STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Thriller

4  

Nityananda Banerjee

Thriller

ললন্তিকা ধারাবাহিক

ললন্তিকা ধারাবাহিক

5 mins
333

পর্ব সাতান্ন

গোপালকৃষ্ণ বাবুর জ্ঞান ফিরেছে। দু'চারটে কথাও বলছেন ; কিন্তু ভেতরে ভয়ের বাতাবরণ তখনও উন্মুক্ত করতে পারেননি ।

মাঝে মাঝে শরীরটা কেঁপে উঠছে ভয়ে। কাউন্সেলিং শুরু হয়েছে । 

রুদ্র এবং বাড়ির সকলে ভাবনামুক্ত হল । বনলতা দেবী বললেন - শোন বাবা ! আর অপেক্ষা করতে হবে না । এবার সোজা বিধাননগর থানায় গিয়ে ডায়েরীটা করে আয়। এই গরমে গরমে ওর খোলস খুলে দেওয়াই ঠিক।

রুদ্র মোটামুটি নিশ্চিত রিপোর্ট তো করতেই হবে ; থানা ডায়েরী না নিলে আদালতে ক্যাভিয়েট দর্জ করবে ।

বলল - মা, আমি তাহলে আসি ? আপনারা সাবধানে থাকবেন কিন্তু । 

রুদ্র পৌঁছাল বিধাননগর থানায়। অফিসার ইনচার্জকে পাওয়া গেল । রুদ্র অফিসে ঢুকেই অবাক হয়ে গেল । মিঃ আরণ্যক বসুরায় বসে রয়েছেন তাঁর সামনে । আর ওসির চেয়ারে যিনি রয়েছেন তাঁকে যেন চেনা চেনা মনে হল । 

মিঃ সন্তু মুখার্জী। অফকোর্স তিনিই। রাণীগঞ্জের ওসি ছিলেন । পূজোয় যখন ওরা সবাই রাণীগঞ্জে ছুটি কাটাতে গেছল পটকাদা মানে বৈদূর্য্যদা ওনার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন।

রুদ্র একটু আড়ালে গিয়ে ওদের কথাবার্তা শোনার চেষ্টায় ছিল ।

সন্তু মুখার্জী আরণ্যককে বলছেন - আপনি আসুন । আমরা সঠিক ব্যবস্থাই নেব ।

আরণ্যক - মিঃ সালভের সাথে আপনার কথা হয়েছে তো !

- হ্যাঁ , গতকাল রাতে ওনার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে বলেই তো আপনাকে বলছি !

- তাহলে আমি আসি ?

বলে আরণ্যক একটা মিডিয়াম সাইজের প্যাকেট সন্তুর টেবিলে রেখে দিলেন ।

- এটা আবার কি ?

- এটা মিঃ সালভে আপনার হাতে তুলে দিতে বলেছেন। 

আরণ্যক ইচ্ছে করেই এত বড় মিথ্যে কথাটা বললেন ।

সন্তু মুখার্জী বললেন - ওনাকেই দিয়ে আসুন । আমি নিতে পারব না । কি আছে ওতে ?

- টপ সিক্রেট ! আপনাদের দু'জনের জন্য। 

রুদ্র ধরেই নিল ঘুষ দেওয়া হচ্ছে ।অতএব তার কেস ফাইল করা যাবে বলে মনে হয় না । মেসোমশাই বলেছিলেন বিধাননগর কেন কলকাতার কোন থানা তোমাদের কেস নেবে না । সে বন্দোবস্ত করে রেখেছি।

মিঃ মুখার্জী বললেন - মিঃ বসুরায় ! কারও উপঢৌকন আমি এক্সেপ্ট করি না । আপনি এটা নিয়ে যান । মিঃ সালভে যদি বলেন তখন দেখা যাবে । 

আরণ্যক চট করে প্যাকেটটা তুলে নিতেই মিঃ মুখার্জী বললেন - আপনি আসতে পারেন ।

আরণ্যক আর দাঁড়াননি সেখানে । সোজা গাড়িতে বসে অফিসের দিকে চললেন । 

তার মিনিট দশেক পর রুদ্র ঢুকল মিঃ মুখার্জীর ঘরে ।

- আসব স্যার !

মুখার্জী মুখ না তুলে বললেন - আসুন।

রুদ্র মুখে হাসি টেনে নমস্কার জানিয়ে বলল - একটা ডায়েরী করতে এসেছি স্যার ।

মুখার্জী বললেন - লোকে ওই জন্যই আসে; সিনেমা দেখতে নয় । বসুন ।

- স্যার, সব ঘটনা লিখে রেখেছি , প্লীজ যদি একটু দেখে নেন ।

মিঃ মুখার্জী এবার চাইলেন রুদ্রের দিকে । বললেন - আরে ! আপনাকে দেখে তো খুব চেনা লাগছে ! কোথায় দেখেছি যেন -

বলে চেঁচিয়ে উঠলেন - মনে পড়েছে, রাণীগঞ্জে - তাই না ?

রুদ্র বলল - হ্যাঁ স্যার । পূজোর সময় ।

- আপনি তো বৈদূর্য্য মানে পটকার ভগ্নিপতি ?

- হ্যাঁ স্যার । আপনাকে দেখে খুব ভরসা পেয়েছি । নইলে মেসোমশাই যা ভয় ধরিয়ে দিয়েছেন !

- ভয় ! কিসের ভয় ? আর মেসোমশাইটি কে ?

রুদ্র বলল - স্যার ! নাম বললে তো আপনি আমাকেই তাড়িয়ে দেবেন !

- আরে না না । এ কি কথা বলছেন ?

- তাহলে স্যার বলি !

- বলুন।

- স্যার আমার মেসোমশাই হলেন বিখ্যাত সাহিত্যিক মিঃ আরণ্যক বসুরায় যিনি একটু আগে আপনার কাছে এসেছিলেন - মানে- আমি এখান থেকে ওনাকে বেরোতে দেখেছি ।

মিঃ সন্তু মুখার্জী একচোট খুব হাসলেন ।

- ঠিক ধরেছেন। উনিই এসেছিলেন । দিন আপনার ফাইল ; নিয়ে নিচ্ছি ।

রুদ্র ফাইল দিতেই ফাইলের কাগজপত্র খুলে নিয়ে এক কপিতে সাইন করে স্ট্যাম্প লাগিয়ে রুদ্রকে ফেরত দিলেন ।

আর বললেন - উনি এসেছিলেন, আপনাদের কোন ডায়েরী যাতে আমরা না নিই সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে গেলেন । ওনার বিষয়টি আমাদের এসি সাহেব মিঃ সালভেও জানেন । গতকাল রাতে ফোনে আমায় যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন । সেজন্যই আপনার ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিলাম । এবার আমাদের তদন্ত শুরু হবে । আপনার ডায়েরীর অপেক্ষায় ছিলাম ।

রুদ্র এত আনন্দ পেল যে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগা ব্যক্তি যেন টয়লেটে পেট খালি করে বেরোল ।

থানা থেকে বেরিয়েই মাকে ফোন করল রুদ্র ।

- মা ! সাকসেসফুল! 

বনলতা দেবী বললেন - বড় চিন্তায় ছিলাম রে ।

- হ্যাঁ মা। আমিও ভীষণ চিন্তায় ছিলাম। বিধাননগরের ওসি কে জানো ? রাণীগঞ্জের ওসি মিঃ সন্তু মুখার্জী। 

বলে খুশির হাসি হাসল । 

- মা! আমি কল্যাণীকে খবরটা দি। রাখছি ।

আরণ্যক বসুরায়ের মাথার পিছনেও এক জোড়া চোখ আছে । থানা থেকে বেরোনোর সময় দেখলেন রুদ্র অপেক্ষা করছে । তিনি একটা চায়ের দোকান থেকে তাকে লক্ষ্য করছিলেন । ওসির চেম্বারে পর্দা লাগানো আছে বলে ভেতরে কি হচ্ছে দেখেননি । কিন্তু রুদ্রের বেরোতে এত সময় লাগল বলে আশঙ্কিত হলেন । রুদ্রকে ওসি চেনেন। রাণীগঞ্জে নিশ্চয় দেখেছেন । তাই হয়তো দেরী হচ্ছে । 

কিন্তু হাসতে হাসতে রুদ্রকে বেরিয়ে আসতে দেখে হতাশ হলেন । মিঃ এন কে সালভেকে বিশ্বাস করা ছাড়া উপায় নেই। সুতরাং মিঃ মুখার্জী অধস্তন অফিসার হয়ে নিশ্চয় তাঁর কথা ফেলবেন না । আরণ্যক বসুরায় চায়ের দোকানে আর এক কাপ চায়ের অর্ডার দিলেন । একবার তাঁর মনে হল রুদ্রকে ফলো করি। আধা পান করা চা রেখে পয়সা মিটিয়ে তিনি রুদ্রকে ফলো করলেন ।

অবাক হলেন রুদ্র বাড়ি না গিয়ে ভি আই পি রোড ধরে বেরিয়ে গল বলে । একবার এসেই যখন পড়েছেন তখন ফ্ল্যাটে দেখা করে ক্ষমা চাইবেন মনস্থ করলেন । ফ্ল্যাটে এসে দেখেন দরজায় তালা দেওয়া নেই । খুশি হলেন। বাকি যারা আছে তাদের সঙ্গে দেখা করে নিই ভেবে কলিং বেল বাজালেন ।

আই হোল দিয়ে দেখতে গিয়ে কল্যাণী আতংকে শিউরে উঠল । মেসোমশাই এসেছেন - সেদিনের সেই রুদ্রমূর্তি নেই । অবিন্যস্ত চুল, পরণের জামাটা ঢিলেঢালা । গোঁফ দাঁড়িতেও কলপ করেননি । তাঁকে কেমন যেন পাগলাটে মনে হল কল্যাণীর । মায়া হল ; কিন্তু সেদিনের ঘটনা মনে করে দরজা খুলল না । 

মিঃ বসুরায় রুদ্র রুদ্র নাম ধরে ডাকলেন । কল্যাণী ভয়ে ভয়ে উত্তর দিল - বাড়িতে কেউ নেই।

- ও বৌমা ! দরজা খোলো ; তোমার সাথে কথা আছে। 

কল্যাণী দরজায় ভেতরে দিক থেকে ইন্টারলকটা লাগিয়ে দিয়ে বলল - আপনি পরে আসুন। আমি এখন ব্যস্ত আছি। 

আরণ্যক অনেক চেষ্টা করেও যখন দরজা খোলাতে পারলেন না ; গুটিগুটি নেমে এলেন । তাঁর মনে গভীর চিন্তা। গেল কোথায় গোপালকৃষ্ণ বনলতা দেবীরা ?

রুদ্র হয়ত অফিস গেল কিন্তু ওঁরা ?

ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হয়ে তিনি তাঁর অফিসে না গিয়ে নিজ আবাসে ফিরে এলেন । স্নান সেরে বিশ্রাম নিতে বিছানায় গিয়ে উঠলেন । আজ তাঁর কোন কিছুই ভালো লাগছে না । ফোন আসছে ঘনঘন । এটেণ্ড করতেও ইচ্ছেকরছে না।

ফোনের ইনকামিং কল লিস্ট চেক করে দেখলেন ললন্তিকা বেশ কয়েকবার ফোন করেছে। ভাবলেন কলব্যাক করেন । কিন্তু আজ ললন্তিকার আকর্ষণও তার কাছে ম্লান হয়ে গেছে । হয়তো বলবে আজ ঠিক রাত দশটায় -অজয় নদের পুরানো ঘাটে -

( ক্রমশ )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Thriller