The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW
The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW

Sucharita Das

Classics Inspirational

3  

Sucharita Das

Classics Inspirational

ক্লেপটোম্যানিয়া

ক্লেপটোম্যানিয়া

5 mins
883


বাড়ির সকলের সঙ্গে খুব আনন্দ করে বিয়ে বাড়ীতে গিয়েছিল সদ্য বিবাহিতা ইতি। সেখানে সকলের সঙ্গে খুব সুন্দর ভাবে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে আনন্দও করছিলো। কিন্তু বউ ভাতের পরের দিন সকালে হঠাৎই ঘটলো অঘটন টা। ইতির এক ননদ রিমি নিজের একটা সোনার হার খুঁজে পাচ্ছে না। রিমি সম্পর্কে ইতির মাসতুতো ননদ। যাই হোক সারা বাড়ি তন্ন করে খোঁজা হলো। কিন্তু হারের কোনো চিহ্ন ই নেই।অথচ রিমি বলছে সে নাকি হান্ড্রেড পার্সেন্ট কনফার্ম যে , সে স্নান করবার সময় হার টা ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে রেখে গিয়েছিল। কারুর সেটা জানার কথা ও না। যাই হোক হার টা কিন্তু খুঁজে পাওয়া যায় নি। ঘরেতে উপস্থিত সমস্ত আত্মীয় স্বজনদের ই খারাপ লাগছে ব্যাপারটা। সকলের ই একটা খারাপ অনুভূতি হচ্ছে।সেই আনন্দের পরিবেশ টা কেমন যেন বদলে গিয়েছিল মুহুর্তের মধ্যে। কেউ না নিয়ে ও কেমন যেন অপরাধী অপরাধী মুখ করে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। এর ই মধ্যে বাড়িতে যারা কাজ করছে তাদের ও সবাইকে ডেকে জিজ্ঞেস করা হলো।তারা ও সবাই মুখ নীচু করে অপরাধী র মতো দাঁড়িয়ে আছে। সবাই বলছে তারা নেয় নি।


যাই হোক হার টা কিন্তু শেষ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। সবাই যে যার বাড়িতে ফিরে এসেছে বিয়ে বাড়ি থেকে।এর কয়েকদিন পর হঠাৎই একদিন ইতির শাশুড়ির কাছে ফোন করে রিমি বলে যে, "মাসি তোমার বউমা কে বলো আমার হার টা যেন সে ফেরত দিয়ে দেয়।" ইতির শাশুড়ি বেচারি নিরীহ মানুষ , এধরণের কথাবার্তা শুনে রীতিমতো অবাক হয়ে গেল। কিছু ই বুঝতে পারছিল না যে আসলে ব্যাপারটা কি হয়েছে। তখন রিমি ওনাকে ওর বাড়িতে আসবার জন্য বলে।এটাও বলে যেন ইতি কে সঙ্গে নিয়ে না আসে।পরের ঘটনা খুবই বিস্ময়কর। রিমি বলে, সেদিন বিয়ে বাড়ি থেকে ফেরবার আগে ইতি নাকি কোনো নিকট আত্মীয় কে জিজ্ঞেস করেছিলো যে, ওদের প্রত্যেক ঘরে কি সিসি টিভি ক্যামেরা লাগানো আছে? আর স্পেশালি যে ঘর থেকে ওর হার টা চুরি হয়েছিল,সেই ঘরটির কথা নাকি বারবার জিজ্ঞেস করেছিলো।কথাটা শুনে ওই আত্মীয়া নাকি খুব অবাক হয়ে ইতি কে বলেছিল,"বৌদি শুধু শুধু ঘরের মধ্যে সিসি টিভি কেন লাগাতে যাবে কেউ।আর তুমি হঠাৎ এধরণের প্রশ্ন কেন করছো"।ইতি নাকি সেকথার কোনো উত্তর দেয়নি।



এরপর ইতি রা চলে আসার পর সে নাকি ঘরের বাকি সবাইকে কথাটা বলেছিলো।আর তাতেই সকলের এই ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে যে, ওই হার টা ইতি ই নিয়েছে।আর সে কারণেই আজ রিমি ওর মাসি কে ফোন করেছে। রিমি র বাড়িতে বিকালেই গিয়েছিল ওর মাসি। ওখানে যেতে রিমি ওর মাসি কে বলেছিল, কথাটা কতোটা সত্যি সেটাই জানতে হবে ওদের।আর তাই রিমি ওর মাসি কে বলেছিল ইতি কে সঙ্গে না নিয়েই আসতে। এর পরের ঘটনা আরো বিস্ময়কর। ইতির শাশুড়ি রিমি র সেই হার টা ইতির কাছে সত্যিই দেখতে পেয়েছিলো। সেটা ইতি অগোছালো ভাবে ফেলে রেখে দিয়েছিল ড্রেসিং টেবিলের এক কোণে।কিন্তু উনি এটা কিছুতেই বুঝতে পারছিলেন না যে, ইতির কাছে এতো গয়না থাকা সত্ত্বেও ইতি রিমির হার টা চুরি কেন করেছিলো। আর তার সঙ্গে এটাও বুঝতে পারছিলেন না উনি যে , ওনার সংসারে এতো প্রাচুর্য থাকা সত্ত্বেও ইতি এটা করলো কেন।যা কিছু আছে, সব ই তো ওর , একমাত্র ছেলের বউ হওয়ার সুবাদে।



যাই হোক ওই হার ইতির শাশুড়ি পরে গিয়ে রিমিকে ফেরত দিয়ে এসেছিল। কিন্তু এই ঘটনার পর ওরা কতোটা ছোট হয়ে গিয়েছিল আত্মীয় স্বজনদের কাছে, সেটা মনে হয় ইতি বুঝতে পারছিল না। এরকম আরো ঘটনা ঘটেছে পরে। যেমন ওরা হয়তো রেস্টুরেন্টে গেছে খেতে। ইতি সবার চোখের অলক্ষ্যে দুটো কাঁটা চামচ নিজের হ্যান্ড ব্যাগে ঢুকিয়ে দিল। কেউ দেখলেও কিছু বলতে পারছে না। আবার কখনও বা শাড়ি কিনতে গিয়ে একটা শাড়ি সবার চোখের আড়ালে ব্যাগে ভরে নিলো। দোকান থেকে বেরোবার সময় বিল পেমেন্ট করবার জায়গায় একবার কি অশান্তি সৃষ্টি হয়েছিল এটা নিয়ে। ওদের হাতে তিনটি শাড়ি ছিল । দোকানদার যখন বললো ,"ম্যাডাম আপনার ব্যাগে যে শাড়ি টা আছে, ওটাও আমাদের ই দোকানের। আপনি ঢুকিয়ে রেখেছেন ব্যাগে। প্লিজ বের করে বিল পেমেন্ট করুন।" ইতির হ্যাজব্যান্ড তো লজ্জায় মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে। ছিঃ ছিঃ কি লজ্জা। শেষে এই দিন দেখতে হলো ওকে। কোনো রকমে বিল পেমেন্ট করে, দোকান থেকে বেরিয়ে এলো। ইতি র এটা হুঁশ নেই যে, দোকানে সিসিটিভি ফুটেজ লাগানো আছে। ধরা তো ও পড়বেই। কিন্তু ওর সেসব দিকে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই।ও চুরি করবেই।ওর কারণে যে ওর নিজের লোকেরা কতো ছোট হয়ে যাচ্ছে, সেদিকে ওর কোনো মাথাব্যথা নেই। কখনো কোনো আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে একটা শো পিস উঠিয়ে নিয়ে এল, তো কখনও বা দোকানে গিয়ে কিছু না পেয়ে একটা নেলপলিশ। ক্রমাগত বেড়েই চলছিল ইতির এই মানসিকতা। এখন তো কোনো আত্মীয় স্বজনও ওদের নিজেদের বাড়িতে ডাকতে ভয় পায়, ইতির জন্য।



শেষে আর কোনো উপায় না দেখে, ইতির বাবা মাকে ডেকে পাঠানো হলো। ওনারা সব শুনে স্বীকার করলেন যে, বড়ো হবার পর থেকেই নাকি ইতির এই মানসিকতা। কারুর বাড়ি গেলে, বা দোকানে গেলে সে কিছু না কিছু চুরি করে আনবেই। তারপর আর তার সেই চুরি করে আনা জিনিসটা নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। সেটা ফেলে রেখে দেয় ঘরে। কিন্তু কেন যে সে এরকম করে তার কোনো উত্তর সে দিতে পারে না। অনেক বলা সত্ত্বেও ইতি র এই অভ্যাস পাল্টাতে পারেননি ওনারা। অবশেষে সবাই মিলে এই সিদ্ধান্তে আসা হলো যে ইতি কে সাইক্রিয়াটিস্ট এর কাছে নিয়ে যাবে। আসলে মানসিক স্বাস্থ্য বিজ্ঞানে এগুলো ইম্পালস কন্ট্রোল ডিসঅর্ডার এর অন্তর্ভুক্ত।বলা যেতে পারে , এগুলো করার জন্য ব্যক্তি নিজের মধ্যে এক অপ্রতিরোধ্য তাড়না অনুভব করে। ইতির যে চুরির সমস্যা , সেটা প্রথাগত চুরি না। তার সমস্যাটির পোশাকি নাম ক্লেপটোম্যানিয়া।এই সমস্যা যার থাকে সেই ব্যক্তি কোনো দোকান, হোটেল, রেস্তোরাঁ , এমনকি কারোর ঘর থেকেও জিনিস চুরি করে আনতে পারে। আর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, সে যেটা চুরি করে নিয়ে আসে তা ভবিষ্যতে তার কোনো কাজে লাগায় না, বা পয়সার জন্য সে তা বিক্রি ও করে না। সাধারণ চুরি র সঙ্গে এটাই পার্থক্য। এই আচরণ সে বারবার করতে থাকে। আর জিনিসটি নেবার আগে তার মধ্যে এক তীব্র উৎকণ্ঠা বা দুশ্চিন্তা তৈরি হয়। সফলভাবে জিনিসটি নেবার পর সে স্বস্তি বা আরাম অনুভব করে। কিন্তু যতক্ষন না সেটি তার কবজায় আসছে, তার মানসিক চাপ কমে না। হতে পারে জিনিসটি খুব ই কম দামের, আবার হতে পারে সেটা মহা মূল্যবান কিছু জিনিস। কিন্তু মূল কথা হচ্ছে উদ্দেশ্য। নিজের টেনশন কমানোর জন্য চুরি করা।



সমাজ ও আইন এই চুরির সমস্যাকে কিভাবে দেখবে, তা নিয়েও মতভেদ আছে। কোনো আইনে এটা রোগ হিসাবে বিবেচিত হলে শাস্তি কম দেওয়া হয়। আবার কোনো দেশের আইনে শাস্তি দেওয়ার সময় এটিকে রোগ হিসাবে বিবেচনায় নেওয়া হয় না।

চিকিৎসার মাধ্যমে এই সমস্যা কে অনেক টাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। সাইকোথেরাপি বিশেষ করে কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি ও কিছু কিছু ওষুধ সেবনের প্রয়োজন হতে পারে এক্ষেত্রে। তাই কারও যদি এ সমস্যা থাকে, আইনি ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ার আগে ই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ এটাও সত্যি কারুর মূল্যবান কিছু চুরি হলে, সে তো ছেড়ে দেবে না ।আর সর্বোপরি, সমাজের কাছে, নিজের আত্মীয় স্বজনের কাছে, নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের সম্মান ধূলোয় মিশিয়ে দেওয়া। ঠিক যেমনটি ঘটেছিল ইতির ক্ষেত্রে।


তাই এই সমস্যাকে অবহেলা না করে, এর সঠিক সময়ে চিকিৎসা করানো এবং বাড়ির লোকেদের এদের প্রতি একটু সহানুভূতিশীল হওয়া প্রয়োজন। যদিও এটা খুব সহজ না। কারণ সবাই তো আর জেনে বসে নেই যে সে তার রোগের তাড়নায় এই কাজ করেছে। তাই ইতির মতো এই ধরণের আচরণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অন্য সবার মনে খারাপ প্রভাব ই ফেলতে বাধ্য।


Rate this content
Log in

More bengali story from Sucharita Das

Similar bengali story from Classics