STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Thriller

4  

Nityananda Banerjee

Thriller

গোয়েন্দা ( ধারাবাহিক)

গোয়েন্দা ( ধারাবাহিক)

4 mins
298

পর্ব আটাশ


তারাপীঠ থেকে ফিরে আসা ইস্তক শুভশ্রীর দেহে এবং মনে পুলক জেগেছে। অত্যন্ত সুখের মুহূর্ত যেন ওই তারাপীঠ । তারা তো সেই রাতের অভিযান দেখেনি ; দেখলে হয়তো এমন মনে হত না । 

যাই হোক, শুভশ্রীকে এত খুশি থাকতে দেখে বিশ্বময়ী দেবীর খারাপ লাগেনি । বয়সের অনুপাতে এই খুশি স্বাভাবিক। তবু তাকে বললেন - সবসময় মাটিতে পা রাখবি শুভো। 

শুভো একটু অবাক হল ঠাম্মা হঠাৎ এমন কথা কেন বলছেন ? তবে কি ---

না, জিজ্ঞেস করার সাহস হয়নি তার । কারণ তখন ঠাম্মা ফোনে কথা বলতে ব্যস্ত । উকিল, আদালত, পুলিশ - এসব কথা শুনে বড়লোকের ব্যাপার-স্যাপার ভেবে এড়িয়ে গেল ।

এদিকে ডক্টর বসু এবং ডক্টর মুখোপাধ্যায় থানা পর্য্যন্ত এসে সেনশর্মাকে বললেন - এবার আমরা বাড়ি চলি।

মি. সেনশর্মা বললেন - তা কি হয় স্যার ? আজকের রাতটা আপনারা আমার অতিথি হিসাবে থাকুন । কাল সকালে আপনাদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে । এই রাতে কিছু আলোচনা আছে। আর জেরা চলুক। তথ্যপ্রমাণ আদায়ের পর আমাদের ছুটি।

ডক্টর মুখোপাধ্যায় বললেন - আমি কেন শুধু শুধু থাকব । আমি তো তদন্তকারী নই। ডক্টর বসু থেকে যান ।

সেনশর্মা বললেন - এতবড় একটা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে আপনাকে তো সত্যটা জানতে হবে ।

ডক্টর সৃঞ্জয় বসু শুরু করলেন । তাঁর রেকর্ড করা জেরার ভিডিও সেনশর্মাকে দেখালেন ! ভিডিও দেখে

সেনশর্মা যেন আকাশ থেকে পড়লেন। 

পবন কুমার ঢাঙ মানে বিরিঞ্চির বাবা একজন জাত ব্যারিস্টার । তিনি ছিলেন বিশ্বময়ী দেবীর গঠন করা ট্রাস্টিবোর্ডের সচিব । সম্পত্তি ও ব্যবসার খুঁটিনাটি সব তাঁর নখদর্পনে । উইলের যে জায়গায় লেখা ছিল তপনকিরণ যদি বিশ্বময়ী দেবীর প্রতি কর্তব্যে অবহেলা করেন তবে সমগ্র সম্পত্তি এবং ব্যবসা সকলই ট্রাস্টির অধীনে চলে যাবে । এই ধারাটিতে প্রভাবিত হয়ে পবন কুমার ঠিক করলেন বিশ্বময়ী দেবী এবং তপনকিরণের মধ্যে একটা ঠাণ্ডা লড়াই শুরু করিয়ে দিতে । এরজন্য তিনি তাঁর ছেলে পঞ্চানন ওরফে বিরিঞ্চিকে কাজে নামিয়ে দিলেন । প্রথম দিকে ছেলে তেমন সুবিধা করতে পারেনি। খুলে দিলেন এক অসামাজিক অথচ বেআইনি হবে না তেমন একটি ক্লাব - পর্ণমোচী ক্লাব । ছেলেকে ওই ক্লাবের চেয়ারম্যান করে দিলেন । আর গোপনে সূর্য্যকিরণকে দেখিয়ে তাকে কব্জা করতে নির্দেশ দিলেন ।আসলে উদ্দেশ্য ছিল সূর্য্যকে উচ্ছৃঙ্খল , লম্পট বানিয়ে সমাজে তা প্রচার করা যাতে বিশ্বময়ী দেবীর আদর্শে আঘাত লাগে । 

কিন্তু পঞ্চানন সে রকম বিশেষ কিছু করে উঠতে পারল না । তার উপর পবন কুমার প্রতিদিন চাপ বাড়িয়ে যাচ্ছিলেন । এ নিয়ে বাবা ও ছেলের মধ্যে কম তর্খ হয়নি । 

সেই সময় ভিক্ষে করতে আসা কোন এক সাধুবাবার সঙ্গে সূর্য্যের পরিচয় হয় । 

কথার মাঝখানে সেনশর্মা বললেন - তাহলে কি ওই সাধুবাবা ? যিনি আমাদের পথ দেখিয়ে দিয়েছেন ?

ডক্টর বসু বললেন - হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। কারণ তাঁকে দেখে বা তাঁর সাথে কথা বলে আমাদের ওনাকে বদ মতলবী মনে হয়নি । তা-ছাড়া তাঁর তো বিশ্বময়ী দেবীর সঙ্গেও দেখা ও কথা হয়েছে। ইচ্ছে করলে তাঁদের কাউকেও --

- হুম্ তাও তো ঠিক । আসলে ওই সাধুবাবা অভিযানের পরপরই তারাপীঠ ছেড়ে চলে গেলেন তো! তাই সন্দেহ হচ্ছিল ।

- মি সেনশর্মা ! তিনি গেছেন কি যাননি জানি না ; তবে তিনি যে গাছটির নীচে বসে ছিলেন - সেই গাছটিও তো কেউ দেখলাম না । তাঁর এই অলৌকিক ভাব অসৎ উপায়ে কাজে লাগাতেই পারতেন কিন্তু তিনি উল্টে আমাদের হেল্প করেই গেছেন ।

সেনশর্মা আর কথা না বাড়িয়ে পরের অংশ দেখতে লাগলেন ।

উক্ত সাধুবাবা পঞ্চাননকে বলে সে তাকে কালা যাদুর কৌশল শিখিয়ে দেবে । সেজন্য হাজার দশেক টাকা দাবী করে । পঞ্চানন বলে ওতে সে কি ভাবে উপকৃত হবে ?

সাধুবাবা বলে এমন যাদু শিখিয়ে দেব যে তুই যে কোন লোককে যখন ইচ্ছে বশ করতে পারবি । আর সে তোর বশে এলেই তুই যা খুশি করতে পারবি।

কথাগুলো খুব মন;পূত হল তার । পবন কুমারকে বলতেই তিনি দশহাজার টাকা ছেলের হাতে দিয়ে বললেন - কাজ হাসিল করা চাই কিন্তু !

পঞ্চানন টাকা দিয়ে যাদু শিখে নিল । এরপরই সে সূর্য্যকে ওই ক্লাবের কর্মকর্তা করে দিয়ে নিজে অজ্ঞাতবাসে চলে গেল । আসলে সে ক্লাবেই ছিল । যাদুর শক্তিতে কেউ তাকৈ দেখতে পেত না। ও কিন্তু সূর্য্যকে ঠিকমত ফলো করে যাচ্ছিল । 

এর পর একদিন ওই ঈশিকা সামন্তও এল ক্লাবে। ঘনিষ্ঠতা হল সূর্য্যের সঙ্গে । সত্যি সত্যিই তাদের মধ্যে ভালবাসা হল । দু'জন দু'জনকে এত ভালবেসে ফেলেছিল যে সূর্য্য বাড়ির অমতে কালীঘাটে গিয়ে বিয়ে করে নিল । পঞ্চানন সব লক্ষ্য করছিল । ওরা হানিমুনে যাবে । ওদের পিছু পিছু সেও ট্রেনে উঠে বসল । সবই যাদুর খেল । হঠাৎ করে পঞ্চাননের খেয়াল হল - এই সুযোগ । বিয়ে করা বউয়ের সঙ্গে সহবাস কোন অপরাধ নয় । পঞ্চানন সূর্য্যকে নজরবন্দী করল এবং নিজে সূর্য্য সেজে ঈশিকার সঙ্গে সহবাস করল। আর সেই সহবাসের ছবি রীলবন্দী করে রাখল । হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে সে ঘুমের ভান করে পড়ে রইল । ঈশিকা কিন্তু সত্যিকারই ঘুমিয়েছিল । আর তারপরই সেখানে ড্টর মুখোপাধ্যায়ের আগমন । সুযোগ বুঝে সূর্য্যরূপী পঞ্চাননের ক্যামেরা রীলটি ডক্টর মুখোপাধ্যায়ের ব্যাগে কৌশলে ঢুকিয়ে দিল । নিজে পালিয়ে গেল কিন্তু সূর্য্য আসতেই ঈশিকার নাটক শুরু হয়ে গেল ।

সেনশর্মা বললেন - বাপ রে কি ভয়ানক!

( চদবে )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Thriller