শঙ্খনীল শিপন

Abstract Classics Others

4  

শঙ্খনীল শিপন

Abstract Classics Others

একটি পুতুলের আত্মকাহিনী

একটি পুতুলের আত্মকাহিনী

8 mins
3.7K


-শঙ্খনীল শিপন

আমার নাম মোনা, প্রিন্সেস মোনা। সে আমারে মোনা নামেই ডাকে। তার নাম অর্চিশা। প্রিন্সেস অর্চিশা। আমি ওরে ছোট্ট করে অর্চি ডাকি। তার আরেকটা নাম আছে এলসা৷ আমার নামটা পছন্দ না।

ওহ, আমার কথা তো বলাই হয় নি। আমি একটা পুতুল। সফট টেডি টাইপ তুলার পুতুল। আমার জন্ম হয় এই জায়গা থেকে অনেকদূরে। কতদূরে আমি জানি না। আমার জন্মের পরে আমার যে প্রথম স্মৃতিগুলো মনে আছে তা হলো এইরকম,

একটা অনেক বড় আলো জমকালো গিফট শপেই আমার প্রথম চোখ মেলে চাওয়া। আমি ছিলাম পুতুলের সারির প্রথম সারিতে। আমার আশেপাশে আমারে ভীড় করে আরোও কতগুলো পুতুল। তারা সবাই সুন্দর সুন্দর পোশাক পরিধান করে আছে। আমি একটা পিঙ্ক কালারের জামা পরেছিলাম। আমি যে দোকানটায় ছিলাম সেখানে দিন রাতে কত মানুষের আনাগোনা। আমি মানুষের আনাগোনা দেখতে পছন্দ করতাম। কিন্তু দিনের পর দিন অসয্য লাগা শুরু হয়েছিলো। আমার আশেপাশের বন্ধুদের সংখ্যা দিন দিন কমতেই থাকলো। আর আমি একটা ছোট্ট পরিবার পাওয়ার আশায় দিনকে দিন বসে থাকতাম। অবশ্য, কিছুদিনের মধ্যেই আমার ভাগ্য বদল হয়। একজন শার্ট-টাই পড়া ভদ্রলোকের মনে হয় আমাকে পছন্দ হয়েছিলো, তাই দোকানদারের সাথে আর দাম কষাকষি না করেই কিনে নেয়।

...

তারপর কতদূর গেলাম জানি না। বোধহয় অনেকটা দূর। যাই হোক, যেখানে আসছি সেই যায়গাটা আমার খুব পছন্দ হলো। আমাকে বাক্স থেকে বের করা হলে, প্রথমেই চোখে পড়ে একটা ফুটফুটে বাচ্চা মেয়ের মুখ। সেও আমাকে দেখে অবাক হয়। আমাকে এমনভাবে বুকে জড়িয়ে নিলো যেন আমি তার কতকালের পরিচিতা, কতদিন পর দেখা হওয়ায় আবেগে গলা জড়িয়ে ধরেছে। সেই দিনটা ছিলো আমার জন্য সবচেয়ে সুন্দর, সুখকর দিন। আমার এতো দিনের ইচ্ছাপূরণ হয়েছে। একটা সুন্দর ছোট্ট ফুটফুটে বাচ্চাকে খেলার সাথি হিসেবে পেয়েছি। আমার সেদিনই ভীষণ কথা বলতে ইচ্ছে করলো, কিন্তু আমি কথা বলতে পারি না। এক্কেবারে যে কথা বলতে পারি না তা নয়। আসলে আমাদের কথা কেউ শুনতে চায় না। আর চায় না বলেই শুনতে পায় না। তবে অর্চি বোধহয় আমার কথা শুনতে পারতো। কীভাবে বোঝলাম? পরে বলছি।

যা বলছিলাম, আমাকে পাওয়ার পর অর্চি নামের ওই মেয়েটা ভীষণ খুশি হয়। সে আমাকে তার অন্যান্য পুতুলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। রুপাঞ্জেল, টিংকারবেল, ওলাফ আরও অনেকের সাথে পরিচয় হয়। অর্চির খেলনা পুতুল অনেক। তবে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আমি ওর কাছে ভীষণ প্রিয় হয়ে উঠলাম। আমার নাম প্রিন্সেস মোনা রাখা হয়। আমার নাম রাখে অর্চির বড় ভাই। অর্চির বড় ভাইকে আমার পছন্দ না। তবে নামটা আমার ভীষণ পছন্দ হয়।

সেদিন প্রথম রাত আমার খুব একটা ভালো যায় নি। আমাকে আবার যে বাক্সে করে আনা হয়, সেই বাক্সেই রেখে দেওয়া হয়। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম, আমাকে বোধহয় অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়া হবে। অর্চি তখন ঘুমোচ্ছিলো। আমি ভয়ে ভয়ে সারারাত কাটালাম। পরের দিন ঘুম ভাঙলে অর্চির গলা শুনে স্বস্তি পাই, "মা, আমার পুতুল কই,?" তখন একটু সময়ের জন্য আমাকে অর্চির কাছে দেওয়া হয়৷ পরে সে স্কুলে চলে যায়। আমাকে টেবিলে বসিয়ে রেখে ওরা সবাই চলে যায়। অর্চির মা অর্চি আর তার ভাইকে নিয়ে স্কুলে যায়। অর্চির বাবা অফিসে যায় আরও সকালে। একটু পরে অর্চির মা আসেন, রান্না করেন, ঘরের হাল্কা কাজ সারেন, আবার খাবার নিয়ে স্কুলে চলে যান। আসেন আরও এক ঘন্টা পর। অর্চি স্কুলে যাওয়ার পর সময়টা আমার অসয্য লাগে।

অর্চি আসার পর মনে একটা শান্তি আসে। অর্চি এসেই আমার খোঁজ করে৷ তার ভাই কে বলে, "বোঝলি দাদা, আমাদের নতুন পুতুলটার জন্য একটা নাম আর থাকার যায়গা খোঁজতে হবে। এই পুতুলটা আমার কাছে অনেক ভালো লাগছে।" শুনে আমারও অনেক ভালো লাগলো, ঈশ্ কত্ত কিউট মেয়েটা! তারপর তারা দুজন মিলে প্রথমে আমার নাম রাখে। মিকি, এরোরা, মিলান আরও কত্তকি! সবশেষে স্থির হয়, প্রিন্সেস মোনা, সংক্ষেপে মোনা। নামটা আমারও অনেক পছন্দ হয়। কেমন একটা আলতো স্নেহ আছে নামের মধ্যে।

নাম রাখার পর্ব শেষ হলে বাড়ি বানানোর পর্ব শুরু হয়। বাক্স কেঁটে ঘর বানানো হয়। বিছানা, বালিশ সবকিছুর ব্যবস্থা করা হয়। ঘরটা আমার পছন্দ হয়। ঘরের চারপাশে ছোট ছোট পাতা আর ফুল দিয়ে সাজানো হয়।

বিকালে অর্চির বন্ধুরা আসে। অর্চি আমাকে তার বন্ধুদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। তার বন্ধুরাও আমাকে কোলে নেয়, আদর করে। সবাই বলছিলো, 'কী সুন্দর পুতুল! কই পেলি? কে দিয়েছে?" এইসব। আহা! আমার যে কী স্পেশাল ফিল হচ্ছিলো। অর্চির থেকে আমি জানতে পারলাম আমি শিলং থেকে এসেছি। শিলং কোন যায়গা আমি জানি না। অর্চির বাবা ব্যবসায়ী দরকারে মাঝে মধ্যেই শিলং যান। সেখান থেকেই আমাকে নিয়ে আসেন। আমার জন্মস্থানের প্রতি আমি আগ্রহী না। আমার এখন অর্চির সাথে থাকতেই বেশি ভালো লাগে।

অর্চির সাথে আমার বেশ কিছু সুন্দর মুহুর্ত আছে, তার সবটুকু বলতে গেলে রাত পার হয়ে যাবে। আমি সংক্ষেপে বলছি।

অর্চি প্রথম বেশ কয়েকদিন আমাকে কোলে নিয়ে ঘুমাতো। দিনের বেলা আমি বাক্সের ঘরে থাকলেও রাতের বেলা আর অর্চির খেলার সময়ে আমি সারাক্ষণই অর্চির সাথে থাকতাম, খেলা করতাম। ওর সাথে খেলতে আমার ভালো লাগতো।

স্কুল থেকে এসে অর্চি আমাকে স্কুলে ঘটে যাওয়া মজার ঘটনা বলতো। ওর সব মনের কথাই আমাকে বলতো। কীসে দুঃখ পেয়েছে, কীসে খুশি হয়েছে, সব কথা।

অহ আচ্ছা একটা কথা বলতে ভূলে গেছি। শুরুতে বলছিলাম অর্চি আমার কথা শুনতে পারতো। সেটা কীভাবে বোঝলাম জানেন? খুব সহজ। অর্চি কোনো জামা পড়ার আগে আমাকে বলতো, কোনটা পড়বে। আমি যদি লাল রঙের জামার কথা বলি তো অর্চি লাল রঙের জামাই পড়তো। এভাবে প্রায় সব কথাই অর্চি শুনতে পারতো। একটু কম্পলিকেটেড করে বলি, অর্চি একদিন আমাকে বললো, "আচ্ছা মোনা, এই হলুদ জামাটা পড়বো না কি নীল জামাটা পড়বো?" আমি বললাম, "নীলটা পড়ো।" সে বললো, "হ্যাঁ নীলটা সুন্দর, কিন্তু বাবা বলেছে হলুদটা পড়তে। সরি মোনা, আমি তোমার কথা রাখতে পারি নি। রাগ করো না।" আসলেই হলুদ জামায় অর্চিকে বেশ সুন্দর লাগছিলো। জামা পড়ে সে আমার কাছে আসলে বলে, "রাগ করো না প্রিয় বাবুটা, দেখো, আমাকে কী সুন্দর লাগছে?" আমি বললাম," অপূর্ব সুন্দর লাগছে, এখন একটা হলুদ রঙের টিপ পড়ে নাও, আরও ভালো লাগবে।" অর্চি বললো," হ্যাঁ, থ্যানক ইউ, আচ্ছা।" বলেই সে একটা হলুদ টিপ বের করে কপালে দিলো। এভাবেই সে আমার সাথে কথা বলতো। আমিও ওর সাথে অনেক কথা বলতাম।

অর্চি আমাকে গল্প শুনাতো। রুপাঞ্জেল, সিন্ড্রেলা আরও অনেক রাজকুমারী-রাজকুমারের গল্প। অর্চি আমাকে এলসা নামের ফ্রোজেনের গল্পও শুনায়। এলসার একা থাকার গল্প, পরবর্তী স্বাধীন জীবনের গল্প, আমাকে শিহরিত করেছিলো। তারপর থেকে আমার অর্চির অন্য নাম এলসা নামের প্রতি মায়া জন্মে।

...

এভাবেই অনেক দিন কাঁটে। অর্চি এখন ক্লাস টু তে উঠেছে। তার অনেকগুলো বান্ধবীও হয়েছে। তারা প্রায়ই অর্চিদের বাসায় খেলতে আসে৷ অর্চি তাদের নিয়ে খেলনা বাটি ইত্যাদি খেলে। অর্চির আরও অনেকগুলো পুতুলবন্ধুও হয়েছে। সুন্দর সুন্দর অনেক পুতুল। তবে নতুন পুতুলগুলোর জন্য অর্চি এখন আর কষ্ট করে ঘর বানায় না। ফুল পাতা দিয়ে ঘর সাজায় না৷ সেগুলো পড়ে থাকে, শোকেজ, টেবিল কিংবা বিছানায়। অর্চি এখন আমাকেও কম সময় দেওয়া শুরু করে দিয়েছে। আমার সাথে কথা বলে না, গল্প করে না৷ সব গল্প ওর বন্ধু-বান্ধবীদে সাথে। হায়, অর্চি এখন আমার কথাও শুনতে পায় না। আমি অনেকবার বলার চেষ্টা করেছি, "আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি, আমাকে সময় না দেও, অবহেলা করো না! আমার অনেক কষ্ট হয়।" কিন্তু আমার কথা কে শুনে৷

একদিন অর্চির বান্ধবীরা অর্চির সাথে খেলা করছিলো। ওর এক বান্ধবী বলে, "এটা কী রে, কী বিচ্চিরি লাগছে, এটাকে ফেলে দে।" অর্চি অবশ্য আমাকে ফেলে দিতে রাজি ছিলো না। তবে সেদিন ওর বান্ধবীরা আমাকে নিয়ে টানাটানি করে, একজনের হাত থেকে অন্যজনের হাতে টানাটানি, লুফালুফি শুরু করে। সবাই কী বিচ্চিরি ভাবে হাসছিলো, আর কেউ আমার কথা ভাবলই না। আমারও যে ব্যাথা লাগে, কেউ বোঝলো না। অর্চিও না! ওদের হাত লুফালুফির স্বীকার হয়ে আমি গিয়ে পড়ি, এক্কেবারে বিছানার নীচে, অনেকখানি খাটো আর চিপা যায়গা। সবাই উকি দিয়ে দেখলো, তুলার চেষ্টা করলো, কিন্তু তুলতে না পারায় হাল ছেড়ে দিলো। কেউ কেউ বলাবলি করছিলো, "যাজ্ঞে ভালোই হয়েছে, ও ওখানেই থাক,। বিদায় বন্ধু।" আমার সেদিন খুব কষ্ট হচ্ছিলো।

কত দিন ছিলাম বিছানার ওই অন্ধকার কোণায় আমার কোনো হিসাব নেই। মনে হয় বছর খানেক। তবে এই এক বছর আমার সাত জীবনের সমান মনে হচ্ছিলো। প্রায় এক বছর পর অর্চির বাবা বিছানা পরিবর্তন করার সময় আমাকে তুলে নেয়। অর্চির মা আমাকে দেখে বলে,"আহ, কী বিচ্চিরি, এই শুনছো, এটাকে ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দেই।" আমার জামা-কাপড়, হাত-পায়ে এক মন ধুলাবালি৷ আমার মুক্তির পর একটু প্রাণ ভরে শ্বাস নিব তার উপায় নেই, আমাকে নাকি ফেলে দিবে। ঠিকই তো এভাবে বেঁচে থাকার কোনো মানে হয় না। কিন্তু অর্চি? ও কোঁথায়? ও কে তো দেখতে পাচ্ছি না। আমাকে বিসর্জন দেওয়ার আগে ঘরের এক কোণে রাখা হয়েছিলো কিছুক্ষণ। আমি সেই সময়টা অর্চির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। যাওয়ার আগে যদি একটিবার ওর মুখ দেখতে পাই!

হঠাৎ একটা পরিচিক কন্ঠস্বরে চমকে উঠি৷ "ও মা, এটাকে কই পেলে?" অর্চি! অর্চি এত বড় হয়ে গেছে? ও আর আগের মত গুটিশুটি খাওয়া চিকন মেয়ে নাই৷ বেশ গুলোগুলো হয়ে গেছে। তবে আগের মত এত সুন্দর লাগছে না। কিংবা হঠাৎ অপরিচতার মত মনে হওয়ায় অসুন্দর লাগছে। আমরা অপরিচিত মুখের সৌন্দর্যতা উপলব্ধি করতে পারি না। অনেক দিন একসাথে থাকার কারণে থাকে সুন্দর লাগতে শুরু করে। যাদের প্রথম দেখায় সুন্দর লাগে, তার সৌন্দর্যতা দিন দিন ম্লান হয়ে যায়।

শেষ বারের মত অর্চিকে দেখছি। এর পর কোথায় যাবো, কী পরিণতি হবে জানি না। তাই একটু মন খারাপ লাগছে। অর্চির মা বললেন, "এটাকে ফেলে দেই মা?" কিন্তু অর্চি অসম্মতি জানায়। সে আমাকে তুলে নেয়, এবং পরিষ্কার করে। ধুলোবালি ঝাড়ে। আর বলে, "এটা আমার সাথেই থাকবে, ও আমার প্রিয় মোনা, তুমি কেমন আছো?"

সেই দিনটা আমার খুব আনন্দে কাটলো। আমি আবারও অর্চিকে ফিরে পেয়েছি। উফ্! কী যে আনন্দ! আমার আগের সব দুঃখ কেঁটে গেলো। তবে এ সুখ বেশিদিন থাকলো না। অর্চি আমার সাথে আগের নত কথা বলে না৷ মাঝে মাঝে কথা বললেও, বেশির ভাগ সময় আমি মাটিতে, এখানে সেখানে পরে থাকি। আমার দিনদিন সবকিছু অসয্য লাগতে শুরু করে দিয়েছে। আমি আমার পূর্বের দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করি। অর্চির সাথে প্রথম দেখা, আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানো, এইসব ভাবি। কিন্তু দিনগুলো আর ফিরে পাওয়া যাবে না। পরিবর্তন সময়ের নিয়ম। ভালো তো এটা, আমি এখনো অর্চির সাথেই আছি৷ ওর মায়াবী মুখ দেখলে আমি সব ভূলে যাই।

অর্চি দিনদিন অনেক খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে। কথায় কথায় রাগ, চেচামেচি করে। আমার সাথেও মাঝে মাঝে রাগ দেখায়। থাপ্পর দেয়, মারে। আমার ভীষণ খারাপ লাগে। মাঝে মাঝে, পানি দিয়ে ইঞ্জেকশন দেয়৷ আমার ব্যাথা লাগে। অর্চি কী বোঝে না? অর্চি আমার আর্থনাদ শুনে না?

দিনদিন আমার অবস্থা আরও বিচ্চিরি হয়। আমাকে আর আগের মত সুন্দর লাগে না। জীর্ণ জামা আর ক্ষত-বিক্ষত শারিরীক অবস্থা নিয়ে ঘরের এক কোনায় পড়ে থাকি। মাঝে মাঝে অর্চি আমাকে ভিজিয়ে ঘর মোছে। এটা নাকি তার খেলা। আমি এখন তার কাছে কেবলই সাধারণ একটা ফেলনা পুতুল!

তারপর একদিন আমি এতটাই পরিত্যক্ত হই যে, আমাকে ঘরে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ে। একদিন সত্যি সত্যি আমাকে ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দেওয়া হয়। অর্চি স্কুলে ছিলো তখন। আর থাকলেও বোধহয় প্রতিবাদ করতো না। আমি এখন জীর্ণ হয়ে গেছি তার কাছে।

এখন আমি এক পরিত্যক্ত ময়লা ফেলার ভগ্নস্তোপে পড়ে আছি। প্রতিদিন ট্রাক ভর্তি ময়লা, পঁচা খাবার এখানে আসে। আকাশে সবসময় শকুনের দল ঘোরে বেড়ায়। পঁচা বাসি খাবার খেতে তারা নীচে নামে। চারিদিকে কী বিছরি গন্ধ! আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। আমার তো মাঝে মাঝে চিৎকার দিয়ে বলতে ইচ্ছে করে, "ঈশ্বর আমাকে মুক্তি দাও!" আমি সয্য করতে পারছি না। কিন্তু ঈশ্বর আমাদের অমরত্ব দিয়েছেন। আমরা চাইলেও মরতে পারি না। টুকরো টুকরো হয়েও বেঁচে থাকি। এভাবে কতকাল বেঁচে থাকবো জানি না। মনে শুধু একটাই আফসোস, একবার শেষবারের মত অর্চির মুখ দেখা হলো না। জীবনে আর দেখবোও না। আচ্ছা, অর্চিও কী আমাকে নিয়ে ভাবে? ভাবে কী??


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract