STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Thriller

4  

Nityananda Banerjee

Thriller

ললন্তিকা ধারাবাহিক

ললন্তিকা ধারাবাহিক

5 mins
388

পর্ব ঊনসত্তর


মি: আরণ্যক বসুন্ধরা সজ্জন সিং এর নিকট পাঁচ লক্ষ নগদ টাকা নিয়ে রওনা দিলেন নেপালে । হিমালয়ের কোলে বীরগঞ্জে এসে পৌঁছালেন। কাঠমাণ্ডুতে থাকার ইচ্ছে থাকলেও একটু প্রত্যন্ত স্থানে নিরাপত্তা পাবেন অনুভব করলেন । 

তখন কুম্ভমেলা শুরু হয়েছে । দলে দলে সাধু সন্ন্যাসীরা প্রয়াগ সঙ্গমে একত্রিত হচ্ছেন । তিনি স্থির করলেন নেপাল ছেড়ে কুম্ভমেলায় যাবেন । নেপাল অপেক্ষাকৃত নিরাপদ হলেও কলসির জল গড়িয়ে পান করতে করতে নি:শেষ হয়ে গেলে ফাঁপরে পড়তে পারেন ভেবে কুম্ভমেলায় যাওয়ার মনস্থ করলেন । এক সাধুর বেশে তিনি নেপালের বীরগঞ্জ থেকে সহজেই রক্সৌলে এলেন। তারপর ট্রেন ধরে ঘুরপথে এলাহাবাদ এসে পৌঁছালেন। সেখানে দেখেন সাধুসন্তরা আখড়া দিয়েছেন। তিনিও অবলীলায় ভীড়ে গেলেন তাঁদেরই একটি দলে । কুম্ভমেলায় যেতে তাঁর আর কোন বাধা রইল না ।

তিনি যে দলে ঢুকেছিলেন তা' ছিল একটি নাঙ্গা সন্ন্যাসীর দল । মাথায় কুণ্ডলী পাকানো জটা, কারও বা গোঁফ বিশাল লম্বা । তিনিও সেইমত নকল জটা, গোঁফ দাড়ি লাগিয়ে বস্ত্রহীন নাঙ্গা সন্ন্যাসীর রূপ নিয়ে কুম্ভমেলায় গেলেন ।

সন্ন্যাসীদের দলে ঢুকে তিনি পরম নিশ্চিন্তে সকলের সঙ্গে মিশে গেলেন । হিন্দি ভাষায় তাঁর যথেষ্ট দখল থাকায় ভাব প্রকাশে কোন অসুবিধা হল না ।

ওই দলে সন্ন্যাসীরা সকলে উলঙ্গ । গাঁজা ভাঙ খেতে শুরু করলেন যাতে লজ্জা নামক বস্তুটি তাঁর বিবেক আচ্ছন্ন না করে । 

ললন্তিকা আর সজ্জন দু'জনেই এসেছে কুম্ভমেলায় । স্নান সেরে যখন ওরা ভীড় ঠেলে ফিরে আসছে ললন্তিকা বলল - চলো উধার নাঙ্গা সাধুলোগোঁকো দেখকে আঁউ।

সজ্জন বললেন - নেহি নেহি। কোই জরুরত নেহি জানে কা । না জানে উন্হোনে কেয়া কেয়া বতায়েগা !

ললন্তিকা জেদ ধরলে অনিচ্ছা সত্ত্বেও তিনি ললন্তিকাকে অনুসরণ করলেন । ললন্তিকা দেখতে লাগল নাঙ্গা সাধুদের । সম্পূর্ণ উলঙ্গ। এমনকি সকলের গোপনাঙ্গ দিনের আলোয় স্পষ্ট দেখা যায় । 

ললন্তিকা দেখতে দেখতে চলেছে। সজ্জন উল্টোদিকে মুখ ফিরিয়ে ললন্তিকাকে ফলো করছেন । দেখতে দেখতে ললন্তিকা এক জায়গায় এক সাধুর সামনে দাঁড়িয়ে পড়ল । 

তার মনে বিগত দিনের সব ঘটনা একে একে মনে পড়ল । আরণ্যক বসুরায় যে কি ধরণের বিকৃতকাম ছিলেন এই সাধুকে দেখে তার স্পষ্ট মনে পড়ে গেল । আরণ্যক যেমন ললন্তিকার পায়ের নখ থেকে মাথার চুল পর্য্যন্ত সব জায়গা চেনেন অনুরূপভাবে ললন্তিকাও তাঁর সর্বাঙ্গ জানে । 

সাধুর গোপনাঙ্গে একটি লাল জড়ুলের মত বস্তু দেখে ললন্তিকা দাঁড়িয়ে পড়তেই সজ্জন সিং তাকে টানতে টানতে নিয়ে গেলেন ।

ললন্তিকার ভাবান্তর হল । দেখল সে তাদের প্রাইভেট কারে বসে আছে। কিন্তু ওই রক্তিম জড়ুলটা সে ভুলতে পারল না । ওই সাধু নিশ্চয় আরণ্যক বসুরায়। 

তাঁর চরিত্রের গুনাবলী পরিচয় দেয় তার ব্যক্তিত্বের । এমন নির্লজ্জ একজনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল ভাবলেও গা ঘিনঘিন করে ওঠে । তার তুলনায় সজ্জন অবাঙালি হলেও সচ্চরিত্র। তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনদিন কিছু করেনি ।

ভাব কাটিয়ে ললন্তিকা সজ্জনকে বলল - জানো , আমি ওকে দেখলাম।

- কাকে ? 

- যে আমাকে পাঁচ লাখে তোমার কাছে বিক্রি করে দিয়েছে।

চমকে উঠলেন সজ্জন সিং।

- কৌন ? মি: বাসুরয় ! তুমি কথা বললে না কেন ?

ললন্তিকা মনে মনে বলল যে ভাবে টেনে হিচড়ে নিয়ে এলে কথা বলি কি করে !

ললন্তিকা বলল - এত নীচ প্রকৃতির লোক ? ভাবতে পারছি না !

- কেয়া হুয়া জী? এমন করছ কেন ?

- কি বলব বল তো ? শেষ পর্য্যন্ত নাঙ্গা হয়ে সাধুবেশ ধরল ? অবশ্য ও পারে না এমন কোন কাজ নেই ।

- য়ে কামিনী ! বাহার আকে কুছ ঝামেলা পকাও মত। চলো ঘর লোটে ।

ললন্তিকা বলল - ঘর তো যাবই । আমার মনে হচ্ছে ওকে পুলিশে ধরিয়ে দিই।

- আরে ছোড়ো ইয়ার । ও যো কর রহে হ্যায় করনে দো ! লগতা হ্যায় পাঁচ লাখ খতম হো গয়া হোগা ।

ললন্তিকার ধারণাও তাই। অনন্যোপায় হয়ে ভেক ধরেছে। শুধু তাই ধয় পুলিশের কাছে গেলে সেও তো ধরা পড়ে যাবে !

আরণ্যক নামের নাঙ্গা সন্ন্যাসীও ললন্তিকাকে দেখে ঠিক চিনেছিলেন । ললন্তিকার মুখের আদলতো তাঁরই পছন্দের । সেই মুখ, সেই চোখ তাঁকে যেন পাগল করে দিয়েছে । ঈশারায় তাকে ডেকেছেনও। হয় সে দেখতে পায়নি কিম্বা এড়িয়ে গেছে। মনে হচ্ছে বেশ সুখে আনন্দেই আছে । আহা ! থাক। সুখে থাক আনন্দে থাক।

তার জীবনে কোনদিন সুখ আসেনি ; আজ যদি সে সুখী হয়- ভালোই তো ! 

এই প্রথম এক অন্য অনুভূতি হল আরণ্যকের । তাঁর মনে হয়েছিল ওদের ফলো করতে। কিন্তু নিজের নিরাপদ জায়গা কেমন করে ছেড়ে যান ! 

সজ্জন ললন্তিকা বাড়ির পথে রওনা দিলেন । আরণ্যক উলঙ্গ থেকে নিজেকে ধিক্কার দিতে লাগলেন । এমন সময় ললন্তিকা ফোন করল আরণ্যককে । এতদিন ফোনের সুইচ অফ করে রেখেছিল। আজ ফোনটা বাজছে।

আরণ্যক দেখলেন ললন্তিকা । উত্তর দিলেন না। ফোন বেজে চলল । তিনি সাউণ্ড কমিয়ে দিলেন । ফোন বারবার বাজল । একবারও তুললেন না । শেষে ললন্তিকা ফোন করা ছেড়ে দিল ।

দিন দুই পরে আরণ্যক একটা পি সি ও থেকে ফোন করলেন ললন্তিকাকে । সে তখন স্নানঘরে । ফোন বাজছে দেখে সজ্জন ফোন তুলে বললেন - হ্যালো ! আপ কৌন ? 

আরণ্যক ভাবলেন এর সাথে কথা বলার কোন মানে হয় না । তিনি ফোন রেখে দিলেন । 

ললন্তিকা স্নান সেরে নিজের রুমে ঢুকল । ফোনের আওয়াজ বাথরুমে পেয়েছে । দেখে নিল আরণ্যকের নাম্বার কি না । কিন্তু ল্যাণ্ডফোন থেকে আসা কল দেখে একটু ভয় পেল । পুলিশ নয় তো ! আরণ্যকের মত তার নামও তো পুলিশের খাতায় রয়েছে।

ডিনার টেবিলে বসে সজ্জন বললেন - দেখো কামিনী ! আজকল তুম বহুত গুমরে মে হো । কেয়া চল রহা হ্যায় মনমে ? ওয়াপস জানে কে লিয়ে তড়প রহী হো কেয়া ?

ললন্তিকা বলল - তোমার কৃপায় দিব্যি আছি। আমার কোন অসুবিধা নেই । আর ওয়াপস? কভি নেহি।

সজ্জন আশ্বস্ত হলেন । য়ে লড়কি কামবালী জ্যায়সি নেহি। লগতা হ্যায় অপনে কো মনা লিয়া ।

সজ্জন খুব খুশি হলেন ।

আরণ্যক রায় পড়লেন চিন্তায় । ললন্তিকা যদি তাকে চিনে ফেলেছে তবে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে না দেয় । তথিপি নিরুপায় হয়ে সাধু সেজেই থাকলেন । ঠিক করলেন এদের সঙ্গেই থেকে যাবেন । 

কুম্ভমেলা শেষ হল । তিনি বেশ জমিয়ে নিয়েছেন সাধুদের সঙ্গে । নেশা ভাঙ করে বাবা ভোলানাথের মত মনে হয় নিজেকে । অন্যান্য নাঙ্গা সন্ন্যাসীদের যেমন লোকালয়ে যাওয়া হয় না; তিনিও যেতে পারেন না। তাঁর মাথায় নতুন করে একটা চিন্তা মাথা চাড়া দিল । 

অনেকদিন অরবিন্দের কোন খবর নেই। একবার খবর নিলে হয় । এতদিনে নিশ্চয়ই পাণ্ডুলিপির কেসটা পুলিশকে দিয়েছে । 

কিন্তু পুলিশের খাতায় তো ওর নামও আছে। গেলেই তো ধরা পড়বে ! পাণ্ডুলিপি নিয়ে সরবত করে পান করুক। 

ধরলেন অরবিন্দকে । খবর নিয়ে যা জানলেন তা পিলে চমকে দেবখর মতই । তিনি যা ভেবেছিলেন তার উল্টোটাই হয়েছে । পাণ্ডুলিপি এখন আদালতে জমা পড়েছে । ল্যাবরেটরিতে হাতের লেখা যাচাই হচ্ছে বিশেষজ্ঞ দিয়ে ।

আরণ্যক বললেন - তুই কোথায় আছিস ?

হাসল অরবিন্দ। রাখে হরি মারে কে ? 

- বুঝলেন স্যার, আমি এখন একজন ভি আই পি । পুলিশ আমায় কিচ্ছুটি বলছে না । খাচ্ছি-দাচ্ছি, আয়েশ করছি । কোন বোঝা নেই তো ঘাড়ে ! তা' আপনারা কেমন আছেন স্যার ? ললন্তিকা নিশ্চয় সুখী হয়েছে!

স্যার আপনি কি এখন কাশীতে আছেন ? বাবা বিশ্বনাথের আশ্রয়ে ?

এই রে ! বেটা জেনে গেছে নাকি ! ফোন কেটে দিলেন তিনি। তারপর চললেন আখড়ায় ।

( ক্রমশ )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Thriller