STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Thriller

4  

Nityananda Banerjee

Thriller

ললন্তিকা ধারাবাহিক

ললন্তিকা ধারাবাহিক

5 mins
365

পর্ব বাহাত্তর


গোপালকৃষ্ণ এবং বনলতা দেবী ইতিমধ্যেই অরবিন্দের পরিছয় পেয়েছেন । আজ ললন্তিকা সেনের কথা শুনে জ্বরের ঘোরে পড়লেন। 

- কি সাংঘাতিক মেয়ে রে বাবা ! এক পুরুষে সন্তুষ্ট নয়!

বনলতা দেবী অত্যন্ত ঘৃণাভরে কথাগুলো বললেন।

রুক্মিণী এবং শৈলদেবী তাঁকে সমর্থন করলেন । এ সব কথা মেয়ে বৌকে জানতে দেওয়া হবে না বলে তিন মহিলা সঙ্কল্প নিলেন । 

গোপালকৃষ্ণ বাবু দেবেন্দ্র ভৌমিককে জানালেন - ভায়া ! তুমি যে ললন্তিকা নামের মেয়েটিকে আশ্রয় দিয়েছিলে এবং পরবর্তী সময়ে যে মেয়েটি তোমাদের চোখে ধূলো দিয়ে আবার পালিয়ে এসেছিল সে এখন ভারতে ফিরে এসেছে।

মিঃ ভৌমিক চমকিত হলেন - কি ভাবে ওখানে গেল দাদা ? আমি তো অবাক হয়ে যাচ্ছি এইটুকু মেয়ের মাথায় কত বুদ্ধি ধরে !

গোপালবাবু বললেন - তুমি শুনলে আরও আশ্চর্য্য হয়ে যাবে ওই মেয়ে এদেশে এসে পাকা গৃহিণী হয়ে গেছে !

- কি ভাবে ? যে মেয়ে চরিত্রহীনা বলে সমাজে পরিচিত তাকে জেনেশুনে কোন ভদ্রলোক বিয়ে করেছেন ? 

- সে তো বলতে গেলে ইতিহাস হয়ে যাবে । আপাতত এটুকু শুনে ক্ষান্ত হও, শান্তি পাও মনে যে ঈশ্বর চাইলে কি না করতে পারেন !

মিঃ ভৌমিক বললেনৎ- মেয়েটিকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে। 

গোপালকৃষ্ণ মস্করা করে বললেন- কেন? প্রেমে পড়লে নাকি !

কল্যাণী আর ঐশী তার বাচ্চাটিকে উঠোনে রোদের তাপ দিচ্ছিল আর বলাবলি করছিল - কাকাবাবু কেমন একটা উৎকট ছেলেকে বাড়িতে রেখেছে বল তো !

ঐশী বলল - চুপ কর দিদিভাই! ওনার কানে কথাটা গেলে আর রক্ষে থাকবে না ।

কল্যাণী বললেন - কার কানে ?

কোথা থেকে পটকা এসে বলল - কেন রে ফুড়কি! জানিস না ওনার টার্গেট কে ? আমি যা শোনার শুনে নিয়েছি; যাই কাকাবাবুকে বলে আসি ।

ঐশীর মুখ লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠল ।

- এর মধ্যে আবার কাটাবাবুকে টানছ কেন ?

- বা: রে! টানব না ? উনিই তো উটকো ঝামেলা ঘরে তুলেছেন ।

রুদ্র বলল - না দাদা । উনি কোন ঝামেলা আনেননি বরঞ্চ তা সযত্নে এড়িয়ে যেতে চাইছেন ।

পটকা বলল - তা' কেমন ?

রুদ্র বলল্য- দেখুন ওই ছেলেকে নিয়ে যে টাগ অফ ওয়ার চলছিল এখন তা তো আর নেই। এর সঙ্গে সুন্দর ভাবে গীতা আশ্রম এবং পুলিশকেও জড়িয়ে রেখেছেন। 

পটকা বলল - যা বলেছ !

শৈল দেবীর ( অভয়ঙ্করবাবুর পত্নী ) আবার সব কিছুতেই সন্দেহ জাগে । ভাবলেন ললন্তিকাকে নিয়ে ওরা হয়তো মুখরোচক গল্প করছে। 

বারান্দা থেকেই হাঁক পাড়লেন - ও বাবা রুদ্র,পটকা তোমরা এসে ব্রেকফাস্ট সেরে নাও। আমি আবার ওই ছেলেটিকে জলখাবার দিয়ে আসি।

রুদ্র পটকা উভয়েই চলল ডাইনিং টেবিলে। ঐশী আর কল্যাণী বলল - তোমরা এস। আমরা আধঘন্টা পর আসছি।

বাড়ির ছাদে পায়চারি করছিলেন রেঞ্জার সাহেব । নীচে বাগানের ঝোপ থেকে একটানা মড়মঢড় আওয়াজ শুনে তিনি ছাদের কার্নিশে লুকিয়ে দেখার চেষ্টা করলেন । তিন চারজন লোক বাগানে ঢুকে পড়েছে। এই আলোময় উজ্জ্বল সকালে কাদের এত সাহস বাগানে ঢোকে !

তিনি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে চেয়ে রইলেন তাদের গতিবিধির দিকে। 

একি ! এরা কারা ? এখানে কি করে ? 

ভাবছেন তিনি । দেখলেন তাদের লক্ষ্য একতলার কোণের ঘরটা । সর্বনাশ ! ও ঘরটায় তো অরবিন্দ রয়েছে! 

ঊঠে দাঁড়ালেন তিনি । দেখলেন জাহিদ, জাহির , জামির আর জাহিরুল চার পশু পাচারকারী দুষ্কৃতি অরবিন্দের ঘরের দিকে পা টিপে টিপে চলছে। এদের সাথে বেশ কয়েকবার সামনাসামনি এসেছেন তিনি অভয়ারণ্যে। শেষবার দেখেছিলেন তাঁর রিটায়ার্মেন্টের আগের দিন। 

গুলি ছোঁড়াছুঁড়িও হয়েছিল । ধরা যায়নি । পালাতে সক্ষম হয়েছিল । ওরা এখানে তাঁর বাড়িতে এসে গেছে মানে কি অরবিন্দ ওদের ডেকেছে ?

আবার পথের কাঁটা সরাতে অরবিন্দকে যদি মেরে ফেলে ?

চেঁচিয়ে উঠলেন তিনি - কে? কে ওখানে ?

তারপরই চিৎকার জুড়লেন - ওরে ধর ধর ! পালাচ্ছে! পালাচ্ছে !

ভর সকালে তাঁর চিৎকার শুনে বাড়ির সকলে সন্ত্রস্ত হয়ে গেল । এখন তো চোর ডাকাত আসতে পারে না ! 

পটকা একলাফে দৌড়াল বাগানের দরজাটা লাগিয়ে দিতে। রুদ্র দৌড়াল অরবিন্দের ঘরের দিকে। কাকাবাবু ওদিকে দাঁড়িয়েই তো চেঁচামেচি করছেন !

অরবিন্দ বেরিয়ে এল ঘর থেকে । 

' কি হয়েছে, কি হয়েছে ' বলে রুদ্রকে দেখে থমকে দাঁড়াল। অভয়ঙ্করবাবু ছাদ থেকে নেমে সোজা অরবিন্দের দিকে এগিয়ে গেলেন ।

- তুমি তো চেনো ওদের !

অরবিন্দ হাঁ করে চেয়ে রইল। 

- কাদের কথা বলছেন স্যার ? আমি তো কিছুই দেখিনি!

অভয়ঙ্করবাবু রেগে গেলেন । তুমি ঠিকানা না দিলে ওরা এখানে আসে কি করে ?

বিনম্র স্বরে অরবিন্দ বলল - কাদের কথা বলছেন স্যার ! আমার সাথে তো ললন্তিকা ছাড়া অন্য কারও সঙ্গে কথা হয়নি । 

- সে তো আজ হয়নি ! আগে নিশ্চয় কথা বলেছে?

- কথা বলেছি ? মানে কাদের সাথে কথা বলেছি ?

- ওই পশুচোরগুলো ! রারা একদিন তোমার সঙ্গী ছিল?

ওই জাহিদ, জাহিরুর, জামির ,জাহির - ওদের এখানে ডেকে পাঠালে কেন ?

অরবিন্দ আর্ত রবে বোঝাবার চেষ্টা করল। ওদেরকে সে ডাকেনি, কয়েকদিন আগে কথা হয়েছিল ঠিকই। ওরা ঠিকানাও চেয়েছিল । আমি দিইনি। তবু কিভাবে এখানে এল - আমিই তো বুঝতে পারছিনা স্যার ।

- মোটেও না । তুমিই ওদের ডেকেছ। হয় পালাবে বলে-

তারপর ভেবে দেখলেন ওকে তো পারমিশন দেয়াই আছে ইচ্ছে করলেই চলে যেতে পারে । তাই কথা ঘুরিয়ে বললেন - না, পালাবার জন্য নয় । তাহলে ওদের সঙ্গে আমার অফিসিয়ালি শত্রুতা ছিল বলে আমার ক্ষতি করতে তুমি ওদের ডেকেছ?

- স্যার । আমি একজন স্বীকৃত ক্রিমিনাল। আমার কথা কি আপনার বিশ্বাস হবে ? হবে না ।আপনার কোন ক্ষতি আমি চাইব কেন ? যিনি আমায় মুখের গ্রাস জোগাচ্ছেন, নিরাপদে থাকতে দিয়েছেন - তাঁর ক্ষতি করা মানে তো নিজের পায়ে কুড়ুল মারা ! - তাই না ?

- কি জানি ! অভয়ঙ্করবাবু একটু নরম হলেন । তুমিই জানো ? তবে তোমার কথা তো বিশ্বাস করতে সাহস হয় না কি না !

- স্যার ওই যে বললাম - ক্রিমিনালের কথা বিশ্বাস করা যায় না । তবে আমি সত্যি বলছি স্যার ওরা কি ভাবে ঠিকানা জোগাড় করল - আমি জানি না। আপনার যদি বিশ্বাস না হয় তবে বলুন স্যার, আমি মরে গেলেও কি আপনার বিশ্বাস হবে না ? একগাছা দড়ি দিন স্যার, আমি মরে প্রমাণ করে দিয়ে যাই এ কাজ আমি করিনি।

রুদ্র বলল - ঠিক আছে। তোমাকে বিশ্বাস করব যদি ওদের সঙ্গে কি কি কথা হয়েছে, সবিস্তারে সবার সামনে বল ।

অরবিন্দ তাদের সঙ্গে কখন কি কি কথা হয়েছে সব বলল। গোপালকৃষ্ণ বাবু বললেন - ও বেয়াই মশাই ! ক্ষমা ঘেন্না করে দিন । আমারও মনে হচ্ছে ও এখন সত্যি কথাই বলছে ।

পটকার অভিমতও তাই । অভয়ঙ্করবাবু বললেন - ওকে ওকে । এখন থেকে তোমাকে নীচের রুমে রাখব না । দোতলায় মাঝখানের রুমটা তোমাকে ছেড়ে দিচ্ছি। জিনিসপত্র গুটিয়ে নিয়ে সেখানে চলে যেও। আর কথা দাও দরজা জানালা সব সময় বন্ধ রাখবে। শীত পড়েছে। গরম লাগবে না । আর যথেষ্ট ভেন্টিলেশন আছে রুমে । শ্বাস নিতে অসুবিধা হবে না। আর একটা কথা রাতে তোমার ফোন থাকবে আমার কাছে। কোন প্রয়োজন পড়লে আমায় বোলো; কথা বলিয়ে দেব ।

অরবিন্দের মনে হল - পড়েছি যবনের হাতে; খানা খেতে হবে সাথে ।'

( ক্রমশ )


 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Thriller