STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Thriller

4  

Nityananda Banerjee

Thriller

গোয়েন্দা ( ধারাবাহিক)

গোয়েন্দা ( ধারাবাহিক)

4 mins
400

পর্ব তেইশ


বিশ্বময়ী দেবীরাও তারাপীঠে এসে গিয়েছেন । মন্দিরের সন্নিকটে একটি লজ বুকিং করে ওঁরা তিনজন স্নান সেরে পূজো দিতে গেছেন । পড়লেন পাণ্ডাদের খপ্পরে । এই মন্দিরে বিনে পয়সায় মাতৃদর্শণের যেমন ব্যবস্থা রয়েছে তেমনই অর্থের বিনিময়ে মাকে দেখার এবং পূজো দেবার সুবন্দোবস্ত রয়েছে। 

প্রসাদ লাভের ক্ষেত্রেও অনুরূপ ব্যবস্থা রয়েছে। বিনি পয়সার লাইন , বলাই বাহুল্য, অতিশয় দীর্ঘ । তবু সেখানে আট থেকে আশির লম্বা লাইন । বিশ্বময়ী দেবীর পক্ষে অতটা সময় দাঁড়িয়ে থাকা অসম্ভব। সুতরাং তিনি ঠিক করলেন পাণ্ডাকে কিছু টাকা দিয়ে ভিন্নপথে মন্দিরে প্রবেশ করবেন ।

পাণ্ডা ঠাকুর সুযোগ বুঝে কপচাতে লাগলেন - তিন রকমের ব্যবস্থা আছে। পাঁচশো দিলে শুধু পূজো দেওয়া যাবে এবং ভীড় ঠেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে । হাজার দিলে একটু সহজ হবে। আর দু'হাজার দিলে পূজো এবং মায়ের ভোগ উভয়ই দেওয়া হবে। 

বিশ্বময়ী দেবী বললেন - ঠাকুর মশাই দু'হাজারই দেব। পূজো দেব আর মায়ের ভোগ নেব না - তা কি হয়‌!

পাণ্ডা বললেন - ক'জন আছেন আপনারা ?

- তিন জন বাবা।

- ছ' হাজার দিন। আর একটু জলদি করুন নইলে এখনই ভীড় জমে যাবে ।

বিশ্বময়ী দেবী তিনটে দু'হাজারের নোট ওনার হাতে দিলেন । পাণ্ডা বললেন - আসুন আমার সঙ্গে ।

ওঁরা প্রথমে একটা স্টলে হাত পা ধুয়ে, পূজোর ডালা নিয়ে পাণ্ডার কথামত পশ্চাদ্দেশের দরজা সংলগ্ন বাঁশ দিয়ে ঘেরা লম্বা সরু লনে এসে দাঁড়ালেন। আধ ঘন্টার মধ্যেই মন্দিরে মোটামুটি ভীড় এড়িয়ে প্রবেশ করলেন । পূজোর ডালা পুরোহিতের হাতে দিতেই পুরোহিত বললেন মায়ের পা ছুঁয়ে প্রণাম করলে পাঁচশো করে লাগবে।

বিশ্বময়ী দেবী কিছু বলতে যাচ্ছিলেন। পুরোহিত বলে উঠলেন - ওটা অন্যের । এখানে পায়ে হাত দিলে আলাদাভাবে দিতে হবে । নইলে কপালে হাত ঠেকিয়ে প্রণাম করে বেরিয়ে যান । জলদি করুন । 

- বেশ বেশ বাবা। এই নাও আরও পনেরশ' । এতদূর এসে মায়ের পায়ে মাথা না ঠেকালে পাপ হবে 

অদ্ভুত অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে একপ্রকার ঠেলাঠেলিতে বেরিয়ে এলেন । স্টলে এসে জুতো নিয়ে বেরোতে যাবেন দোকানী বলল - ঠিক বেলা দুটোয় এসে মায়ের প্রসাদ নিয়ে যাবেন । 

তখন প্রায় দেড়টা বাজে। আধঘন্টা মন্দির চত্বর, বামদেবের সমাধিমন্দিরে প্রণামী দিয়ে মহাশ্মশানের দিকে যাত্রা করলেন । 

বিশ্বময়ী দেবী অত্যন্ত পুলকিত হৃদয়ে চলেছেন । শুভশ্রীকে বললেন ১৯৬৮ সালে যখন প্রথমবার আসি ; জানিস শুভো, এই শ্মশান ছিল জঙ্গলাকীর্ণ। দুপুরের রোদও এখানে ঢুকতে পারত না । আর এখন দেখছি জঙ্গল নেই বললেই চলে । সবচেয়ে বড় ব্যাপার কি জানিস ?

- কি ঠাম্মা ?

- এই শ্মশানে প্রতিদিন অন্ততপক্ষে একটা মৃতদেহ পোড়ানো হয়ই। শুনেছি মড়া পোড়ানো না হলে মায়ের ভোগ হয় না। 

শুভশ্রী বিস্মিত হয়ে বলল - তাই নাকি ? 

- হাঁ রে, দেখছিস না ছাই ভস্মের পাহাড় জমে আছে ! তখন এই জায়গাটা খুব নীচু ছিল । শ্মশান থেকে দ্বারকা নদীটি দেখতে পাওয়া যেত। এখন প্রবাহ কিছুটা দূরে চলে গিয়েছে।

আমরা মানে উনি আর আমি এই দ্বারকা নদীতে স্নান করে পূজো দিয়েছি । এখন নদীতো প্রায় মরেই গেছে। এটি উত্তরবাহিনী নদী, গঙ্গাসম অন্ত:সলিলা। অতি পবিত্র এই নদী। এখন পাড় বরাবর শুধু মানুষের বিষ্ঠায় পূর্ণ । 

শুভশ্রী নাকে চাপা দিয়ে বলল - ছি: ।

- ছি করতে নেই রে মেয়ে । এ অতি পবিত্র স্থান । জানিস তো, সাধক বামক্ষ্যাপা একবার এক ভক্তকে নাকি হেগে দিয়ে বলেছিলেন - খা দিকিনি, দেখি তোর কেমন ভক্তি '!

শুভশ্রীর যেন বিস্ময়ের সীমা নেই । চতুর্দিক দেখতে দেখতে তাঁরা শ্মশানের শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছলেন। কাকতালীয় হোক বা না হোক; সেই জটাজুটধারী শীর্ণকায় মহাযোগীর সম্মুখে এসে প্রণাম করলেন ।

সন্ন্যাসী হাত তুলে আশীর্বাদ করলেন - মঙ্গল হোক । শুভশ্রীকে কাছে ডাকলেন ।

ভয় পেয়ে শুভশ্রী কয়েক কদম পিছিয়ে যেতেই - আয় আয়। তোদের অপেক্ষায় বসে আছি। আয় কোন ময় নেই।

বিশ্বময়ী দেবী অবাক বিস্ময়ে সন্ন্যাসীর প্রতি বললেন - আমাদের জন্য বসে আছেন মানে ! কিছু বুঝলাম না । 

সন্ন্যাসী বললেন - এই মেয়েটি সর্ব সুলক্ষণা । ললাটে তার চক্রবর্তী রেখা দেখতে পাচ্ছি । এই মেয়ে রাজরানী না হয়ে যায় না ।

বিশ্বময়ী দেবী হতবাক । তবে কি সন্ন্যাসী তাঁর মনোবাঞ্ছা ধরে ফেলেছেন !

সাহস এনে নিবেদন করলেন - বাবা ! আপনি কি করে জানলেন ?

- ওরে মা ! তুই যে কেন এসেছিস তাও জানি। শুধু পূজো দিতে তুই আসিসনি মা।

বিশ্বময়ী বাবার পদতলে মাথা ঠেকিয়ে বললেন - বাবা! শুনেছি আমার একমাত্র নাতি নাকি এই তারাপীঠেই কোথাও আছে। দীর্ঘদিন বাড়ি আসেনি । বড় চিন্তায় আছি বাবা।

বিশ্বময়ী দেবী যেন হাতে স্বর্গ পেলেন । সন্ন্যাসী বললেন - চিন্তা তো আমারও হচ্ছে গো মা । তোর নাতি যে এক দুষ্টচক্রের কবলে পড়েছে। 

- বাবা ! দয়া করুন ! কৃপা করে নাতিটাকে বাঁচান।

- আমি কে মা? সব তাঁর ইচ্ছে। মাকে ডাক মন দিয়ে। সব বিপদ কেটে যাবে ।

( চলবে )


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Thriller