ললন্তিকা ধারাবাহিক
ললন্তিকা ধারাবাহিক
পর্ব আটষট্টি
মি: পরমেশ্বর ভট্টাচার্য্য ওসি কলেজ স্ট্রীট থানা সাগরের এই দুর্দিনে সহমর্মিতা দেখিয়ে তাকে জলপাইগুড়ি যাবার অনুমতি দিলেন । যেহেতু তার নামে কোন থানায় কোন কেস নেই বললেন - ঠিকানা, ফোন নাম্বার লিখে দে ।
সাগর লিখে কাঁদতে কাঁদতে বিদায় নিল ।
ইকবাল যে তাকে ফলো করছে বিন্দুমাত্র টের পেল না । দার্জিলিং মেলে তার টিকিট কাটা ছিল । এস-১৩ কম্পারটমেন্টে । ট্রেন বর্ধমান ছেড়ে বেরোতেই সাগরের নজর গেল একজনের পকেটে । একটা দেশী পিস্তল পকেট থেকে বেরিয়ে আছে ।
ভেবে পেল না এমন খোলাখুলি ভাবে ট্রেনে পিস্তল দেখিয়ে কার সাহস আছে নিশ্চিন্তে শুয়ে থাকে । সাগরের বার্থের উল্টোদিকে সাইড আপারে শুয়ে আছে লোকটা একটা চাদর মুড়ি দিয়ে।
কার্তিক মাসের মাঝামাঝি সময় । রাতের দিকে ঠাণ্ডা বেশ জাঁকিয়ে পড়েছে । লোকটা নড়ছে না । ডেডবডি না কি ? ব্যাগ থেকে গ্লাভস বের করে দু'হাতে পরে নিল । তারপর হেঁচকা টান দিয়ে পিস্তলটা বের করতেই লোকটা উঠে বসল ।
সাগর চিনতে পারল ইকবালকে । এই ইকবালই তার স্ত্রী পুত্রকে খুন করেছে । নিমেষে পিস্তল তাক করে দুটো গুলি বিঁধিয়ে দিল তার বুকে পেটে । ইকবাল ইয়া আল্লা বলে ঝুপ করে ট্রেনের মেঝেতে পড়ে গেল । সাগর আরও দুটো গুলি ছুঁড়ে চলন্ত ট্রেন থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ল।
ভীত সন্ত্রস্ত যাত্রীদের মধ্যে প্রথমে গুঞ্জন শুরু হল । ইকবাল তখনও মরেনি । চেন টেনে ট্রেন থামানো হল । তারপর আর পি এফ এসে দেহ তুলতে গিয়ে দেখে লোকটা বেঁচে আছে। ফার্স্ট এইড করে তাকে সাগরের ফাঁকা বার্থে শুইয়ে দেওয়া হল । পরের স্টেশনে আর পি এফ থানায় ওরা নিজে থেকে ডায়েরী নিল । হাসপাতালে নিয়ে যাবার আগেই লোকটা মারা গেছে।
জিজ্ঞাসাবাদে ইকবাল শুধু একটি শব্দই বলেছে - 'ছাগল' । কেউ বুঝতে পারল না তার কথার মানে । কারণ তখন ইকবালের গলা জড়িয়ে আসছিল । মৃত্যুর পূর্বে শুধু ছাগল শব্দটিই কোনমতে বলতে পেরেছিল ।
সাগরের রিজার্ভেশন ছিল অন্য ট্রেনে । ভুল করে উঠেছিল দার্জিলিং মেলে । আর ইকবাল ভুল খবর পেয়েছিল যে সাগর দত্ত দার্জিলিং মেলে টিকিট পেয়েছে। বার্থ নং ৩৭ লোয়ার । সেই জন্য ইকবাল দার্জিলিং মেলে টিকিট না পেয়েও উঠে গিয়েছিল ওই ট্রেনে সাগরকে অনুসরণ করে । ছেঁড়া পকেট থেকে পিস্তলটা বেরিয়ে পড়বে খেয়াল করেনি ।
ভুল এবং উদাসীন থাকার মাশুল দিল প্রাণ দিয়ে।