STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Thriller

4  

Nityananda Banerjee

Thriller

গোয়েন্দা ( ধারাবাহিক )

গোয়েন্দা ( ধারাবাহিক )

4 mins
416

পর্ব তেরো


ফার্স্ট আওয়ারেই রায় ঘোষণা হবে । কোর্টরুমে তিল ধারণের জায়গা নেই । বাইরে কিছু পুলিশ রয়েছে। ট্রাস্টিবোর্ডের পাঁচ জন সদস্য হাসি হাসি মুখে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা চালাচ্ছেন । তপনকিরণ চৌধুরী এবং তাঁর সহধর্মিণীও এসে গেছেন। বুকময় দুরুদুরু শব্দ । পিন ড্রপ সাইলেন্স থাকলে সে শব্দ পূজোর ঢাক বাজার মত মনে হত। তাঁরা তাঁদের উকিলের সঙ্গে শলা-পরামর্শ করছেন । সূর্য্যকিরণ বিশ্বময়ীদেবীর হাত ধরে ধীর পদে আদালত চত্বরে প্রবেশ করল । বিচারক তখনও আসেন নি। শেষ বেঞ্চে কোনমতে একটু বসার জায়গা জোগাড় করে সূর্য্যকিরণ বাইরে বেরিয়ে গেল । ঠাকুমাকে বলে গেল - দেখ ঠাম্মা, একটু দূরে বসে তোমার সংসারের সর্বনাশটা প্রত্যক্ষ করে নাও । জন্ম-জন্মান্তর যেন তোমার তা' মনে থাকে ।

- বাজে কথা বলিস না তো ! দেখ না কি করি।

- দেখতেই আছি। তোমার যা ভুলো মন ; কি বলতে কি বলে বসবে কি জানি !

- না রে ছোঁড়া ! তুই দেখ আমি কেমন ওদের ঢিট করি ।

তা, হ্যাঁরে, তুই কি দাঁড়িয়েই থাকবি ?

- তা কেন ঠাম্মা ! আমি জজসাহেবের ঠিক পাশটিতে গিয়ে বসব। আমার চোখ থাকবে তোমার প্রতি আর কান থাকবে সজাগ । 

- হেঁয়ালি করিস না ছোঁড়া ! তুই কি করে জজের পাশে বসবি ? সে বিদ্যে কি তোর আছে ?

- আছে, আছে গো ঠাম্মা । তুমি ওসব ভেবো নাতো ! আমি যেখানেই থাকি সবসময় তোমাকে জড়িয়েই থাকব । এখন একটু বাইরেটায় ঘুরে আসি । ওই তো জজসাহেব এসে গেছেন । নাও, এখন আর ইষ্ট চিন্তা না করে ঘর সংসার কি করে বাঁচানো যায়, তাই ভাবো । আমি এখন চললাম ।

- কোথায় যাচ্ছিস তুই ? আমাকে কে নিয়ে যাবে ?

- আমি ঠিক সময়ে এসে যাব ঠাম্মা। কোন চিন্তা কোরো না ।

সূর্যকিরণ যাদুমন্ত্র প্রয়োগ করল । বিচারক রায় পড়ার জন্য পঞ্চাশ পাতার পুস্তিকা বের করতে যাবেন - দেখেন ব্রিফকেসে তা' নেই । তিনি ব্রিফকেস ওলোটপালট করে খুঁজছেন। না পেয়ে ' এক্সকিউজ মি' , পাঁচ মিনিট পর আসছি বলে চলে গেলেন । সুযোগের সদ্ব্যবহার করে নিল সূর্য্যকিরণ। ঠাকুমার কথাগুলো যাদুবলে ভ্যানিশ করে দিয়ে উইলের নীচে এমন একটি বয়ান জুড়ে দিল , যা' কেউ এতদিন দেখেনি। তারপর ঠাকুমার পাশে এসে দাঁড়াল।

বিচারক রায় পড়ে শোনাতে যাবেন বিশ্বময়ী দেবী উঠে দাঁড়ালেন । করজোড়ে নিবেদন করলেন - হুজুর জজসাহেব। আপনার রায় শোনার আগে আমার একটি নিবেদধ আছে ।

বিচারক চোখ ফিরিয়ে দেখলেন জনৈকা বৃদ্ধা, যাকে দেখলে দেবী ধূমাবতী মনে হয়, বয়স যার নব্বইএর কোঠায় হবে হয়তো, তিনি করজোড়ে নিবেদন করছেন ।

বিচারক বললেন - আপনি কে মা ?

- আমি এই মামলার কারণ । আমার নাম বিশ্বময়ী দেবী চৌধুরানী । আমার স্বামীর নাম -

বিচারক বাধা দিয়ে বললেন - বুঝতে পেরেছি। আপনাকে আর পরিচয় দিতে হবে না । আপনার যা বলার আছে এখানে এসে বলুন ।

দু'জন শক্ত সমর্থ মেয়ে আর্দালী তাঁকে নিয়ে এসে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিল ।

বিচারক বললেন - এবার বলুন মা। আপনার কি বলার আছে ? শুধু একটি কাজই আপনি আর করতে পারবেন না, আর তা" হল ঝটিতি উইলে কোন পরিবর্তন , পরিবর্ধন অথবা সংশোধন ।

- সাহেব, আমি সে সব কিছুই করতে আসিনি। শুধু অনুরোধ করছি আমার সন্তানের বিপক্ষে রায় দেবার আগে আপনি নিজে আমার করা উইলটি খুঁটিয়ে পড়ুন ।

বিপক্ষের উকিল বললেন - অবজেকশন ইয়োর অনার । এখন রায়দানের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে । এই সময় উটকো আবদারে কান দিলে অযথা মহামান্য আদালতের সময় বরবাদ হয় ।

বিশ্বময়ী দেবী বললেন - পাঁচ পাতার উইল পড়তে পাঁচ মিনিটও লাগবে না হুজুর । তা-ছাড়া উইলটি না পড়লে রায়দান একপেশে হয়ে যেতে পারে। সুতরাং আবেদন জানাচ্ছি উইলটি স্বয়ং জজসাহেব পাঠ করে আদালতকে শোনান ।

বিচারক ক্ষুব্ধ হলেন না । বরঞ্চ উইলকারিণীর দাবি গ্রাহ্য করে তা পাঠ করতে লাগলেন । 

প্রথমদিকে সব বিষয়গুলি ঠিক রয়েছে। কিন্তু রেজিস্টার্ড উইলে নীচের দিকে লেখা রয়েছে সন্তান যদি শর্ত লঙ্ঘন করে তবে এই উইল মোতাবেক সকল স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি পুনরায় বিশ্বময়ী দেবীর হস্তে প্রদান করতে হবে। কোন কারণেই তা' পরিবারের বাইরের জনের হস্তে যাবে না । 

ট্রাস্টিবোর্ডের উকিল, সদস্যণণ এমনকি বিচারকও এ বিষয়ে কিছু বলতে পারলেন না । 

ট্রাস্টির সদস্য এবং উকিল এর বিরোধিতা করলেন । এটি উইল রেজিস্ট্রি হবার পরে সংযোজন করা হয়েছে বলে সকলে মন্তব্য করলেন । বিচারক নিজেও সন্দেহ প্রকাশ করলেন ।কিন্তু উইলকারিণী নিজে যখন এই দাবী করছেন বিচারক রায়দান স্থগিত করে উইলটিকে তদন্তের জন্য একটি প্যানেল হবে বলে ঘোষণা করে আদালত এডজোর্ণ করে দিলেন । 

ডক্টর সৃঞ্জয় বসু এবং ঈশিকা সমেত মি. সেনশর্মা সকলেই হতবাক হয়ে গেলেন । 

ডক্টর সৃঞ্জয় বসু বললেন - ঈশিকা, এখানে কি সূর্য্যকিরণ আছে ?

ঈশিকা আসাক্ষণ থেকে চারিদিকে চেয়ে দেখেথে। তার বাবাকে দেখেছে, মাকে দেখেছে, এমনকি ঠাম্মাকেও দেখেছে একলা বসে থাকতে। কাখগড়ায়ও তিনি একলাই ছিলেন। সূর্য্যকে তো দেখতে পায় নি !

বিস্ময়াভিভূত ঈশিকা বলল - না, দেখা যায়নি।

মি. সেনশর্মা বললেন - হি ইজ নো ডাউট এ সুপারনেচারাল এলিমেন্ট। চলুন বাইরেটা খুঁজি। নইলে আজই ওদের বাড়ি এবং বৈদিক ভিলেজের বাড়ি একসাথে রেইড করব ।

ভক্টর সৃঞ্জয় বসু হাসলেন ।

- কোন লাভ হবে না মি. সেনশর্মা । সুপারনেচারারাল পাওয়ারকে ধরতে হলে আননেচারাল লোককে দায়িত্ব দিতে হবে ।


( চলবে )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Thriller