খেলাঘর
খেলাঘর


টুকি খেলতে খেলতে বুঝতেই পারেনি কখন সময় গোধূলি পেরিয়ে সন্ধ্যা নেমেছে । পিছন ফিরে দেখে তার সাথীরাও কেউ নেই । বছর দশের টুকি কোনোদিন এতদূর আসে না । আজ লাফাতে লাফাতে , ছুটতে ছুটতে একবারও কেউ কি ডেকে তাকে সাবধান করেনি ? মনে করতে পারলো না টুকি ।
সন্ধ্যের রাস্তায় পথ চিনে বাড়ি যাওয়া টুকির সাধ্য নয় । তবু সে পিছনপানে হেঁটে চললো । রাস্তার কিছুই ঠাউরাতে পারছে না ।
হঠাৎ কিছুদূর যাওয়ার পর আলো ঝলমলে কিছু একটা চোখে পড়লো টুকির । গ্রামের এই প্রান্তে কোনো লোকজন থাকে কি , টুকি তা জানে না । কাছাকাছি আসতে দেখে একটা বাঁশের একটা বড় ঘর । ফাঁক ফোকড় দিয়ে বেরোচ্ছে হলুদ , নীল , সবুজ আলো । বাড়িটার চারপাশে পাক দিতে দিতে প্রবেশের সামনে এলো ।
" কুকুকুকিকিকি ... এএএএদিদিদিদিকেকেকেকে... এএএএএএসেসেসেসেসেছোছোছোছোছো যেযেযে ? "
গেটের সামনে এক অদ্ভুত চেহারার লোক দাঁড়িয়ে । মাথাটা চৌকা , চোখগুলো ত্রিভুজের আকারে , মাথায় দুটো অ্যান্টেনা , শরীর আধ খাওয়া চাঁদের মতো ঢেউ খেলানো ।
" তুমি কে ? " জিজ্ঞাসা করলো টুকি ।
আবার আটকে আটকে ঠিক তোতলানোর মত উত্তর এলো , " আআমমরারারারা টোচি গ্রহের প্রাণী । গতমাসে নেমেছিলাম ... এএএএই কথা তো আর আটকাচ্ছে না ! আমাদের কথা বলার ভঙ্গি তো ওরকম আটকানো মতন কিন্তু ... আচ্ছা তুমি এসো আমার সাথে । "
টুকি ঘরে গিয়ে দেখলো ওরকম আরও কয়েকটা লোক ঘরে বসে । সংখ্যায় ৬ জন । ওরাও টুকির সাথে কথা বলতে বলতে নিজেদের ভঙ্গি ছেড়ে পরিষ্কার কথা বলতে লাগলো ।
টুকিকে প্রথম লোকটি বললো , " তুমি খেলতে গিয়ে হারিয়ে গেছো তো ? চিন্তা কোরো না , এখানে আরও আকর্ষণীয় খেলা আছে । তারপর তোমার সাথে কিছু কথা বলবো । খুব জরুরী কিছু কথা । "
টুকি ততক্ষণে ওই ঘরের মধ্যে রাখা নানারকম আলো জ্বলা খেলনা নিয়ে খেলতে শুরু করলো । সে বুঝলো বাইরের আলোগুলো ওইগুলো থেকেই আসছিলো । ওই লোকটি টুকিকে বুঝিয়ে দিলো কোনটা কী ? একটি দিয়ে মহাকাশে বিচরণ করে সৌরজগত এমনকি তার বাইরেও ভ্রমণ করা যায় । একটিতে টুকি যা কথা বলবে তাকে মিউজিক দিয়ে গান তৈরী করে দেবে । একটি দিয়ে টুকির পছন্দের খাবার ও পোশাকের অনুভূতি হবে যদি গলার কাছে সেটি ঝুলিয়ে রাখা যায় । না খেয়েও টুকি সমস্ত খাবারের স্বাদ ও সব পোশাকের আনন্দ পেলো না পরেও ।
সবশেষে ওই লোকটি বললো , " এই পাথরটা হাতে নাও । আমরা তোমার জন্যই পৃথিবীতে এসেছিলাম । তোমার বাবা ভারতের স্পেস রিসার্চে কাজ করেন না ? "
ছোট্ট টুকি এত কিছু জানে না , বাবা শুধু ব্যাঙ্গালোরে থাকে এই জানে । তার মুখ দেখে বুঝলো সে জানে না তাই ওই লোকটি ফের বললো , " আচ্ছা শোনো ওই গ্রহে কার্বন-ডাই অক্সাইড একদম কমে গেছে আর অক্সিজেন হয়ে গেছে ওর ১০০০০ গুণ । এখানকার বিজ্ঞানীদের সাথে আমাদের ডিল হয়েছিলো প্রতিবছর কিছু কিছু লোক টোচিতে পাড়ি দেবে আর টোচি থেকে কিছু কিছু করে লোক এখানে চলে আসবে । আমাদের বাঁচার জন্য ক্রমে পৃথিবীর পরিবেশ আদর্শ হয়ে উঠছে । এদিকে আমরা প্রতিনিধি পাঠিয়ে বুঝেছি শুধু কার্বন ডাই অক্সাইড নয় আরও মৌলের আধিকত্ব দরকার কিন্তু পৃথিবীতে সেগুলো বিরল । তোমাদের থেকে তাই দূষক জ্বালানি ওই গ্রহে কিছু কিছু নিয়ে যাবো আর আমাদের অক্সিজেন শোষক পাথর একে একে দিয়ে যাবো । আমাদের জানা ছিলো কোনো নিষ্পাপ পৃথিবীর মানুষের সঙ্গে দেখা হলে আমাদের ভাষা ও হাবভাব বদলে যাবে । তুমি কাল সকালে গ্রামে গিয়ে এই পাথর পুঁতে দেবে । ভবিষ্যতে তুমি বড় হলে গ্রামের বাইরে ফের দেখা হবে তখন আরও পাথর দেবো । যাও ঘুমিয়ে পড়ো । "
মাথায় অদ্ভুত ম্যাসেজ করে টুকিকে ঘুম পাড়ালো ওরা । শান্তির ঘুম ভাঙ্গলো যখন তখন টুকি মায়ের কোলে ।
" চোখ খুলেছে টুকি , চোখ খুলেছে । "
তখনও শক্ত করে হাতে একটা পাথর ধরে টুকি । সকালে টুকিকে জেলের দল উদ্ধার করেছে নদীর ধার থেকে । টুকি গত রাত্রে কোন খেলাঘরে সময় কাটিয়ে এসেছে কে জানে ।