STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Thriller Others

4  

Nityananda Banerjee

Thriller Others

ললন্তিকা ধারাবাহিক

ললন্তিকা ধারাবাহিক

6 mins
308

পর্ব ছিয়াত্তর


অভয়ঙ্করবাবুর কথামত ললন্তিকা পরদিন সকালে একটু বেলা করে অরবিন্দকে ফোন করল । সদ্য রাতের মধ্যে এত বড় কাণ্ড ঘটে গেছে । অরবিন্দ যথেষ্ট ক্লান্ত ও কাহিল হয়ে পড়েছে । ফোন তোলার মত মানসিকতা তার নেই । কিন্তু ললন্তিকার প্রতি অযাচিত মায়ার জন্য ফোন হাতে নিয়ে বলল - আজ আমি ভীষণ ক্লান্ত , ললন্তিকা। প্লীজ বিকেলে ফোন কোরো ; আমাকে বিশ্রাম নিতে দাও ।

ললন্তিকা ক্ষুব্ধ হলেও ক্ষোভ চেপে রেখে বলল - কিসের ক্লান্তি ? তোমার শরীর ঠিক আছে তো ?

অরবিন্দ বলল - শরীর ঠিক আছে। আমি গতকাল সারা রাত ঘুমোইনি। আমি কেন , এ বাড়ির কেউ; পুলিশের দলও চোখ বুঁজতে পারেননি।

- কেন ! কি ঘটেছে ? পুলিশ তোমাকে হেনস্থা করেছে?

- না না, আমাকে কিছু করেনি -

- তবে ? বাড়ির কাউকে ?

- তাও নয় । ঘটনা হল কয়েকদিন ধরে জাহিদ, জাহির, জামির আর জাহিরুল - এরা চারজনে মিলে আমার জিনা হারাম করে রেখেছিল । গতকাল রাতে ওই চারজনকেই পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি ।

- বাপরে ! কি সাংঘাতিক কাণ্ড ! ওরা তোমার ঠিকানা পেল কি ভাবে?

- তা' জানি না। তবে খোঁজ খবর নিয়ে ঠিক এখানে পৌঁছে গেছল ।

- তারপর ?

- এখন এত কথা বলার মত মানসিকতা নেই। তুমি বিকেলে ফোন কর; সব বলব । এখন রাখছি কেমন ?

- শোনো শোনো। তোমাকে কয়েকদিন আগে থেকে খবরটা দেব ভাবছিলাম ।

- কি খবর? 

অরবিন্দ ভাবল হয়তো আরণ্যকের খবর জানাবে। কিন্তু ললন্তিকা বলল - ক'দিন আগে আমাদের একটি মেয়ে হয়েছে। মানে এবার তুমি মামা হয়ে গেলে ।

- বাহ্ খুব ভালো। এবার রাখি ?

ললন্তিকা ফোন রেখে মেয়ের কাছে গেল ।

সজ্জন সিং গ্যারাজে কাজ করছেন । নতুন খদ্দের এসেছে। সে নিয়ে ব্যস্ত আছেন । বাড়িতে ফোন করার কথা বেমালুম ভুলে গেছেন । ললন্তিকা তাঁর খবর নিয়ে মেয়ের যত্ন নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল ।

অরবিন্দ ব্রেকফাস্ট না করেই ঘুমিয়ে পড়েছে। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে স্বপ্ন দেখছে। ললন্তিকা আর সে তাদের আদরের মেয়েকে নিয়ে কুম্ভ মেলায় গেছে। এত দিনের পাপ ধুয়ে ফেলছে । প্রয়াগ সঙ্গমে স্নান করে ওরা বেশ পরিতৃপ্ত। 

ললন্তিকা বলল - চল ওদিকটায় একটু ঘুরে আসি । ওদিকে নাকি নাগা সন্ন্যাসীরা আছেন।

অরবিন্দের ইচ্ছে হল দেখে আসে । তায় ললন্তিকা যখন বলেছে !

সঙ্গম থেকে বেশ কিছুটা দূরে গিয়ে নাগাদের দর্শন পাওয়া গেল । সম্পূর্ণ উলঙ্গ সাধু দেখে অরবিন্দ অবাক হয়ে গেল । লজ্জার বালাই নেই । অরবিন্দের নিজেরই কেমন অস্বস্তি হচ্ছিল । 

ললন্তিকাকে বলল - চল চল, এখানে বেশিক্ষণ থাকা ঠিক নয় ।

ললন্তিকা বলল - কেন ? আরে ওরা সন্ন্যাসী। কঠোর সাধনা করে জাগতিক মোহ থেকে মুক্তি পেয়েছেন। 

- সে তো ঠিক আছে। কিন্তু এমন উলঙ্গ থাকে কেন ?

এখন যদি তোমার মেয়ে একটু বড় হত ; এদের দেখে নিশ্চয় কোন কাণ্ড ঘটিয়ে দিত ।

- কেন? কি করত ?

- সাধুর ঝিঙে নড়ছে দেখে সেটা ধরে বলত ' এ কেয়া হ্যায় !

ললন্তিকা হেসেই অস্থির । কোনমতে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল - না না। তুমি ভুল করছ। নাগা সাধুরা কামবাসনা বর্জিত । সাধনার শেষ সময়ে ওদের পুরুষাঙ্গ এক বিশেষ প্রক্রিয়ার সাহায্যে নিষ্ক্রিয় করে দেয়া হয় ।

- তুমি তো অনেক কিছুই জানো দেখছি।

ললন্তিকা গর্বের হাসি দিয়ে বলল - কেমন মানুষের বউ আমি ।

ওরা নাগাদের দেখতে দেখতে চলেছে। হঠাৎ ললন্তিকা এক সাধুর সামনে দাঁড়িয়ে বেশ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ওকে দেখছে। তারপর সাধুবাবা ওর দিকে চাইতেই পালানোর উদ্যোগ করছে। ললন্তিকা চেঁচিয়ে উঠল - ধর ধর পালিয়ে গেল । 

- কে পালিয়ে গেল ?

- ওই তো আরণ্যক বসুরায়। চল চল ওকে ধরে ফেলি ।

বলে অরবিন্দের হাত ধরে একটা হেঁচকা টান দিতেই অরবিন্দের ঘুম ভেঙে গেল 

ধড়মড় করে বিছানায় উঠে বসল অরবিন্দ। সামনের টেবিলে ব্রেকফাস্ট নামানো আছে। খিদে পেয়েছে তাই ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া খাবারই খেয়ে নিল।

অভয়ঙ্করবাবু বললেন - এই যে প্রশান্ত । ঘুম ভেঙেছে দেখছি । ব্রেকফাস্ট করে নাও। টেবিলে ঢাকা দেওয়া আছে। 

বাবুলাল ঘনশ্যামদাস ঝুনঝুনওয়ালা তাঁর মঙ্গলপুরের স্পঞ্জ আয়রণ কারখানায় পুলিশের এই আগমনে যারপরনাই বিস্মিত হলেন । 

মিঃ গুপ্ত বললেন - আপনাকে থানায় যেতে হবে । চলুন।

তিনি বললেন - আমার অপরাধ?

মিঃ গুপ্ত বললেন - চুরির কয়লা কেনা । এ ভাবে কতদিন চালাচ্ছেন ?

- দেখিয়ে অফিসার, আপ মুঝ পর ঝুটা ইলজাম লগা রহে হো । ম্যায় কভি কোই বুরা কাম নেহি কিয়া !

অফিসার তখন ওই চার যুবককে দেখিয়ে বলেন - য়ে দেখিয়ে । ইস লোগো নে বোলা কি এক ট্রাক কৈলা আপকে ইয়াহাঁ পঁচাশ হজারমে বেচ ডালা ।

- হোই নেহি সক্তা । ও ঝুট বোলতে হ্যায় । হমারে বারে মে পহলে খবর লিজিয়ে ইস মুল্ক মে 

- আচ্ছা ! আপ থানে মে রপোর্ট দর্জ কিয়া কি নেহি ?

- কিস বারে মে ?

- আপকা কৈলেকে সাথ একঠো ট্রাক চোরি হুয়া।

বাবুলাল হেসে কুটিকুটি। মেরা এক ভি ট্রাক নেহি হ্যায় সাব । আপকা কোই গলতপ্রেমী হুয়া হোগা।

- তো আপনি থানায় যাননি ?

- কেন যাব স্যার অকারণে? আমি কখনও থানায় যাইনি।

পরিষ্কার বাংলায় বললেন মিঃ ঝুনঝুনওয়ালা ।

মিঃ গুপ্ত বললেন - তবে কে ছিল ? আপনার মত হুবহু একজন আমাকে বললেন কয়লা বোঝাই একটা লরি ছিনতাই হয়েছে । গাড়ির নম্বরাও দিয়েছে। গুজরাটের গাড়ি মনে হল । ঠিক আছে ডায়েরী নেয়া আছে । গিয়ে দেখছি। 

থানায় এসে মিঃ গুপ্ত অধীর বাবুকে ডেকে বললেন - খোঁজ নিন তো চুরি যাওয়া গাড়িটার মালিক কে ? ওকে ডেকে পাঠান থানায় ।

অধীর বাবু ঘাড় নেড়ে বললেন - ঠিক আছে স্যার । 

মিঃ গুপ্ত হাজতে ঢুকলেন । জাহিদের পায়ের গুলিটা হাসপাতালে বের করে ওষুধ পত্র লাগিয়ে আবার হাজতে ঢুকিয়ে দিয়েছেন । 

মিঃ গুপ্ত ডাকলেন ছোটবাবুকে । ছোটবাবু মিঃ বনশাল হাজির হলেন ।

- আপনার কাছে আঙুল কাটার মেশিনটা নিয়ে আসুন তো ! এই বদমাশগুলো কোন সাধারণ অপরাধী নয় । বেশ পাকা হাতের খেল ।

মিঃ বনশাল মাথা চুলকে বললেন - একটা কথা বলব স্যার ! এই আসামীগুলো অরবিন্দ নামের ছেলেটিকে অপহরণ করতে এসেছিল । তার মানে ওরা অরবিন্দকে জানে - চেনে । এমনও হতে পারে অরবিন্দ কোন সময় ওদের দলে কাজ করেছে।

- হ্যাঁ, করেছেই তো ! মিঃ গুপ্ত বললেন - ওরা সবাই একসময় পলাতক আরণ্যক বসুরায়ের অনুগত ছিল । এরা এখনও হয়তো আছে। সেটা জানার জন্যই তো ওই আঙুল কাটারটা দরকার ।

সব কথা ওদের শুনিয়ে শুনিয়ে বলা হল যাতে ওদের মধ্যে কোন রিপারকেশন হয় । বস্তুত পক্ষে সে সবের কোনটাই লক্ষ্য করা গেল না দেখে ছোটবাবু এক বিশাল লোহার দণ্ড ও চাকা সমেত যন্ত্রটার সামনে ওদের নিয়ে গেলেন ।

মিঃ গুপ্ত জাহিরুলকে বললেন - এটা হল ম্যানুয়ৈল লাই ডিটেক্টর । তোরা সত্যি বলছিস না মিথ্যে বলছিস - তা ঠিক করবে ওই ম্যাণনেটটা । দেখছিস তো ! যা একবার ওই ম্যাগনেটে হাত রাখগে যা । সত্যি বললে তোকে ছুঁড়ে ফেলবে । মিথ্যে বললে হাতটা টেনে ওই চাকার তলায় ধরে চাকা অটোমেটিক ঘুরবে । আর চাকাতো মানে দেখতেই পাচ্ছিস নারকোল কোরার মত খাঁজ কাটা। কি হবে বুঝতেই পারছিস ! যা ওখানে যা দেখি !

জাহিরুল ভাবল তাকে ভয় দেখানো হচ্ছে। বুক ফুলিয়ে ম্যাগনেটে হাত দিল ।

মিঃ গুপ্ত বললেন - আরণ্যক রায় তোদের দিয়ে কয়লা চুরি করিয়ে থানায় এসেছিল ডায়েরী করতে । ঠিক কি না ?

জাহিরুল বলল - আরণ্যক বলে কাউকে আমরা চিনি না। কেমন করে বলব ।

অমনি ছোটবাবু আড়াল থেকে নব দিলেন ঘুরিয়ে । মেশিন চলতে থাকল । জাহিরুলের হাত ম্যাগনেট সমেত ভেতরে ঢুকে কাটারের নীচে চলে এল। মিঃ বনশাল প্রেস করে কাটার নামিয়ে দিতেই জাহিরুল মাগো বাবা গো বলে চেঁচাতে লাগল । 

মিঃ গুপ্ত বললেন - ওই লোকটা আরণ্যক রায়ই ছিল - তাই তো ?

জাহিরুল বলল - হাঁ স্যার উনিই ছিলেন । এবার আধকাটা হাত ম্যাগনেট থেকে সরে গেল আর একট লাথি মেরে জাহিরুলকে দশ হাত দূরে ছুঁড়ে দিল ।

জামির জাহিদ আর জাহির তা দেখে ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপতে লাগল।

জাহিরুলের ক্ষতস্থান থেকে রক্তপাত বন্ধ করার ব্যবস্থা আগে থেকেই রাখা ছিল । হোমিওপ্যাথি হামামেলিস টিংচার দিয়ে ব্যাণ্ডেজ করে রেখে দেওয়া হল ।

মিঃ গুপ্ত এবার জাহির এবং জামির দুজনকে একসাথে ডাকলেন । 

ওরা সটান গিয়ে গুপ্তসাহেবের পায়ে পড়ে সব স্বীকার করে নিল ।

মিঃ গুপ্ত অফিসে ফিরে অভয়ঙ্করবাবুকে ফোনে বললেন - মিঃ আরণ্যক বসুরায়ের প্ল্যান মত ওরা রাণীগঞ্জে এসেছে। অরবিন্দের সুরক্ষা বাড়াতে হবে । আমি আজ থেকে দু'জন পুলিশ পোস্টিং করে দিচ্ছি চব্বিশ ঘন্টার জন্য । কারণ আরণ্যক থানায় এসে মিথ্যে ডায়েরী করে নজর অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টায় আছে । এখন বাবুলাল ঘনশ্যামদাস ঝুনঝুনওয়ালার বেশে এখানেও থাকতে পারে ।

অভয়ঙ্করবাবু খুব কবাক হয়ে বললেন - লোকটা কি সাংঘাতিক !

( ক্রমশ )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Thriller