STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Thriller

4  

Nityananda Banerjee

Thriller

ললন্তিকা ধারাবাহিক

ললন্তিকা ধারাবাহিক

6 mins
290

পর্ব নিরানব্বই


সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের আগে চলল তার মহড়া। একটি বিভ্রান্তিকর গেজেট নোটিফিকেশন দিয়ে পুলিশ জানিয়ে দিল সাহিত্যিক আরণ্যক বসুরায়কে গ্রেপ্তার করা গেছে। এই মুহুর্তে পুলিশের একটি দল তাঁকে হেলিকপ্টারে কলকাতায় আনা হয়েছে। 

চাঞ্চল্য ছড়ালো মেলা প্রাঙ্গনে । সবাই জানেন তাঁর কীর্তিকলাপ। বিশেষত ইলেকট্রনিক মিডিয়ার দৌলতে তাঁর সম্বন্ধে জনগণ যথেষ্ট অবহিত হয়ে আছেন । এখন তাঁদের মধ্যে গুঞ্জন উঠল ফাঁসি না হয়ে যায় না।

চাঞ্চল্য পড়ে গেল অধীর বাবু এবং লাড্ডু সিংয়ের মনেও।আসল লোকটাই যদি ধরা পড়ে গেছে তাহলে পালিয়ে এসে কি লাভ হল !

অধীর বাবু লাড্ডু সিংকে বললেন - চল এবার আমাদের পালা । 

লাড্ডু সিং ভয় পেয়ে বলল - এবার কি হবে স্যার ?

- কি আর হবে। বড়জোর জেল । আরণ্যকের মত ফাঁসি হবে না নিশ্চয় । 

লাড্ডু সিং বলল - এখন আমরা কি করব ?

অধীর বাবু বললেন - আরণ্যকের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ফেরার হতে হবে । চল আমরা দক্ষিণে চলে যাই। 

লাড্ডুর মন:পূত হল না কথাটা । এর চেয়ে জেলে থাকাই

অনেক ভালো ছিল । তিনমাসের তো জেল হয়েছিল । দেখতে শুনতেই কেটে যেত । এখন এই হ্যাপা সামলাই কি করে ! ওদিকে বাড়িতে বুড়ি মা আর বউ রয়েছে । কি ভাবে আছে, কি খাচ্ছে কে জানে ! সৎ পথে হোক বা অসৎ পথে - সেইই তো ছিল একমাত্র উপার্জনের লোক ।

অধীর বাবু বললেন - কি ভাবছ এত ? এখানে আর এক দণ্ডও থাকা চলবে না । দেখছ না চারিদিকে পুলিশে গিজগিজ করছে।

লাড্ডু বলল - কোথায় যাব স্যার ? আমার পকেট তো ঠনঠন গোপাল !

অধীর বাবু বুঝতে পারলেন না । ভাবলেন অবাঙালি তঝ! ভাড়ে মা ভবানী বলতে না পেরে বলছে ঠনঠন গোপাল।

তিনি লাড্ডুকে বললেন - দেখ লাড্ডু, বুঝতে পারছি তোর লাড্ডু কেনারও পয়সা নেই ; আমি বলি কি এখন চল মূল ভূখণ্ডে, তারপর কিছু একটা বন্দোবস্ত করব ।

লাড্ডুর মনে হল ' এমন বন্ধু আর কে আছে ' ! যেতে রাজী হল। 

অধীর বাবু বললেন - নিয়ে এসেছি আমি; তখন তোকে পৌঁছে দেবার দায়িত্বও আমার । নে চল, আর দেরী করিসনে ।

দু'জনে পুলিশের চোখ বাঁচিয়ে লঞ্চ ঘাটে আসতেই মুখোমুখি মিঃ গুপ্তের সঙ্গে । তাঁরা লঞ্চ থেকে নামছিলেন আর এরা লঞ্চে উঠতে লাইন দিয়েছে । এক ঝটকায় দু'জনকে কাদায় ফেলে দিয়ে মিঃ গুপ্ত সহচরদের নির্দেশ দিলেন ওদের কোমরে দড়ি পরাতে। বীরপুরুষ দু'টি অসহায়ের মত কোমরে দড়ি পরল ।

তাঁদের টানতে টানতে আনা হল নিকটবর্তী পুলিশ চৌকিতে। মিঃ গুপ্ত ফোন করলেন মিঃ ভৌমিককে ।

- স্যার, ধরে ফেলেছি দু'জনকেই। পালাতে যাচ্ছিল । একবারে ফ্রন্টে পড়ে গেল ।

মিঃ ভৌমিক বললেন - ওয়েল ডান । আপনি কি ওদের নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন ?

- ফিরেই যাচ্ছি স্যার । আমার তো এখানে ডিউটি দেননি।

মিঃ ভৌমিক বললেন - দরকার হবে না। আপনি আসুন ।

অনন্ত গুঞ্জনের মধ্যেই জেনে গেল আরণ্যক বসুরায় ধরা পড়েছে । খুব আনন্দিতও হলেন। কিন্তু উঁকি দিয়ে দেখলেন আরণ্যক ঘুমিয়ে গেছেন বা ঘুমের ভান করে পড়ে আছেন। এখন তিনি পালিয়ে যেতেই পারেন। কিন্তু যদি আরণ্যক ভান করে পড়ে থাকেন তবে তো গোলমেলে কাণ্ড ঘটে যাবে ! আবার তিনি যে জামাকাপড় পরবেন তারও উপায় নেই । সব তো আরণ্যকের কব্জায় । 

হঠাৎ তাঁর খেয়াল হল লোকে বলছে আরণ্যক ধরা পড়েছেন; অথচ তিনি সশরীরে তেরো নং ঘরে শুয়ে আছেন । এমন হতে পারে পুলিশ ইচ্ছাকৃত ভাবে এটা কৌশলে রটিয়ে দিয়েছে যাতে আরণ্যকের মনে হয় পুলিশ কত বোকা । এটাই ঠিক, কেন না তিনি যে ভাবে নিস্পৃহের মত পড়ে আছেন তিনি ধরেই নিয়েছেন পুলিশ ভুল করেছে। তবে আরণ্যকের মত ধূর্ত লোক তা কি আর বুঝবেন না !

কালো বোরখায় ঢাকা এক নারী এবং জনৈক মুসলিম পুরুষ একবার এসে জায়গাটা প্রদক্ষিণ করে চলে গেল । অনন্ত ভাবলেন মেলায় এসেছে হয়তো । 

ওই মুসলিম যুগল বারো এবং তেরো নং চালায় কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে চলে গেল ।

মিঃ ভৌমিক অভয়ঙ্করবাবুকে বললেন - বেয়াই মশাই! ট্রায়াল রান ঠিকঠাক হয়েছে তো !

অভয়ঙ্করবাবু বললেন - একদম পাক্কা ।

মিঃ ভৌমিক বললেন - ভীড় কেমন দেখলেন ?

- প্রচুর ভীড় বেয়াই মশাই । তবু আমরা ঠিক চিনতে পেরেছি। 

ললন্তিকার উদ্দেশ্যে বললেন - কি মা? আরণ্যককে চিনতে পেরেছ তো ?

- হুম্ কাকাবাবু। আর অনেকদিন পর বড় মামাকেও দেখলাম । যদিও উলঙ্গ, খারাপ লেগেছে। 

মিঃ ভৌমিক বললেন - সেটা স্বাভাবিক । কিন্তু তুমি কি সিওর ওইই মিঃ আরণ্যক বসুরায় ?

- একদমই মেসোমশাই। আমি ওর মুখ দেখেই ধরতে পেরেছি ; যতই সার্জারি করুক , আর চেহারায় বদল আনুক, ওর হাবভাব দেখে ঠিক চিনে নিয়েছি। ওর একটা মুদ্রাদোষ আছে । সেইটেই আমাকে নিশ্চিত করে দিয়েছে ওইই আরণ্যক বসুরায় ।

অভয়ঙ্করবাবু বললেন - মুদ্রাদোষ ? কই আমি তো দেখলাম না !

ললন্তিকা বলল - আপনি দেখেন নি? ও তার ডান কাঁধ হেঁচকা টান দিয়ে বারবার কাঁধটা ঠোঁটের দিকে তুলছিল ।

অভয়ঙ্করবাবু বললেন - ইয়েস। সে তো দেখেছি।

মিঃ ভৌমিক একটু অন্যরকম ভাবছিলেন। সজ্জন সিং বলেছেন কুম্ভমেলায় আরণ্যক নাগা সন্ন্যাসী সেজে যখন বসে ছিলেন কামিনী ( ললন্তিকা ) ওকে বলেছিল ওর পুরুষাঙ্গে একটা বড় লাল জড়ুল আছে আর সেই দেখে নাকি ওকে চিনে ফেলেছিল ।

মিঃ ভৌমিক সেটাই আশা করেছিলেন ললন্তিকা তেমনই কিছু বলবে । তাঁর সন্দেহ দূর হল না ।

তিনি একান্তে ললন্তিকাকে ডেকে সেই প্রসঙ্গ তুললেন। ললন্তিকা মুখ নীচু করে শুনল; কিছু বলল না। শুধু বলল - আমি থাউজেণ্ড পার্সেন্ট সিওর ও আরণ্যকই।

মিঃ ভৌমিক আর ঘাঁটালেন না । লজ্জা পাচ্ছে তো !

সব মেয়েদের এবং রুদ্র পটকা বিল্টু পলা - সবাইকে অভয়ঙ্করবাবু বললেন - চল সবাই স্নান সেরে কপিলমুনিকে পূজো দিয়ে আসবে চল । 

সবাই নাচতে লাগল । নিজেদের তৈরি করে যখন পূজো দিয়ে ফিরে আসছে সবাই একবাক্যে বলল - আমরা মেলায় ঘুরব ।

ভৌমিক সাহেব বাধা দিলেন না । বললেন - খুব সাবধান ! ভুল করেও কেউ নাগা সন্ন্যাসীদের দিকটায় যাবেন না । তবে সব গণ্ডগোল হয়ে যাবে ।

ললন্তিকা বলল - আপনি নিশ্চিত থাকুন মেসোমশাই। আমরা কেউ ওদিকে যাব না । 

ভৌমিক সাহেব হেসে তাকে সমর্থন জানালেন ।

কিন্তু হুজুগ যে বড় বালাই । রুদ্র পটকাকে বলল - চলুন দাদা, এরা এখানে ঘোরাফেরা করুক , আমি আপনি আর সজ্জন ভাই নাগাদের এক পলক দেখে আসি ।

পটকারও ইচ্ছে তাই । শুধু সজ্জন কিন্তু কিন্তু করেও চলল ওদের সঙ্গে। ওয়ান ওয়ে ধরে ওরা কিছুক্ষণ পরে আবার স্বস্থানে ফিরে এল ।

এসে দেখে বিল্টু বিচ্ছুটা নেই। খোঁজ খোঁজ কোথায় গেল। চাঞ্চল্য হতেই রুদ্র এবং পটকা আবার নাগাসন্ন্যাসীদের দিকে দৌড়াল । দেখে বিল্টু এক মনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদের দেখছে আর ফিক ফিক করে হাসছে । এ মা ছি: এত বড় বড় লোক আবার নেংটা থাকে নাকি !

কান মলে রুদ্র বিল্টুকে ধমক দিল । 

- বলেছি না এদিকে আসবি না ?

বিল্টু উ: আ: করে বলল - কান ছাড়ো বলছি। ব্যথা করছে তো !

টেনে নিয়ে এল রুদ্র । পটকা বলল - ভাগ্নে , এখানে তোমার সেই দাদুটা আছে যে তোমার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে মেরে ফেলতে চেয়েছিল - জান তো !

বিল্টু বলল - ওরে বাবা খুব ভুল করে ফেলেছি। ওই বদমাশ দাদুটা এখানে থাকে নাকি ?

- থাকে কি! আছে তো ! 

পটকা বলল - আবার যদি তোমাকে ধরে ফেলত! কি হোত বল দেখি ?

বিল্টু বলল - ড্যাড সরি। আর এমন কোনদিন হবে না ।

রুদ্র বলল - ও তুই মুখে বলিস, কিন্তু করতে ছাড়িস না।

- না ড্যাড, এবার আমি সত্যিই আর এমন কিছু করব না ।

ওরা লজে ফিরে এলেন । লাঞ্চ সেরে বিশ্রাম নিতে লাগলেন। 

মি: ভৌমিক স্মরণ করিয়ে দিলেন - আজ রাতের শেষদিকে, ভোর হওয়ার আগেই কিন্তু আমাদের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করতে হবে ।

ললন্তিকা বলল - এক্জাক্ট টাইমটা বলুন মেসোমশাই।

ভৌমিক সাহেব চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখলেন ললন্তিকা, অভয়ঙ্করবাবু ছাড়া আর কেউ সেখানে নেই । ওদের দু'জনের কানের কাছে মুখ এনে বললেন - ঠিক রাত সাড়ে তিনটায়।

( ক্রমশ )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Thriller