গোয়েন্দা ( ধারাবাহিক)
গোয়েন্দা ( ধারাবাহিক)
পর্ব পঁয়ত্রিশ
ভাবাবেগে আপ্লুত হয়ে সূর্য্যকিরণ ঈশিকা সামন্তের বাড়ি যেতে মনস্থ করল । বিশ্বময়ী দেবীকে বৈদিক ভিলেজে পৌঁছে দিয়ে বাগবাজারে গঙ্গার ঘাটে এসে দাঁড়িয়ে রইল। বেশ কিছুটা সময় ঘাটে বসে চিন্তা করছিল যাওয়া ঠিক হবে কি না । ঈশিকার সঙ্গে বিয়েটা কারোরই বাড়ির লোকজন মেনে নেয়নি । কাজেই কালীঘাটে বিয়ে করার যুক্তি কতটা পাত্তা পাবে বলা কঠিন । সে বিয়ের কোন প্রমাণ যেমন ভিডিও বা সাক্ষী বলে তো কিছু নেই!
সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে দেখল ঈশিকার মা ওষুধপত্র কিনে বাড়ির দিকে চলেছেন ।
সূর্য্যকিরণ তাঁকে অনুসরণ করে চলল । কিছুটা গিয়ে ঈশিকার মা ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলেন । সূর্য্য
দরজার সামনে অপেক্ষা করে আস্তে আসতে কড়া নাড়তে লাগল ।
একজন মাঝারি বয়সের মহিলা দরজা খুলে বললেন - কাকে চাই ?
অতি বিনয়ের সঙ্গে সূর্য্য বলল - ঈশিকা কেমন আছে?
মহিলাটি সূর্য্যের পায়ের নখ থেকে মাথার চুল পর্য্যন্ত জরীপ করলেন । অচেনা যুবককে দেখে সূর্য্যকে বললেন - এখানে দাঁড়ান ! আমি ভেতরে খবর দিচ্ছি ।
বেশীক্ষন অপেক্ষা করতে হল না । ঈশিকার মা এসে সূর্য্যকে দেখে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন।
- বলি ব্যাপার কি ? ঈশিকার সর্বনাশ করেও তোমার ক্ষান্তি নেই ?
- শুনুন মাসীমা । আমি কোন দোষ-
ভদ্রমহিলা কোন কথাই শুনতে চাইলেন না । অতিথি অবাঞ্ছিত হলেও এরূপ দুর্ব্যবহার পায় না । তিনি মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিয়ে চলে গেলেন ।
সূর্য্যর একবার মনে হল জোর গলায় ঈশিকার নাম ধরে ডাকে । কিন্তু অপরিচিত স্থানে তা' ভাগ্যিস করেনি । নতুবা ভদ্রমহিলার যে রুদ্রাণী রূপ দেখেছে সে তা ভেবে গণধোলাইয়ের হাত থেকে রক্ষা পেল ।
ধীর পায়ে গঙ্গার ঘাটের কাছাকাছি এসে পিছন ফিরে গলিটা আর একবার দেখে নিল। তারপর সটান বাড়িমুখো হল ।
বিকেলে বিশ্বময়ী দেবী আবার হাসপাতালে চলে এলেন। এবার শুভশ্রীকে বাড়িতে রেখে ড্রাইভারের সাথে হাসপাতালে এলেন । কেবিনে ঢুকে দেখলেন অনুরভা দেবী জেগে রয়েছেন । ভক্টর বসু তাঁকে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে চলেছেন । আর তাঁর ছেলে তপনকিরণ মাথায় কনুই ঠেকিয়ে কেঁদে চলেছেন ।
ডক্টর বসু বলছেন - বিয়ের আগের জীবন ভুলে যান। আপনার ফ্যামিলি যখন সবকিছু মেনে নিচ্ছেন তখন আপনি এত উতলা হচ্ছেন কেন ? এই তো আপনার স্বামী আপনার পাশে বসে শুধু কেঁদেই চলেছেন । এখন তাঁকে কে সান্ত্বনা দেবে ?
বিশ্বময়ী দেবী বললেন - যা হবার হয়ে গেছে বউমা । আর ও নিয়ে ভেবো না। আমরা তো আছি !
অনুপ্রভা দেবী একদৃষ্টে উপরে সিলিং এর দিকে চেয়ে আছেন । তাঁর চোখের পলক পড়ছে না । হঠাৎ ডক্টর বসুর মনে সংশয় দেখা দিল । তিনি স্টেথোর সাহায্যে বুক পিঠ চেক করলেন । প্রেসার দেখলেন । তারপর চোখে আঙুল দিয়ে দেখলেন চোখ বন্ধ হল না । রেডিও থেরাপি করে নিশ্চিত হলেন ।
উপস্থিত সকলকে জানালেন - আই অ্যাম সরি । সি ইজ নো মোর ।
ডাক্তারবাবু উঠে চলে গেলেন । আর এম ওকে নির্দেশ দিলেন চার ঘন্টা পর ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু করতে ।
কেবিনে কান্নার রোল উঠল । বিশ্বময়ী দেবী উচ্চৈঃস্বরে কাঁদতে লাগলেন ।
তপনকিরণের মুখ দিয়ে একটি কথাই বেরোল - আবারও আমায় ফাঁকি দিলে অনু !
তারপর চিৎকার করে উঠলেন - পবন কুমার ! আই উইল কিল ইউ ।
সিস্টারদের হুড়োহুড়ি পড়ে গেল । একজন নার্স সাদা চাদর দিয়ে ডেডবডি ঢেকে দিল । তপনকিরণ মাকে জড়িয়ে ধরলেন । বিশ্বময়ী দেবী বললেন - এখন ভেঙে পড়লে চলবে না বাছা । সূর্য্যকে খবর দিতে হবে । পাড়ার লোকজনদের ডেকে আনতে হবে । আমি বাড়ি চললাম - গোয়াবাগানে । বধুবরণ করতে হবে না !
তপনকিরণের অনুকে ছেড়ে যেতে মন চায় না । অতি ধীরে মুখ থেকে ঢাকনা সরিয়ে অপালে চুম্ভন করলেন। অস্ফুটে বললেন - একটিবার আমায় ক্ষমা করলে না অনু। ক্রোধে অন্ধ হয়ে আমি না হয় ক্ষমাহীন ভুল করে ফেলেছি। তুমি তো নিজগুনে একবার ক্ষমা করে দিলেই পারতে ! এখন আমি ছেলের কাছে মুখ দেখাবো কি করে !
ডক্টর বসু চার ঘন্টা পর আবার এলেন । আরেকবার দেহ খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হলেন মিসেস চৌধুরী ইজ ডেড। তারপর সার্টিফিকেটে সিগনেচার করে চলে গেলেন ।
তাঁর মনটাও ভারাক্রান্ত হয়ে উঠল । তিনি মি. সেনশর্মাকে ফোন করে জানতে চাইলেন পবন কুমারের কতদিনের জামিন হয়েছে।
সেনশর্মা বললেন - একমাস। তা পূরণ হতে আরও পাঁচ ছয়দিন বাকি আছে ।
- ও । আপনি কি কোনভাবে ওকে অন্য কেসে জড়িয়ে গ্রেপ্তার করতে পারবেন? ফলস কেস নয়; আমি কেস দিচ্ছি । আপনার হোয়াটসঅ্যাপ খুলে দেখে নেবেন।
( চলবে )
