#lovelanguage
#lovelanguage
রিয়া মদের গ্লাসটা হাতে নিয়ে পবনের দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বলে "তুমি কি আমাকে ঘৃনা করছো?" পবন গ্লাসটা টেবিলের উপর রেখে রিয়ার মুখের দিকে তাকায়। চুপ থাকে কিছুক্ষণ। রিয়া এই চুপ থাকা সম্মতির লক্ষণ ভেবে আবার বলে ওঠে "হ্যাঁ আমার মত দেহ ব্যবসায়ীকে ঘৃনা শুধু তুমি কেনো, এখান থেকে এনজয় করে চলে যাওয়ার পর সব পুরুষই করে, তাতে আমার কিছু যায় আসে না, বেঁচে থাকতে গেলে আমাকে যতদিন শরীর থাকবে উপার্জন করতে হবে"
পবন যেনো বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। তার মনে ভাসছিল সেই ছোটবেলার অবন্তীর ছবি। পাশের বাড়ির অবন্তী প্রতিবেশী নয়, ছিল যেনো তাদের পরিবারেই মেয়ে। পবনের মা কণিকা খুব স্নেহ করতো তাকে। পবনের বোন মালার সাথে খুব ভাব ছিলো। সারাদিন দুটিতে রান্না বাটি খেলায় মেতে থাকতো। পবন আর ওর ভাই কতবার ওদের পুতুলগুলো নিয়ে গিয়ে গাছের ডালের সাথে দড়ি বেঁধে ঝুলিয়ে দিয়ে বলেছে "তোদের মেয়েগুলো সব গলায় দড়ি দিয়েছে"। শুনে দুজনের কান্না সামলাতে কনিকাকে রান্না ফেলে তড়িঘড়ি আসতে হয়েছে। এইরকম কতো ঘটনা ভেসে উঠছে পবনের স্মৃতিপটে। এবার যেনো ঘোর ভেঙ্গে বলে উঠলো "তুই কত বদলে গেছিস অবন্তী, আগের সাথে মেলাতেই পারছি না" রিয়া হো হো করে হেঁসে উঠে উত্তর দেয় "যখন আমি নিজেই নিজেকে মেলাতে পারি না তখন তুমি কি করে মেলাবে পবন দা"
মদের গ্লাসে একটা চুমুক দিয়ে আবার বলে ওঠে "আমি অবন্তী নই, সে কবেই মারা গেছে, আমি রিয়া" পবন এতক্ষণ পরে সিগারেটের প্যাকেট টা বার করে একটা সিগারেট ধরায়। রিয়া পবন কে না বলেই ওর প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বার করে। পবন দেশলাই টা রিয়ার দিকে এগিয়ে ধরে বলে "তুই কি করে এখানে এলি, আমাকে বলতে আপত্তি না থাকলে বল, খুব জানতে ইচ্ছা করছে" রিয়া এর উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় "তুমি এখানে এলে কেনো, সেটাও আমার বড় জানতে ইচ্ছে করছে"। পবন এতক্ষণ চিয়ারে বসেছিল এবার খাটে এসে বসে বললো "আমি কয়েকদিন আগে এক মেলায় ঘুরতে এসে তোকে দেখেছিলাম। কিন্তু সেদিন এত ভিড়ে তোর সাথে কথা বলতে পারি নি, তবে দূর থেকে তোর একটা ছবি তুলে নিয়েছিলাম, আর সেটা দেখে এক বন্ধু তোকে চিনতে পারে, তার এখানে যাওয়া আসা আছে, আমি কথাটা প্রথমে বিশ্বাস করতে পারি নি তাই ওই বন্ধুকে নিয়ে তোকে স্বচক্ষে দেখে গিয়েছিলাম, কিন্তু সেদিন তোর ঘরে আসি নি, আজ শুধু এইজন্যই এলাম......" কথাটা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই রিয়া বলে উঠলো "তবে বসে আছো কেনো, শুরু করো"। রিয়াকে প্রচণ্ড অবাক করে দিয়ে পবন তার গালে এক চড় কশালো। রিয়া দেখলো সেই আগের মত রাগে পবনের চোখ লাল হয়ে গেছে। রিয়া যেনো আগের চেয়ে
অনেকটা নরম সুরে বলে ওঠে "তুমি আমার কথা শুনলে বুঝতে পারবে দোষ আমার নয়, এখানে এসেছি তোমার পরিবারের জন্যই" পবন ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। রিয়া বলতে শুরু করে "তুমি যেদিন আমাকে বলেছিলে কলকাতায় গিয়ে একটা চাকরি জোগাড় করেই আমাকে বিয়ে করবে, সেদিন থেকেই আমি নিজেকে তোমাদের বাড়ির বউ ভাবতাম, তোমাকে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। তুমি না থাকলেও সারাদিন মালার সাথে তোমাদের বাড়িই পড়ে থাকতাম। বুকে একরাশ আশা নিয়ে তোমার ফেরার অপেক্ষা করতাম। কাকিমাও এটা টের পেত আমি জানি। তাও মুখে কিছু বলত না, আমিও না।
একদিন মালা আর আমি ছাদের ঘরে কিছু সেলাইয়ের কাজ করছিলাম, তোমার ভাই বলু এসে কাকিমা ডাকছে বলে মালাকে নিচে পাঠায়, আমিও সাথে যেতে গেলে আমার হাত ধরে বাধা দেয়, তোমার থেকে দু বছরের ছোট হলেও বলু আমার বন্ধুর মতই ছিল, আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারি নি সেদিন তোমার ভাই আমার কুমারীত্ব নষ্ট করবে। সেই শুরু, মোবাইল এ ভিডিও করে আমাকে ভয় দেখাতো। ও জানতো তুমি আমাকে ভালোবাসো তাই তোমাকে সেসব ছবি দেখিয়ে দেওয়ার ভয় দেখাতো। আমার চুপ করে থাকা ছাড়া আর কোনো পথ ছিল না। তখনও তোমার আসার আশায় পথ চেয়ে থাকতাম। কিন্তু ভাগ্য আমার সহায় ছিল না, আমি প্রেগন্যান্ট হয়ে গেলাম।অনিচ্ছা সত্বেও বলুর কাছে গেলাম উপায় বাতলানোর জন্য। ওর ভয়ে মুখ শুকিয়ে গেলো। আমাকে পরেরদিন নিয়ে গেলো কলকাতায় এক নার্সিং হোমে। এবরশন করে এক বন্ধুর বাড়িতে একদিন বিশ্রাম নেওয়ার নাম করে রেখে গিয়ে আর আসে নি। আমি রাস্তা ঘাট কিছুই চিনি না, চিনলে বুঝতে পারতাম, ওটা সোনার জায়গা, মানে এখন যেখানে। আমার বাড়িতে খোঁজ করার মতো কেউ ছিলো না, তুমি তো জানো মামার বাড়ির লাথি ঝাঁটা খেয়ে মানুষ, ওরা ভাবলো আপদটা যখন নিজে থেকেই বিদায় হয়েছে, তখন আর খোঁজ করে লাভ নেই।
এতক্ষণ পরে পবন দেখলো রিয়ার কাজল পরা বড় বড় চোখে যেনো বর্ষা নেমেছে। পবন নিজের চোখকেও আর শুকনো রাখতে সমর্থ হলো না। দু হাত দিয়ে তার অবন্তীকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো "তোকে কোনো কলঙ্ক ছুঁতে পারবে না, আমার কাছে তুই আমার সেই আগের অবন্তী, তোকে বিয়ে করে এখান থেকে নিয়ে যাবো, আমি তোকে ভালোবাসি, সেই আগের মতই"।
অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে পবন ওই এলাকা থেকে তার ভালোবাসাকে উদ্ধার করে বিয়ে করেছিল। এক নিষ্পাপ ভালোবাসার কাছে হার মেনেছিলো গাঢ় রঙের মেকি ভালোবাসা।

