STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Thriller

4  

Nityananda Banerjee

Thriller

ললন্তিকা ধারাবাহিক

ললন্তিকা ধারাবাহিক

5 mins
413

পর্ব ঊনপঞ্চাশ

মিঃ আরণ্যক বসুরায় ললন্তিকার জন্য হন্যে হয়ে উঠে পড়ে লেগেছেন।‌ ঘন ঘন মিঃ পরমেশ্বর ভট্টাচার্য্যকে ফোন করছেন - কিছু খবর পেলে পরম ?

পরমেশ্বর এবার বিরক্ত হয়ে গেছেন আরণ্যকের উপর । একজন সাহিত্যিক; যার কি না লেখালেখি নিয়ে পড়ে থাকা উচিত সে এমন অধীর হয়ে যায় কেন ! কি তার ভয় যদি খোলাসা করে বলে তো একটা সুরাহা করা যেতে পারে । 

তিনি সন্তু মুখার্জীর কাছে জেনেছেন সন্দেহভাজন নাম্বারটি এখনও আনট্রেসড । হয়তো সিমকার্ড বা মোবাইল কোথাও ফেলে দিয়েছে ।

তিনি আরণ্যককে বললেন - একবার থানায় আসুন স্যার । কয়েকটা কথা জানার আছে । 

মিঃ বসুরায় বললেন - থানায় ? কেন ? তুমিই না হয় আমার অফিসে চলে এসো । 

- সরি। আমি খুবই ব্যস্ত আছি। যেতে পারছি না।

- ঠিক আছে তাহলে আমি যাব সেই রাত্রিবেলায়। চলবে তো ?

- ওকে স্যার । নো প্রব্লেম ।

এবার তিনি ফোন করলেন অভয়ঙ্কর বাবুকে। 

- মিঃ সন্তু মুখার্জী কোন খবর দিয়েছেন ?

- না তো বেয়াই মশাই !

হঠাৎ খেয়াল করলেন সাগর বলে ছেলেটিকে। ওকে চিনতেন পরমেশ্বরের মতই শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্কে । তখন তিনি জলপাইগুড়িতে একটা সরকারি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন । দশম একাদশ শ্রেণীর বাংলা পড়াতেন । সাগর মাধ্যমিকে ফেল করলে পড়াশোনা ছেড়ে দেয় । কিন্তু স্যারের পাশের বাড়িতে থাকত বলে সম্পর্কটায় ছেদ পড়েনি । 

সাগরকে মনে পড়েছে কিন্তু যোগাযোগ করবেন এমন অবস্থায় নেই । ফোন নং জানেন না । তাহলে আবার জলপাইগুড়ি যেতে হয় । সে তো সময়সাপেক্ষ এবং গেলেই তার দেখা পাবেন এমন নিশ্চয়তা নেই। অনেক বছর হয়ে গেছে। এখন সে মধ্যবয়সেও পৌঁছে গেছে। সুতরাং এমনও হতে পারে সামনাসামনি দেখা হলেও কেউ কাউকে চিনতে পারবেন না ।

অভয়ঙ্করবাবু ফোন ধরে রয়েছেন । আরণ্যক কথা বলছেন না দেখে তিনি বললেন - বেয়াই মশাই লাইনে আছেন তো ?

আরণ্যক এত গভীর চিন্তায় মগ্ন যে তিনি অভয়ঙ্করবাবুকে ফোন করেছেন ভুলে গেছেন । অভয়ঙ্করবাবু আবার বললেন - কি হল বেয়াই মশাই ! শরীর ঠিক আছে তো !

আরণ্যক চৈতন্য ফিরে পেয়ে বললেন - তেমন কিছু না। হঠাৎ মাথা ঘুরে গিয়েছিল । এখন ঠিক হয়ে গেছে।

- না না বেয়াই । এটা ভালো নয় । মাথা ঘুরানো মানে স্পণ্ডিলাইসিস বা ভার্টিগো প্রব্লেম হতে পারে। আপনি ডাক্তার দেখিয়ে নিন ।

- ও কিছু না বেয়াই মশাই। আপনি চিন্তা করবেন না। 

আমি এবার রাখছি । কয়েকটা কাজ বাকি - করে নিই।

অভয়ঙ্করবাবু ফোন রেখে দিলেন ।

আরণ্যক বসুরায় ডায়েরী বের করে সাগর সম্বন্ধে খোঁজ শুরু করলেন ।

রুদ্র এসে উপস্থিত ।

- মেসোমশাই ! 

- হাই রুদ্র ! তোমাদের খবর কি ?

- আমাদের সব খবর ভালো। মা চিন্তা করছিলেন তাই অফিস থেকে আপনার খবর নিতে চলে এলাম । আপনি এখন তো আর আমাদের বাড়ি যান না!

- সরি সরি, ভেরি সরি রুদ্র । আজকাল নিজে এমন ব্যস্ত হয়ে পড়েছি যে কারোরই খবর নেওয়া হয় না । কি খাবে বল , অর্ডার দি।

- আমার কিছু লাগবে না । মা আপনার জন্য মালপোয়া পাঠিয়েছেন। আপনি নাকি ভীষণ পছন্দ করেন !

- হা হা হা । দিদি আমার পছন্দ এখনও ভোলেননি দেখছি ।

বলে টিফিন ক্যারিয়ার রুদ্রর কাছ থেকে নিয়ে আলমারিতে রেখে দিলেন ।

বললেন - আজ রাতের খাওয়া জমে যাবে ।

রুদ্র চলে যেতেই একটা অজানা নাম্বার থেকে ফোন এল। অন্য প্রান্তের লোকটি বলল - কেমন আছেন স্যার ?

আরণ্যক প্রথমে ভয় পেয়ে গেলেন । অচেনা অজানা লোক এ'রকম কথা বললে ভয় পাওয়ার কারণ আছে।

গলায় গাম্ভীর্য এনে বললেন - কে বলেছেন আপনি?

- আমি সাগর বলছি স্যার । মনে করতে পারছেন সেই সাগর যে মাধ্যমিকে বাংলায় ফেল করে পড়া ছেড়ে দিয়েছিল !

- ওরে বাবা ! চিনব না কেন ? এগন কি করছ ?

- স্যার কিছু করি না । তবে জলপাইগুড়ি সরকারী হাসপাতালে পিওনের কাজ পেয়েছিলাম। পরে ব্যবসার করব বলে চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলাম । ব্যবসায় খুব ইনকাম করেছি স্যার । সেই টাকা দিয়ে এখন একটা ওষুধের দোকান খুলেছি ।

- বাব্বা ! দারুন ব্যাপার । তা ' তুমি তো কামালকে চিনতে?

- একদমই স্যার । এই তো ক'দিন আগে অরবিন্দের বউকে নিয়ে আমার এখানে এসেছিল ।

- অরবিন্দের বউ ? মানে ললন্তিকা? কি বলছ তুমি ? 

- ঠিকই বলছি স্যার । আমার মনে হয় কামালের সঙ্গে ও জড়িয়ে পড়েছে ।

- আর জড়িয়ে পড়েছে ! তুমি শুনেছ কি কামাল আর নেই !

- কি বলছেন স্যার। এই তো তিনচার দিন আগেই এসেছিল ।

- এসেছিল । এখন পুলিশের গুলি খেয়ে উপরে চলে গেছে।

- আর ললন্তিকা ?

- সে কোথাও গা ঢাকা দিয়ে আছে হয়তো ! মেয়েটা যে কি ভুলটাই না করে বসল ! দিব্যি ছিল আমার কাছে । আচ্ছা তুমি অরবিন্দের কোন খবর রাখ ?

- না স্যার । শুনেছি ও ফেরার ।

- ঠিক শুনেছ । তোমাকে একটা কথা বলি রাখবে ?

- একটা কেন স্যার ; একশোটা বললেও রাখব।

- তবে শোন । এই মুহূর্তে অরবিন্দ বা ললন্তিকার কোন খবর পাই না। তোমাকে যে কোন প্রকারে ওদের করুর খবর জোগাড় করে দিতে হবে । আমি জানি তুমি আণ্ডারওয়ার্ল্ডের অনেকের সঙ্গে যুক্ত । তুমি পারবে। না পারলে জানব তুমি এখনও শোধরাওনি ।

- না স্যার, আমি এখন ওসব ছেড়ে দিয়েছি।

- তুমি ছেড়ে দিয়েছ। আণ্ডারওয়ার্ল্ড তো তোমাকে ছাড়েনি। তাই বলছি খভর নিতে তুমিই পারবে ।

সাগর স্যারের কথায় ভয় পেয়ে গেল । ভাবল তিনি কি এখন গোয়েন্দা গিরিও করেন নাকি !

বলল - ঠিক আছে স্যার। খবর পেলেই আপনাকে জানিয়ে দেব ।

আরণ্যক মনে মনে বললেন - মুগাম্বো খুশ হুয়া ।

সাগরকে গুডনাইট জানিয়ে ফোন ছাড়লেন।

তারপর সেদিনের মত অফিস বন্ধ করে কলেজ স্ট্যীট থানায় গেলেন মিঃ পরমেশ্বর ভট্টাচার্য্যের সঙ্গে কথা বলতে।

মিঃ ভট্টাচার্য্য সোজাসুজি প্রশ্ন করলেন - ললন্তিকা সেন আপনার কে হন ? আত্মীয় নাকি পরিচিত কেউ 

আরণ্যক বললেন - দ্বিতীয়টা । 

- তার মানে আপনার চেনাজানা। কিন্তু কি পর্য্যায়ের পরিচিতা ?

- কি বলতে চাইছ পরম ?

- মাথা ঠাণ্ডা রাখুন স্যার । আমার সন্দেহ যদি ঠিক হয় তবে আনার দুর্দিন আগত । আর যদি ভুল হয় তবে বলব আপনি ওকে ভুলে যান ।

- হেঁয়ালি কর না পরম । পুলিশ অফিসার হয়ে গেছ মানে এই নয় যা খুশি তাই জিজ্ঞেস করবে । পুলিশের ডি জি কেন মুখ্যমন্ত্রীও আমাকে যথেষ্ট সমীহ করেন ।

- এই তো আপনার রোগ, স্যার । এত সুপরিয়ারিটি কমপ্লেক্স কিন্তু আপনাকে একদিন ডুবিয়ে দেবে ! যা বলছি তা' সোজাসুজি বলুন; নইলে আমার পক্ষে আসামী ধরা সম্ভব নয় ।

- তুমি কি আমাকে কোন ভাবে সন্দেহ কর ?

- করি । আপনি স্পষ্টবক্তা নন বলে সন্দেহ বেড়ে যায়। নইলে একটা সাধারণ মেয়ের ভয়ে আপনি ভীত হয়ে পড়েন !

- মেয়েটা সাধারণ, কিন্তু তার ক্রিয়াকলাপ অসাধারণ।

তুমি জানো --

আরণ্যকের মুখের সামনে হাত উঠিয়ে তাঁকে বাধা দিয়ে পরমেশ্বর ভট্টাচার্য্য বলেন - সবটা জানি না ; তবে কিছু কিছু শুনেছি । তারই পরিপ্রেক্ষিতে আমার এই জিজ্ঞাস্য । বলতে চাইলে বলুন নতুবা আসতে পারেন ।

( ক্রমশ )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Thriller