ললন্তিকা ধারাবাহিক
ললন্তিকা ধারাবাহিক
পর্ব চুয়াল্লিশ
ললন্তিকা আর কামাল দু'জনে যুক্তি করে সিদ্ধান্ত নিল রাণীগঞ্জে যাবে । মতের অমিল হল যাওয়ার যানবাহন নিয়ে ।
কামাল বলল - আপা ! হাওড়া, শিয়ালদা, চিৎপুর তিন জায়গা থেকে ট্রেনে রাণীগঞ্জ যাওয়া যায় । আবার ধর্মতলা বা করুণাময়ী থেকেও সরাসরি বাস যোগাযোগ আছে । আমি বলি কি - রেলে যাওয়ার চেয়ে বাসে যাওয়া অনেক নিরাপদ ; যদিও সময় হিসেব করলে বাসে একটু বেশিই সময় লাগবে । তবে লুকিয়ে যাবার দরকার হবে না ।
ললন্তিকা বলল - না কামাল ভাই ! বাস জার্ণি আমার পছন্দ নয় । আর নিরাপত্তার কথা যদি বল; আমরা কোথাও নিরাপদ নই । এই যে এখানে এনামুলের বাড়িতে আছি ; এখানেই কি নিরাপদে আছি ? অমন ঝুঁকি সব জায়গায় আছে । তুমি ট্রেনের টিকিটের ব্যবস্থা কর ।
কামাল বলল - একটাই তো ! নাকি দুটো কাটব ?
- একটা হলেই চলত । তুমি যাবে বলছ যখন - দুটোই কেটে নাও।
কামাল খুব খুশি হল । আরণ্যক বসুরায় আর ললন্তিকা সেনকে এক জায়গাতেই পেয়ে যাবে !
শিয়ালদা থেকে ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসে উঠল ওরা । মুখোমুখি উইণ্ডো সীট পেয়েছে । রাত সাড়ে আটটা নাগাদ রাণীগঞ্জে এসে নামল ।
নেমে স্টেশনের নিকটবর্তী একটা লজে উঠল । লজের কর্মচারী আইডেন্টিটি কার্ডের ফটোকপি চাইতেই বিপাকে পড়ল ওরা দুজনে।
আই কার্ড তো ফেলে এসেছি ট্রেনে । গল্প ফেঁদে কর্মচারীকে বোঝাতে চাইল ললন্তিকা । ব্যাগেই ছিল । ব্যাগ ট্রেনে থেকে গেছে, সরি । প্লীজ আজকের রাতটুকু কাটানোর ব্যবস্থা করে দিন ভাই ।
কর্মচারীটি দোনামনা করছিল । কামাল একটা দু'হাজারের নোট হাতে গুঁজে দিতেই কর্মীটির মুখে হাসি ফুটল ।
বলল - আপনারা কি স্বামী-স্ত্রী ?
কামালের রাগ হল ।
- অত জেরা করেন কেন ভাই ? একটা ডবল বেড হলেই চলবে ।
কর্মীটি এগারো নং রুমের চাবি বের করে ওদের দেখাতে নিয়ে গেল । বেশ খোলামেলা ঘর। চারিদিকে জানালা। এসিও রয়েছে ।
ডিনার করে দুইজন এসে বেডে বসল ।
কর্মচারীটি এসে বলল - কোন কিছুর প্রয়োজন হলে - একটা সুইচ দেখিয়ে বলল - এটা টিপে দেবেন ; ঠিক এসে পড়ব ।
কামাল একটু হেসে বলল - ঠিক আছে। আসেন এবার ।
ও চলে গেল । কামাল জুতো খুলে গড়িয়ে নিল । পাশাপাশি দুটো বেড । মাঝখানে দেয়াল ঘেঁষে টেবিল ; তাতে পানীয় জল, মশা তাড়ানোর অল আউট, টুথপেস্ট, সাবান ইত্যাদি রাখা আছে ।
কামাল ভেবে নিল ; কাল আরণ্যককে পেলেই খতম করবে ।
ললন্তিকা ভাবল - যদি দেখা হয়; আবার তাকে গ্রহন করার অনুরোধ করবে । মেনে নিলে ভালো; নইলে কামালকে দিয়ে --
দুজন দুটো বিছানায় শুয়ে পড়ল । ললন্তিকার ঘুম আসছে না । এপাশ ওপাশ করছে । কামালের আদিম কামনা -প্রবৃত্তির উদয় হল । এত কাছে একাকী ললন্তিকাকে কোনদিন পায়নি । আজ সুযোগ এসেছে। কামালও এ পাশ ও পাশ করছে ।
ললন্তিকা বলল - ঘুমাওনি ?
কামাল বলল - ঘুম আসছে না । চোখের সামনে একটা মেয়ের ছবি ভেসে আসছে চোখ বুজলেই।
- তোমার প্রণয়ীনির ?
কামাল হাসল । তুমি কি পাগল হয়েছ? এখানে আমরা দুজন। তৃতীয় জন আসে কি করে ?
তড়াক করে লাফ দিয়ে উঠল ললন্তিকা ।
- কি বলতে চাইছ ? আর লজে ঢোকার পর থেকে দেখছি তোমার মুখ থেকে আপা শব্দটা উবে গেছে।
কামাল বলল - তুমিও তো আর কামাল ভাই ডাকছ না। তাই নয় কি ?
ললন্তিকার ভয় হল । কামাল ভাই তো এমন ছিল না। কত সুযোগ পেয়েছে ! কখনও তো এমন কথা বলে নি ! আজ হঠাৎ পাল্টে গেল কেন !
কামাল বলল - লোকটা কি বলেছিল ?
- কো লোকটা ?
- লজ বুক করার সময় ? বলেছিল না আপনারা কি স্বামী-স্ত্রী ?
- তো ?
- এস না , আজ ওই খেলাটা খেলি ! সকালের পর আর তো কোনদিন তোমায় পাব না ! এস প্লীজ !
ললন্তিকার হাত পা থরথর করে কাঁপছে । কামালের এই পরিবর্তন সহ্য করা যায় না ।
- কামাল ভাই ! ললন্তিকা ভারী গলায় বলে।
নিজের বিছানা ছেড়ে কামাল এগিয়ে যায় ললন্তিকার দিকে ।
- আজ থেকে ভাই বলে কোন শব্দ নেই । আজ শুধু তুমি আর আমি ।
ললন্তিকা শেষ পর্য্যন্ত আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় । কারণ কামাল যে বড় নিষ্ঠুর । গলা টিপে মেরে দিতে তার হাত কাঁপবে না। দেখেছে জাহিরুদ্দিনকে কেমন গলা টিপে মেরে দিয়েছিল ।
কামালের নির্দেশ মত এক এক করে ললন্তিকা দেহের আবরণ খোলে, আর কামালের কামনার জল জিভ দিয়ে টসটস করে মাটিতে পড়ে । পূর্ণ সম্ভোগ করে কামাল ললন্তিকাকে ছেড়ে দেয়।
কাঁদতে কাঁদতে ললন্তিকা বলে - সত্যিই আমি বারোভাতারী। আজ তুমি সেটা প্রমাণ করে দিলে ।
কামাল হাসে। বলে মেয়ে হয়ে জন্মানোর গুনাহ এটাই। বুঝেছ! যাও বাথরুমে গিয়ে তৈরি হয়ে নাও। সকাল হলে তোমাকে এখান থেকে নিয়ে চলে যাব । আজ থেকে তুমি আমার রাখেল হয়ে থাকবে ।
সকাল বেলায় ওরা লজ ছেড়ে দিয়ে একটা টোটো চেপে রাণীগঞ্জ - বাঁকুড়া ন্যাশনাল হাইওয়ে দিয়ে দামোদর নদের ওপর রেল-কাম-রোড ব্রীজে নেমে গেল । টোটো চালক বলল - এখানে নেমে কি করবেন ? তার চেয়ে চলে যান মথুরাচণ্ডীর মেলায় । আনন্দ পাবেন ।
ললন্তিকা বলল - কোন দিকে যাবো?
টোটো চালক বলল - উঠুন । আমি পৌঁছে দিচ্ছি।
মথুরাচণ্ডী মন্দিরের সামনে ওদের নামিয়ে দিয়ে টোটো চালক বলল - উল্টোদিকে একটা আশ্রম আছে। ওখানেও যেতে পারেন । আর ওই যে একটা জেটির মত দেখতে পাচ্ছেন ওখানেও অনেকে যায় ।
ললন্তিকা জেটির দিকে যেতে শুরু করল । কামাল বাধা দিয়ে বলল - মরতে যাচ্ছ না কি !
ললন্তিকা যেন কিছুই শুনতে পায়নি । ও জেটির পথ ধরে চলতে লাগল ।
কামালের ফোনে একটা কল এল ।
আরে ! এ যে মেঘ না চাইতেই জল ! আরণ্যক ফোন করছেন ।
ফোন উঠিয়ে কথা বলতে লাগল।
- স্যার আপনি ?
- ইয়েস মিঃ কমল সরকার । আপনি কোথায় আছেন ?
আনন্দে কামালের বুক ভরে গেল ।
- গতকাল আপনাকে ফোন করার পর এডিটর সাহেব বললেন রাণীগঞ্জে চলে যেতে। সাক্ষাৎকার নিতেই হবে ।
অর্ডার তো নেগলেক্ট করা যায় না। তাই চলে এলাম । আপনি ঠিক কোন জায়গায় আছেন স্যার ? ফুল টিম এনেছি। বললে সুবিধে হয় ।
সন্তু মুখার্জী আরণ্যক সহ পুলিশের দল নিয়ে লক্ষ্যবস্তুর সামনে চলে এসেছেন ।
আরণ্যককে বললেন - আপনি কিছুটা হেঁটে চলুন স্যার। আমরা পজিশন নিয়ে নি ।
আরণ্যক হাত নাড়িয়ে কামালকে ঈশারা করে দেখালেন তিনি কোথায় আছেন । কামাল ললন্তিকার কথা ভুলে গিয়ে নিজের কাজ সারতে পিস্তল ধরা ডান হাতটা পিছনদিকে রেখে কথা বলতে বলতে আরণ্যকের দিকে রওনা দিল ।
হঠাৎ পিস্তলটা তুলতেই উল্টোদিকে থাকা সন্তু মুখার্জী কামালকে তাক করে গুলি ছুঁড়লেন। পিঠে তাক করা
গুলি বুক চিরে বেরিয়ে গেল ।
কামালের দেহটা সনাক্ত করলেন মিঃ পরমেশ্বর ভট্টাচার্য্য যাকে অফিসার সন্তু মুখার্জী ডেকে এনেছিলেন কামালের বিবরণী চেয়ে ।
মিঃ ভট্টাচার্য্য বললেন - হাঁ, এই লোকটাই সেদিন ডাক্তার সেজে হাজতে এসেছিল । আমি নিজের চোখে দেখেছি হারুকে ওষুধ ইঞ্জেকশন দিতে ।
ডেডবডি নিয়ে পুলিশ চলে গেল । আরণ্যক ও অভয়ঙ্করবাবু কামাল হত্যার দৃশ্য দেখলেন। আরণ্যক বললেন - আপদ বিদেয় হল ।
ললন্তিকাও দেখল কামালকে পুলিশ গুলি করে মেরে ফেলল। আরণ্যক বসুরায়কেও দেখল । ভীষণ ভয় পেয়ে এক ছুটে গীতা আশ্রমে গিয়ে লুকিয়ে দিল ।
( ক্রমশ )
