Gopa Ghosh

Romance Tragedy

3  

Gopa Ghosh

Romance Tragedy

#lovelanguage

#lovelanguage

3 mins
227



ভালোবাসার কথা লিখতে বসে স্মৃতির পটে ভেসে এলো এক অন্যরকম ভালোবাসার কাহিনী। মাঝে মাঝে ভাবি ভালোবাসার উৎস স্থল একটাই, মন বা হৃদয় কিন্তু ভালোবাসার কত প্রকারভেদ। বাবা মায়ের প্রতি ভালোবাসা, স্ত্রী বা স্বামীর প্রতি, ভাই বা বোনের প্রতি, প্রেমিক বা প্রেমিকার প্রতি, সর্বোপরি বন্ধুর প্রতি ভালোবাসা। তবে আজ যে ভালোবাসার কথা বলবো সেটা এর কোনটার সাথেই মেলে না। আমি চাকরি সূত্রে বেশ কয়েক বছর দুর্গাপুরে ছিলাম। অফিস থেকে পাওয়া কোয়াটার এ জিনিসপত্র গোছাতে তিন চারদিন লাগলো। আমার রান্না বা ঘরের কাজে সাহায্য করার জন্য নিলু নামে একটি ছেলে ছিল। বেশ কয়েকদিন ধরে লক্ষ্য করলাম একটি দশ বারো বছরের মেয়ে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকে। বেশ ভূষা দেখে ভিখারী একেবারেই মনে হয় না। সারা সপ্তাহে অফিস আর বাড়ী করেই সময় কাটে তাই মনে করে নীলুকে জিজ্ঞেস করা হয় না মেয়েটির সম্বন্ধে। রবিবার পুব দিকের জানালা টা খুলতেই নজরে পড়লো মেয়েটি রাস্তা থেকে ঘরের দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে। আমি এবার নীলুকে জিজ্ঞেস করলাম কিন্তু ও কিছুই বলতে পারলো না। নিলুও এই এলাকায় এসেছে আমার দু চারদিন আগে।। তবে মেয়েটা নিলুর নজরও এড়ায় নি এটা বুঝতে পারলাম। ভাবলাম মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলেই বা ক্ষতি কি। নিলুকে দিয়ে মেয়েটিকে ডাকতে পাঠালাম কিন্তু নিলু জানালো কাছে যেতেই সে ছুটে চলে গেছে। আমি ওই চিন্তা মন থেকে বার করে দিলাম। বিদেশ বিভুইয়ে কোন ব্যাপারে ফেঁসে যাবো তার ঠিক নেই। নিজেই নিজের কৌতুহল দমন করলাম। এরপর


এক রবিবার সকালে সবে ঘুম থেকে উঠে চা নিয়ে বাগানে বসেছি, এক ভদ্রলোক বাড়িতে ঢুকে আমাকে হাত জোড় করে নমস্কার জানালেন। আমিও প্রতি নমস্কার করে ওনার পরিচয় জিজ্ঞেস করলাম। জানলাম উনি কিছুদিন মেয়ের বাড়ি ছিলেন, আগের দিন ফিরেছেন, আমার দুটো বাড়ীর পাশেই থাকেন। আজ আলাপ করতে এসেছেন। এত সকালে আসার জন্য বারবার ক্ষমা চাইলেন। ভদ্রলোক দেখলাম খুব বিনয়ী। চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন প্রায় বছর দুই। ভদ্রলোকের সাথে কথা বলার সময় দরজার কাছে আবার মেয়েটিকে দেখতে পেলাম। আমি কিছু বলার আগেই দেখি ভদ্রলোকটি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন "ও এখনো রোজ এই বাড়িতে আসে?" আমি যেনো কিছুটা অবাক সুরে ওনাকে জিজ্ঞেস করলাম "আপনি চেনেন নাকি মেয়েটিকে?" ভদ্রলোক বলে উঠলেন "হ্যাঁ বিলক্ষণ চিনি, ওর নাম করবী, ওরা আগে এই কোয়াটারেই থাকতো, ওর বাবা একটা অ্যাক্সিডেন্টে মারা যাওয়াতে এখন কোয়াটার ছেড়ে মামার বাড়ির পাশে থাকে। আপনি আসার আগে এই কোয়াটার বেশ কিছুদিন খালি পড়েছিল, তখন তো করবী সারাটা দিন এই বাগানে পড়ে থাকত, শেষে ওর মা অনেক বকাবকি করে নিয়ে যেত, কিন্তু পরদিন আবার যে কে সেই" আমি ওনার কথা থামিয়ে বলে উঠি "কিন্তু এখানে ওর এত টান কেনো, কি জন্য আসে এই বাড়িতে?" ভদ্রলোক একটু চুপ করে থেকে বলে উঠলেন "তাহলে শুনুন, করবী হওয়ার আগে ওর বাবা একটা কুকুর পুষেছিল, বেশ ভালো জাতের, করবী বড় হয়েছে ওই জিমির সাথেই খেলে কারণ ছোট্ট করবি কে একা বাড়িতে রেখে ওর মা বাজার দোকান করতে চলে যেত, ফিরে এসে দেখতো জিমি তখনও তার ডিসে রাখা খাবার খায় নি, ঠায় বসে আছে। আমরা সবাই অবাক হয়ে যেতাম জিমির এই ভালোবাসা দেখে। করবীও খুব ভালোবাসত জিমিকে, কোনো নিমন্ত্রণ বাড়িতে গেলে নিজে না খেয়ে জিমির জন্য মাংস নিয়ে আসতো। সারাক্ষণ এই বাগানে জিমির সাথে খেলে বেড়াতো মেয়েটা। একদিন খবর পেলাম করবির বাবা অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছে। সব কাজ মেটার পর করবীর মা অফিস থেকে যা টাকা পেল তাই দিয়ে বাপের বাড়ির পাশে একটা ঘর ভাড়া করে কোয়াটার ছেড়ে দিল কিন্তু জিমিকে রাখা নিয়ে সমস্যা হলো। করবীর বাবার এক বন্ধু জিমিকে নিতে সন্মত হলে তাকেই দিয়ে দিল করবীর মা


কিন্তু জিমি কে না দেখে মেয়ে ক্রমশ অসুস্থ হয়ে পড়ায় বেশ কয়েক মাস পর সেই বন্ধুর বাড়ি গেলো জিমিকে ফিরিয়ে আনতে, কিন্তু করবী কে না দেখতে পেয়ে জিমিও অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। খাওয়া দাওয়া করতো না। যদি কথা বলতে পারতো হয়তো তার কষ্টটা বোঝাতো। জিমি মারা গেলো। করবীর মা এই খবরটা চেপে রাখতে পারে নি, রাখলে বোধহয় ভালো হতো। করবী এখনো তার জিমিকে খোঁজে, তার গায়ের গন্ধ মাখানো এই বাড়িটা সে কিছুতেই ভুলতে।পারছে না" দেখলাম ভদ্রলোকের চোখ যেনো চক চক করে উঠেছে। আমার মনে হচ্ছিলো যেমন একই গাছের ফুল নিয়ে কেউ পূজা করে, কেউ বিয়ের মালা গাঁথে আবার এই ফুলই মানুষের শেষ যাত্রায় ব্যবহৃত হয়, ফুল কিন্তু একই। ভালোবাসাও তাই হৃদয় থেকে এসে নানা ভাগে ভাগ হয়ে যায়।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance