STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Thriller

4  

Nityananda Banerjee

Thriller

ললন্তিকা ধারাবাহিক

ললন্তিকা ধারাবাহিক

6 mins
304

পর্ব ঊনষাট

বিধাননগর থানার ওসি মিঃ সন্তু মুখার্জীর আচরণে রুদ্র এবং পরিবারের সকলে ভীষণ খুশি হলেন । 

সন্তু মুখার্জী কলেজ স্ট্রীট থানায় ডায়েরীর একটি কপি ফ্যাক্স করে সাহায্যের অনুরোধ করলেন ।

মিঃ সালভে আরণ্যকে বলে ছিলেন পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নিবে। আরণ্যক ভেবেছিলেন তাঁর প্রতিপত্তিতে সালভের মত অফিসারও প্রভাবান্বিত হয়েছেন। অতএব কিসের চিন্তা ।

এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন সালভের নির্দেশমত পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থাই নিয়েছে। তাঁর সম্মান এবার ধূলোয় লুটাতে চলেছে।

এখনও পর্য্যন্ত তিনি নিজ স্ত্রীর খুনি হিসেবে অভিযুক্ত।অন্যান্য বিষয়গুলো পুলিশের কানে পৌঁছানোর আগেই তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করে দিতে হবে । সেই জন্য তিনি অরবিন্দকে কোটি টাকার টোপ দিয়ে লোভাতুর করে রেখেছেন ।

তিনি রাণীগঞ্জে নেমে একটা অটো করে গেলেন মেজিয়া ব্রীজে । সেখানে এদিক সেদিক দেখছেন । ফাঁকা জায়গা। লোকজন খুব একটা নেই । শুধু গাড়িগুলো গোঁ গোঁ আওয়াজ করে একটার পর একটা আসা যাওয়া করছে। জায়গাটা তাঁর পরিচিত । ডানদিকে কিছুটা গেলেই মথুরাচণ্ডীর মন্দির এবং গীতা আশ্রম । বাঁদিকে একটু দূরে মহাশ্মশান । 

তিনি মনে করলেন অরবিন্দ হয়তো এই ব্রীজের বাঁদিকে যেতে বলেছে। সেইমত যাচ্ছিলেনও। কিছুটা গিয়ে অন্ধকার ঝোপজঙ্গল দেখে আর এগোলেন না । আবার ফিরে এলেন ব্রীজের উপর । অরবিন্দ ফোন করল। সে ওঁকে ডানদিকে গীতা আশ্রমের দরজায় আসতে বলল। এই সেই গীতা আশ্রম । আরণ্যকের মনে পড়ল এই আশ্রমেই তিনি যখন বোষ্টমঠাকুরের পিছু পিছু আসছেন তখনই একটা গুলির শব্দ পেয়ে বেয়াই মশাই তাঁকে বিপদ থেকে বাঁচিয়েছিলেন । 

আবার সেই গীতা আশ্রমেই যেতে হচ্ছে ভেবে তাঁর সন্দেহ হল । তিনি রাতের বেলা সেখানে না গিয়ে রাণীগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্রের এক মধ্যমানের লজে উঠলেন । ফোন অফ করে দিলেন ।

অরবিন্দ বারবার ফোন করেও তাঁর খবর পেল না । ললন্তিকা বলল - আমি ওকে খুব ভালো জানি, বুঝি। ও এখানে আসবে না । চল আমরা ব্রীজ পর্য্যন্ত ঘুরে আসি। যদি পেয়ে যাই -

অরবিন্দ বলল - এখন আশ্রমের বাইরে যাওয়া নিষেধ। গেলে সারারাত চেষ্টা করেও ঢুকতে পারব না । তার চেয়ে সকাল হোক দেখা যাবে ।

ভোর হতে না হতেই ঘুম ভেঙে গেল আরণ্যকের । দিনের আলো তখনও ফোটেনি । লজের ম্যানেজারকে অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ধরবার কথা বলে লজ ছেড়ে বেরিয়ে পড়লেন । নেতাজী সুভাষ বোস রোড ধরে হাঁটতে লাগলেন । সামনে একটা টোটো আসছে দেখে উঠে পড়লেন এবং রাণীগঞ্জ স্টেশনে ঘোরাফেরা করতে লাগলেন । 

এদিকে দুবরাজপুর এবং পাণ্ডবেশ্বর থানার পুলিশ তাঁকে খুঁজতে বেরিয়েছে। আরবান ব্লু অডি দেখতে না পেয়ে অজয়ঘাট সংলগ্ন রাস্তাগুলো তল্লাশি করছে। অডি তো পড়ে আছে রাজারহাটের পার্কিং জোনে ।

ললন্তিকা এবং অরবিন্দ খুঁজতে খুঁজতে এসে হাজির হল রাণীগঞ্জ স্টেশনে । লম্বা প্লাটফর্মের দু'দিকে ওরা দু'জনে খোঁজাখুঁজি করছে ; আরণ্যক ললন্তিকাকে দেখলেন ওভারব্রীজ থেকে । হাত নেড়ে ঈশারা করলেন । ললন্তিকা তা লক্ষ্য করেনি । তারপর লতিকা লতিকা বলে ডাকতেই ললন্তিকার চোখ ওভারব্রীজে পড়ল । দেখল আরণ্যক বসুরায় ওভারব্রীজে দাঁড়িয়ে আছেন ।

পড়ি কি মরি - দৌড়ে ললন্তিকা ওভারব্রীজে উঠে গেল । আরণ্যককে জড়িয়ে ধরে সে কি কান্না ! আরণ্যক বললেন - তোমাকে নিতেই তো এসেছিলাম । কিন্তু এখন আমার যা পরিস্থিতি তাতে একা থাকারই জায়গা নেই ; দু'জন কোথায় থাকব ।

ললন্তিকাকে পূর্বাপর ঘটনা বলতেই ললন্তিকা বলল - কোন ভয় নেই । চল গীতা আশ্রম । শর্ত একটাই বোষ্টমের ছদ্মবেশ ধরতে হবে । বাকিটা আমার উপর ছেড়ে দাও ।

মন্দের ভালো উপায় দেখে আরণ্যক রাজী হলেন । 

বললেন - অরবিন্দ কোথায় ?

- ওই পারে তোমাকে খুঁজতে গেছে।

- কি করে বুঝলে আমি স্টেশনে থাকব ।

- রাতে আশ্রমে গেলে না দেখে বুঝে নিলাম তুমি ভয় পেয়ে হোটেলে উঠেছ । আর অপরিচিত জায়গায় কতক্ষণ থাকা যায়; তাই আমরা বেরোলাম যদি দেখা পাই তো রেল স্টেশনেই পাব। আর পেয়েও গেলাম। তুমি বুঝি কলকাতা ফিরে যাচ্ছিলে ? আর যাচ্ছিলে যদি তো এই ওভারব্রীজে ঘুরছিলে কেন ? চার নাম্বার প্লাটফর্মে ট্রেন আসবে । উল্টোদিকে এলে কেন ?

আরণ্যক বললেন - আরে আমি ট্রেন ধরতে আসিনি। এমনই বেড়াচ্ছিলাম। ভাবলাম সকাল হোক গীতা আশ্রমে যাব।

ললন্তিকার ফোন বাজছিল । অগ্নিবীণা ছেড়ে চলে গেছে। সকালও হয়ে গেছে । ললন্তিকা বলল - ওভারব্রীজে চলে এস । মিঃ বসুরায় আমার সঙ্গে রয়েছে।

অরবিন্দ লম্বা লম্বা পা ফেলে ওভারব্রীজে এসে দেখল ললন্তিকা ও আরণ্যক বসুরায় কথা বলছে।

অরবিন্দের পরিকল্পনাটা সফল হতে চলেছে ভেবে সে যারপরনাই খুশি হল । তারপর তিনজনে মিলে টোটোয় করে গীতা আশ্রমে উপস্থিত হল । আরণ্যককে বসিয়ে রেখে ওরা চলে গেল ভোরাই গাইতে।

আরণ্যক একা বসে আছেন । চারিদিক শুনশান। দূরে মাঠে ধান কাটা শুরু হয়েছে । আশ্রমের গাছে গাছে পাখি । ওই একঝাঁক পায়রা উড়তে দেখা গেল । তাঁর মনে হল কোন নির্জন সবুজ দ্বীপে যেন বেড়াতে এসেছেন । গান শুরু হল । আজ রাধাকৃষ্ণের মানভঞ্জন নিয়ে গান । 

' বনমালী তুমি, পর জনমে হইও রাধা ' ।

মন দিয়ে গান শুনছেন সাহিত্যিক আরণ্যক বসুরায় । বেয়াই মশাই ( অভয়ঙ্করবাবু ) ঠিকই বলেছিলেন প্রভাতী সঙ্গীত শুনলে মন স্থির হয় । আরণ্যকেরও তাই হ'ল ।

অনুষ্ঠান শেষে অরবিন্দ এসে বলল - এখানে কিন্তু কোন নেশার দ্রব্য নিতে পারবেন না । পান, সিগারেট ,তামাক কিছু চলবে না । এমনকি কেউ চা পানও করে না । তবে আপনার মনে হলে চণ্ডীমন্দিরের সামনের দোকানে যেয়ে খেয়ে আসতে পারেন ।

আরণ্যকের সে সবে মন নেই । তিনি যেন একটি অভয়াশ্রম পেয়েছেন । বললেন - ললন্তিকা কোথায় ?

এখনই আসবে । টাকাটা ওর হাতেই দেবেন ।

আরণ্যক বললেন - সে না হয় দেব। কিন্তু আমার পাণ্ডুলিপি ?

অরবিন্দ হেসে ফেলল - সে তো এখন ফরেনসিক ল্যাবে !

আরণ্যক বুঝে গেলেন তিনি আহাম্মকগিরি করে ফেলেছেন । তিনি উঠে দাঁড়ালেন। ললন্তিকা এসে বলল - ওঠো কেন ? বসে পড়, বসে পড় । 

আরণ্যক বসুরায় বসলেন । ললন্তিকা বলল - টাকাটা দাও।

আরণ্যক বললেন - আমার পাণ্ডুলিপি ?

- টাকাটা আগে দাও তো ! গুনতে হবে। ঠিকঠাক আছে কি নেই ? তারপর ভেবে দেখব পাণ্ডুলিপি দেব কি না ।

টাকার ব্যাগটা বাড়িয়ে দিলেন মি: বসুরায় । ছোঁ মেরে নিয়ে নিল ললন্তিকা। বলল - কত আছে ?

আরণ্যক বললেন - যা দাবী ছিল তাই আছে।

ললন্তিকা বলল - তার মানে পঞ্চাশ ? তুমি তো বলেছিলে এক কোটি ?

- এক কোটিই আছে । কিন্তু হাতে গুনে কি শেষ করতে পারবে ? তোমাদের কাছে তো কাউন্টিং মেশিন নেই।

- ভদ্রলোকের কথায় বিশ্বাস করতেই হয় । তবু একবার দেখে নিই ।

ললন্তিকা টাকার ব্যাগটা এগিয়ে দিল অরবিন্দের দিকে। ব্যাগ খুলে নোটের বাণ্ডিল গুলো চেক করে গুনে নিল । জাল নোট নয় তো ? অরবিন্দ প্রশ্ন করল।

আরণ্যকের রাগ হয়ে গেল । - এতদূর এসেছি তোদের জন্য, ললন্তিকার জন্য, আর ওই পাণ্ডুলিপিটার জন্য । এখনও অবিশ্বাস করিস অরবিন্দ ?

- সাপকে বিশ্বাস করা যায় ; আপনাকে নয় ।

- কি বলতে চাস হতভাগা ?

মুখ থেকে 'ইসসস' শব্দ বের করে অরবিন্দ বলল - চেঁচামেচি একদম নয় ! এটা আশ্রম। এখানের নিজস্ব নিয়মকানুন আছে যা সবাইকে মেনে চলতে হয় । 

ললন্তিকা বলল - তোমার পাণ্ডুলিপিটা আমরা পাঠিয়ে দেব ডাকে ।

আরণ্যক বললেন - ও । দরকার নেই পাণ্ডুলিপিতে। আমার টাকা ফেরত দে। আমি চলি ।

অরবিন্দ এবার একটা দেশী পিস্তল বের করে বলল - তোমাকে প্রাণ নিয়ে ফিরে যেতে দিচ্ছি - এই তোমার সাতপুরুষের পূণ্যের ফল । ভেবেছিলাম তোমার এখানে একটা বন্দোবস্ত করে দেব। তা' তুমি যখন চাও না চলে যাও এখনই। নইলে কপালে দুঃখ আছে ।

আরণ্যক কি করবেন ভাবছেন । চলে গেলে পুলিশ ধরবে ; না গেলে এরা হয়তো মেরেই ফেলবে । বেশ কিছুক্ষণ ভেবে দ্বিতীয় পথটাই বেছে নিলেন । মারে যদি এরাই মারুক; পুলিশের কাছে ধরা পড়া মানে তো মান-সম্মান তো যাবেই ; এরাও ছাড়বে না। কেস করবে। 

তিনি বললেন - জায়গাটা মনোরম । কিছুদিন অন্তত থেকে যাই । 

ললন্তিকার দিকে চেয়ে বললেন - তারপর ম্যাডামের যদি অনুগ্রহ হয় তখন না হয় বাড়ি ফিরে যাব ।

অরবিন্দ তো মহাখুশি। উদরপূর্তি তো হলই আবার শিকার জালে আটকাও পড়ল ।

( ক্রমশ )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Thriller