গোয়েন্দা ( ধারাবাহিক)
গোয়েন্দা ( ধারাবাহিক)
পর্ব ঊনচল্লিশ
প্রশ্ন যত ছড়ায়; উত্তর তত গড়ায় । পবন কুমার অরুণকিরণ হত্যার জন্য দায়ী বা যুক্ত কি না তার ফলাফলের চেয়েও পঞ্চাননের কাছে যা বড় প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দিল তা'তে তার নিরাপত্তার দিকটিও পুলিশ খতিয়ে দেখছে ।
এ তো থালায় ভাত বেড়ে দেওয়া নয়; বেশী হলে তুলে
নাও, কম পড়লে আরো দাও । এ যে থানায় হাত বাড়িয়ে দেওয়া - আ বৈল মুঝে মার ।
সেই দশা এখন পবন কুমারের । যত মিথ্যাচার করে তত প্রশ্ন আকাশ থেকে পড়ে । এক সময় নাজেহাল হয়ে স্বীকার করে নেন তিনি কালাযাদুর আসল নায়ক ।
বিশ্বময়ী দেবীর জবানবন্দী পেয়ে আরও একটি নতুন কেসে পবন কুমার জড়িয়ে পড়লেন ।
কেমন যাদুবলে যেন সব গিঁট এক এক করে খুলে যাচ্ছে। সূর্য্যকিরণ ভীষণ খুশি। ঠাকুর্দা হত্যার পর্দা ফাঁস হতে চলেছে ।
মিঃ দস্তিদার বিশ্বময়ী দেবীকে বললেন - অবাক হচ্ছি আপনারা এ ব্যাপারে আইনের আশ্রয় নেননি বলে । একজন সক্ষম ব্যক্তির অস্বাভাবিক মৃত্যু হল আর আপনারা লোকের কথায় চুপ থেকে গেলেন - দিস ইজ অলসো এ টাইপ অফ ক্রাইম । যাই হোক, আমি বলছি, আপনারা কেসটা নতুন করে ওপেন করুন। নিকটস্থ থানায় আজই একটা ডায়েরী লিখিয়ে দিয়ে আসুন ।
আচ্ছা ম্যাডাম, পবন কুমার ঢাঙ নামের কাউকে আপনি ট্রাস্টি বোর্ডের সেক্রেটারি পদে বহাল করেছিলেন?
- হুঁ তো ! আমি সরাসরি ওকে নিয়োগ দিই নি । বোর্ডের চেয়ারম্যান ওকে সচিব নিযুক্ত করেছিলেন । এবার ও কি ভাবে এসেছিল জানি না ।
- টাকা দিয়ে - মানে চেয়ারম্যানকে ঘুষ দিয়ে ঢুকেছিল নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য । তবে এটা ঠিক যে নিজের ভুলের মাশুল ওকে দিতেই হবে ।
- ওকে কি আপনারা গ্রেপ্তার করেছেন ?
মিঃ আলাপন দস্তিদার এবার একটু ঘুরিয়ে বললেন - সেটা বড় কথা নয় । আপনাদের জবানবন্দী না পেলে কেসই দাঁড়াবে না!
- ওই পাষণ্ড আমার বউমাকেও খুন করেছে । আপনারা ডাক্তার সৃঞ্জয় বসুর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তার প্রমাণ পেয়ে যাবেন । সিসিটিভি ফুটেজে তার বিবরণ আছে।
- স্ট্রেঞ্জ ! এক সাথে এত কেস ! ফাঁসি না হয়ে যায় না ।
ঠিক আছে ম্যাডাম আমরা আবার আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করব ।
ফোন কেটে দিয়ে মিঃ দস্তিদার সহযোগীদের বললেন - যা তথ্য পেয়েছি তাতে একটা বড় কেস শীঘ্রই জমা পড়বে আদালতে ।
বিশ্বময়ী দেবী ছেলে ও নাতি দু'জনকেই বললেন - আমায় থানায় নিয়ে চল । ডায়েরী করে আসি ।
সূর্য্যকিরণ খুব খুশি। নাচতে নাচতে বলল - চল ঠাম্মা। আমি নিয়ে যাচ্ছি। ওঁরা থানায় গেলেন ।
প্রশ্নোত্তর পর্ব মিটে যেতেই পঞ্চানন ওরফে বিরিঞ্চিবাবা
আলাপন দস্তিদারের নিকট তার প্রাণ রক্ষার আবেদন জানাল ।
- স্যার যা কিছু বলেছি সবই সত্যি বলেছি। সূর্য্যর ঠাকুর্দাকে এই নরপশুই খুন করেছে। অন্তত আমার বিবেক সে কথাই বলে ।
পবন কুমার জ্বলন্ত দৃষ্টি নিয়ে পঞ্চাননের দিকে চাইলেন ।
- আর কিসের ভয় দেখাও মিঃ পবন কুমার ঢাঙ ? আজ থেকে আমার নাম থেকে ঢাঙ পদবীটা তুলে দিলাম ।
পবন কুমারকে পুলিশ নিয়ে গেল ।
তা'বলে মিঃ করালীপ্রসাদ সেনশর্মা কিন্তু চুপ করে বসে পড়েননি । কেসের যাবতীয় তথ্য ডক্টর সৃঞ্জয় বসুর হাতে তুলে দিয়েছেন । এমনকি অনুপ্রভা দেবীকে তাঁর বাড়িতে ভয় দেখিয়ে পবন কুমার যে সব কথা বলে গিয়েছিলেন হেমলতাকে থানায় ডেকে সব জেনে নিয়েছিলেন । সেই তথ্যও তিনি ডাক্তারবাবুকে দিয়েছেন ।
ডক্টর বসু সব তথ্য একত্রিত করে বিশ্বময়ীর আইনি উপদেষ্টা শ্রীযুক্ত মানিক আচার্য্যের হাতে ন্যস্ত করে আদালতে একটা কেস ফাইল করতে বললেন । সেইমত হাইকোর্টে মামলা দায়ের হল ।
শুনানির পর শুনানি চলতে লাগল । আর পবন কুমার প্রতিটি কেসে মূল আসামী বলে গণ্য হতে লাগলেন ।
পঞ্চাননের দু'বছর সশ্রম কারাদণ্ড হল । রায় ঘোষিত হবার আগে পঞ্চানন অবশ্য একটা নতুন চেষ্টা করেছিল অন্তত যাতে লঘু শাস্তি পায় ।
পঞ্চানন আদালতকে বলেছিল - স্যার, যে ভাবেই হোক আমিই যে ঈশিকা সামন্তের শ্লীলতা হানি করেছি তাতে কোন সন্দেহ নেই । এমনকি অবাঞ্ছিত গর্ভসঞ্চার করেছি তাও নি:সন্দেহ। এতে ঈশিকা সামন্তের ভবিষ্যৎ হয়তো অনিশ্চিত হতে পারে । স্যার যদি অনুমতি এবং অঢয় দেন তাহলে বলি !
- বিচারক বললেন - বলে যাও।
- স্যার ঈশিকা সামন্ত এবং তার পরিবার এই আদালতে আছেন । তাঁরা সকলে যদি সম্মতি দেন তবে ঈশিকার দায়িত্ব আমি নিতে চাই। আমার পাপই বলুন বা যাদুর খেলাই বলুন সবই তো আমা-কর্তৃক সৃষ্ট । অতএব আমি ঈশিকাকে বিয়ে করে আমার পাপস্খালন করতে চাই।
বিচারক প্রথমে একটু আবেগতাড়িত হয়েছিলেন । কিন্তু ঈশিকার অনীহা এবং তার বাবা মায়ের নিষেধে তিনি রায়ে কোন পরিবর্তন না করে দু'বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ঘোষণা করলেন ।
ঈশিকা এবং তার পরিবার এই রায়ে সন্তুষ্ট হলেন না। তাঁরা এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপীল করবেন বলে জানালেন তাঁদের উকিল ।
( চলবে )
