STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Thriller

3.4  

Nityananda Banerjee

Thriller

ললন্তিকা ধারাবাহিক

ললন্তিকা ধারাবাহিক

5 mins
365

পর্ব সাতানব্বই


আরণ্যক বসুরায় ও অনন্ত মোহন সরখেল সাগরদ্বীপে পৌঁছে গেলেন । নাগা সন্ন্যাসী দেখে ভেসেল বা লঞ্চ কোথাও কোন রকম ভাড়া নিল না। 

তাঁরা দু'জনে স্নান সেরে কপিলমুনি আশ্রমে ঘুরলেন । এখানে প্রচুর খাবারের দোকান রয়েছে ।দামও নাগালের মধ্যেই । অনেকদিন ভেতো বাঙালি ভাত খাননি; আরণ্যক বললেন - চল ভাত খাই। কিন্তু নিরামিষ। খবরদার ভুলেও আমিষ খাবারের দিকে চাইবে না।

অনন্ত মোহন কবে শেষ ভাত খেয়েছেন মনে করার চেষ্টা করলেন । এখন তিনি তো ফলাহারী। বললেন - আমি ভাত খাব না । আর খেতেও ইচ্ছে করে না । আপনি খান। আমি কলাটা মূলোটা খেয়ে কাটিয়ে দেব ।

আরণ্যক ওর মুখের দিকে চাইলেন - এ্যাই ! তুমি বাঙালী না ? ভাত খেতে ইচ্ছে করে না এমন কথা একজন বাঙালির মুখে মানায় না । নাও চল দেখি। আমার খুব ক্ষিধে পেয়েছে। 

অনন্ত মোহন বললেন - তা যান না। ভাত খাবেন খান। আমাকে জোর করছেন কেন ?

- শোনো অনন্ত ! এখানে লক্ষ লক্ষ লোক আসে , থাকে । মিছিমিছি চেঁচামেচি করো না। কারও সন্দেহ হলে পুরো অপারেশনটাই জলে যাবে ।

- আমি তো সেকথাই বলছি । ভাত খেতে গিয়ে যদি কেউ সন্দেহ করে বসে!

আরণ্যক ভাবলেন কথাগুলো মন্দ বলে নি অনন্ত । দরকার নেই । ফলমূল খেয়েই কাটিয়ে দেওয়া যাবে ।

নাগাদের জন্য পৃথক আখড়া রেডি করা আছে। আরণ্যক মাঝামাঝি একটা জায়গায় আশ্রয় নিলেন। অনন্তকে বললেন সে যেন পাশের একটা নেয় । অনন্ত তাঁর বাঁদিকের চালাটি বেছে নিলেন ।

শুয়ে বসে বা দাঁড়িয়ে থেকে নাগা সন্ন্যাসীরা যেভাবে নিজেদের উপস্থাপিত করে ওঁরাও ঠিক তেমনই ভাবে রইলেন । দলে দলে ভক্তরা আসে। প্রণাম করে। দক্ষিণা দিয়ে আশীর্বাদ নেয় । অনেকে নৈবেদ্যও আনে - রকমারি ফল, লাড্ডু, মণ্ডা ইত্যাদি । সে সব খেয়ে ওঁরা ক্ষুণ্ণিবৃত্তি করেন । আসল নাগা সন্ন্যাসীদের ক্ষুধা নেই; তাঁরা সব সময় ধ্যান জপ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন ।আর মাঝে মাঝে ভক্তদের মাথায় হাত রেখে আশীষ দেন ।

আশ্রমে প্রচুর পুলিশ রয়েছে। তারা আইনশৃঙ্খলার দিকে নজর রাখছে। আবার লোকজনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে কখন সাগরে নামতে হবে বলে দিচ্ছে।

আরণ্যকের শ্যেনদৃষ্টি তা' নজর এড়ায়নি । এন কে সালভে, পরমেশ্বর ভট্টাচার্য্য, সন্তু মুখার্জী সবাই রয়েছেন। কিন্তু দেবেন্দ্র ভৌমিক বা ললন্তিকা সেন - কাউকে দেখতে পাননি । হয় এখনো আসেনি অথবা আসার প্ল্যান বাতিল করে দিয়েছে। 

মিঃ দেবেন্দ্র ভৌমিক বললেন - বেয়াই মশাই আজ ও কাল দুটো দিন কলকাতায় থেকে যাই । আরণ্যক বসুরায় ভাববে আমরা ভয়ে আসিনি । অনেকটা নিশ্চিন্ত হয়ে যাবে । আর আমাদের এই সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হবে ভোর বেলায় , চুপিসাড়ে।

অভয়ঙ্করবাবু বললেন - কর্তার ইচ্ছায় কর্ম। যা বলবেন।

তৃতীয় দিনে ওঁরা রওনা দিলেন। বেহালা ফ্লাইং ক্লাব থেকে তিনটে হেলিকপ্টার পুলিশের তরফে ভাড়া নেওয়া হয়েছিল । ওঁরা সকলে সাগরদ্বীপে পৌঁছালেন রাত দশটা কি এগারোটায় । মহিষমারিতে একটা লজ পুরোটাই ভাড়া নিয়ে থাকলেন যাতে মোটামুটি লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা যায় ।

চারটি পরিবার - মিঃ ভৌমিক, মিঃ সরকার, মিঃ চাকলাদার এবং সজ্জন সিং - এই চারজনের পরিবারে লজ গমগম করতে লাগল ।

রজনী দেবী, রুক্মিণী দেবী, শৈল দেবী ছকফট করতে লাগলেন কপিলমুনির মন্দিরে পূজো দিতে । এদিকে ললন্তিকা, কল্যাণী, ঐশী আর তাদের ছেলে মেয়েরাও তাড়া দিতে লাগল মেলায় ঘুরতে । 

ঐশী তো বলেই ফেলল - তোমরা তোমাদের কাজ কর, আমাদের একটু ঘুরতে তো দাও ।

পটকা বলল - মেসোমশাই যেমনটি বলবেন সে ভাবেই থাকতে হবে । মনে রেখো ওনারা এসেছেন অপারেশনের জন্য । আর আমাদের নেহাতই দয়া করে এনেছেন।

অভয়ঙ্করবাবু একান্তে মিঃ ভৌমিককে ডেকে বললেন - খবর নেবেন কি ভাবে আরণ্যক এখানে এসেছে কি না । 

মিঃ ভৌমিক বললেন - এখান থেকেই দেখিয়ে দিচ্ছি ।

বলে অনন্তের ফোনে রিং করলেন অরবিন্দের মোবাইল থেকে । 

অনন্ত মোহন ছেলের ফোন নং দেখে ব্যাকুল হয়ে উঠলেন।

বললেন - প্রশান্ত তুই বেঁচে আছিস ? তবে যে কে যেন বলেছিল তুই পুলিশের হাতে মারা গেছিস ! প্রশান্ত, আমরা এখন কপিল মুনির আশ্রমে যেখানে নাগা সন্ন্যাসীরা আছেন সেখানেই নাগা সেজে বসে আছি। একবারটি আয় বাবা, চোখের দেখা দেখে নিই।

অনন্ত জানেন রিং এর শব্দ শুনতে পেলে আরণ্যক ফোন কেড়ে নেবে। তাই মোড ভাইব্রেশনে রেখে দিয়েছেন।

বললেন - অনেক কথা আছে বাবা। আরণ্যক এখানে এসেছে । কপিলমুনির মন্দিরের ঊল্টো দিকে সাগরের খুব কাছে বাঁদিক থেকে বারো নং চালাতে আমি এবং তেরো নং চালায় আরণ্যক নেংটা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আয় না বাবা। আমাকে উদ্ধার কর ওর হাত থেকে।

মিঃ ভৌমিক ফোন কেটে দিলেন। আর অরবিন্দের ফোনটা সুইচ অফ করে দিয়ে বললেন - আপনার বিশ্বাস হল ?

অভয়ঙ্করবাবু বললেন - বলিহারি যাই আপনার পরিকল্পনাকে। তবে অনন্ত বাবুর জন্য আমার বড় খারাপ লাগছে ।

মিঃ ভৌমিক বললেন - খারাপ তো আমারও লাগছে বেয়াই মশাই। ভাগ্যের মার থেকে তো বাঁচার পথ নেই ।

 - তা' যা' বলেছেন। আচ্ছা বেয়াই মশাই! ললন্তিকা যদি ঠিক চিনতে না পারে ! তখন কি হবে?

মিঃ ভৌমিক বললেন - আমার দৃঢ় ধারণা ও ঠিকই চিনতে পারবে । এখন আমাদের একটাই কাজ ললন্তিকাকে যে কোন উপায়ে ওই তেরো নং চালাঘরের সামনে নিয়ে যেতে হবে । আর সেই দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে ।

- আমাকে ? আমি কি করে ওকে ওই নেংটো সন্ন্যাসীর কাছে নিয়ে যাই বলুন তো ? তা- ছাড়া এখানে আমাদের সঙ্গে মেয়ে জামাই, ছেলে বউমা আর মাননীয়ারা রয়েছেন। 

- তা'তে কি ? ওদের সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে কেন ? ওদের নিয়ে আমি একটু দূরে অপেক্ষা করব । আপনি ললন্তিকাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে ওদিকে নিয়ে যাবেন !

- ধূর মশাই! ও কি বাচ্চা মেয়ে ? আমার কথায় ভুলে যাবে ! ও হল পোড় খাওয়া মেয়ে , তাছাড়া ওর স্বামীও এখানে রয়েছেন , তিনি যদি বেঁকে বসেন? কিম্বা বলেন উনিও যাবেন ?

- ভয় নেই , সে দায় আমি নেব । ওঁরা কেউ যাবেন না।

- না না , বেয়াই মশাই! এ আমি পারব না । ললন্তিকা আমার মেয়ের মত, ওকে ওই দৃশ্য দেখাতে পারব না।

- বেশ । তবে আমার স্ত্রীকে বলে দেখি , যদি রাজী হয়ে যান ।

- এ আবার কেমন কথা ? আপনার স্ত্রীকে তো ভাল মত চেনে আরণ্যক ।

- সে তো আমাকে আপনাকেও চেনে । শুনুন ললন্তিকা

যাবে ছদ্মবেশে - এক মুসলিম মেয়ের বেশে। কালো কাপড়ে ঢাকা থাকবে মুখ, শরীর । আপনি যদি যান, আপনাকেও ছদ্মবেশ নিতে হবে । যাক গে ও সব। আমি নিজে যাব ললন্তিকার সঙ্গে । ভেবেছিলাম এখনই পুলিশকে পরিকল্পনার কথা বলব না । আপনি গেলে ওই সব দিকগুলো ভালো ম্যানেজ করে নিতে পারতাম ।

মিঃ ভৌমিকের কথায় অভয়ঙ্করবাবুর পিছিয়ে যেতে লজ্জা হল । তিনি বললেন - আচ্ছা ঠিক আছে বেয়াই মশাই, আমিই ওকে নিয়ে যাব । সজ্জন সিং কে আপনি ম্যানেজ করবেন কিন্তু ।

মিঃ ভৌমিক খুশি হয়ে বললেন - আপনার সে নিয়ে উদ্বিগ্ন হবার কোন কারণ নেই।

( ক্রমশ )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Thriller