STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Thriller

4  

Nityananda Banerjee

Thriller

ললন্তিকা ধারাবাহিক

ললন্তিকা ধারাবাহিক

6 mins
405

পর্ব সত্তর


সজ্জন সিং সত্যিকারই সজ্জন ব্যক্তি । বিজ্ঞাপনলব্ধ ললন্তিকাকে পেয়ে মনের কোথাও যেন প্রেমের ছোঁয়া পেয়েছেন । তিনি বুঝে গিয়েছেন মেয়েটি সুদূর বাংলা থেকে প্রতারিত হয়ে তাঁর কাছে এসে গিয়েছে। সেইজন্য ললন্তিকার উপর একটা কেমন মায়া পড়ে গেছে। 

জীবনে কোনদিন সংসার পাতবেন না বলে তেমন কোন অঙ্গীকার না করলেও; অবিচল ছিলেন মেয়েদের হাত থেকে শত যোজন দূরে থাকতে । কারণটা অবশ্যই তাঁর মা নিজে । 

তখন কতই বা বয়স তাঁর ! নয় কি দশ ! রোজকার মত খেলনা পিস্তল নিয়ে খেলছিলেন । তাঁর মা শ্রীমতি পাঙ্খুরী সিং কৌর আর বাবা শ্রী গুরদীপ সিং কৌরের মধ্যে কথা কাটাকাটি চলছে কোন বিষয়ে । সজ্জন তা' নিত্যকার ঘটনা বলে নিজের মনে খেলে যাচ্ছেন 

হঠাৎ গুলির শব্দ শুনে নিজের খেলনা পিস্তলটার দিকে তাকালেন । তখনও তার থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে । মাকে বলতে শোনা গেল - য্যায়সি করনি এ্যায়সি ভরণি।

দৌড়ে এলেন বাবার কাছে । তখন তিনি মাটিতে পড়ে আছেন । কিছু বলতে যাওয়ার আগে মা ওঁর মুখ চেপে ধরে ভেতরের ঘরে তালাবন্ধ করে দিলেন ।

গুরদীপ সিং কিছু বলার চেষ্টা করছিলেন । মা ওঁর গলাটা চেপে ধরলেন । কিছুক্ষণের মধ্যে বাবা নিথর হয়ে গেলেন । 

হরভজন কাকার সঙ্গে মায়ের খুব দোস্তি । তিনি দেখেছেন তাঁকে ঘুম পাড়িয়ে দেবার নাম করে তাঁকে ঘরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিতেন। হরভজন রাত দশটা - এগারোটা পর্য্যন্ত মায়ের সঙ্গে কি করতেন দেখেননি কিন্তু খুব হাসি মস্করা হোত ওদের দুজনের।

বাবা তো গ্যারাজে থাকতেন । রাতে বড় একটা বাড়ি আসতেন না । 

বাবা যেদিন ওদের দেখে ফেলেছিলেন সেদিন থেকেই অশান্তির শুরু । সেদিন তাঁর হাতের পিস্তলের গুলি খেয়ে শেষ হল ।

একটু বড় হয়ে সজ্জন মাকে বলেছিলেন - বাবাকে গুলি মেরে খুন করেছি; আমাকে পুলিশে দিলে না তো !

ওড়না দিয়ে ছেলের মুখ চেপে বলেছিলেন - সে তো তোর হরভজন চাচার বদান্যতা । 

- কিন্তু আমার হাতে তো খেলনা বন্দুক ছিল !

মা বলেছিলেন - ওটাকে শেষ করতেই আসল পিস্তলটা তোর হাতে দিয়েছিলাম। যাতে সাপও মরে লাঠিও না ভাঙে ।

সজ্জনের স্পষ্ট মনে আছে বাবার পিস্তল দেখে একবার চেয়েছিলেন ওটা নাড়াচাড়া করতে । ওঁর বাবা দিল্লী থেকে হুবহু একই রকমের খেলনা পিস্তল আনিয়েছিলেন ছেলের জন্য । সেদিন সেই ভুলের জন্যই বাবা মারা গেছিলেন।

মাকে বলেছিলেন - বাবাকে মেরে ফেলার কি দরকার ছিল ?

- ওর গুনাহের জন্য ওকে মরতে হল । আমার জীবনটা তছনছ করে দিয়েছিল বুড়োটা ।

সজ্জন পরিষ্কার বুঝে গিয়েছিলেন মেয়েরাও কি সাংঘাতিক হয় ! 

পরে অবশ্য হরভজন চাচার সঙ্গে তাঁর মা একদিন ওকেও ছেড়ে পালিয়েছিলেন । শোনা যায় পাতিয়ালায় নাকি তাঁরা নতুন সংসার পেতেছেন ।

সেই থেকে মেয়েদের প্রতি তাঁর বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়েছিল । তিনি নারী সংসর্গ সযত্নে এড়িয়ে চলেছিলেন । 

কিন্তু প্রদ্যুম্ন ঘোষাল সাহেবের সাথে ঘনিষ্ঠতা হবার পর এবং তাঁর সুখী পরিবারটির দিকে চেয়ে মাঝে মাঝে মনে হোত এমন সংসার বাবা কেন পেলেন না।

প্রদ্যুম্ন ঘোষাল ধীরে ধীরে তাঁর মনের পরিবর্তন আনলেন এবং সজ্জন সিং তাঁর প্রতি এত একনিষ্ঠ হয়ে পড়লেন যে তাঁর মনে হল অন্তত শেষ জীবনটার জন্য একজন সাথীর প্রয়োজন । কিন্তু তাঁর মনে মায়ের আচরণ এমন ভাবে গেঁথে গিয়েছে যে তিনি মেয়েদের উপর বিশ্বাস রাখতে পারছেন না ।

প্রদ্যুম্ন সাহেব বললেন - অভি ভি সময় হ্যায় ; একঠো শাদি কর লিজিয়ে।

- নেহি নেহি । ম্যায় নে শাদিবাদি নেহি করুঙ্গা। এ্যাসে হি ঠিক হুঁ।

- লেকিন কবতক ? বুড়াপ্পা মে আপকো কৌন দেখভাল করেগা ?

- য়ে বাত তো সহী বোলা স্যার । লেকিন মুঝে-

আসলে তাঁর বলার বিষয় হল ঠিক বিয়ে নয়; তবে যদি কোন মেয়ে স্বেচ্ছায় দায়িত্ব নেয় তবে তিনি আপত্তি করবেন না ।

প্রদ্যুম্ন পেয়ে বসলেন । 

- ঠিক হ্যায়, আপকা জরুরত কে মোতাবেক এক কাম কিজিয়ে ; এ্যায়সি কোই লড়কি চুনিয়ে যো দিখনেমে সুন্দর লেকিন বাঁজ হো - এ্যায়সি লড়কি চুনিয়ে । আপকো সন্সার করনে কা কোই জরুরত নেহি পড়েগা।

পরামর্শ পছন্দ হল সজ্জনের । বললেন - লেকিন এ্যায়সি লড়কি কাহাঁ মিলেগি ?

- থ্রু এডভার্টাইজমেন্ট ইন রেপুটেড নিউজ পেপার্স।

পরের ঘটনা তো ললন্তিকার আগমন । ওর থেকে যাওয়া তা' বাধ্য হয়েই হোক বা নিরাপত্তাহীনতা থেকে মুক্তি পেতেই হোক।

ললন্তিকা সেই যে সংসারে জড়িয়ে পড়ল আর কুচিন্তাগুলো তার মাথায় এলই না ।

এখন বেশ মানিয়ে নিয়েছে নিজেকে । এর জন্য সজ্জনের কৃতিত্বই সর্বাধিক। তা-ছাড়াও প্রদ্যুম্ন ঘোষালের মত ব্যক্তিত্বও তাদের সঙ্গে রয়েছে বলে আরও সুবিধা হয়ে গেছে । 

সজ্জন সিং খুবই আনন্দিত। তাঁর দেখভালের কোন ত্রুটি করে না কামিনী ওরফে ললন্তিকা । সজ্জনই প্রস্তাব দিয়েছিলেন কুম্ভস্নান করার । 

প্রয়াগ থেকে নয়ডায় ফিরে সজ্জন আরও খুশি। মন মেজাজ ফুরফুরে। ললন্তিকার কোন অসুবিধা না হয় সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর তাঁর। ললন্তিকাও খুশি।

একদিন সজ্জন ও ললন্তিকা লাঞ্চ করছেন । খেতে খেতে ললন্তিকা দৌড়াল টয়লেটে । সজ্জন ভাবলেন পটিমটি করতে গেছে। 

অনেকক্ষণ টয়লেট থেকে ফিরছে না দেখে সজ্জন টয়লেটের দরজায় দাঁড়িয়ে বললেন - কেয়া হুয়া জী ! ইতনা সময় টয়লেট মে কেয়া কর রহি হো ?

এরপরই তিনি আওয়াজ পেলেন ললন্তিকা বমি করছে।

তিনি আবার বললেন - কেয়া জী ? তবিয়ত ঠিক হ্যায় তো !

ললন্তিকা দরজা খুলে বেরিয়ে এসে বলল - চক্কর সা আ রহা হ্যায় ।

সজ্জধ বললেন - ধীরজ রখ্খো। ম্যায় ডক্টর সাবকো বুলাতা হুঁ।

ললন্তিকাকে ধরে আস্তে আস্তে বিছানায় শুইয়ে দিলেন। এসি চালিয়ে কিছুটা ধাতস্থ করলেন । নিকটবর্তী মহিলা ডাক্তারকে কল দিলেন ।

ডাক্তার এসে ললন্তিকাকে পরীক্ষা করে দেখলেন । জিজ্ঞেস করে শারীরিক অসুবিধার কথাগুলো নিজেই গড়গড় করে বলে গেলেন । ললন্তিকা সব কথাতেই - এ্যায়সি হি হো রহা হ্যায় - বলে সায় দিল ।

ডাক্তার বেরিয়ে এসে হাসতে হাসতে রায় দিলেন - য়ু আর গোইং টু বি এ ফাদার , মিঃ সিং।

হতবাক হয়ে গেলেও সজ্জন সিং তার কোন বিশেষ প্রতিক্রিয়া না দিয়ে ডাক্তারকে দরজা পর্য্যন্ত এগিয়ে দিয়ে এলেন ।

ললন্তিকার দিকে তাকিয়ে বললেন - বহুত বুরা হুয়া । বহুত বুরা হুয়া মেরে সাথ । কামিনী তুম-

ললন্তিকা বলল - কি হয়েছে ?

সজ্জন সিং ডাক্তার যা বলে গেলেন সে কথা বলতে ললন্তিকা খুব লজ্জা পেল ।

সজ্জন সিং বললেন - তুম বাঁজ নেহি হো ?

আকাশ থেকে পড়ল ললন্তিকা । ইচ্ছে করল বলে দেয় এর আগে দু'তিনবার এবরশন করিয়েছে। কিন্তু তা লুকিয়ে গিয়ে বলল - বাঁজ ! ঔর ম্যায় ? কৌন বোলা আপকো ?

- কিউ তুম নেহি জানতে হো ?

ললন্তিকা বলল - নেহি তো !

- ওহি মিঃ বাসুরয় নে বোলা থা । এক সার্টিফিকেট ভি দর্জ কিয়া থা । লগতা হ্যায় ফর্জ সার্টিফিকেট।

ললন্তিকা বলল - তার মানে তুমি চাও না আমাদের সন্তান সন্ততি হোক ।

এতদিন ললন্তিকা এবং প্রদ্যুম্নের সঙ্গে থেকে বাংলা ভাষাটা বুঝতে লিখেছেন মিঃ সিং; কিন্তু তেমন ভাবে গুছিয়ে বলতে পারেন না ।

- ও বাত নেহি! লেকিন মেরে কো বতানা চাহিয়ে থা।

- আমি নিজেই যা জানি না ; তোমাকে বলি কি ভাবে ? তোমার যদি আপত্তি থাকে আমাকে ত্যাগ দিতে পারো। আমী অন্য কোথাও চলে যাব। কিন্তু আর গর্ভপাত -

বলে চুপ করে গেল ললন্তিকা। আবার বেফাঁস কিছু বলে ফেললে হিতে বিপরীত হবে।

সজ্জন বলল - দেখো , ম্যায় ইতনা বুরা আদমী নহি হুঁ কি ম্যায় ইস সময় তুম্হে ছোড় দু । যো হুয়া সো হুয়া। য়ে বচ্চা হমারা হ্যায় হমারী হি রহেগা ।

ললন্তিকার দু'চোখ বেয়ে ফোঁটা ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল । সজ্জন রুমাল দিয়ে সেই চোখের জল আস্তে আস্তে মুছিয়ে দিলেন ।

সজ্জন বললেন - অব তবিয়ত ক্যায়সা হ্যায় ।

- ঠিক হুঁ।

- তো সামকো অস্পাতাল জানা পড়েগা ।

অবাক হয়ে ললন্তিকা বলল - এবরশন করতে হবে ?

সজ্জন হেসে গড়িয়ে পড়লেন - আরে নেহি রে বাবা । ফিরসে চেক করানা পড়েগা, কনফার্মেশন কে লিয়ে ।

- তোমার এই ডাক্তারকে বিশ্বাস হয়নি ?

- বিশোয়াস হোয়েচে । তুমাকে দাবা দেনে কে লিয়ে উনসে মিলনা জরুরি হ্যায়, নেহি তো তবিয়ত বিগড়েগি ।

( ক্রমশ )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Thriller