STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Thriller

4  

Nityananda Banerjee

Thriller

ললন্তিকা ধারাবাহিক

ললন্তিকা ধারাবাহিক

5 mins
224

পর্ব বাষট্টি 

 ললন্তিকা এবং আরণ্যক রাতের ট্রেন ধরে নিরুদ্দেশে চলে গেলেন । পড়ে রইল অরবিন্দ গীতা আশ্রমে। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই পুলিশ ঘিরে ফেলল গোটা আশ্রম ।

খানা তল্লাশির পর যখন ওদের কাউকে পাওয়া গেল না মোহান্ত মহারাজকে থানায় তুলে নিয়ে গেল । অরবিন্দকে ডেকে মোহান্ত বললেন - ওহে বোষ্টম , ভোরের আরতি এবং ব্রাহ্মসঙ্গীত যেন বন্ধ না থাকে ।

পুলিশ অফিসার জিজ্ঞেশ করলেন - এই বোষ্টমের নাম কি ?

মোহান্ত বললেন - নাম ? এখানে নামধাম শুধু একজনেরই হয় তিনি রাধামাধব।

বলে দু'হাত কপালে ঠেকিয়ে প্রণাম নিবেদন করলেন ।

পুলিশ অফিসার বললেন - গাড়ি থামাও । 

গাড়ি থেকে নেমে ওই বোষ্টমের খোঁজ নিতে শুরু করলেন ।

- কি ছোট গোঁসাই ! নিবাস কোথায় ? 

- এই যে হুজুর এই রাধামাধবের চরণে !

- কতদিন থেকে এই আশ্রমে আছো ?

- তা আজ্ঞে বছর খানেক তো হবেই।

- এক বছর আগে কোথায় ছিলে ?

- জয়দেব কেন্দুলিতে বাউলদের আখড়ায়।

- তার আগে?

- আজ্ঞে মনে নেই।

- তার মানে তোমার বয়স খুব কম। ছেলেবেলার কথা আমারও মনে নেই । তবু জানো মা বাবাকে বেশ মনে আছে। তোমার নাম, বাবা মায়ের নাম কি ?

- আজ্ঞে আমার পিতৃপ্রদত্ত নাম প্রশান্ত মোহন সরখেল। পিতা স্বর্গত অনন্ত মোহন সরখেল । মাতা জগত্তারিণী দেবী। নিবাস ছিল পাঁচড়া ।

- পাঁচড়া ? মানে পাণ্ডবেশ্বর অজয় পেরিয়ে ভীমগড় ; তারপরই পাঁচড়া ! তাই তো ?

- আজ্ঞে হ্যাঁ ।

- বিয়ে থা' করেছ ?

- আজ্ঞে। এই মন্দিরেই একজনের সাথে কন্ঠীবদল হয়েছে। 

- কোথায় তিনি ?

- আজ্ঞে দেশের বাড়িতে।

- বেশ । একটা ডায়েরীর মত বই দেখে বললেন - বই পড়ার অভ্যেস আছে বুঝি ? কি বই পড় দেখি তো !

বলে সেটা হাতে নিয়ে দেখলেন । হাতে লেখা একটা উপন্যাস । নাম - কেউটের ছোবল। লেখক অনন্ত মোহন সরখেল।

- তোমার বাবা কি লেখক ছিলেন ?

- আজ্ঞে।

- লেখা তো বেশ উঁচু মানের ; ছাপানো হয়নি।

- আজ্ঞে না ।

- কেন ?

- তেমন আর্থিক সঙ্গতি ছিল না।

- ও । ঠিক আছে। আমি এটা নিয়ে যাচ্ছি। আমার একজন প্রকাশকের সঙ্গে ভালো পরিচয় আছে। ওঁকে বলে ছাপাবার ব্যবস্থা করে দেব ।

অরবিন্দ হাঁ বা না কিছু বলতে পারল না । এই সাহেবের সাথে আরণ্যকের পরিচয় থাকলেও থাকতে পারে আর পাণ্ডুলিপি যদি তার হাতে চলে যায় তা'হলে আর কিছু করা যাবে না। সাহস করে বলল - বাবা এটা ছাপাতে নিষেধ করেছিলেন।

- কেন ?

- এটার জন্যই তিনি খুন হয়েছিলেন। মরার আগে আমার হাতে ধরে বলেছিলেন এই বই কোনদিন ছাপতে দিবি না ; এটা অপয়া ।

- স্ট্রেঞ্জ ! এত সুন্দর লেখা বই ছাপানো হবে না ? যাক আমি এটা নিয়ে চললাম। আগামীকাল থানা থেকে নিয়ে আসবে ।

বলে পাতা উল্টাতে গিয়ে দেখেন একটা চিরকুটে লেখা আছে - আমি আরণ্যকের সাথে চললাম। বৃথা আমার খোঁজ করবে না ।

শেষে লেখা ললন্তিকা ।

পুলিশ অফিসারটি ইউরেকা ইউরেকা বলে লাফাতে লাগলেন । সুযোগ বুঝে অরবিন্দ গভীর জঙ্গলে ঘেরা নিকস্থ কয়লা খাদানে লুকিয়ে রইল ।

পুলিশ অফিসার আফশোষ করতে লাগলেন । এভাবে বেমক্কা গা ঢাকা দেবে ভাবতেই পারেননি ।

তিনি পুলিশকে এলার্ট করে দিলেন। সকলে মিলে আবার তল্লাশি শুরু করল। এবার অফিসারটি মোহান্তকে বললেন সব ঘটনা । মোহান্ত সবিস্ময়ে বললেন - রাধামাধব।

অফিসার বললেন - মোহান্তজী এবার বলুন ও কে ?

- হুজুর আমি এর বিন্দুবিসর্গ জানি না। মাস দুই আগে তিলক কেটে আশ্রমে এসে গান গেয়েছিল। কি সুন্দর গলা ! আশ্রয় চাইল। তাই থাকতে দিলাম। 

- জানেন কি ও একটা বিশাল ক্রাইমের সঙ্গে যুক্ত বলে মনে হচ্ছে । যাক গে , আপনাকে আরও কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে । চলুন ।

মোহান্ত রাধামাধবকে স্মরণ করতে লাগলেন।

থানায় এসে অফিসারটি সব বিবরণ জমা দিলেন বিধাননগর এবং কলেজ স্ট্রীট থানায় ।

পুলিশ কমিশনারকে অবহিত করা হল । তিনি আরণ্যক বসুরায়ের সব ব্যাঙ্ক একাউন্ট সীল করে দেবার নির্দেশ দিলেন । পাসপোর্ট ইন-একটিভ করে দেওয়া হল । পুলিশ কমিশনার প্রেস বিবৃতি দিলেন । আরণ্যক বসুরায়  

নিজের স্ত্রীকে হত্যা করে পলাতক বড় অক্ষরে ছাপা হল ' সাহিত্যিক এবং প্রকাশক আরণ্যক বসুরায় ফেরার । '।

পরের দিন খবরের কাগজে প্রথম পাতায় বড়

কাগজ পড়ে কেউ বিস্মিত হলেন; কেউ দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দিলেন । মিঃ বসুরায় অন্তরালে থেকে সব দেখলেন । তিনি চুল, ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি গোঁফ সব কামিয়ে ফেললেন । কাগজে তাঁর ছবিও ছাপা হয়েছিল । তড়িঘড়ি একটি নার্সিং হোমে গিয়ে নিজেও প্লাস্টিক সার্জারি করিয়ে মুখমণ্ডল বদলে দিলেন যাতে কেউ তাঁকে চিনতে না পারে । 

এভাবে আর কতদিন চলে ! টাকা পয়সায় টানাটানি পড়ে যায় । এমন অবস্থায় তিনি ললন্তিকাকে ফিরে যেতে বলেন ।

ললন্তিকা সম্মত হয় না । বলে - তোমাকে ছেড়ে এ অবস্থায় আমি ফিরে যেতে পারব না । 

- এখানে না খেয়ে থাকতে হবে । স্টেশন চত্বরে রাত কাটাতে হবে । অত সোজা নয় ; তার চেয়ে ফিরে যাও। পুলিশ তোমার আগেকার ছবিটা দিয়েছে। সুতরাং তোমার আশঙ্কা খুব কম । 

- তুমিও তো চেহারাটাই বদলে দিয়েছ !

- সে আপাতত নিজেকে নিরাপদ রাখতে। আমার কোনমতে একবেলা জুটলেই হবে । তুমি অত ধকল নিতে পারবে না । তুমি চলে যাও।

ললন্তিকাকে রাজী করাতে না পেরে আরণ্যক বসুরায় চিন্তিত হয়ে পড়লেন ।

কাগজের একটা বিজ্ঞাপনে তাঁর নজর এল । বড় অদ্ভুত সে বিজ্ঞাপন । তিনি দেখলেন এবং কাগজের ওই অংশটা কেটে পকেটে রেখে দিলেন । এদিকে তাঁর পকেটেও টান পড়তে লাগল। হোটেলের টাকা মেটাতে গেলে তিনি নি:স্ব হয়ে পড়বেন । তাই ললন্তিকাকে সেখানে রেখে বাইরে গেলেন কাজের দোহাই দিয়ে । 

যোগাযোগ করলেন বিজ্ঞাপনের মালিকের সঙ্গে। ললন্তিকার ছবি দেখালেন । লোকটির খুব পছন্দ হল । পাঁচ লক্ষ টাকায় চুক্তিপত্রে সাইন করলেন । টাকা নগদে দেয়া হবে মেয়ে জমা রাখার পর ।

ফিরে এলেন হোটেলে । ললন্তিকাকে বললেন - এখানে থাকার টাকা নেই। চল কম টাকায় একটা ব্যবস্থা করেছি , আমরা সেখানে গিয়ে উঠি।

ললন্তিকার আবস্থাও ন যযৌ ন তস্থৌ । বাধ্য হল যেতে । প্রথম দিকে দু' তিনদিন আরণ্যক সঙ্গে ছিলেন। চতুর্থ দিনে ললন্তিকাকে বললেন - এই ভদ্রলোক আমার আগেকার পরিচিত । হঠাৎ পথে দেখা । নিয়ে গিয়েছিলেন ওঁর বাড়িতে । তখনই ম্যানেজ করে নিলাম। উনি বলেছেন একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেবেন - তাই আজ আমি ইন্টারভিউ দিতে যাব। তুমি একটু সাবধানে থাকবে । আমি ঘন্টা তিনেকের মধ্যেই ফিরে আসব ।

ললন্তিকা বাধা দিতে পারল না । ঝাড়া হাত পা হয়ে আরণ্যক বসুরায় অন্যত্র চলে গেলেন ।

ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেও ললন্তিকা যখন দেখল আরণ্যক ফিরৈ এল না, বাড়ির মালিক সজ্জন সিং কে জিজ্ঞেস করল - মিঃ বসুরায় কোথায় গেছেন ?

সজ্জন সিং লোকটা এমনি খারাপ নন । ললন্তিকাকে নিজের ঘরে এনে বসালেন । তারপর খবরের কাগজের বিজ্ঞাপন দেখিয়ে বললেন - তুমকো বেচা গয়া হ্যায় । পাঁচ লাখ রুপৈয়া লেকে ও আদমী ভাগ গয়া । লেকিন ডরো মত ; ম্যায় তুমকো মেরা পত্নিকি দরওয়াজা দুঙ্গা। আজ সে তুম মেরী হো ; সির্ফ মেরি।

ললন্তিকা কপালের দোষ দিল না । বড় অদ্ভুত ভাবে মানিয়ে নিল নিজেকে । কিন্তু সজ্জন সিং কেও সন্দেহের উর্ধে রাখতে পারল না । তার কারণ এমন কিম্ভুতকিমাকার বিজ্ঞাপন ।

কি আছে সেই বিজ্ঞাপনে ? ললন্তিকা খুঁটিয়ে পড়তে লাঘল । ইংরাজিতে বিজ্ঞাপন। সে তো বাংলা নিয়ে পড়েছে ; ক্লাস টেন পর্য্যন্ত !

( ক্রমশ )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Thriller