SHUBHAMOY MONDAL

Classics

4  

SHUBHAMOY MONDAL

Classics

কাপালিকের কবলে - ৩

কাপালিকের কবলে - ৩

3 mins
437


কাপালিকের কবলে - ৩

শুভময় মণ্ডল 


আমার বয়স তখন বারো কি তেরো - আমার বাবা হঠাৎ মারা গেলেন, আমাদের ঐ বিরাট বাড়িটায় আমার অসুস্থ মা আর আমায় একা রেখে।


মায়ের ঠিক কি রোগ হয়েছিল তা বোঝার মত বয়স তখন আমার হয়নি। তবে শুধু এই টুকু জেনেছিলাম - কি ভাবে যেন মায়ের শরীরে সাপের বিষ ঢুকছে! আর মাও রোজ একটু একটু করে পা বাড়াচ্ছে মৃত্যুর পথে! 


মায়ের চিকিৎসা করতেন তখন আমাদের গ্রামেরই একজন বদ্যি - নাগমিত্র ওঝা। তিনি রোজ এসে মাকে নানারকম সব জড়ি বুটি খাইয়ে যেতেন, কিন্তু মায়ের শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতিই হচ্ছিলো না।


আমার নিজের মামা বাইরে থাকতেন। তিনি বাবার মৃত্যুর খবরটা শুনে, তার কয়েক দিন পরই ফিরলেন, তার পর আমাদের বাড়িতেও এলেন। মায়ের অসুস্থতা আর তার চিকিৎসার খবরাখবরও নিলেন। তারপর ক'দিন ঘর বন্ধ করে বসে কি সব ভাবলেন।


অবশেষে একদিন বেরিয়ে এসে আমাকে বললেন - ভয়ংকর দুঃসময় আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। অবশ্য, তাকে বাঁধন দেবার ক্ষমতা তাঁরও আছে।


আমাকে পরদিন ঠাকুরদালানে ডেকে, মামা বললেন - সাপে নেউলে যুদ্ধ কেমন হয় কখনও দেখেছিস? আমি বললাম - নদীর মোহনায়, ঐ জঙ্গলে সাপে নেউলের মারপিট কত দেখেছি।


মামা বললেন - তোর মার শরীরে যে পরিমাণ বিষ ঢুকেছে, তা একটা সাপের পুরো বিষের প্রায় সমান। তাই তাকে বাঁচাতে হলে, সাপের বিষ নামানোর মতই চিকিৎসা করতে হবে।


শোন, তোকে যা বলি মন দিয়ে। সাপে নেউলে যুদ্ধ হলে, কে জেতে? নেউল, তাই তো? তো সাপের বিষ কি তার শরীরে একটুও যায় না? সাপের কোন ছোবলই কি তার গায়ে পড়ে না - পড়ে তো? তাহলে, সাপের বিষে নেউল কেন মরে না, জানিস? 


বললাম - না, তা তো জানিনা, কেন? 

মামা বললেন - সাপটাকে মেরে ফেলার পর দেখবি, নেউল দৌড়ে যায় বনে। কোন একটা বিশেষ গাছের শিকড়ে গিয়ে কামড়ায় বারবার, যেন মুখ ঘষে আরকি! 


আসলে, ঐ শিকড়ের রসে আছে মহৌষধ, যা তার রক্তে মিশে গিয়ে ঐ বিষক্রিয়া প্রতিরোধের জন্য দরকারী অ্যান্টিবডী বা অ্যান্টিভেনিন তৈরী করতে সাহায্য করে। ওটাই হল সাপের বিষ শরীর থেকে নামানোর আসল ওষুধ।


তুই যত তাড়াতাড়ি পারিস, ঐ শিকড়টা খুঁজে নিয়ে আয়। আর খুব সাবধানে থাকিস, মিথ্যার আশ্রয় কখনও কোনো কাজে নিস না। বিপদ আছে তোর, তাকে কেউ আটকাতে পারবে না। কিন্তু তুই নিজে সব সময় সত্যি কথা বলবি, সৎ পথে চলবি। বড়দের কাছে ভুল স্বীকার করতে হয়, এটা মনে রাখবি। তাহলেই মুক্তির পথ ঠিক খুঁজে পাবি। নে, এবার বেরিয়ে পর।


আমি দুপুরের খাওয়া সেরেই, দৌড় দিলাম মোহনার ধারে ঐ জঙ্গলে। একটা জাম গাছে চড়ে, অপেক্ষা করতে লাগলাম - কখন সাপে নেউলে ঝগড়া লাগবে, দেখবো বলে।


কপাল মন্দ হলে যা হয় - দুপুর গড়ালো, বিকেল গড়ালো, কিন্তু না সাপ না নেউলের দেখা পাই। ভাবছিলাম নেমে তবে বাড়িই চলে যাই আজ। আর একটু পরেই সন্ধ্যে নামলে, অন্ধকারে তো আর কিছুই দেখতে পাবো না, বরং কাল আবার আসবো।


নামতেই যাচ্ছিলাম, দেখি - দূরে নদীর চড়ের ফাঁকা মাঠে, একটা জাত গোখরো আর এত্ত বড় একটা বেজী, মানে নেউলের লড়াই চলছে।


আমি বনের ধারে দাঁড়িয়ে, তাদের যুদ্ধ শেষ হবার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। তাদের যুদ্ধ শেষ হলো, নেউলও সাপটাকে মেরেই দৌড়ালো বনের দিকে। আমিও তার পিছু পিছু দৌড় লাগালাম।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics