Sucharita Das

Classics Inspirational

3  

Sucharita Das

Classics Inspirational

ঝিমলির ঝকমারি

ঝিমলির ঝকমারি

3 mins
406


ডিয়ার ডায়েরি,


আমার আজকের গল্পের নায়িকা ঝিমলি।হয়তো আমাদের অনেকেরই গল্প এটা। কেমন কাটছে লক ডাউনের দিনগুলো ঝিমলির?তাই নিয়েই আজকে আমার লেখা-------



"ঝিমলি আজ তোমার সারাদিন ছুটি রান্নাঘর থেকে।আজ সকাল থেকে রাত অবধি কিচেন সামলাবো আমি। ব্রেকফাস্ট থেকে ডিনার, সব দায়িত্ব আমার। তুমি আজ রেস্ট নেবে।" রনি বেশ উৎসাহের সঙ্গে ঝিমলি কে বললো কথাগুলো।

ঝিমলি প্রথমটা বোঝাতে চেষ্টা করলো রনিকে । কারণ সে জানে যে মানুষ এক গ্লাস জল নিজে নিয়ে খায়না, সে রান্না করা মানে ঝিমলির যে কি ভীষণ ঝকমারি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু নাছোড়বান্দা রনি র কাছে শেষ পর্যন্ত ঝিমলি কে হার মানতে ই হলো। পরের দিন সকালে ব্রেকফাস্টে ঝিমলি নিজের ঝকমারি কম করার জন্য বললো রনিকে,"এই মন্দার বাজারে আজ বরং আমরা চিঁড়ে আর দই খেয়ে নেব ব্রেকফাস্টে।"কিন্তু রনি বললো সে নাকি লুচি, আলুর দম বানাবে। ঝিমলির আর বুঝতে বাকি রইলো না যে কি হবে আজ। শেষ‌ পর্যন্ত হয়েছিল লুচি, আলুর দম । তবে ঝিমলি না রান্নাঘরে ঢুকলে সেটা কতদূর কি হতো ,সে ব্যাপারে রীতিমতো সন্দেহ ছিল। পুরো ক্রেডিট টা অবশ্য রনি নিজেকে ই দিয়েছিল। শুধুমাত্র তেল থেকে লুচি গুলো ছেঁকে তুলেছিলো সে। ঝিমলি ও খানিকটা প্রশংসা করে দিয়েছিল কর্তা র। আসলে কখনও কখনও করতে হয় এটা। নইলে দাম্পত্যে মধুরতা আসবে কি করে।




পরের পর্ব লাঞ্চ। সেখানেও রনি নাছোড়বান্দা। সে নাকি সব বানাবে আজ। ঝিমলি ভাতটা চাপিয়ে বললো , তুমি শুধু নামিয়ে দিও, তাহলেই হবে। ভাতের যত ঝামেলা তো নামাবার সময়ই।কে জানে রনি কি ভাবলো। বোধহয় ব্রেকফাস্টের ঝকমারির কথাটা মনে পড়ে গিয়েছিল, তাই ঘাড় নেড়ে সম্মতি দিলো । কিন্তু ভাত নামিয়ে কিছুতেই ম্যানেজ করতে পারছেনা ব্যাপারটা। শেষপর্যন্ত ঝিমলি এসে এটাও সামলে দিলো। কিন্তু ভাতের সঙ্গে কি বানাবে যাতে ঝামেলা কম হবে সেটাই তো বুঝতে পারছিল না রনি। এটারও সমাধান করলো সেই ঝিমলি ই। বললো এই মন্দার বাজারে আজ বরং আমরা ডিমের ঝোল করি। ঝামেলা ও কম তাতে। আলু ,ডিম সেদ্ধ করতে বসিয়ে দিলো ঝিমলি। তারপর কোনো ক্রমে সেটা দিয়ে ঝোল ঝোল তরকারি বানালো রনি। অবশ্যই ঝিমলির সহযোগিতায়। এক তরকারি আর ভাত বানিয়ে ,খেতে খেতে চারটে বেজে গেল। 




এরপর আর ডিনারের রিস্ক টা নিতে চায়নি রনি। আর তাই ঝিমলি যখন বললো , "অল্প মাংস আছে, ওটাতেই রাত্রি বেলা দুজনের হয়ে যাবে, তোমাকে আর ডিনারের ঝামেলা নিতে হবে না।সকাল থেকে তো অনেক করলে"। রনি আর কথা বাড়ায়নি।ঝিমলি অবশ্য কথাগুলো বলতে বলতে মিটমিট করে হাসছিল। খেতে বসে সে রাত্রিতে রনি ঝিমলি কে কটা কথা বলেছিল অবশ্য। রনি বলেছিল, "সত্যি ঝিমলি এই লক ডাউনের মতো পরিস্থিতি না এলে আমি তো এটা বুঝতেই পারতাম না কখনও যে , তিন,চার বেলা রান্না করাতেও এত ঝকমারি আছে। সারা সপ্তাহ কাজ করে, ছুটির দিনটা তো আরাম করেই কেটে যেত আমার। কখনও তোমাকে রান্নায় সাহায্য করবার কথা তো মাথাতেও আসেনি। লক ডাউনের মতো পরিস্থিতি শুধু আমাকেই না, সব ছেলেদেরই হয়তো এই কদিনে বুঝিয়ে দিয়েছে যে ঘরের রান্না বা কাজ কোনো টাই করে নেওয়া খুব সহজ না। আর তাই ,ঘরেতে সারাদিন কি করো, শুধু তো আরাম করো। এইধরণের কথা বলবার আগে সব ছেলেই হয়তো এবার এই লক ডাউনের অভিজ্ঞতার কথা দু বার অবশ্যই মনে করবে।"




ঝিমলি মনে মনে ভাবলো ,যাক বাবা এতদিনে আমাদের গৃহবধূদের এই বদনাম টা তো ঘুচলো যে আমরা ঘরে তে শুধু আরাম করে দিন কাটাই না। অনেক ঝকমারি থাকে গৃহবধূদের এই আরামের জীবনেও। সত্যি জীবনে কখনো কখনো কিছু খারাপ পরিস্থিতি ও আমাদের বেশ কিছু ভালো শিক্ষা দিয়ে যায় তাহলে।




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics