STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Thriller

4  

Nityananda Banerjee

Thriller

গোয়েন্দা ( ধারাবাহিক)

গোয়েন্দা ( ধারাবাহিক)

3 mins
253

পর্ব ঊনত্রিশ

পরদিন সকাল থেকে ধারাবর্ষণ শুরু হয়েছে। আকাশ জুড়ে মেঘের মেলা । তুমুল বর্ষণ; সঙ্গে দমকা বাতাস । কলকাতার পথঘাট জলে থই থই করছে। অফিসার সেনশর্মা দুই আসামীকে কোর্টে তুলবেন এবং অন্তত পাঁচ দিনের পুলিশ রিমাণ্ডের আবেদন করবেন । কিন্তু প্রশ্ন হল তাদের কি ভাবে থানার হাজত থেকে আদালতে নিয়ে যাবেন !

এদিকে বৃষ্টি উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে। স্থানে স্থানে রাস্তার উপরে গাছ ভেঙে পড়েছে অর্থাৎ রাস্তা ক্লিয়ার হবার এখনই কোন চান্স নেই , যদিও পৌরসভার পক্ষ থেকে সব রকমের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মি. সেনশর্মা মহা বিপদে পড়লেন । সে নিয়ে কিছু চিন্তা করছিলেন ।

  টেবিলে নামানো মোবাইলটা বেজে উঠল । দেখলেন ডক্টর সৃঞ্জয় বসুর নাম জ্বলজ্বল করছে। কিছুটা ভরসা পেলেন । মোবাইলে সবুজ সংকেতকে সোয়াইপ করে কানে নিতেই শুধু ঘড়ঘড় আওয়াজ পেলেন ।

হ্যালো হ্যালো করতেই অনেকটা সময় চলে গেল । বললেন - কিছু শোনা যাচ্ছে না ; আপনি রাখুন স্যার আমি কেটে করছি ।

রিং করলেন ; সৃঞ্জয় বসু ফোন তুললেন না । এ আবার আর এক হ্যাপা । ফোন করলেন অথচ এখন আর ওঠাচ্ছেন না ।

কেটে আবার করলেন । এবার সৃঞ্জয় বসু বললেন - অফিসার ! ঈশিকা সামন্তকে হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে। আজই ওর সিজার করে বেবিকে পেট থেকে বের করে দেওয়া হবে । আপনি কি একবার আসতে পারবেন ?

- স্যার, এই দুর্যোগেও আমাকে আসামীদের নিয়ে কোর্টে তুলতে হচ্ছে । ভেরি সরি, আপনি একটু ম্যানেজ করে নিন ।

- কিন্তু আপনাকে তো আসতেই হবে । কারণ আসামীদের ডি এন এ পরীক্ষা করার ভীষণ প্রয়োজন।

- ওদের ডি এন এ পরীক্ষার কি দরকার স্যার ? আর ওরা তো পুলিশ হেফাজতে থাকছেই , যখন খুশি করিয়ে নেওয়া যাবে ।

- প্রয়োজন আছে মি. সেনশর্মা । ঈশিকার বেবীর ডি এন এ কার সাথে ম্যাচ করে তা দেখার প্রয়োজন আছে। এটা একটা মস্ত বড় প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে।

সেনশর্মা আবহাওয়ার অজুহাত তুলে বললেন - সকাল থেকে কেমন বৃষ্টি শুরু হয়েছে দেখছেনই তো স্যার । কোর্টে যাওয়াই সমস্যা হয়ে গিয়েছে। পথ জলে ভর্তি, কোন কোন জায়গায় শুনছি গাছ ভেঙে পড়ে রোড ক্লোজ করে দিয়েছে।

সৃঞ্জয় বসু বললেন - রেড রোড, ভবানীপুর দিয়ে বেরিয়ে পড়ুন । কোর্ট থেকে ফেরার পথে হাসপাতালে আসুন।

- ওকে স্যার ।

বিশ্বময়ী দেবী, শুভশ্রী এবং এদিকে তপনকিরণ ও অনুপ্রভা দেবীও কোর্ট অভিমুখে বেরিয়ে পড়েছেন ।

ডক্টর সৃঞ্জয় বসু হাসপাতাল থেকে আদালতের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন ।

বেলা বারোটা নাগাদ বৃষ্টির তাণ্ডব বন্ধ হলে জজসাহেব আদালতে এলেন । কেস নং ২০১/২২ আদালতের প্রথম শুনানীতে স্থান পেল ।

তপনকিরণের উকিল সূর্য্যকিরণ চৌধুরীর জামিনের আবেদন করলেন । পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ এবং পুলিশ রিপোর্টের উপর আস্থা রেখে বিচারক তার জামিন মঞ্জুর করলেন ।

কিন্তু বিরিঞ্চিবাবা ওরফে পঞ্চাননের জামিন খারিজ করে তিনদিন পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিলেন।

সূর্য্যকিরণের পরিবার ভীষণ আনন্দিত । এমন সময় ডক্টর সৃঞ্জয় বসু এসে তাঁদের বললেন - সূর্য্যকিরণকে এখন সোজা হাসপাতালে যেতে হবে।

বিচারককে নিবেদন করলেন সেই বিষয়ে উভয়কেই হাসপাতালে ডি এন এ পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। ঈশিকা সামন্তের কেস তুলে বিচারককে নিবেদন করতেই তিনি তাতে মঞ্জুরী দিয়ে দিলেন ।

পবন কুমার ঢাঙের ( পঞ্চাননের পিতা ) উকিল প্রচণ্ড বিরোধিতা করেও তা আটকাতে পারলেন না ।

আটটি গাড়ির কনভয় হাসপাতালের দিকে চলল। প্রথমে একটি এসকর্ট ভ্যান, তার পিছনে আসামীদের নিয়ে পুলিশের গাড়ি, তার পিছনে আর একটি পুলিশের গাড়ি এবং বাকিগুলো সংশ্লিষ্ট অভিযুক্তদের পরিবার পরিজন এবং ডক্টর সৃঞ্জয় বসুর লিমুজিন ।

ডক্টর বসু হন্তদন্ত হয়ে হসপিটালে ঢুকে সোজা চলে গেলেন লেবার রুমে । ততক্ষণে ঈশিকার সিজার হয়ে গিয়েছে এবং ওকে বেডে দেওয়া হয়েছে। ডক্টর বসু শুনলেন মৃত বেবী প্রসব হয়েছে ।

একবার বেবীটিকে দেখে তিনি ওর ডি এন এ পরীক্ষার জন্য নিয়ে যেতে বললেন ।

তারপর দুই অভিযুক্তেরও পরীক্ষা করা হল । রিপোর্ট পরে পাওয়া যাবে।

মি. সেনশর্মা পঞ্চাননকে নিয়ে থানায় গেলেন । পবন কুমার চিন্তিত মনে উকিলের নিকট গেলেন ।

আপাতত মুক্তি পেয়ে সূর্য্যকিরণ পরিবারের সঙ্গে মিলিত হল । কিন্তু অনুপ্রভা দেবী প্রমাদ গণলেন ঠিক সন্ধ্যে বেলায় ; যখন পবন কুমার ঢাঙ তাঁদের বাড়িতে এসে একটি ঘটনা ফাঁস করে দিলেন ।

( চলবে )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Thriller