের সন্তানই নয়, তখন আপনাদের কাছ থেকে কী করে টাকাটা নিই বলুন!! আমি আমার সন্তানের জন্য আপনাদের মতো মানুষদের কাছ থেকে ভিক্ষে নিতে পারবো না | আপনারা ব্যাঙ্ক ডিটেইলসটা দিন, আমি টাকা ট্রান্সফার করে দিচ্ছি, আজই | "
মুখার্জী দম্পতি মাথা নিচু করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে শ্যামা বলল, " এ কেমন সওদা করলি যশোদা ?? জীবনের অঙ্কে যে তু্ই খুব কাঁচা রে !! "
যশোদা বলল, " এসবের মধ্যে আমার অপরাধটাই বা কম কী বল ?? একজন মা হতে পারবে না বলে আমি নিজের গর্ভ ভাড়া দিয়ে তার সন্তানকে পৃথিবীতে এনে দিচ্ছিলাম | টাকার সাথেই সম্পর্ক ছিল আমার | পৃথিবীতে এনে দেবার পর তার জন্য কোনো অনুভূতিই রাখবো না, এমনটাই তো ভেবেছিলাম | কিন্তু সেটা তো ভগবানের মঞ্জুর ছিল না | এই আট মাস ধরে শুধু বলেছি, " মা লক্ষী ধরা দাও আমার কাছে | " আকুল হয়ে ডেকেছি বলেই তো মা লক্ষ্মী ধরা দিলো আমার কাছে সন্তান রূপে | এতো কিছু না হলে কী মিসেস মুখার্জী ছাড়তেন তাদের সন্তানকে | তাই, এই বাচ্চা, আমার কাছে লটারী | ঈশ্বরের কাছে যা চেয়েছি, তাই পেয়েছি | বাকিটা দেখে নেবো | "
পাঁচ দিন বাদে সদ্যজাতকে কোলে নিয়ে যশোদা বেরোবার সময়ে ডিসচার্জ সার্টিফিকেট ধরিয়ে দিলেন ডক্টর মজুমদার, যেখানে বাচ্চার মায়ের জায়গায় নাম আছে যশোদার | এই পাঁচ দিনে মুখার্জী দম্পতির সেই এক লাখ টাকা সুদ সমেত ট্রান্সফার করে দিয়েছে যশোদা | এখন আইনত ভাবেও সে ফুটফুটে মেয়েটার মা |
মুখার্জী দম্পতিকে নার্সিংহোমের বিলও মেটাতে হয়নি | ডক্টর মজুমদার বলেছেন, " এটা আমার তরফ থেকে যশোদা আর ওঁর সন্তানকে দেওয়া ছোট্ট উপহার | "
নার্সিংহোম থেকে বেরোবার কিছু মুহুর্ত আগে শ্যামা বন্ধুকে নিতে এসেছে | সাথে এসেছে ছোট্ট রিয়া | সে আজ তার ছোট বোনকে নিজে বাড়ি নিয়ে যাবে | শ্যামা সেই পাঁচ দিনের বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে বলল, " ওর নাম কী রাখবি যশোদা?? "
যশোদা বলল, " রিয়ার ছোট বোন | তাই রিয়ার সাথে নামের তাল মিলিয়ে ওর নাম হবে হিয়া | আর তাছাড়া ওর সাথে তো আমাদের মনের সম্পর্ক বেশি, তাই না বল ?? "
শ্যামা ছোট্ট হিয়াকে আদর করতে করতে বলল, " তোর এই লটারীর ভাগ আমাকেও দিস বন্ধু | আমারও তো জীবনে কিছু দেওয়ারও নেই, নেওয়ারও নেই | দুজনে মিলেই না হয় রিয়া আর হিয়াকে বড়ো করে তুলবো | ওদের বড়ো হওয়ার জন্য যা কিছু খরচ হয়, দুই বন্ধু ভাগ করে নেবো সেসব | "
শ্যামার কথায় দুজনেরই চোখে জল এলো | লটারীতে মানুষ টাকা, গাড়ি, বাড়ি, আসবাবপত্র, গয়নাগাটি কত কিছু পায় | কিন্তু লটারী হিসেবে যে সন্তানও পাওয়া যায়, এ কে জানতো !! এমন ভাগ্য কপাল করলেই পাওয়া যায় !!
বাড়িতে আসার পরে লতিকা কাকিমার আতিথ্যে হিয়ার গৃহপ্রবেশ হোলো দেখার মতো | যেন সত্যিই মা লক্ষ্মী প্রবেশ করেছেন ঘরে |
পরেরদিন, হঠাৎ করে যশোদার মোবাইলে একটা ফোন | ফোনটা আননোন নম্বর থেকে এসেছে বলে ফোনটা ধরলো না যশোদা | বাড়িতে হিয়ার ছয় ষষ্ঠীর পুজো হচ্ছে আজ | বেশ একটু ব্যস্ততাই আছে বাড়িতে |
আবারও একই নম্বর থেকে পরপর দুবার ফোন এলো | কিন্তু অন্য ঘরে থাকার জন্য কেউই শুনতে পেলো না ফোনের রিংটোন |
ঘন্টাখানেক বাদে হিয়ার ছয় ষষ্ঠীর পুজো শেষ করে পুরোহিত সবে বাড়ি থেকে বেড়িয়েছেন | হিয়াকে কোলে নিয়ে দুধ খাওয়াচ্ছে যশোদা, ঠিক এমন সময় সমর এসে হাজির বাড়িতে | সমরের কাছ থেকেই লটারী কাটে যশোদা |
শ্যামা দরজা খুলতেই সমর বলল, " শ্যামাদি, যশোদাদি কোথায় ?? "
শ্যামা বলল, " ঘরে | কিন্তু কী হয়েছে?? তুমি যশোদাকে খুঁজতে বাড়ি অব্দি ছুটে এসেছো কেন?? "
সমর হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, " দিদিকে একটু ডাকবেন প্লিজ | "
লতিকা কাকিমার কাছে হিয়াকে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো যশোদা | সমরকে হাঁপাতে দেখে বলল, " ভিতরে আসো ভাই | জল খাবে?? এতো হাঁপাচ্ছ কেন?? কী হয়েছে?? "
সমর ঢোকঢোক করে এক গ্লাস জল খেয়ে বলল, " একে ওকে জিজ্ঞেস করে, অনেক কষ্টে আপনার বাড়িটা খুঁজে পেয়েছি | আজ বাম্পার লটারীর রেজাল্ট বেরোবার তারিখ, মনে আছে আপনার ?? "
যশোদা বলল, " ও রেজাল্ট দেখে আমি কী করবো সমর | আমি তো আমার লটারী পেয়ে গেছি | ওই দেখো, আমার দ্বিতীয় মেয়ে, ওর দিদার কোলে আছে | মা লক্ষ্মী ধরা দিয়েছেন তো আমার কাছে | এক সাথে কী দুটো বাম্পার লটারী জেতা যায়, বলো ?? "
সমর উত্তেজনার সাথে বলল, " হ্যাঁ, দিদি, জেতা যায় | আপনি বাম্পার লটারীতে প্রথম পুরস্কার জিতেছেন, পাঁচ কোটি টাকা!! "
ঘরের মধ্যে উপস্থিত কেউই সমরের কথা বিশ্বাস করতে পারছে না | এমন আবার হয় নাকি !!
সমর বলছে, " সত্যি বলছি, এই দেখুন, আপনার লটারীর নম্বর | মা লক্ষ্মী সত্যি সত্যিই ধরা দিয়েছেন আপনার কাছে | আপনি এখন কোটিপতি দিদি!! "
শ্যামা, যশোদা দুজনেই অঝোরে কেঁদে চলেছে | এমন ভাবেও মিরাকেল ঘটে জীবনে !! দুই বন্ধু মিলে দুচোখ ভরে দেখা স্বপ্ন গুলোকে আরেকবার ঝালিয়ে নিচ্ছে | এই টাকা থেকে এবার হিয়ার ট্রিটমেন্ট করাতে হবে | ডক্টর মজুমদার বলছিলেন, " চেন্নাইতে উঁনার পরিচিত ভালো একজন প্লাস্টিক সার্জন আছেন | "....তার কাছে নিয়ে গিয়ে হিয়ার ট্রিটমেন্ট করাতে হবে |
এই সমাজ শ্যামা, যশোদার মতো মায়েদের মনের অব্যক্ত বেদনার কথা জানতে না পারলেও, বুঝতে না পারলেও ঈশ্বর বুঝেছেন, এমন মায়ের ব্যক্ত অব্যক্ত ইচ্ছের কথা গুলো | তাই তো, এমন সব দামী দামী লটারীর বৃষ্টি দিলেন যশোদাকে, যার ছিটে ফোঁটা পেয়ে ধন্য হবে শ্যামা নামের মরুভূমিটিও |
-----------------------------------------------------------------
সমাপ্ত
