হ্যামিলটন নাকি
হ্যামিলটন নাকি
হ্যামিলটন নাকি
✍️পুলক দাশগুপ্ত
উদ্বুদ্ধ না হলে কোনো লেখা আমার হাত থেকে বেরোতে চায় না।
মানুষ তার সৌন্দর্যে,মেধায়,বাক চাতুরতায়, উপস্থিতিতে অন্যকে উদ্বুদ্ধ করে। প্রেমে ফেলে। মুগ্ধ করে।
কিছু মানুষের বেড়ে ওঠা গরীব ও বিশেষ কোনো শিক্ষা ছাড়াই, যাদের আমরা অবহেলা করি তাদের অনাড়ম্বর জীবনের জন্য, গেঁয়ো,খ্যাত কতোই না লেবেল দিয়ে ভূষিত করি।
কিন্তু পরবর্তীতে, তাদের মেধার ঝলকানি শানিত তরবারীর চাকচিক্যের থেকে কোনো অংশেই কম নয়।
এখানে অনেক ডাক্তার বাবুরা আছেন। যারা হেমিলটন নাকীর নামের সাথে ভালো ভাবেই পরিচিত।
হেমিলটন নাকি জন্মগ্রহণ করেছিলেন পূর্ব কেপের ট্রান্সকি অঞ্চলের একটি গ্রামে কৃষাঙ্গ ধার্মিক কিন্তু দরিদ্র পিতামাতার কাছে ।
তিনি চোদ্দ বছর বয়স পর্যন্ত পড়াশুনা চালিয়ে যান, প্রাথমিক শিক্ষার পর অর্থাভাবে পড়াশোনা চালাতে পারেন নি।
1940 সালের শুরুতে তিনি কেপ টাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে মালী হিসাবে কাজে যোগ দেন। মুখতঃ তিনি মেশিনে লনের ঘাস কাটার কাজ দিয়ে জীবন শুরু করেন।
1954 সালে, ইউনিভার্সিটির সার্জিক্যাল ফ্যাকাল্টির রবার্ট গোয়েটজ, নাকিকে বাগিচার কাজ থেকে সরিয়ে ল্যাবরেটরির প্রাণীদের সাহায্য করতে বলেন।
নাকির দায়িত্ব ছিল খাঁচা গুলো পরিষ্কার করা থেকে এনেস্থেশিয়া দেওয়া পর্যন্ত । নাকির কাজে গোয়েটজ খুব খুশি ছিলেন।
গোয়েটজের অধীনে নাকির বেশিরভাগ কাজ কুকুরকে এনেসথেসিয়া প্রদানের সাথে জড়িত ছিল, কিন্তু নাকি একটি জিরাফের উপর কাজ করতেও সাহায্য করেছিল "জিরাফ কেন পান করার সময় বাঁকছে না তা নির্ধারণ করতে জগুলার ভেনাস ভালভগুলি ছিন্ন করে।"
গোয়েটজের কাজ শেষ করার বেশ কয়েক বছর পর, নাকি ডাক্তার ক্রিশ্চিয়ান বার্নার্ডের পরীক্ষাগারে একজন সহকারী হিসেবে কাজে নিযুক্ত হন। বার্নার্ড মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ওপেন-হার্ট সার্জারি কৌশল অধ্যয়ন করেছিলেন এবং সেই শিক্ষা ও কৌশলগুলি তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় নিয়ে এসেছিলেন। নাকি প্রথমে বার্নার্ডের জন্য প্রাণীদের অ্যানেস্থেশিয়া করেছিলেন, তার অসাধারণ দক্ষতার কারণে তিনি ল্যাবরেটরির প্রধান অস্ত্রোপচার সহকারী নিযুক্ত হন। তার মেধা ও অভিজ্ঞতার করনে তিনি একজন উজ্জ্বল সার্জন হয়ে উঠলেন।
হ্যামিল্টন নাকি, এমন একজন স্ব-শিক্ষিত সার্জন হয়েছিলেন যাকে ডাঃ ক্রিশ্চিয়ান এন. বার্নার্ড 1967 সালে বিশ্বের প্রথম মানব হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনে সহায়তা করার জন্য বেছে নিয়েছিলেন।
ডাঃ ক্রিশ্চিয়ান এন.বার্নার্ড চাইতেন হেমিলটন নকি ট্রান্সপ্লান্ট দলে থাকুন,নাকি ছিলেন কালো, সেই কারনে গ্রোট শুউর হাসপাতালের কাছ থেকে অনুমতি চেয়েছিলেন এবং হাসপাতালের নিয়ম এবং বর্ণবাদী আইনের কারণে সেই অনুমতি গোপনে দেওয়া হয়েছিল।
বর্ণবাদের অধীনে, কালো স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীরা সাদা রোগীদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে না। 3 ডিসেম্বর, 1967-এ, মৃত ডেনিস ডারভালের হৃৎপিণ্ড, যিনি সাদা ছিলেন, লুই ওয়াশকানস্কিতে প্রতিস্থাপনের জন্য বার্নার্ড অপারেশাণ করেছিলেন।
হ্যামিল্টন নাকির অবদান তিন দশক ধরে গোপনে চেপে রাখা হয়, বর্ণবাদ-যুগের কারণেই। তিনি একজন কালো মানুষ ছিলেন।
তিনি এমন একজন মানুষ ছিলেন ৫০ বছরের কর্মজীবনে কখনো বেতন বৃদ্ধির বা প্রমোশনের দাবী করেন নি। যখন তখন ডাক পড়তো তার, কোনদিন বিরক্ত হন নি। তার কাজের প্রতি টান, ভালোবাসা নিষ্ঠা আজো প্রশংসনীয়, অনেক তরুনকে অনুপ্রেরনার যোগান দেয়।
২৯ মে কেপটাউনের কাছে লাঙ্গায় হ্যামিল্টন নাকি তার বাড়িতে মারা যান। তার বয়স ৭৮ বলে ধারণা করা হয়।
বর্ণবাদের শাশন সরে একসময় গনতন্ত্রের জয় হয় সেই দেশটিতে, হ্যামিলটন নাকির অবদান চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে মানুষ সন্মানের সাথে করে।
🙏