STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Thriller

4  

Nityananda Banerjee

Thriller

গোয়েন্দা ( ধারাবাহিক)

গোয়েন্দা ( ধারাবাহিক)

4 mins
267

পর্ব ২২


কথায় বলে - ' মঙ্গলের ঊষা ; বুধে পা, যেথা ইচ্ছা সেথা যা ' । 

অফিসার করালীপ্রসাদ সেনশর্মা বাইরে কোথাও গেলেই এই আপ্তবাক্যটি স্মরণে রাখেন । এই দু'টি দিন বাদ দিয়ে সাধারণত তিনি বেরোতে চান না । ঝোঁকের মাথায় ডাক্তারবাবুদের বলে দিয়েছিলেন আগামীকালই তারাপীঠের উদ্দেশ্যে রওনা দিবেন । একবারও তাঁর মনে পড়েনি আগামীকাল বৃহস্পতিবার । তাহলে তিনি দিন বদল করতেন । 

এখন তাঁদের এ বিষয়ে কিছু বলা তাঁর পক্ষে যথেষ্ট লজ্জার । পুলিশ আধিকারিকের এই দুর্বলতা তাঁরা যে হেসে উড়িয়ে দেবেন তা বলাই বাহুল্য । অগত্যা ভোরবেলায় উঠে তৈয়ারী হয়ে নিলেন । এর মধ্যে দু'বার ডক্টর সৃঞ্জয় বসু ফোন করেছেন । এই বেরিয়েছি বলে কোনমতে পাশ কাটিয়েছেন। সুতরাং তৃতীয় বার ফোন আসার আগেই বেরিয়ে গেলেন । ততক্ষণে ডক্টর মুখোপাধ্যায় এবং ডক্টর সৃঞ্জয় বসু থানায় এসে বসে আছেন ।

সেনশর্মা থানায় ঢুকতেই ওঁরা বললেন - চলুন বেরিয়ে পড়ি ।

থানায় ছোটবাবুকে দায়িত্বে রেখে তিনজন গাড়িতে এসে বসলেন ।এন এইচ ২ ধরে তীব্রগতিতে গাড়ি ছুটল । 

বৈদিক ভিলেজের কুটিরে তখন বিশ্বময়ী দেবী এবং শুভশ্রীও রেডি হয়ে গেছেন তারাপীঠে যাবার জন্য । তাঁরা ড্রাইভারসমেত তিনজন চলেছেন মায়ের মন্দিরে পূজো দিতে এবং অবশ্যই যদি সূর্য্যের সাক্ষাৎ পাওয়া 

যায় সেই অভিপ্রায়ে । তাঁরাও চলেছেন ওন এইচ ২ দিয়ে । 

মি. সেনশর্মার গাড়ি নলহাটি পেরিয়ে গেছে। আর ঘন্টাখানেক পরই পৌঁছে যাবেন তারাপীঠে । কিন্তু বিশ্বময়ী দেবীর গাড়ি তখন সবে পানাগড়ের দার্জিলিং রোডে উঠেছে। ফলে সেনশর্মারা যখন তারাপীঠে পৌঁছে গেছেন বিশ্বময়ী দেবীর গাড়ি রামপুরহাট পেরিয়ে তারাপীঠের পথ ধরেছে।

আশেপাশের সব থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে চলছেন মি. করালীপ্রসাদ সেনশর্মা । তারাপীঠে নেমে তাঁরা তিনজন শ্মশানের দিকে গেলেন । বামদেবের সমাধিস্থলের পাশে একজন গেরুয়া কাপড় পরিহিতকে দেখে সেনশর্মা কিছু কথা বললেন । 

- এই যে শুনছেন !

সংসার ত্যাগী মানুষটি বললেন - আমাকে বলছেন ?

সেনশর্মা - না । ওই যে সমাধির ভেতরে যিনি আছেন তাঁকে ।

লোকটি লজ্জিত হয়ে বললেন - বলুন কি বলতে চান।

- এখানে এই শ্মশান থেকে কিছু দূরে কোন নিমগাছ আছে ?

ডক্টর সৃঞ্জয় বসু বাধা দিয়ে ধমক দিলেন সেনশর্মাকে - সব জায়গায় পুলিশি বিহেভিয়ার করবেন না । আচ্ছা, সাধুবাবা আপনাকে একটা কথা বলি ?

- বলুন।

- সংসার ছেড়ে এমন পাগল সেজেছেন কেন ? এর পিছনে কি কোন অভাব অনটন দায়ী ?

- কি যে বলি আজ্ঞে ! ছেলেটার ভীষণ অসুখ । ডাক্তার বদ্যির খরচে কুলিয়ে উঠতে পারছি না । তাই---

ডক্টর বসু লোকটার হাতে দশটাকা ধরিয়ে দিয়ে বললেন - এখানে শ্মশানটা কোন দিকে ?

- ওই তো। এই পথটা ধরে গেলেই সামনে ছাইয়ের পাহাড় পাবেন। ওটাই মহাশ্মশান।

- আচ্ছা, এই শ্মশান পেরিয়ে দ্বারকা নদী বরাবর কোন নিমগাছের জঙ্গল আছে ? 

- আছে তো বাবু। তবে ওটা নদীর ওপারে । এপারে তেমন কিছু তো নেই ।

নমস্কার জানিয়ে ওরা চললেন দ্বারকা নদীর ওপারে। 

কিন্তু শ্মশানটা তো পেরিয়ে যেতে হবে । স্থানে স্থানে বিভিন্ন রকমের সাধুবাবারা বুঁদ হয়ে বসে আছেন গঞ্জিকা সেবন করে । গন্ধে চতুর্দিক ম ম করছে। কোথাও বা একদল কীর্তনীয়া কীর্তন পরিবেশন করছেন । একেবারে শেষ প্রান্তে জটাজুটধারী এক তান্ত্রিক পঞ্চমুণ্ডীর আসনে উপবেশন করে চোখ আধ খোলা অবস্থায় ধ্যান করছেন। 

ডক্টর বৈশ্বানর মুখোপাধ্যায় বললেন - ডক্টর বসু, আমরা কিছুক্ষন এখানে অপেক্ষা করি । মহারাজের ধ্যান ভাঙলে কিছু কথা বলব ।

তাঁরা নিকটবর্তী একটা মরা গাছের গোড়ায় গিয়ে বসলেন। সাথে সাথে শীর্ণকায় জটাজুট সন্ন্যাসীর ধ্যান ভঙ্গ হল । জবাফুলের মত লাল একজোড়া চোখ মেলে বললেন - এখানে কেউ বসবিনে । এটা বিশ্রামের স্থান নয় । শীঘ্র এ স্থান ছেড়ে চলে যা যেখানে যাচ্ছিলি।

ওঁরা উঠে দাঁড়ালেন। ডক্টর সৃঞ্জয় বসু এগিয়ে এসে প্রণাম করে বললেন - মহারাজ! আপনি তো সর্বজ্ঞ ! নইলে আমরা কোথায় যাচ্ছি আপনি জানলেন কি করে? মহারাজ যদি অনুগ্রহ করে বলেন - শ্মশানের কিছুদূরে কোথায় নিমগাছের জঙ্গল আছে ?

- বুঝেছি । তোরা তপতীমায়ের নির্দেশে এখানে এসেছিস। চারিদিকে পুলিশ মোতায়েন করে রেখেছিস । তপতীমাতা ধ্যানযোগে আমায় সব বলেছে। কিন্তু ওই নিমের জঙ্গলে তো কেউ নেই !

- বাবা, আমরা বড় আশা নিয়ে এসেছি।

এবার মহারাজ খেঁকিয়ে উঠলেন। 

- তো ? আমি কি করব ? তোদের কাজটা আমি কে দেব ?

- না বাবা, সে কথা বলছি না । আমরা দু'জন দুর্বৃত্তের সন্ধানে কলকাতা থেকে এসেছি। কৃপা করে যদি পথ বাতলে দেন তো-

মঙ্গল হবে । তোদের মঙ্গল হবে। সাধারণের মঙ্গল হবে। সবই জানি। কিন্তু -

- কিন্তু কি বাবা ? ওরা কি আবার পালিয়েছে ?

- পালাতে পারবে না । কিন্তু এখন ওরা রামপুরহাটে গা ঢাকা দিয়েছে। তবে সন্ধ্যার সময় ঠিক ফিরে আসবে ।ওদের একজন আসল দুর্বৃত্ত আর অন্যজন তার শিকার । শিকারটি প্রভূত সম্পত্তির মালিক। দুর্বৃত্তের পরিকল্পনা হল শিকারকে খতম করে সম্পত্তি হাতানো। শিকারটি একজন যুবক। এ যাবৎ মা তারা তাকে রক্ষা করেছেন। সময় থাকতে দুর্বৃত্তকে শেষ না করলে যুবকটির প্রাণনাশ হতে পারে । এবার তোরাই ঠিক কর কি করবি। 

( চলবে )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Thriller