ক্ষমা করো হৃদিতা
ক্ষমা করো হৃদিতা
হৃদিতা ভীষণ হাসিখুশি, উচ্ছল প্রাণবন্ত একটি মেয়ে। বন্ধুদের মাঝে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা। পরিবারের নয়নের মনি। কিছুদিন যাবত তার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। সে তার অসুস্থতার কথা মা বাবাকে জানায়। মা তাকে ড: এর কাছে নিয়ে যায়। ড: তেমন কোনো রোগ ডায়াগোনাইজ করতে পারে না। তাই কিছু টেষ্ট দেয়।টেষ্ট রিপোর্ট একদম নরমাল এলো। হৃদিতার বিশ্বাস কোথাও ভুল হচ্ছে। সে ড: পাল্টালো, সেখানেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। দেশের সেরা ড: এর কাছে নিয়ে যাওয়া হলো তাকে কিন্তু তিনিও কিছুই পেলেন না। কিন্তু হৃদিতার বিশ্বাস তার ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে। তার নাক দিয়ে, মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। কিন্তু সে যখনই মাকে বলে মা বলে এমন কিছুই না। মা দেখতে পায় না রক্ত। মাতো তাকে দেখতে পারে না তাই চায় সে মরে যাক। এজন্য সে বাবাকে ডেকে দেখায়। কিন্তু বাবাও বলে বাবা কিছুই দেখতে পায় না।সে ভাবলো তার বেষ্ট ফ্রেন্ড রিয়াকে একদিন তার সাথে রাখবে প্রমাণ করার জন্য যে সে সত্যিই অসুস্থ। রিয়াও কিছু দেখতে পেল না। ও রেগে গিয়ে ওকে বাসা থেকে বের করে দিলো। মা বাবা নিশ্চয়ই তার চিকিৎসা করাতে টাকা খরচ করতে চায় না। এরা কি ওর আপন বাবা মা!! এই পৃথিবীতে কেউ কারও না। নিজের ব্যবস্থা তার নিজেরই করতে হবে। এই ভেবে সে ফেইসবুকে একটা ফান্ড রেইজিং এর পেইজ তারি করলো। বিভিন্ন গ্রুপে সাহায্য চাইতে থাকলো। অনেকে সাহায্য দিলোও। হৃদিতার বয়ফ্রেন্ড নাবিলকে হৃদিতা বলেছিল তার অসুস্থতার কথা। সেও তাকে ড: এর কাছে নিয়ে যায়। কিন্তু ড: কিছুই পায় না। একদিন হৃদিতা নাবিলকে বলে এই দ্যাখো আমার নাক দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে, দাঁত দিয়ে রক্ত পরছে, আমার গায়ে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ। দেখতে পাচ্ছো না? নাবিল কিছুই দেখতে পায় না। হৃদিতা ওর উপরও রেগে যায়। বলে তোমরা সবাই একজোট, তোমরা আমাকে মেরে ফেলতে চাও! নাবিল ইউনিভার্সিটিতে গেলে দেখে হৃদিতা ফান্ড কালেকশনের বক্স নিয়ে দাড়িয়ে। নাবিল খুবই বিব্রত হয়। হৃদিতাকে ওখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়। হৃদিতা রেগে যায় ওর উপর। ইউনিভার্সিটিতে সবাই নাবিলকে হৃদিতার ক্যান্সারের কথা জিজ্ঞাসা করে। নাবিল হুট করে বলে ফেলে কিচ্ছু হয়নি ওর । আর সাথে এই খবর ছড়িয়ে পড়ে যে হৃদিতা ফ্রড। পুরো ইউনিভার্সিটিতে রাষ্ট হয়ে যায়। সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে যায়। সবাই হৃদিতার ছবি দিয়ে ওকে ট্যাগ করে পোষ্ট করতে থাকে।ওর বন্ধু, বয়ফ্রেন্ড, ভাইবোন সবাইকে ট্যাগ করে হ্যারাস করে। ওর বাবাকে অফিসে সবাই এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করে। ওর মাকে প্রতিবেশীরা ছোট করে কথা বলে।নাবিল হৃদিতার সাথে ব্রেকআপ করে ফেলে। হৃদিতার বাবা তার গায়ে হাত তোলে। বাবা কোনোদিন তার গায়ে হাত তোলেনি। এই কষ্ট হৃদিতা সহ্য করতে পারে না। তার কাছে থেকে সব ডিভাইস নিয়ে একরুমে আটকে রাখা হয় তাকে। হৃদিতা সারারাত কাঁদে। দরজা খোলার জন্য চিৎকার করে। ভোরের দিকে তার আর কোনও আওয়াজ পাওয়া যায় না।মেয়ের গায়ে হাত তুলে বাবার ভালো লাগছিলো না, সারারাত একফোঁটা ঘুম হয়নি। ভোরবেলা মেয়ের রুমে গিয়ে দেখেন মেয়ে হাতের রগ কেটে আত্মহত্যা করেছে। বিছানা রক্তে ভিজে আছে। টেবিলের উপর একটা চিরকুটে লেখা ‘বাবা আমি সত্যিই অনেক অসুস্থ”।এরপর ২ বছর কেটে যায়। হৃদিতার মৃত্যুর পর নাবিল আগের ইউনিভার্সিটি ছেড়ে দেয়। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে সাইকোলজি নিয়ে পড়াশোনা শুরু করে। সেখান থেকে সে জানতে পারে যে Factitious disorder নামে একটা মানসিক রোগ আছে। যেটা হলে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেকে দূরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত মনে করে। এটা খুবই রেয়ার একটা মেন্টাল ডিজিজ। যা পুরো পৃথিবীতে মাত্র .৫% মানুষ আক্রান্ত হয়। সে এই মানসিক রোগটা নিয়ে প্রচুর রিসার্চ করে। তার বুঝতে বাকি থাকে না হৃদিতা এই রোগেই আক্রান্ত ছিল। নাবিল প্রচন্ড আত্মগ্লানিতে ভোগে। হৃদিতার এমন কঠিন সময়ে সে তার হাত ছেড়ে দিলো! যে হৃদিতা তাকে তার সবটুকু দিয়ে পাগলের মতো ভালোবাসতো, তাকে এমন একা করে দিলো। বাকিটা জীবন নাবিলকে এই আত্মগ্লানি নিয়ে বাঁচতে হবে যে সে হৃদিতার জন্য কিছুই করতে পারলো না। প্রতিটাদিন তার এভাবেই কাটবে।