STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Thriller

4  

Nityananda Banerjee

Thriller

ললন্তিকা ধারাবাহিক

ললন্তিকা ধারাবাহিক

5 mins
236

পর্ব সাতচল্লিশ


মিঃ আরণ্যাক বসুরায় ঠিক করলেন কাল সকালে তিনি কলকাতায় ফিরে যাবেন । যাকে নিয়ে তাঁর এত উৎকন্ঠা সেই কামাল যখন আর বেঁচে নেই ; তখন কিছু না হোক বিপত্তি আসবে না ।

বাড়ির সকলে এই কথা জেনে ঠিক করলেন পটকা যাবে ওঁর সঙ্গে । রবিবার, ছুটির দিন। সকালে গিয়ে প্রথম রাতেই ফিরে আসবে ।

পটকা এবং আরণ্যক দু'জনে সকালের কোলফিল্ড এক্সপ্রেসে কলকাতা গেল । হাওড়া স্টেশনে ফুডপ্লাজার কাছাকাছি আসতেই আরণ্যকের মনে হল বোষ্টম বোষ্টমীর গান যেন তিনি শুনতে পাচ্ছেন । 

মনের ভুলে গেয়ে উঠলেন ' মিলন হবে কতদিনে ' । পটকা জনতার ভীড়ে তাঁর কন্ঠস্বর শুনতে পেল না । স্টেশন থেকে এক্সিট করে প্রি-পেইড ট্যাক্সিতে চললেন তাঁর অফিসে । 

পটকা বলল - বাড়ি যাবেন না ?

- না । শোন বৈদূর্য্য; তুমি কিন্তু বাড়িতে দেখা করে যেও। আমি রাতে আমার নিজের বাসায় ফিরে যাব ।

পটকা অবাক হল । নিজের বাসি ? মানে মসলন্দপুরে?

- হুম । অনেকদিন ঘর ছাড়া হয়ে রয়েছি। দেখিগে' বাড়িটার কি হাল হয়ে আছে !

পটকা তাঁকে অফিসে নামিয়ে দিয়ে, কৃষ্ণপুরে এল । কল্যাণী সমাদরে দাদাকে ভেতরে নিয়ে গিয়ে বসাল ।

পটকা বলল - মাসীমা, মেসোমশাই কোথায় ? রুদ্র তো অফিস গেছে !

- না না দাদা । আজ তো রবিবার। ওনার ছুটি। আর বাবা মা ডাক্তারের কাছে গেছেন !

- কেন ? ওদের আবার কি হল ?

- ওঁদের কিছু হয়নি । মেসোমশাইয়ের ব্লাড রিপোর্ট আনতে গেছেন । তুই বোস। আমি চা জলখাবার আনি।

চা জলখাবার দিয়ে ভাই বোনে কথা হচ্ছে। বিল্টু পলা নাচতে নাচতে এসে মামাকে জড়িয়ে ধরল। 

- আরে ছাড় রে বাবা। ও দাদু , ও দিদি ! মামাকে একটু বিশ্রাম দাও ! এমন ভাবে চেপে রাখলে চলে ?

বনলতা দেবী ঢুকলেন বাড়িতে। কেমন আছো বাবা, বাড়ির আর সবাই কেমন আছেন জিজ্ঞেস করলেন। 

- সবাই ভালো আছেন মাসীমা । কিন্তু মেসোমশাই কোথায় গেলেন !

- এখনই এসে পড়বেন। বাজার করতে গেলেন ।

- হয়ে গেছে। এসে পড়েছি। বললেন গোপালকৃষ্ণ বাবু।

পটকা বলল - রুদ্র কোথায় গেছে বললি না তো ফুড়কি ?

কল্যাণী বলল - মাংসের দোকানে গেছে। ওফ্ তুই এত অস্থির হোস কেন দাদা ?

গোপালকৃষ্ণ বাবু বললেন - আরণ্যক কি ওর অফিসে চলে গেছে ?

- হ্যাঁ মেসোমশাই। ওনিকে ওঁর অফিসে পৌঁছে দিয়ে আমি এখানে এলাম । উনি বললেন বিকেলে মসলন্দপুর যাবেন ।

- ও। আমি বলছিলাম না বনু ( বনলতা দেবী ) ! ও আর এখানে আসবে না । 

পটকা বলল - কেন মেসোমশাই ?

- ও তোমার জানার দরকার নেই । 

গোপালকৃষ্ণ বাবু পটকাকে থামিয়ে দিলেন । পটকা কিছু একটা হয়েছে ভেবে আর কথা বাড়াল না ।

আরণ্যক অফিসে বসে আছেন । একটা ফোন এল বাংলাদেশ থেকে । মিঃ ভৌমিক করেছেন ।

- হাঁ বলুন দাদা । কবে আসছেন ? 

মিঃ ভৌমিক বললেন - আসা হবে না। 

- কেন ?

- যাকে নিয়ে যাবার কথা ছিল সে পালিয়েছে !

- সে কি বলছেন দাদা ? আপনার হাত ফস্কে পালিয়েছে? কখন ?

- দশমীর রাতে। খোঁজাখুঁজি করতে সময় লাগল বলে তোমাকে জানানোর দেরী হল । ভেরি সরি ভাই । আমার মনে হচ্ছে ও আবার ভারতে পালিয়েছে চোরা পথে।

আরণ্যকের মাথায় বজ্রাঘাত হল যেন । গালে হাত দিয়ে চিন্তা করতে লাগলেন । কোথায় যেতে পারে ! তারপর হঠাৎ খেয়াল করলেন কামালই তো ওকে বাংলাদেশে যেতে সাহায্য করেছে । হয়তো ফিরতেও। 

তারপরই মনে পড়ে গেল কামাল রাণীগঞ্জে মরেছে। তার মানে ললন্তিকাও নিশ্চয় রাণীগঞ্জে গেছে ।ভুল হয়ে গেল । আর কিছুদিন থেকে গেলে হয়তো সব পরিষ্কার হয়ে যেত।

যাক গে । আর ভেবে কি হবে ? ললন্তিকা তাঁকে না পেয়ে আবার কলকাতায় ফিরতে বাধ্য হবে ।

অর্থাৎ না আরণ্যক না ললন্তিকা - কেউ কাউকে ভুলতে পেরেছে বলে মনে হয় না । দুজনের মনে এমন কোন প্রাপ্তির স্বপ্ন আছে যার জন্য উভয়ে উভয়ের প্রতি এখনও আকর্ষণ অনুভব করে।

আরণ্যক ললন্তিকাকে রিং করল । একবার, দু'বার, তিনবার । ললন্তিকা ফোন ওঠাল না । ট্রু-কলারের ইনফরমেশন অনুসারে মোবাইলের অবস্থান দেখাচ্ছে মেজিয়া । 

আরণ্যক বুঝে নিলেন ললন্তিকা কামালের সঙ্গে রাণীগঞ্জ গিয়েছে। কারণ দামোদর পেরোলেই মেজিয়া আধাশহরটি। আরণ্যক সেখানে গিয়েছিলেন।

তিনি আরেকবার ফোন করলেন । এবারও ললন্তিকা ফোন তুলল না । তার ধারণা যেভাবে কামালকে বধ করেছে আরণ্যক, পুলিশের সাহায্য নিয়ে, তেমনই হয়তো থানায় গিয়ে লোকেশন জানতে চাইছে। সুতরাং ফোনের সুইচ অফ করে দিল ।

অরবিন্দ বলল - এখন ফোন বন্ধ রেখে দাও। আমিও তাই করেছি ।

আরণ্যক এবার কলেজ স্ট্রীট থানায় জানাল পরমেশ্বর ভট্টাচার্য্যকে । পরমেশ্বর জানালেন সন্তু মুখার্জীকে । পুলিশের একটি দল নিয়ে সন্তু মুখার্জী অভিযানে বেরোলেন । 

মেজিয়ার দিকে যেতে যেতে হঠাৎ তাঁর পথ বদল করে চললেন নারায়ণকুড়ি গ্রামের দিকে । যেখানে মথুরাচণ্ডী মন্দির এবং গীতা আশ্রম রয়েছে ।

মন্দিরের দরজা বন্ধ । তিনি গীতা আশ্রমে ঢুকলেন । মোহান্ত মহারাজ এলেন । 

সন্তু মুখার্জী তাঁকে বললেন - আপনার আশ্রমে কোন নতুন পাখি এসেছে ?

মোহান্ত বললেন - পাখি ? তা তো দেখিনি মহাশয় । 

সন্তু মুখার্জী বললেন - কোন নতুন অতিথি আপনার আশ্রমে এসেছে ?

নতুন বোষ্টম বোষ্টমীর কথা চেপে গেলেন মোহান্ত মহারাজ । বললেন - স্বচক্ষে দেখে নিন স্যার । আসুন ভেতরে ।

সন্তু মুখার্জী তার কথা বিশ্বাস করে আর ভেতরে গেলেন না । বেঁচে গেল ওরা স্বামী-স্ত্রী ।

মোহান্ত মহারাজ আরবিন্দকে ডেকে পাঠালেন। 

- শোন বোষ্টম, আশ্রমে পুলিশ এসেছিল । নতুন কে কে এই আশ্রমে এহেছে তাদের নাম চাইছিলেন ।

অরবিন্দ আর যাই হোক ভীতু নয় ; কিন্তু ললন্তিকার ভয় বেড়ে গেল । ভাগ্যিস ফোন ওঠায়নি ।

অরবিন্দ বলল - আপনি কি বললেন ?

- আমি ? থতমত খেয়ে মোহান্ত বললেন - আমি বললাম ভেতরে এসে দেখে নিন । কি মনে হল তাঁর এলেন না।

তবে এই ফোন নং টা দিয়ে বললেন - এখন তো সুইচ অফ করে রেখেছে; আপনিও দেখবেন ফোন করে , যদি উত্তর পান সঙ্গে সঙ্গে থানায় জানাবেন । অনেক বার চেষ্টা করেছি; এখনও সুইচ অফ করে রেখেছে। আচ্ছা, দেখতো বোষ্টম এই নাম্বারটা রাখ, তোমরাও দেখে বলবে আমাকে । 

অরবিন্দ দেখল এটা ললন্তিকার ফোন নাম্বার মুখে জানি না বললেও জেনে গেল ললন্তিকার নাম্বারটা নষ্ট করে দিতে হবে ।

সুতরাং একসময় ফোন থেকে সিম খুলে দামোদরের জলে ফেলে দিল ।

ললন্তিকা ক্ষুণ্ণ হল ঠিকই ; কিন্তু এ ছাড়া আর অন্য উপায় নেই দেখে ললন্তিকা সিমটা ফেলে দিল ।

ললন্তিকা বলল - আমার এখানে থাকা যাবে না। আমি কলকাতায় যাব। 

অরবিন্দ বলল - আবার ছাড়াছাড়ি ? সিমটা যখন ফেলেই দিলে তখন থাকতে অসুবিধে কোথায় ?

- একটা সিমকার্ড তো চাই। কখন কি দরকার পড়ে !

- এখান থেখেই নিয়ে নাও । আমি টাকা দেব; পার তো একটা নতুন ফোনও নিয়ে নাও । তা হলে আই পি এড্রেসও চেঞ্জ হয়ে যাবে ।

- বুদ্ধি মন্দ নয় । কিন্তু নতুন সিম নিতে গেলে তো আধার কার্ড চেয়ে বসবে ! তখন ?

- আরে , পুলিশের চোখে ধূলো দিতে পেরেছি আর এই সামান্য কাজটা করতে পারব না ?

ললন্তিকা বলল - কি ভাবে ?

- মোহান্তর আধার কার্ড দেখিয়ে নিয়ে নেব। ও তোমাকে চিন্তা করতে হবে না ।

ললন্তিকা আশ্বস্ত হল । মনে মনে ভাবল একে না ঠকালে হয়তো একটা সুখী জীবন পেতাম ! শেষ ভরসা তো সেই !

( ক্রমশ ) 


 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Thriller