Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!
Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!

Madhuri Sahana

Drama Others

3  

Madhuri Sahana

Drama Others

কমলা

কমলা

10 mins
11.5K



খুশি পুকুর থেকে হাঁস গুলো তুলে খোপে ভরে সংখ্যাটা গুনে নিলো । খানিকটা জল দেওয়া ভাত মাটির হাঁড়িতে রাখা আছে ‌হাসগুলো প্যাক্ প্যাক্ করতে করতে ভাত খেতে শুরু করলো খোপের দরজা ভালো করে এঁটে দিয়ে খুশি নিশ্চিত ‌হয়ে পুকুরে নেবে গাঁ ধুয়ে ঘরে গেল সন্ধ্যা দেবে একটু পরেই । মা'কে দেখলো গাই দোয়াতে । গাই দুইয়ে মা দুধ দিতে যাবে পাঁচটা বাড়ি ধরা আছে দু'বেলা দুধ দিতে যায় । সকালে হারুর দোকানে হাঁসের ডিম গোটা দশেক দিয়ে আসে । মাসের হিসাব মিলিয়ে মুদিসদয়ের জিনিস চাল আটা তেল নুন নিয়ে আসে । খুশির দাদা কলকাতা কলেজে পড়ে সকালের ট্রেনে‌ যায় ফেরার কোনো ঠিক নেই দুটো বাড়িতে টিউশনি পড়ায়‌ । স্টেশনের কাছে সাইকেল গ্যারেজে‌ সাইকেল রেখে দেয় । খুশি গার্লস স্কুলে ক্লাস এইটে পড়ে ‌। ঠাকুরঘরে প্রদীপ জ্বেলে খুশি বই নিয়ে পড়তে বসে । 

বিপিনবাবুর দিনের বেশিরভাগ সময়টাই পার্টির অফিসে কাটে । কারখানা বন্ধ হওয়ার পর অনেকেই কোনো না কোনো কাজ খুঁজে নিয়েছে । বিপিনবাবু কলেজে পড়ার সময় থেকেই রাজনীতি করেন । বর্তমানে রাজনীতি ছাড়া আর কিছুই করেন না । " সমাজতন্ত্র কল্পনা বিলাসীদের আবিষ্কার নয় । আধুনিক সমাজে উৎপাদন শক্তির বিকাশের শেষ লক্ষ্য ও কাঙ্ক্ষিত ফল " । কার্ল মার্কস ও ফ্রেডিরিখ এঙ্গেলস এদের এই বক্তব্য এবং এর তাতপর্য নিয়ে ‌সর্বক্ষণ আলোচনা ‌করে থাকেন এবং কিছু লেখা লেখি করেন । বিপিনবাবু কলেজে পড়ার সময় রাশিয়াতে বলশেভিক বিপ্লব ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলন এক নতুন পথের নির্দেশ এক চেতনার উন্মেষ ঘটেছিল । "দুনিয়ার মজদুর এক হও" এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে শ্রমজীবী জনতার জন্য কর্মসূচি আত্মপ্রকাশ করেছিল । শ্রেনী সংগ্রামের ভিতর দিয়ে শ্রমজীবী মানুষের এক বিবর্তনের ইতিহাস তৈরী হয়েছিল ।

বিপিনবাবুর ছেলে বিপুল কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজে পড়ে । ছাত্র হিসেবে খুব একটা মেধাবী নাহলেও কখনো ফেল করে এক ক্লাসে দুবার পড়তে হয়নি । প্রাইভেট টিউটর কখনো ছিল না , স্কুলের পড়া আর বাড়িতে নিজের চেষ্টায় মোটামুটি পাস মার্ক নিয়ে উতরে গেছে । কলেজের ক্লাস খুব একটা অফ করে না । বন্ধু বলতে কয়েক জন আছে কিন্তু ইউনিয়নের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই । দুটো ছাত্র পড়িয়ে যা রোজগার করে তাতে গার্লফ্রেন্ড বানানোর ইচ্ছা থাকলেও পকেট পারমিট করে না । বিপুল তিনটি সেমিস্টারের ‌পরীক্ষায় পাস করে গেছে সামনের মাসে একটা সেমিস্টারের জন্য কলেজের লাইব্রেরীতে বসে কিছু বই ঘেঁটে নোট তৈরী করছিল এমন সময় শুনলো ইউনিয়নের ছেলেদের মধ্যে মারামারি লেগেছে এখুনি কলেজে পুলিশ আসবে বিপুল তারাতারি কলেজ থেকে বেরিয়ে পড়লো এই সময় কলেজে থাকলে কোনো ঝামেলায় পড়ে হয়রানি হবে । রাস্তায় শম্ভুর সাথে দেখা হলো দুজনে মিলে একটা চায়ের দোকানে বসলো । চারপাঁচ জনের মাথা ফেটে রক্ত পড়েছে হসপিটালে নিয়ে গেছে পুলিশ এসে কয়েকজনকে থানায় নিয়ে গেছে । প্রিন্সিপালের রুমে ছাত্র ছাত্রীরা তর্কে জড়িয়েছে । হয়তো প্রিন্সিপালকে ঘেরাওয়ের কর্মসূচি রয়েছে । কলেজের পঠন পাঠন এখন বন্ধ থাকবে যতদিন ছাত্রদের দাবি না মানা হবে । কত গুলো ছাত্র ছুটে গিয়ে ট্যাক্সি ডেকে আহত ছাত্রদের নিয়ে হাসপাতালে গেল । বিপুল আর শম্ভু চায়ের দোকানের ভিতরে ঢুকে বসলো । বাইরে যাওয়ার সাহস পেলনা ।


কমলার জন্ম বাংলাদেশে । বিপিনবাবুর বাবা পার্টিশনের সময় এক পরিচিতর সাহায্য এক মুসলমান পরিবারের সঙ্গে বাড়ি বদল করে এদেশে এসেছিলেন । বারোকাঠা জমির উপর পুরোনো দালানের বাড়ি পাঁচিল দিয়ে ঘেরা একটি ছোট পুকুর আছে এটাই জলের ব্যবস্থা আর কিছু আম জাম কাঁঠালের বাগান । দুটো বাসযোগ্য ঘর, রান্নার জায়গা ‌আর একটা খোলা বারান্দা । বাড়িটির কোন সংস্কার করা হয়নি বহুবছর । ছাদের কড়িবরগা গুলো এখনও শক্ত । কমলাকে বাংলাদেশ দেশ থেকে আনিয়ে বিপিনবাবুর সঙ্গে বিয়ে দিয়ে ছিলেন ‌বিপিনবাবুর বাবা ।‌ শ্বশুর শাশুড়ি খুব ভালোবাসতেন কমলাকে‌ । কমলা খুবই যত্ন করে শ্বশুর শাশুড়িকে রেখেছিল । ঐ দেশ থেকে এই দেশে এসে বিপিনবাবুর মা-বাবা বেশ সমস্যায় পড়েছিলেন বাংলাদেশের ‌অগাধ সম্পত্তি‌ ও সাচ্ছন্দ এখানে এই অল্প পরিসরে মানিয়ে‌ নিতে পারেননি । শ্বশুর মশাই একটা রেশন দোকানে খাতা লেখার কাজ করে সামান্য কিছু রোজগার করতেন । গরু পোষা শুরু করে কমলা । একটা গরু থেকে আজকে গোয়ালে তিনটে গরু আছে । বিপিনবাবু চিরকাল বাড়ির বাইরেই থাকতেন যখন বাবা মা বেঁচে ছিলো তখনও । একটা পেপার মিলে চাকরি করতেন আর ইউনিয়ন করে বেরাতেন । শ্বশুর মশাই হার্ট অ্যাটাকে হঠাৎই মারা যান । তারপর থেকেই সংসারের হাল কমলার হাতে । খুশির জন্মের দু'বছর পর শাশুরিও গত হয়েছেন । কমলার যখন বিয়ে হয় তখন কমলার বয়স চোদ্দবছর ।‌ হিন্দু কিশোরী মেয়েদের তাদের পরিবারের লোকেরা ভারতে পাঠিয়ে দিত । সেই ভাবেই কমলা তার এক অতি দুরের আত্মীয়ের বাড়িতে আসে এবং বিপিনবাবু সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় । এদেশে কমলার আপন জন প্রায় কেউই নেই থাকলেও কমলার খোঁজ কেউ রাখে না ।


বিয়ে হয়ে এসে থেকেই কমলা তার শাশুড়িকে চোখের জল ফেলতে দেখেছে । অনটনের অভ্যাস তার ছিল না । শ্বশুর মশাই রেশন দোকানে কাজ করে রে সামান্য আয় করতেন তাতে অভাব ঘুচত না । কমলা বাগান থেকে শাকপাতা তুলে অল্প তেলে রান্না করতো । কখনো পুকুরে স্নানের সময় চুপড়ী দিয়ে ছোট ছোট মাছ ধরে শ্বশুর শাশুড়িকে ভেঁজে দিত । শ্বশুরমশাইকে বলে একটা গরু কেনা করে ছিল । গরুর গোবরের ঘুঁটে জ্বালানির কাজে লাগবে একটু ঘাসবিচুলি খাইয়ে দুবেলা দুধের জোগাড় হবে । এসবই কমলার বুদ্ধিতে হয়েছে ।‌ বিপিনবাবু কলেজের পড়া শেষে পেপার মিলের চাকরি পাওয়ার পর কিছুদিন সংসারে অনটন কমে ছিল । তখন বিপিনবাবুর বাবা রেশন দোকানের চাকরি ছেড়ে দিয়ে ভেবে ছিলেন একটু টাকা জমিয়ে বাড়িটার সংস্কার করবেন । ইলেকট্রিকের কানেকশন তারপর কর্পোরেশনের জলের কানেকশন নিয়ে গোয়ালঘরটা বড় করে টিনের ছাউনি দিয়ে ছিলেন । পুকুরের ঘাট ইটদিয়ে বাধিয়ে ছিলেন । বাড়িটা সারিয়ে রঙ করার ইচ্ছা ছিল কিন্তু হার্ট অ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়ে বাড়িতে আর কোনো সংস্কার করা হয়নি । গাই দুইয়ে যে দুধ হয় তার থেকে কমলা মাসে প্রায়‌ হাজার খানেক টাকা হাতে পায় । গরুর খাবারের জন্য অল্প খরচে লাগে , ওষুধ পত্র পশু হাসপাতালে বিনামূল্যে পাওয়া যায় ।


মাঝে মাঝে পশু হাসপাতালে যেতে হয় ওষুধ নিতে নতুন বাছুর বিয়োলে । পশু হাসপাতাল থেকে পরিচয় হওয়া একজন ব্যবসায়ীর কাছে , আট নয় মাসের এড়ে বাছুর বা বকনা বাছুর ভালো দামে বিক্রি হয় । বাছুর বিক্রি করেও কমলা টাকা পায় । তাছাড়া বছরে দু-তিন বস্তা ঘুঁটে বিক্রি হয় । কমলা‌ সারাদিন গরুর দেখাশোনা করে । শাশুড়ি মারা যাওয়ার পর হাঁস পালন করা শুরু করেছে হাঁসের ডিমের চাহিদা আছে তাছাড়া ছেলে মেয়েদের ডিম খাওয়ানো যায় । গোয়ালঘরের পাসেই একটা খোপের মধ্যে হাঁস গুলো থাকে সারাদিন পুকুরে চড়ে বেড়ায় বিকেলে খোপের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে খানিকটা ভেজা ভাত খাবার দিতে হয় । এসব নিয়েই কমলা সারাদিন কেটে যায় । খুশি ঘরের কাজ করে । বিপুল সময় পেলে বাজার দোকান করে দেয় । বিপিনবাবু বাড়িতে বেশিক্ষণ সময় থাকেন না । পেপার মিল বন্ধ হওয়ার পর থেকে পার্টির অফিসই একপ্রকার বিপিনবাবুর ঘরবাড়ি ।


খুশি সকালে ঘরের কাজ সারে । বাসী বাসন ধোয়া ঘরদোর মোছা জামাকাপড় ধোয়া কমলা ঘরের কাজ করার সময় খুব বেশি পায় না । স্কুলে যাওয়ার আগেই ভাত ডাল কিছু ভাজা ভুজি করে রাখে । বিপুল সকালে ভাত খেয়ে কলেজে চলে যায় । বিপিনবাবু সকালে ভাত খেয়ে বেরিয়ে যায় । খুশিও স্কুলে যায় ভাত খেয়ে । কমলা দুপুরে কিছু রান্না করে রাখে রাতের জন্য তারপর বাসন ধুয়ে স্নান করে খাবার খেয়ে একটু জিরিয়ে নেয় । খুশি ক্লাস নাইনে ওঠার পরীক্ষাতে ফেল করেছে । এবার পাস করতে না পারলে স্কুল থেকে টিসি পেয়ে যাবে তাই সন্ধ্যা বেলায় ও কোনো কাজ করে না পড়ে । খুশি কমলার কাছে প্রাইভেট টিউশনি নেওয়ার জন্য বায়না করেছিল কিন্তু কমলা সাফ না করে দিয়েছে । বিপিনবাবুর ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই । বিপুল নিজের চেষ্টায় কলেজে পড়ছে । খুশির খুব ইচ্ছে সালোয়ার কামিজ পরে স্কুল যায় ক্লাস নাইনে উঠলে তবেই সালোয়ার কামিজ পরা যাবে । খুশি স্কুল থেকে আসার সময় তপনের দোকানে একটা বেগুনী রঙের চুমকি বসানো সালোয়ার দেখে এসেছে । কমলা দুধ দিয়ে আসার সময় পুরো সাতশো টাকা দিয়ে সালোয়ারটা কিনে আনলো । খুশির এইসব সাজগোজের বায়না কমলা না বলেনা । মেয়ের শখ মেটানোর আপ্রাণ‌ চেষ্টা করে । কমলার নিজের কোনো সোনার গয়না নেই , শাঁখা সিঁদুর আর তাঁতের শাড়ি পরে বিয়ে হয়েছিল । শাশুড়ি মারা যাওয়ার ‌পর শাশুরির দুগাছা সোনার চুড়ি একটা কানের পাশা আর গলার একটা বিছাহার পেয়েছিল ‌সেগুলো খুশির জন্য রেখে দিয়েছে । 


বছর খানেক আগে বিপিনবাবু খুব অসুস্থ হয়ে পরেছিলো । বমির সাথে রক্ত আসতো পায়খানা দিয়ে রক্ত আসতো প্রায় মরমর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলো সেই সময় পার্টির লোকেরা ওর চিকিৎসার ভার নিয়ে সুস্থ করে তোলে । শাশুড়ির মৃত্যুর পর থেকে কমলার সঙ্গে বিপিনের কথাবার্তা প্রায় নেই বললেই চলে । বিপুল বাবাকে এড়িয়ে চলে একমাত্র খুশি বাবার সঙ্গে কথাবার্তা বলে বাবার দেখাশোনা করে । বাবার ফতুয়া পাজামা পরিস্কার করে রাখে সকালে বাইরে যাওয়ার আগে ভাত খেতে দেয় রাতের বেলায় দরজা খুলে দেয় । বিপুল ছুটির দিনে আম তলায় বসে পুকুরে ছিপ ফেলে মাছ ধরে , এটা ওর একপ্রকার নেশা । পোনা মাছ কৈ মাছ সরপুটি‌ মাছ এসব পাওয়া যায় । হাঁস চড়ে বেড়ায় তাই পুকুরটা পরিস্কার থাকে , সারাবছর জল থাকে বর্ষায় কানা ভোরে যায় । বিপুল আম তলায় মাদুর পেতে রেডিও চালিয়ে ছিপ পেতে বসে থাকে । তিন চারটা মাছ ও তুলবেই । পুকুরটা পাঁচিলের ভিতরে থাকায় বাইরের ‌ঝামেলা প্রায় নেই তাই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন জল । মাঝে মাঝে এককেজি ওজনের মাছ ও পায় সেদিন উৎসব লেগে যায় খুশিদের বাড়িতে । কমলা তাড়াতাড়ি মাছ কেটে ঝাল ঝোল দুতিন রকম পদ রান্না করে । ছোটো মাছ পেলে খুশি ভেঁজে রাখে লঙ্কা দিয়ে । 


খুশি স্কুলের জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তায় এসে একটু দাড়ায় , একজন যুবক সাইকেল চালিয়ে খুশির সামনে এসে দাড়াতেই খুশি সাইকেলে উঠে পড়ে । ওরা অনেকটা পথ সাইকেলে এসে পলতা জলপ্রকল্পের সামনে এসে থামে । ওরা ভেতরে গিয়ে একটু ছায়া দেখে বসে । প্রভাসকে খুশি ছোট থেকেই চেনে । বিপুল প্রভাসের সাইকেল নিয়ে সাইকেল চালানো শিখেছে । বিপুলের সঙ্গে আগে প্রভাস খুশিদের বাড়িতে আসতো । বিপুলের থেকে কিছুটা বয়সে বড় । প্রভাস খুশিকে ভালোবাসে । প্রভাসের বাবা আগে পলতা জলপ্রকল্পের কর্মী ছিলেন , প্রভাস বাবার মৃত্যুর পর এই চাকরিটা পেয়েছে । গার্ডেনরিচ , ধাপা , জোড়বাগান , ওয়াটগঞ্জ আর পলতা এই পাঁচটি জলপ্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিদিন ২০২ কোটি ৭৫ লক্ষ লিটার পরিস্রুত জল পুরোসভা এলাকা গুলোতে সরবরাহ করা হয় । খুশিকে প্রভাস‌ মাঝে মাঝে সাইকেল চালিয়ে ঘুরিয়ে নিয়ে আবার সময়মতো স্কুলের গেটের সামনে নামিয়ে দিয়ে আসে । খুশির স্কুল পালিয়ে প্রেম করার কথা কয়েক জন প্রিয় বান্ধবী ছাড়া কেউ জানে না ।


বিপুলদের কলেজে খুব আন্দোলন চলছে । ক্লাস করা যাচ্ছে না । বিপুল চুপ করে কলেজের মাঠে বসে আছে সঙ্গে শম্ভু আর নিতাই । এক জন ছাত্র নেতা বক্তব্য রাখছে মাইক্রোফোনের আওয়াজ স্পস্ট কানে আসছে " .......... স্বদেশী আন্দোলনে গরিব ঘরের ছেলেমেয়েরা প্রাণ দিয়েছে কিন্তু ক্ষমতায় এসেছে শোষক শ্রেণী । এ দেশের মানুষ রাজনীতি বুঝতেই চায়না অজ্ঞ হয়ে থাকে আর নেতারা তার সুযোগ নেয় । তারা চায় জনগণ অন্ধ হয়ে থাকুক । কেউ প্রশ্ন করে না , তর্ক করে না , বিরুদ্ধতা করে না অন্ধের মত নেতাদের মেনে নেয় । নেতা নেত্রী দের দুর্ণীতি এখন প্রায় বৈধ রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে । জনগণের সচেতন সংহতির শক্তি না থাকলে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী বিপুল টাকা ঢেলে সংবাদ মাধ্যমে যে হাওয়া তোলে , যে আবহাওয়া তৈরি করে জনগণ উলুখাগড়ার মত সেই দিকেই ভেসে যায় ..........."।


দুর থেকে কিছু আওয়াজ আস্তে আস্তে কমলার কানে ভেসে আসছে........ কারা যেন কিছু বলছে কিন্তু কমলা বুঝতে পারছে না..….... একটা নদী তাতে একটা নৌকা ভাসছে ঘর বাড়ি গুলো দুরে সরে যাচ্ছে ..….. কেউ একজন খুব কাঁদছে ‌....… কমলার গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে , কথা জড়িয়ে যাচ্ছে, জ্বরের ঘোরে জ্ঞান নেই । খুশি মাথায় সমানে জল ঢালছে । বিপুল গেছে ডাক্তার ডাকতে । ডাক্তার এসে কমলাকে পরীক্ষা করে হসপিটালে ভর্তি করতে বললো । কমলা আজকে তিনদিন পর একটু‌ কথা বলেছে । বিপিনবাবু কমলাকে চোখ খুলতে দেখে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন " কেমন আছে ? " কমলা অবাক হয়ে শুনলো আজকে তিনদিন সে হাসপাতালে অজ্ঞান হয়ে ছিলো । বিয়ে হয়ে এসে ইস্তক একটা রাতও বাড়ির বাইরে থাকেনি যে মানুষটা সে আজকে তিনদিন হাসপাতালে কি করছে ? ডাক্টার মাথার সিটিস্ক্যান করছে , সাসপেক্ট করছে ম্যানেনজাইটিস । বিপুল আর প্রভাস হাসপাতালে রয়েছে তিনদিন ধরে । খুশি খুব কান্নাকাটি করছে ও মা'কে কখনও অসুস্থ দেখেনি । জ্বর কমছে । ডাক্তাররা বলেছে এ যাত্রায় ফাড়া কেটে গেছে তবে খুব সাবধানে থাকতে হবে পুরো সাত সাতটা দিন হাসপাতালে থেকে বাড়িতে এসেছে কমলা । খুবই অসুস্থ ।


বিপিনবাবু কোনো দিন সংসারের কোনো বিষয়ে কিছু লক্ষ করেন নি । এখন কমলা অসুস্থ হয়ে পড়ায় অথই‌ জলে পড়েছেন । কারখানা লকাউট । পিএফের কিছু টাকা পোস্ট অফিসে রেখেছিলেন সেই টাকা দিয়ে কমলার চিকিৎসা হচ্ছে । কমলার এতদিন সংসারের সমস্ত খরচ জোগাতো । বিপুল কলেজে যাচ্ছেনা গরু বাছুর দেখাশোনা করছেন । খুশি ‌রান্নাবান্না অনন্য কাজকর্ম করছে । বিপিনবাবু বাড়িতেই থাকছেন রাজনীতির জ্ঞান ‌পারিবারিক জীবনের জন্য নয় । পারিবারিক কোনো ব্যাপারে তার কোন মতামত ছিলনা আজকে তাই খুবই ‌ আনাড়ির মত লাগছে নিজেকে । কমলা তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠলে বিপিনবাবু হাপছেড়ে বাঁচবেন । বিপুল কলেজে যায়নি প্রায় পনেরো দিন হয়ে গেল শম্ভু আর নিতাই বাড়িতে এসেছিল খোঁজ নিতে , সব দেখে শুনে ফিরে গেছে । কমলা সুস্থ হয়ে না ওঠা পর্যন্ত বিপুলকেই দুধের ব্যাবসা দেখতে হবে । খুশির স্কুল বন্ধ । প্রভাস প্রায় রোজই একবার কমলাকে দেখতে আসে । কমলা চোখ বন্ধ করে বিছানায় মিশে থাকে ‌এবার বুঝি তার ছুটি ঘোষণা হলো । এতো বছরের জিবনে একসাথে এতোকিছু নতুন কমলার জিবনে কখনোই ঘটেনি । 



Rate this content
Log in

More bengali story from Madhuri Sahana

Similar bengali story from Drama