ললন্তিকা ধারাবাহিক
ললন্তিকা ধারাবাহিক
পর্ব একশত পাঁচ
- এ ম্যান ক্যান বি রেকগনাইজড বাই দ্য স্টুপিডিটি অফ ওয়ান্স ক্যারেক্টার ।
অভয়ঙ্করবাবু এক নি:শ্বাসে কথাগুলো বলে দম নিলেন । মন্তব্যের উপলক্ষ্য কে তা বুঝতে না পেরে মি: ভৌমিক প্রশ্ন করলেন - হুম ডু ইউ মিন বেয়াই মশাই ?
- অনেকেই । যেমন ধরুন অনন্ত মোহন এণ্ড কোম্পানি , যেমন ধরুন ললন্তিকা সেন , যেমন ধরুন আমি নিজে।
অবাক হলেন মি: ভৌমিক ।
- আপনার ক্যারেক্টার তো নিখুঁত ; তথাপি এমন বলেন কেন ?
- দেখুন বেয়াই মশাই ! সেদিন ভোরবেলায় আপনি আরণ্যকের হাতে লিঠির ঘা দিতেই ওর হাতের পিস্তল উড়ে এসে আমার হাতে পড়ল । আমি পিস্তল তাক করেও কেন গুলি করিনি সেটাই আমার বোকামি বলে মনে করি । গুলি করে দিলে আর নতুন করে বিপদ আসত না । এখন দেখুন আরণ্যক কেমন বোকা বানিয়ে আবার ফেরার হয়ে গেল !
- এটা আপনার বোকামি ? বেয়াই মশাই অপরাধীকে শেষ করে দিলেই অপরাধ শেষ হয়ে যাবে না । বরং তাকে আইনের হাতে তুলে দেওয়াই বাঞ্ছনীয় । তদন্তে অপরাধ এবং অপরাধীর মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ সম্ভব । মেরে দিলে তো সে সুযোগই থাকে না !
- এই যে দেখুন, আমরা আপনার নেমন্তন্ন রাখতে একসাথে সবাই মিলে চলে এলাম - এসেও তো স্বস্তি পাচ্ছি না । এখানে এসে মনে হচ্ছে যুদ্ধাপরাধী বন্দী ।
- আপনার এমন মনে হচ্ছে কেন বেয়াই মশাই ? সুরক্ষার বাড়াবাড়ি দেখে ? আরে ওরা তো আমাদের ব্যক্তিগত সুখ দুঃখের অংশীদার নয় । চাকরি করতে এসেছে।
- কিন্তু ভেবেছিলাম সোনার বাংলাটা আনন্দে চষে বেড়াবো ; এখন তো দেখছি ফেউয়ের মত ওরাও পিছু নিচ্ছে ।
হাসলেন মি: দেবেন্দ্র ভৌমিক। চল্লিশ বছর পুলিশের চাকরি করেছি । কত জীবনের সাথে পরিচয় হয়েছে; এখন আর এগুলো তেমন করে ভাবায় না ।
গোপালকৃষ্ণ মহাশয়ও দেবেন্দ্রকে সমর্থন করে বললেন - যা বলেছ ভাই । আসলে বেয়াই মশাই বন জঙ্গল নিয়ে কাল কাটিয়েছেন তো ; বড়জোর পাচারকারীদের মোকাবিলা করেছেন , জন্তু জানোয়ার নিয়ে ভেবে এসেছেন , বাস্তব জীবনেও যে কত রকমের অপরাধী থাকে তা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করার সুযোগ পাননি । শেষের দিকটায় এই প্রথম এমন কাণ্ড দেখলেন ।
সজ্জন ললন্তিকাও এসেছে । এমন অভুতপূর্ব টানটান নিরাপত্তার জন্য তারাও খুব একটা খুশি হতে পারেনি ।
বনলতা দেবী, শৈল, রুক্মিণীদেবীও এত বাড়াবাড়ি পছন্দ করছেন না । তাঁরাও বললেন - ভাই, আনন্দ করতে এসেছি, ভি আই পি ট্রিটমেন্ট পেতে নয় । এত রক্ষী নিয়ে দরকার নেই । তুমি ওদের ফেরত যেতে বল ।
মি: ভৌমিক পড়লেন বেকায়দায় । কেউ যখন চাইছেন না ফিরিয়ে দেওয়াই যায় , কিন্তু মনে রাখতে হবে আরণ্যক বসুরায় পলাতক এবং অক্ষত । তার প্রতিশোধ স্পৃহা নিশ্চয় চরমে উঠেছে। এখন সে যদি বাংলাদেশে এসে পড়ে তবে অঘটন ঘটতে সময় লাগবে না ।
- আপনারা নিজের ইচ্ছেগুলোর আবার পর্য্যালোচনা করুন । প্রয়োজনে পুনর্বিবেচনা করে দেখুন। তারপর বলবেন আমি সিকিউরিটি রিটার্ণ করে দেব ।
রজনী দেবী বললেন - হ্যাঁ তাই দাও । সত্যিই তো যেতে আসতে যদি ফেউ লেগে থাকে , কার ভালো লাগবে ?
মি: ভৌমিক মাথা ঠাণ্ডা রেখে বললেন - ঠিক আছে। আমি কাল থেকে সিকিউরিটি তুলে নিতে বলে দিচ্ছি , কিন্তু পুরোপুরি নয়। তাহলে মৃত্যুকে আহ্বান করা হবে ।
সবাই খুশি হলেও গোপালকৃষ্ণ বাবু উষ্মা প্রকাশ করলেন।
সজ্জন সিং বললেন - ছোড়িয়ে না ও বাত। কল কা প্রোগ্রাম কেয়া হ্যায় বতাইয়ে ।
ললন্তিকা বলল - এটা নয়ডা নয় , মেনে রেখো।
পরের দিন সিকিউরিটি তুলে নেবার আবেদন জানালেন মি: ভৌমিক । স্বরাষ্ট্র দপ্তর থেকে সার্কুলার জারি করে জানানো হল মি: ভৌমিকের আবেদন অনুযায়ী তাঁর এবং তাঁর পরিবার পরিজনদের সুরক্ষার জন্য নিযুক্ত সকল সিকিউরিটি তুলে নেওয়া হল ।
সকলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। যেন মেলার কলরব থেকে বাড়ি ফিরলেন ।
ভৌমিক সাহেব চিন্তিত হলেন । উপায়ান্তর নেই বলে তাঁর কিছু করার ছিল না ।
বাছিরুদ্দিন কড়া নজর রেখেছেন ভৌমিক বাড়ির দিকে । দেখলেন সিকিউরিটির লোকজন চলে গেল । এবার এই খবর দলের প্রধানকে দিতে হবে বলে কল করতে গেলেন। সামনের বুথ থেকে কথা বলে ফিরে আসছেন; দেখা হল স্বয়ং ভৌমিকের সাথে ।
দুই ভায়রাভাইয়ে চোখাচোখি হল । দেবেন্দ্র ভৌমিক নতুন লোক দেখে ভাবলেন কারও অতিথি হবে হয়তো । পাশ কাটিয়ে চলে গেলেন । কিছুদূরে গিয়ে পিছন ফিরে দেখলেন ভদ্রলোক দৃষ্টির বাইরে চলে গেছেন । কৌতূহল হল । আবার ফিরে চললেন উল্টো দিকে ।
চৌমাথায় এসে কাউকেই দেখতে পেলেন না । খলিলের দোকানে গিয়ে এক প্যাকেট সিগারেট কিনলেন । কথায় কথায় উঠে এল তহমিনা বেগমের ( ললন্তিকার পূর্ববর্তী বাংলাদেশে আসার সময় যে নাম দিয়েছিল কামাল ) কথা। কামালের মৃত্যু ।
মি: ভৌমিক বললেন - ও তো আর নেই। ইণ্ডিয়ায় ফিরে গেছে। আচ্ছা খলিল বল তো এখানে কোন নতুন লোক এসেছে ইদানিং ?
মাথা চুলকে খলিল বলল - তেমন কাউকে দেখি নাই কত্তা । তবে শুনেছি মসজিদে নাকি এক নতুন ইমামএসেছে নাখোদা মসজিদ থেকে । আমি খবর নিয়ে বলব কত্তা।
- বলিস, ভুলিসনে যেন ।
দেবেন্দ্র খুঁত খুঁত করতে লাগলেন । বললেন - তাহলে মসজিদের দিকটা দেখে আসি ।
হাঁ হাঁ করে উঠল খলিল । - যেয়েন না কত্তা । এহেনে রোজ কত লোক আসে , গিয়া কি করবেন ?
- না মানে, এমনই বললাম আর কি !
খলিলকে এড়িয়ে মি: ভৌমিক মসজিদের পথ ধরলেন । কি এমন বড় বা নামকরা মসজিদ এটা যে নাখোদা থেকে ইমাম এসেছে!
মসজিদে পৌঁছে আগেকার ইমামকে দেখতে পেলেন। শুভেচ্ছা বিনিময় করে প্রশ্ন করলেন - আপনি কি এখান থেকে চলে যাচ্ছেন ?
ইমাম বললেন - না তো ?
- তবে শুনলাম নাখোদা মসজিদ থেকে নতুন ইমাম এসেছেন
- গজব গুজব তো ! কে রটিয়ে দিলে ? না না, এ তো ভালো কথা নয় ।
তারপর ভেবে দেখলেন ওই আশ্রয় চাওয়া লোকটা নয় তো? আলমগীরের সাথে ওর দারুন ভাব জমেছে।
বললেন - এখটু খাড়ান ( দাঁড়ান) সাহেব । আমি চত্বরটা দেখে আসি । যদি থাকে ডাইক্যা দেই।
- না না ডাকতে হবে না । তাহলে ওইই নতুন এসেছে !
- আজ্ঞা !
ভৌমিক সাহেব এক মাথা চিন্তা নিয়ে বাড়ি ফিরলেন।
ফিরেই মি: পরমেশ্বর ভট্টাচার্য্যকে ফোন করে বললেন - মি: বসুরায়ের কোন খবর আছে ?
- না স্যার । আপাতত তিনি পলাতক। কোথায় গেছেন আনট্রেসড ।
ভৌমিক সাহেব ওকে বলে বসে পড়লেন ।
অভয়ঙ্করবাবু বললেন - কি হয়েছে বেয়াই মশাই ! শরীর ঠিক আছে তো ?
- যে ভয়টা করেছিলাম ; মনে হয় সেটাই ঘটতে চলেছে।
- ভয় ? কিসের ভয় ? কাকে ভয় ?
- আরণ্যক বসুরায়।
হেসে উঠলেন অভয়ঙ্করবাবু ।
- তার ভিসা পাসপোর্ট তো ক্যান্সেল হয়ে গেছে ।
- আমার ধারণা বেড়া ডিঙিয়ে বেআইনী ভাবে এসেছে। দেখি পুলিশকে জানাই । তদন্ত করে দেখুক।
তাহেরপুর থানায় ফোন করতেই পুলিশ এসে ঘিরে ফেলল মসজিদ চত্বর । ইমামকে ডেকে বলল - কে এসেছে? কোত্থেকে এসেছে জানান।
ইমাম এসে আশ্রয় চেয়েছিল এবং দু'চারদিন থেকে আর তাকে দেখা যাচ্ছে না বললেও পুলিশ মানতে চাইল না । এলাকায় পুলিশি টহল বহাল রেখে ভৌমিক সাহেবকে জানানো হল ।
( ক্রমশ )
