ললন্তিকা ধারাবাহিক
ললন্তিকা ধারাবাহিক
পর্ব তেতাল্লিশ
কামালের নিকট সবকিছু অবগত হল ললন্তিকা। আরণ্যক বসুরায় এখন রাণীগঞ্জে গেছেন তা' কনফার্মড হতে কামালকে বলল - মিঃ বসুরায়কে ফোনে ধর কামাল ভাই। নাম্বার দিচ্ছি ।
কামাল সেই নাম্বারে ফোন করল ।
- হ্যালো স্যার , কমল সরকার বলছি । আনন্দবাজার পত্রিকা থেকে । একটা সাক্ষাৎকার দিতে হবে স্যার ! কবে ডেট পাবো ?
- দেখুন আমি তো এখন কলকাতার বাইরে। ফিরে গিয়ে যোগাযোগ করব ।
- আপনি কোথায় আছেন স্যার ?
- আমি এক আত্মীয়ের বাড়িতে এসেছি ।
- ঠিক আছে স্যার, কতদিন পর যোগাযোগ করব ?
- আমি ফিরে গিয়ে জানিয়ে দেব । সম্পাদকের নং আমার কাছে আছে ।
আরণ্যক বসুরায় বড় ধুরন্ধর ব্যক্তি । ফোনে যে নামটা ছেপেছিল ইংরাজিতে তা'হল KAMAl . কোন টাইটেল নেই , অথচ বলল কমল সরকার । আনন্দবাজার পত্রিকার এইচ আর ডিপার্টমেন্টে পরে খবর নিয়ে জেনেছেন কমল সরকার নামে একজন পিওন আছে; তবে এটা তার নাম্বার নয় এবং তার ভি আই পি কেন কারও সাক্ষাৎকারের প্রশ্ন নেই।
ললন্তিকা ফোন কেটে দিতে বলল ।
কামাল বলল - ওকে স্যার । ধন্যবাদ আপনাকে।
তারপর জি পি এস ট্র্যাক করে নিশ্চিত হল আরণ্যক রাণীগঞ্জে আছেন ।
ললন্তিকা বলল - রাণীগঞ্জ যাব । দেখে নাও কি ভাবে যেতে হবে ।
কামাল গুগল ম্যাপে ট্রেন এবং রোড জার্ণি দেখে নিল ।
আরও একটা ফোন এল আরণ্যকৈর নাম্বারে । এবার মি: পরমেশ্বর ভট্টাচার্য্য।
- ইয়েস অফিসার। ফোন নং দেখেই বুঝে গেছি কাজ হয়ে গেছে ।
- সরি স্যার, আপনি ভুল বুঝেছেন ।
- কি বলতে চাইছ পরম ?
- মিস আণ্ডারস্টেণ্ডিঙ্ হয়ে গেছে , স্যার । যাকে এনকাউন্টার করতে বলেছিলাম তাকে না করে অন্যজনকে মেরেছে স্যার । অরবিন্দ সরখেল পলাতক।
- হোয়াট ? বলছ কি ? পালিয়েছে?
অভয়ঙ্করবাবু বললেন - কে পালিয়েছে বেয়াই মশাই?
আরণ্যক সেই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পরমেশ্বরকে বললেন - ওয়ার্থলেস ! হোপলেস তোমরা পুলিশেরা।
বলে ফোন রেখে দিলেন ।
অভয়ঙ্করবাবু বললেন - কে পালিয়েছে বললেন।
আরণ্যক - সেই দাগী আসামীটা যাকে রূদ্র , আপনি , জামাই এবং বেয়াই মশাই মিলে শাপুরজী বাসস্ট্যাণ্ডে পাকড়াও করে থানায় দিয়ে এসেছিলেন ।
অভয়ঙ্করবাবু বললেন - এ তো মহা মুশকিল! আপনি এখন এখানেই থেকে যান বেয়াই মশাই। কলকাতায় গিয়ে কাজ নেই । ব্যাপারটা খুব গোলমেলে মনে হচ্ছে।
- না না বেয়াই। আমাকে যেতেই হবে । এখন কলটাতা যাবার কোন ট্রেন পাবো ?
- ট্রেণ তো আছে, অগ্নিবীণা, কোলফিল্ড, ইন্টারসিটি । দেখি কোনটায় রিজার্ভেশন পাওয়া যায় ।
রেলের অ্যাপ খুলে কারেন্ট রিজার্ভেশন দেখলেন। অগ্নিবীণায় একটাই সীট আছে। বুক করে দিলেন । তারপর ভোর পাঁচটা পঁচিশ নাগাদ স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন । পৌনে ছটায় ট্রেন এল । অভয়ঙ্করবাবু তাঁকে ট্রেনে চাপিয়ে দিয়ে বললেন - সাবধানে যাবেন। আর ফোন করবেন ।
অভয়ঙ্করবাবু বাড়ি এসে সকলকে খবর দিলেন কোন জরুরী প্রয়োজনে বেয়াই মশাই কলকাতা চলে গেলেন । তিনি নিজে ট্রেনে চাপিয়ে দিয়ে এসেছেন ।
পামেলা দেবী বললেন - সে কি ! হঠাৎ ? কাউকে কিছু না জানিয়ে ? আর একা একা গেলেন কেন ?
শৈলদেবী বললেন - দিদি, ওনার জেদ আছে না। যাই হোক ভালোয় ভালোয় পৌঁছে যান ।
বাড়ির সকলে যে যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন । পটকার স্কুল খুলে গেছে । ও তো ন'টার মধ্যে রেডি হয়ে ঐশীকে বলল - ব্রেকফাস্ট দাও ।
এমন সময় দরজায় কলিং বেলের আওয়াজ পেয়ে পটকা গিয়ে দরজা খুলে দেখে আরণ্যক মেসোমশাই ।
- আপনি ফিরে এলেন যে ? কোন বিপদটিপদ হয়নি তো !
আরণ্যক বললেন - চল ভেতরে চল , সব বলছি ।
একে একে ঐশী থেকে সকলের মুখে একই প্রশ্ন বারবার ধেয়ে এল ।
আরণ্যক বললেন - বুঝলেন বেয়াই মশাই! বর্ধমানের আগে পানাগড় স্টেশনে ট্রেন ঢুকতেই কি খেয়াল হল কমল সরকারকে একবার ফোন করি । ফোনবুকে নায ইংরাজিতে লেখা Kamal. No title.
সন্দেহ হল । এ বি পির এইচ আর ডিপার্টমেন্টের হেড মিঃ দস্তিদারকে ফোন করলাম। বললেন কমল সরকার নামে একজন পিওন কাজ করে। কিন্তু সে তো আপনাকে ফোন করবে না ।আর সাক্ষাৎকার নেবার তো প্রশ্নই নেই । ভয় হল । যদি রাস্তায় পেয়ে যায়। আমার তো চারদিকে শত্রু । তাই ফিরে এলাম।
সকলে বললেন - বেশ করেছেন ।
অভয়ঙ্করবাবু বললেন - এই জন্যই আমি বাধা দিয়েছিলাম ।
পটকা বলল - মেসোমশাই ! থানায় একটা রিপোর্ট লিখিয়ে দিন । রাণীগঞ্জ থানার ওসি সন্তু মুখার্জী আমার পরিচিত । বিধাননগর থানায় এর আগে বেশ কিছুদিন ছিল । কলকাতার ক্রাইম সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল।
অভয়ঙ্করবাবু বললেন - সন্তু মুখার্জী! ওরে বাবা, এমন কড়া অফিসার রাণীগঞ্জ থানা এই প্রথমবার পেয়েছে। এই ক'মাসে রাণীগঞ্জ শহরকে পুরো ঠাণ্ডা করে রেখেছে।
পটকা ঠিক বলছে বেয়াই মশাই । একটা রিপোর্ট করে দিলে ও ঠিক খুঁজে বের করবে ।
ওঁরা থানায় গেলেন। জি ডি করলেন ।
মিঃ মুখার্জী বললেন - কলার আইডেন্টিটি ইন ইংলিশ মিনস ইট মে বি কমল ; এলস ইটস সিওর টু বি কামাল অলসো। আর যদি কামাল হয় এবং যার নামে বিধাননগর থানা এবং কলেজ স্ট্রীট থানায় এফ আই আর ছিল এরা যদি অভিন্ন হয় তবে নি:সন্দেহে সে একজন আন্তর্জাতিক পাচারকারী। গোরু পাচারের সঙ্গে নারী পাচারও করে ।
আরণ্যক বসুরায় বললেন - অফিসার, আমার তেমনই সন্দেহ হয়েছিল বলে বর্ধমান থেকে আবার রাণীগঞ্জে ফিরে এসেছি।
মি: মুখার্জী বললেন - দু'টো দিন সময় চাই; সঠিক খবর পেয়ে যাবেন । বাই দ্য ওয়ে , এই সুত্রে আপনার মত স্বনামধন্য সাহিত্যিকের সাথে আলাপ হয়ে খুব ভালো লাগছে । আপনার ' কেউটের ছোবল ' উপন্যাসটি আমি বেশ কয়েকবার পড়েছি । ওরই সুত্র ধরে বেশ কয়েকটা কেসের সমাধান করেছি । আপনি তো দুর্দান্ত লেখেন স্যার ! গোয়েন্দা বিভাগ আপনাকে পেলে ধন্য হয়ে যেত ।
আরণ্যক এমন শুকনো সুনাম ঢের কুড়িয়েছেন । ওটায় পাত্তা দিলেন না ।
বললেন - অফিসার, কবে নাগাদ জানতে পারব ?
- খোঁজ শুরু করে দেখি। পটকাকে দেখিয়ে বললেন - হেডস্যারের সঙ্গে আমার পরিচয় আছে। ওনার ফোন নং ও আছে। ঠিক সময়ে জানিয়ে দেব ।আর ওই নাম্বারটাতো রইল আমি একবার ট্রাই করে দেখি মোবাইল টাওয়ার ট্র্যাক করে ।
তারপর পটকাকে বললেন - একদিন নেমন্তন্ন করুন মশাই ! বাড়ির খাবার অনেক দিন খাইনি।
অভয়ঙ্করবাবু বললেন - আজই চলুন ।
মি: মুখার্জী বললেন - আজ না প্লীজ। সানডে তে করুন।
সেইমত কথা বলে ওঁরা চলে গেলেন ।
আরণ্যক বললেন - আমিও এই ভয়টাই পেয়েছি। কলেজ স্ট্রীট থানায় জনৈক হারু ডোমকে এমনই কোন কামাল নাকি মেরে ফেলেছে। এ যদি সেই হয় !
অভয়ঙ্করবাবু বললেন - কোন ভয় নেই ! রাণীগঞ্জে সন্তু থাকতে সুবিধে করতে পারবে না । ক্রিমিনালদের যম উনি । ওঁর শাস্তির ধরণই আলাদা । আর ওই জন্য রাণীগঞ্জের জনগণ ওকে জন্তু মুখার্জী বলাবলি করে।
আরণ্যক বসুরায় হাসলেন । বললেন - দারুন বলেছেন তো! জন্তু মুখার্জী ! হা হা হা ।
( ক্রমশ )
