গোয়েন্দা ( ধারাবাহিক)
গোয়েন্দা ( ধারাবাহিক)
পর্ব পনের
অফিসার করালীপ্রসাদ সেনর্মার নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল তপনকিরণ চৌধুরী এবং সেকেণ্ড অফিসার অজয় মালহোত্রার নেতৃত্বে আর একটি দল গোয়াবাগানের বাড়ি এবং বৈদিক ভিলেজে বিশ্বময়ী দেবীর কুটিরে তল্লাশি শুরু করলেন ।
তপনকিরণ এবং অনুপ্রভাদেবীর মোবাইলের কললিস্ট থেকে সূর্য্যকিরণের কোন নং পাওয়া গেল না। বেশ কিছু আননোন নং থেকে অনুপ্রভাদেবীকে এবং তপনকিরণ বাবুকে বেশ কয়েকদিন ধরে কল করা হয়েছে। যদিও তাঁরা বলছেন আননোন নাম্বারের কল নাকি তাঁরা ওঠাতেন না । কিন্তু কল ডিটেইলস থেকে জানা গেল প্রায় প্রতিটি কলই এটেণ্ড করা হয়েছে এবং তা-ও বেশ কিছুক্ষণ ধরে ।
মি.সেনশর্মা বুঝতে পারলেন তাঁরা কেউই সত্যি কথা বলছেন না । তল্লাশিতে সূর্য্যকিরণের বেশ কিছু ছবি এলবাম থেকে খুলে নিলেন । গোটা বাড়ি তল্লাশি করেও এর বেশি কিছু জুটল না ।
এদিকে বিশ্বময়ী দেবীর কাছেও তেমন প্রামাণ্য কিছু না পেয়ে মি. অজয় মালহোত্রা সদলবলে থানায় ফিরে গেলেন। কিন্তু মি. করালীপ্রসাদ সেনশর্মা তপনকিরণকে অসহযোগীতার অজুহাতে গ্রেপ্তার করলেন এবং অনুপ্রভাদেবীর ফোনটি বাজেয়াপ্ত করে প্রয়োজনে অনুপ্রভা দেবীকেও যে গ্রেপ্তার করা হতে পারে সে সম্ভাবনাও ব্যক্ত করে দিলেন ।
তপনকিরণকে থানায় এনে প্রথমে ওনার মোবাইল থেকে সেই আননোন নাম্বারগুলোতে কল ব্যাক করতে বললেন । সব নাম্বারগুলো সুইচড অফ । এবার অনুপ্রভা দেবীর ফোন থেকে আবারও ফোন করা হল । একটি নাম্বারে কল করতেই অপর প্রান্ত থেকে উত্তর এল - মা, ডিসটার্ব কোরো না । আমি এখন ভীষণ ব্যস্ত । লোকেশন ট্র্যাক করে জানা গেল সূর্য্যকিরণ সেই সময় সিউড়িতে রয়েছে।
আধঘন্টা পর পুনরায় ফোন করলে দেখা গেল সুইচ অফ করে দেওয়া হয়েছে।
মি.সেনশর্মা সিউড়ি পুলিশ স্টেশনে সূর্য্যকিরণের ফটোগ্রাফ দিয়ে নাকা চেকিং এর বন্দোবস্ত করলেন ।
সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে সূর্য্যকিরণ তখন দুমকায় চলে গেছে।
মহামান্য কলকাতা হাইকোর্ট তদন্তকারীদের যে প্যানেল তৈরী করে দিয়েছেন তাতে ডক্টর সৃঞ্জয় বসুকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে । এ ছাড়াও রাজ্য পুলিশের ডি আই জি, ( সি আই ডি ) এবং আরও তিনজন উচ্চপদস্থ আধিকারিক আছেন ।
তাঁরা প্রথমে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে স্থির করে নিলেন কে কোথায় যাবেন এবং কি করবেন । উইলটি ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হল । ওঁরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানিয়ে দিলেন উইলটি আসল এবং তাতে কোন সংযোজন, বিয়োজন, পরিবর্তন, পরিবর্ধন অথবা সংশোধনী নেই।
ডি আই জি সাহেব চিন্তান্বিত হলেন । এরপর তো সূর্য্য ছাড়া কেউ এই জট খুলতে পারবে বলে মনে হল না । ডক্টর সৃঞ্জয় বসু বললেন - স্যার, যদিও কেসটা ভিন্ন; আমার মনে হয়, এটা ওই সূর্য্যকিরণেরই কাজ। অন্তত ঈশিকা সামন্তের কথায় আমার এই ধারণা হয়েছে।
ডি আই জি সাহেব বললেন - কে এই ঈশিকা ? তার সঙ্গে এই কেসের কি সম্পর্ক ?
- স্যার, সরাসরি কোন সম্পর্ক হয়তো নেই ; কিন্তু পরোক্ষে একটা ছায়া আমি দেখতে পাচ্ছি।
- সে টা কি রকম ?
ডি আই জি সাহেব যেন কিঞ্চিৎ বিরক্ত ।
- যেখানে বাঘা বাঘা গোয়েন্দারা হিমশিম খেয়ে গেল সেখানে একজন সাইকিয়াট্রিস্ট হয়ে আপনি এর কিনারা করতে পারবেন ?
- স্যার, আমি এ বিষয়ে নাক গলাতে চাই না । কিন্তু মহামান্য আদালত যখন আমাকে প্যানেলে রেখেছেন তখন নিজের মতামত পেশ করা পবিত্র কর্তব্য বলে মনে করি । অবশ্য আপনারা যদি কোন প্রস্তুত দশায় পড়েন তো আদালতের কাছে অব্যাহতি চাইতে আবেদন জানাব !
- সে কথা বলছি না মি. বসু । আপনি খামোখা অন্য রকম ভাবছেন ! আমি বলতে চাইছি, কেসের তদন্তে আপনার কোন অভিজ্ঞতা না থাকারই কথা। কারণ আপনি একজন ডাক্তার মাত্র ।
- ওকে, স্যার । আমি তাহলে চলি । আপনাদের যদি প্রয়োজন মনে হয় আমাকে নি:সঙ্কোচে এত্তেলা দেবেন ।
প্রসঙ্গ উল্টোদিকে চলে যাচ্ছে ভেবে ডি আই জি সাহেব বললেন - আপনি কোন ঈশিকার কথা বলছিলেন না ?
- বলছিলাম তো । আপনারা শুনতে প্রস্তত নন বলে উৎসাহী নই ।
- বলুন বলুন প্লীজ ! দেখি আপনার ভাবনাটা কত উচ্চস্তরীয় ?
- না থাক । পরে প্রয়োজনে বলব । গুড নাইট ।
ডক্টর সৃঞ্জয় বসু একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়ে প্রস্থান করলেন ।
ডি আই জি সাহেব অন্যান্য অফিসারদের বললেন - দেশের সমস্ত থানাকে সতর্ক করে দিন । আর আমাদের বিশ্বময়ী দেবীর কাছে প্রথমেই যেতে হবে । এতদিন পর রায় ঘোষণার দিন তিনি এমন খেলা খেললেন কেন ?
তবে বয়স্কা মহিলা । এত রাতে যেতে হবে না। কাল সকালে গেলেও চলবে ।
( চলবে আরও )
