কীভাবে তৈরী হল পৃথিবী ?
কীভাবে তৈরী হল পৃথিবী ?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, দুই পৃথিবী মিলে তৈরি আমাদের এই পৃথিবী। নবীন পৃথিবী আর উন্নয়নশীল আরেক গ্রহ "থিয়ার" মধ্যে প্রচণ্ড ও মুখোমুখি সংঘর্ষে আমাদের এই আজকের পৃথিবীর জন্ম হয়েছিল। একই কারণে সৃষ্টি হয় পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদ। ‘সায়েন্স’ সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণা-বিষয়ক নিবন্ধে এ তথ্য প্রকাশিত হয়।
৪৪০ কোটি বছর আগে এই সংঘর্ষের ফলে দুটি গ্রহ পরস্পর গলে-মিশে গিয়েছিল। এই সংঘর্ষ-ঘটনার ১০ কোটি বছর পর আজকের পৃথিবীর রূপ লাভ করতে থাকে।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা অ্যাপোলো ১২, ১৫ ও ১৭ মিশন থেকে আনা চাঁদের পাথর ও পৃথিবী পৃষ্ঠে হাওয়াই ও অ্যারিজোনার আগ্নেয় শিলা নিয়ে পরীক্ষা চালান।
গবেষকদের দাবি, চাঁদের পাথর ও পৃথিবীর পাথরের মধ্যে অক্সিজেন আইসোটোপ প্রায় একই রকম।
গবেষণা নিবন্ধে গবেষক এডওয়ার্ড ইয়াং বলেন, ‘থিয়া পৃথিবী ও চাঁদের সঙ্গে মিশে বিক্ষিপ্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এ কারণে চাঁদ ও পৃথিবীর মধ্যে থিয়ার বিশেষ কোনো বৈশিষ্ট্য চোখে পড়ে না। যদি নবীন ওই গ্রহটি পৃথিবীর সঙ্গে সংঘর্ষে না জড়াত, তবে হয়তো আরেকটি গ্রহ তৈরি হতো।গবেষকদের দাবি, থিয়া নামের ভ্রুণ গ্রহটি ধীরে ধীরে বড় হচ্ছিল এবং যদি এই সংঘর্ষ না হত তবে তা ধীরে ধীরে গ্রহে পরিণত হত এবং তা মঙ্গল গ্রহের সমান হতো ।
পৃথিবীর সঙ্গে অন্য গ্রহের সংঘর্ষের ফলে চাঁদ সৃষ্টির তত্ত্বটা অনেকদিনের পুরনো। বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, পৃথিবীতে আঘাত হানা সেই গ্রহ থেকেই চাঁদ তৈরি হয়েছে। সেই পুরনো ধারণাই বদলে দিলেন দুই মার্কিন গবেষক। তাদের দাবি, ভিন গ্রহটির উপাদান দিয়ে নয়, সংর্ঘষের পর পৃথিবীর ভেঙে যাওয়া অংশ দিয়েই তৈরি হয়েছে চাঁদ।
আজ থেকে প্রায় ৪৪০ কোটি বছর আগে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়েছিল দ্রুত বেগে আসা সৌর মণ্ডলেরই একটি ছোট্ট গ্রহ থিয়া। আর সেই মহাজাগতিক `মিলনের` ফলেই সৃষ্টি হয়েছিল চাঁদ। গত শতকের সাতের দশক থেকেই বিজ্ঞানীদের কাছে এই ধারণা বদ্ধমূল হয়েছিল। কিন্তু তাঁদের বেশিরভাগই মনে করতেন, চাঁদ তৈরির মূল উপাদান এসেছিল আছড়ে পড়া গ্রহ থিয়া থেকেই।
এবারে সেই পুরনো ধারণাটা একটু বদলে নিতে বললেন দুই মার্কিন বিজ্ঞানী। `সেটি`-র গবেষক মাতিয়া কুক এবং হার্ভার্ডের সারা স্টুয়ার্ট। বিখ্যাত সায়েন্স পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধে তাদের দাবি,চাঁদ সৃষ্টি হয়েছে আছড়ে পড়া গ্রহ থিয়া থেকে নয়, চাঁদ তৈরি হয়েছে থিয়ার সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে আমাদের পৃথিবী থেকে ছিটকে যাওয়া উপাদান দিয়েই। আর সেই কারণেই চাঁদ এবং পৃথিবীর গঠন ও রসায়নের মধ্যে এত মিল। নিজেদের তত্ত্বের প্রমাণ হিসেবে দুই বিজ্ঞানী তুলে ধরেছেন অ্যাপোলো অভিযানে থেকে পাওয়া চাঁদের রাসায়নিক উপাদান সংক্রান্ত তথ্য।
কুক এবং স্টুয়ার্টের মতে, চাঁদ যখন সৃষ্টি হয়, তখন পৃথিবী নিজের অক্ষে ঘুরত অনেক দ্রুত। এক একটা দিন হতো মাত্র দুই থেকে তিন ঘণ্টায়। পৃথিবীর এই অতি দ্রুত ঘূর্ণনের ফলেই থিয়ার সঙ্গে সংঘর্ষের পর পর্যাপ্ত পরিমাণ উপাদান পৃথিবী থেকে ছিটকে চাঁদ সৃষ্টি হয়েছে। পরে সূর্যকে ঘিরে পৃথিবীর কক্ষপথ ও পৃথিবীকে ঘিরে চাঁদের কক্ষপথের মিথষ্ক্রিয়ায় পৃথিবী বর্তমান আহ্নিক গতি পেয়েছে, যেখানে ২৪ ঘণ্টায় এক দিন হয়।