লকডাউন এর এক সন্ধ্যে
লকডাউন এর এক সন্ধ্যে


ঝড়ে আজ পুকুর এর রাস্তা বেয়ে উঠছে গাড়ি নিয়ে কে এক উঠোনে,
" হরি , ওকে আটকাও " - চিৎকার এলো
পুকুর পাড় থেকে ।
পাশে একটা রাজাদের আমলের বাংলো আছে।
বাংলোর এক দিক এর প্রায় বেশ অনেক টা
অংশ , দরজা - জানলা ভাঙ্গা , মন্দির ও আছে
বাইরে , ওখানে মন্দির এ পুজো হয় ,
মাঝখানের রাস্তা টা ঝকঝকে পরিষ্কার !
সকাল সন্ধ্যা যখন ই তাকাও বাচ্ছা বেলা
থেকে দেখছি নোংরা চোখে পড়ে না।
এক দিকে ঢুকে আরেক দিকে বেরোবার রাস্তা আছে
মধ্যিখানে আনাজ বিক্রিও হয় সন্ধেতে ,
কিছু রকের ছেলে গাড়ি নিয়ে গাড়ি নিয়ে পুকুর এর রাস্তা বেয়ে ঢুকে বাংলোর পরিষ্কার রাস্তা দিয়ে
বেরুতে দেখলে বাঁধা দেয় , আর দেবেই না কেনো
প্রতিদিন সাফসাফাই করে !
হরি একজন মালা - প্রসাদ ব্যবসায়ী , ও ই লোক ডেকে ঝাট দেওয়া করায় ।
আমি জানলা থেকে সরে এলাম ।
সেপ্টেম্বর এর এই মাঝামাঝি একে গরম , তারপর করোনা ,
ব্রাউজারে কী একটা সার্চ করছিলাম , একটা
ক্লায়েন্ট কে মেইল করতে হবে ৬ টার মধ্যে ।
আমি শ্রীরামপুর এ মামার কাছে এসেছি এক সপ্তাহ হয় এ গেছে ,প্রায় বেরোইনি ছ ' মাস কেটে গেছে ।
টোকা টক মেসেজ ঢুকছে , গল্প বইটার ভেতর মোবাইল টা চাপা দেওয়া আছে । আজকাল একা যাওয়াটা অভ্যাস করে নিতে হোয়েছে ।
প্রথমে জীবনটা এমনটা ছিলো না ।
দমকা ঝড়ে বই এর পাতাগুলো উড়তে শুরু করেছে।
আজকের দিনেই মনে পড়ে গেলো যখন আসতাম ,
বাড়িতে আলু বোম পড়ত , আজ বেশ একা একা লাগছে , মামার ছেলেটা এখন জয়েন্ট এরকোচিং করছে , একা ঘরে সারা দিন রাত পরে এক করে।
অন্যমনস্ক ভাবে মোবাইল টা তুলে নিলাম
ব্রাউজারে যা সার্চ করছিলাম , খুঁজে পেলাম না
৫ টা ১০ !
এবার তো যা হোক রেডি করতেই হবে ,ভুলে গেছি একদম , কী সার্চ করছিলাম।
হিস্টরি তে গিয়ে ক্লিক করলাম , একটা ডাইনোসর দাড়িয়ে !
তার মানে ইন্টারনেট কানেকশন নেই ।
যাঃ !
ঠিকাছে , যা হোক একটা একটা কারণ
দিয়ে দেওয়া যাবে !।..
অফিস তো আর যেতে হচ্ছে না !
আরাম এখন ! .. ফ্যান এর রেগুলেটর টা ৫ দিয়ে , বিছানায় গা গল্প বইটার ওপর মাথা দিয়ে ঘুম ই এসে গেছিলো ,
কী ঠিক তখনই টোকা টক মেসেজ
খুলে দেখি - দুটো ইমেইল
এক টা তে লেখা , " ফ্যান্টাস্টিক ওয়ারক "
সঠিক পৌঁছেছে , সেটা জানানো হয়েছে ,
অ্যাঁ ? আমি তো আজ ই এটা নিয়ে বসেছিলাম !
একবার আবার চেক করলাম , এতো ঠিক ই ।
আমাকে লিখেছে । ভুল করেও আমি কখন পাঠালাম মনে পড়ছে না !
দ্বিতীয় টা বোঝা গেলনা , খুললাম , কাল ছুটির কথা বলছে বোধয় ।
লজিক লাগালাম না,
চশমাটা বন্ধ করলাম , ডান্ডি টা ধরে সরালাম ।
ভুলে গেলাম বিকেলে চা খাওয়া হোয়নী ,
মেইল টা দেখে শান্তিতে
এটা তো আরো ঘুম পাইয়ে দিল , এলিয়ে পড়লাম ।
ভ্রেরেরেরেরের.. ভাইব্রেশন এর শব্দ..
পায়ের তলায় চোখের সোজা সুজি ছিলো,
৮ টা ৩৫ , মোবাইল এর জলা আলোটা চোখে
পড়তে হুশ এলো , কিছু খাওয়া হোয়নি ।
একটা ফোন কল এসেছে ,
মিনিট খানেক ঘুমের ঘোর কাটতে চোখে
পরলো , ক্লায়েনট এর কল ।
কী মনে হতে মেইল চেক করলাম ,
কোনো মেসেজ নেই ! রিফ্রেশ করলাম ,
নেট তো আছে , একটু অপেক্ষা করলাম
না , কোনো মেইল নেই ,
তবে " congratulaton " কোথায় সব !
রিবুট করলাম, মিনিট খানেক বসে রইলাম
কিছু নেই মেইল এ ।
নাকি সব ই স্বপ্ন ছিলো ! একবার ও হুশ ই হোয়নি । ঘোর বলে এখন যা মনে হচ্ছে ,
তন্দ্রা তখন আসেওনি , তবে একি ! আজকের কাজ গেলো তবে !
পুরোটা তবে স্বপ্নই !
লকডাউন কী সব দেখাচ্ছে আজকাল ,
ঠিকাছে , আর কী করা যাবে !
কিছু একটা ব্যবস্থা করেই নেওয়া যাবে না হয় !
ভাবতে ভাবতে আবার ঘোর আসছিল ,
না ! আর না ,
চশমাটা টেনে ব্যাগ থেকে মাস্ক এর সরি দুটো ধরে বার করে পড়লাম , স্যানিটাইজার টা বের করে হাতে নিয়ে আবার আটকে রাখলাম।
খাওয়া হয়নি কিছু চা - মুড়ি খেতে হবে ।
একটু বসে সিড়ি দিয়ে নেমে মামার ঘরের দিকে এগোলাম ।