STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Thriller

4  

Nityananda Banerjee

Thriller

ললন্তিকা ধারাবাহিক

ললন্তিকা ধারাবাহিক

5 mins
383

পর্ব সাতাশি


মিঃ দেবেন্দ্র ভৌমিক পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আমন্ত্রণ পেয়ে যারপরনাই আনন্দিত হলেন । অফার পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করলেন । অফার এক্সেপ্ট করে নিয়ে বাড়ির সবাইকে সেই সুখবর দিলেন । 

তাঁর স্ত্রী তো ভীষণ খুশি । কতদিন পর ভারতে আসবেন; একসময় যেখানে তাঁর বাপের বাড়ি ছিল ।

দেবেন্দ্রকে বললেন - যাব যখন গঙ্গাসাগর মেলাটা ঘুরেই আসব বুঝলে ? 

তারপর বললেন - সর্ব তীর্থ বারবার ; গঙ্গাসাগর একবার । কপিলমুনির আশ্রম শীতকালেই খোলা থাকে । বাকি সময় তো জলে ডুবে থাকে ।

মিঃ ভৌমিক বললেন - সে না হয় যাওয়া যাবে । কিন্তু তোমার ওই শ্লোকটার মর্ম বুঝলাম না।

- কোন শ্লোক ? আমি তো কোন শ্লোক বলিনি !

- আরে, ওই যে বললে না ' গঙ্গাসাগর একবার ' - ওইটে !

রজনী দেবী হেসে হেসে বললেন - ওওও। ওই কথাটার মানে বুঝতে পারলে না ! তা পারবে কেন ? চির কাল তো পুলিশি রগড়ানোর চালে ছিলে ।

মিঃ ভৌমিক আরও কিছু কথা শুনতে হবে ভেবে বললেন - আ: বল না ওর মানে কি ?

রজনী দেবী খুশিতে বিহ্বল ছিলেন । ভারতে যাবেন বলে । তাই বেশি না ঘাঁটিয়ে বললেন - ওর মানে হল অন্য তীর্থ বারবার যেয়ে যে পূণ্য অর্জন হয় ; গঙ্গাসাগরে এক বার গেলেই পূণ্যের ভাণ্ডার ভরে যায় । বুঝলে এবার ?

মিঃ ভৌমিক বললেন - বুঝলাম । নাও এবার তোড়জোড় শুরু কর ।

- ওমা ! এখনই কি ! এখন তো দেরী আছে, সেই জানুয়ারি মাস ।

- হুমম তা ঠিক । দাঁড়াও, এবার বাড়ি পাহারা দেবার লোকজন দেখি। বেশ কিছু দিনের ব্যাপার ! আমিনা থাকলেও হোত !

রজনী দেবী আঘাত পেলেন । কি ভালোই না ছিল মেয়েটা ! এক ডাকে সাড়া দিত । আহা গো ! ও যদি বেঁচে থাকত! 

কামাল মানে আমিনা বিবির একমাত্র সন্তান পুলিশের গুলিতে মারা যাবার খবরটা পেতেই হার্ট অ্যাটাকে মারা যায় । 

কিন্তু ইমেইল মারফৎ আর একটি সুসংবাদ এল ঢাকার স্বরাষ্ট্র দপ্তর থেকে ।

মিঃ ভৌমিক জানালেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন তাঁর অবর্তমানে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন তাঁর বাড়ির সুরক্ষায় মোতায়েন রাখা হবে ।

- এ যে সোনায় সোহাগা মনে হচ্ছে । রজনী দেবী বললেন।

মিঃ ভৌমিক বললেন - এই যে বন্দোবস্ত উভয় সরকার থেকে করা হচ্ছে ; তুমি কি মনে কর এ সব আমি আই জি ছিলাম বলে করছে ?

- তা' হলে ?

- আরণ্যক ভাইকে খুঁজে বের করার কাজ এবং দায়িত্ব দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ।

- তা হ্যাঁ গো ! আরু কি আরও কোন ভয়ঙ্কর কাজ করেছে নাকি ? কতদিন খবর পাই না ।

- চিন্তা কর না । আরণ্যক যে প্রজাতির খেলোয়াড় এত সহজ হবে না তাকে ধরা । নইলে ভাবতে পার, ভারতবর্ষের মত জায়গায় সে কেমন বুক ফুলিয়ে ঘুরছে !

- তা ঠিক ।

- তবে আমাকে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্য হল যে কোন উপায়ে জীবিত বা মৃত আরণ্যককে খুঁজে বের করতে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশকে সাহায্য করা । আমার সাথে আরণ্যকের সম্পর্কে কোন তিক্ততা এখন অব্দি নেই । সেজন্য হয়তো আমাকে দেখে তার মন বদলে যেতে পারে । তারই সুযোগ নিয়ে পুলিশ ওকে পাকড়াও করবে।

- সে তো অনেক হ্যাপা !

- তদন্তের কাজে অনেক বিপদ আপদ থাকবেই । দেখি যাই তো ! কি হয় দেখতেই পাব ।

এমন সময় মিঃ আরণ্যক বসুরায়ের ফোন এল একটি অজানা নাম্বার থেকে । এর আগে এ রকম বিচিত্র নাম্বার তিনি দেখেননি । টেলিকম কোম্পানি গুলো বিশেষ বিশেষ নাম্বার নিলাম করে , তা জানেন । যেমন প্রথম পাঁচ সংখ্যা সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পরের পাঁচ অঙ্কও অভিন্ন রাখা বা এমনই বিচিত্র সংখ্যার ফোন নাম্বার ।

যে ফোনটি এসেছে তাও অনুরুপ একটি নাম্বার । নাইন জিরো নাইন নাইন জিরো নাইন জিরো নাইন নাইন জিরো টাইপের ।

বিচিত্র নাম্বারের কলটি তুলতে মিঃ ভৌমিকের কৌতুহল বাড়ল । কিন্তু তিনি নিজে এটেণ্ড না করে রজনী দেবীকে বললেন - তুমি কথা বল তো ! আমাকে চাইলে বলবে এখন বাড়ি নেই ।

রজনী দেবী ফোন তুলে ' হ্যালো , কে বলছেন ?' বলার আগেই মিঃ আরণ্যক বসুরায় বললেন - দিদিভাই! কেমন আছো ?

- ভালো । কিন্তু কে আপনি ?

- গলা শুনেও চিনতে পারলে না ? আমি আরু। আরণ্যক বলছি ।

- ও হো হো ! আরু বলছ? বল বল, কেমন আছো আগে বল ।

- একদম ভালো নেই দিদি । ভীষণ চাপে আছি । গোটা ভারতের পুলিশ আমার পিছু নিয়েছে । ভালো থাকি কেমন ভাবে ? যাক গে। তোমরা ঠিক আছো তো ? দাদা কোথায় ?

- উনি তো বাড়িতে নেই। বাজারে গেছেন সেই কোন সকালে , এখনও আসেননি। এদিকে ফোনটাও বাড়িতে ফেলে গেছেন । রিং হচ্ছিল বলে তুললাম।

- বেশ করেছেন । যা বলতে যাচ্ছি একটু মন দিয়ে শোনো দিদি। শুনলাম তোমরা কলকাতায় আসছ ?

- ঠিকই শুনেছ ভাই । গঙ্গাসাগর মেলায় কপিলমুনি দর্শন করবার ইচ্ছে হল তাই !

আরণ্যক বসুরায় হাসলেন - কপিলমুনি দর্শন ? নাকি সরকারি আমন্ত্রণ ? 

- তা তো জানি না ভাই ! বললাম আমার খুব ইচ্ছে করছে গঙ্গাসাগর মেলায় যেতে তো উনিও রাজী হয়ে গেলেন ।

- রাজী নয় বল বাধ্য হলে । নাম কিনতে সবার ভালো লাগে। আমারও লেগেছিল । কিন্তু এখন আমার যা দশা ; অন্তত সেটা ভেবে আসার পরিকল্পনা ছেড়ে দাও।

- কেন বল তো ?

- অযথা শত্রুতা করতে আসবে কেন ? আমি তো 

তোমাদের কোন ক্ষতি করিনি । এমনি বেড়াতে আসতে তো কিছু বলতাম না । আমার পিছনে টিকটিকিগিরি করলে কিন্তু আমি আত্মীয়স্বজন মানব না । সেইজন্য বলছি দাদাকে বিরত থাকতে বল ; নইলে --

রজনী দেবীর হাত থেকে ফোন নিয়ে মিঃ ভৌমিক বললেন - নইলে ? নইলে কি করবে তুমি ?

- ও , তাহলে তুমি সব শুনেছ ! বেশ , তাহলে বলি । নিজেকে বাঁচাতে আমার ছেলে থাকলে তাকেও বলি দিয়ে ছাড়তাম । আর তোমরা তো রিলেটিভ। একটা কথা জেনে রাখ আমি নিজেই নিজেকে চিনি না ।

বলে রাগ দেখিয়ে ফোন অফ করে দিলেন মিঃ বসুরায়।

মিঃ ভৌমিক রজনী দেবীকে বললেন - রেডি হও । আমরা নেক্সট উইকেই ইণ্ডিয়া যাব । আমি ফ্লাইট বুক করছি ।

রজনী দেবী চিন্তিত হলেন ঠিকই কিন্তু স্বামীর জেদের কাছে বরাবর যেমন হেরে এসেছেন; আজও তার ব্যতিক্রম হল না ।

তিনি বনলতা দেবীকে ফোন করে জানাতে যাচ্ছিলেন। মিঃ ভৌমিক বাধা দিয়ে বললেন - যা বলার আমি বলব । প্রথমে তো ওদের ওখানেই উঠতে হবে । তার আগে লালবাজারে আমাদের যাবার ব্যাপারে কথা বলে নিই। তারপর যেখানে খুশি কথা বলবে।

রজনী দেবী বললেন - গঙ্গাসাগর মেলার তো দেরী আছে। এত আগে যাবে ?

মিঃ ভৌমিক স্ত্রীকে আশ্বস্ত করে বললেন - তোমার চিন্তা নেই। কপিলমুনি দর্শন না করে আমরা দেশে ফিরছি না।

( ক্রমশ )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Thriller