ভিনভালোবাসা
ভিনভালোবাসা


আজকাল বেশ ঘটা করে ভালোবাসা দিবস পালন করে ছেলেপেলেরা ব্যপারটা ভালোই দেখতে, বউয়ের জন্য মাসকাবারি ওষুধ কিনে ফেরার সময় বেশ কয়েক ডজন কপোত কপোতিকে ফুল আর উপহার হাতে ঘুরোঘুরি করতে দেখে ভাবছিলেন বশির উদ্দীন। শাহানা আর বশির উদ্দীনের ৩৩ বছরের সংসার। বিয়ের রাতে বৌয়ের প্রথম মুখ দেখেছিলেন। তার আগে দেখার সৌভাগ্য হয়নি। ওমন চাঁদপানা মুখ উনি জীবনে দেখেননি। সেই থেকেই প্রেম! তাদের ছেলেপুলে ৩ জন। বিয়ের পর প্রথম বাচ্চাটা হয়ে নিউমোনিয়ায় মারা যায়। এরপরই শাহানার মাথাটা ঠিকঠাক কাজ করে না। সে মেয়ের মৃত্যুর জন্য নিজেকে দায়ী ভাবতে ভাবতে মানসিক ভারসাম্য হারায়। তার ধারনা মেয়েকে সে মেরে ফেলেছে। একসময় পাগলামি সীমা অতিক্রম করে।সবাই অবশ্য তাকে বলেছিল দ্বিতীয় বিয়ে করতে, পাগল নিয়েতো আর ঘর করা যায় না। ছেলেপুলেরাও মায়ের আদর পায়নি বললেই চলে। ওরাও ভীষণ বিরক্ত হয় মাঝে মাঝে। কিন্তু বশির উদ্দীন কোথা থেকে যে এমন দেবতূল্য ধৈর্য্য পান তা তিনি নিজেও জানেন না। ৩ ছেলেমেয়ের সাথে বৌটিও যেন তার আরেক সন্তান। বৌকে নাইয়ে, খাইয়ে এরপর প্রতিদিন কাজে যান তিনি। গত ৩৩ বছর যাবত চুলটাও বেঁধে দেন। আজ হুট করে ইচ্ছে হলো ভালোবাসা দিবসে বউয়ের জন্য ১ টা গোলাপ কিনতে। কিনেও ফেললেন। সবাইকে লুকিয়ে বউয়ের হাতে ফুলটা দিতেই বউ বললো-‘এটা ভাজি করে খাওয়া যায়?’ বশির উদ্দীনের চোখে পানি চলে আসলো। তিনি কিছু বললেন না, ছলছল চোখে মৃদু হাসলেন কেবল। তার চোখগুলো অশ্রুতে নয় ভালোবাসায় সিক্ত। ভালোবাসা বুঝি এমনও হয়!