বোবা মেয়ে
বোবা মেয়ে
পাত্রপক্ষ ঘরে বসে আছে। কন্যা এখনো রেডি হয় নি। কখন থেকে পিছনের পুকুরপাড়ে বসে আছে। কিছু তেই আনা যাচ্ছে না। বিয়েতে মত নেই সরস্বতীর। কিছুতেই কথাটা বোঝাতে পারছে না। পারবে কি করে, বোবা মেয়ে। কথা বলতে পারে না। তাই তাকে অনিচ্ছা সত্বেও বড় পক্ষের সামনে আসতে হয়।
বরপক্ষ জানতো, মেয়েটি বোবা। তাও কিসের জন্য রাজি হয়ে যায়। সরস্বতী এই চতুর্থ বার বর পক্ষের সামনে আসে। বরকে দেখেও পছন্দ হয় তার। তারপর বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়। সামনের মাসেই বিয়ে।
সরস্বতী কিছুতেই বোঝে উঠতে পারে না, বরপক্ষ কি দেখে তাকে পছন্দ করেছে। বিয়ের দিন যত কাছে আসছে, সরস্বতী কেমন জানি উদাস হয়ে যাচ্ছে। সারাদিন পুকুরপাড়ে বসে থাকে। একা একা কারো সাথে কথা বলতে চায়। এই পুকুরপাড় ছোটবেলা থেকেই খুব ভালো লাগার যায়গা। যখনই মন খারাপ থাকে পুকুরপাড়ে এসে বসে থাকে। বৃষ্টির দিনে ঝাপিয়ে পড়ে, স্নান করে। আর মা বাবা? এই সবকিছু ছেড়ে ওকে চলে যেতে হবে, ও সেটা কিছুতেই ভাবতে পারে না।
আজ ওর বিয়ে। পাড়াশুদ্ধ সবাই এসেছে। যারা ওর বেশি বয়স নিয়ে হাসি টাট্টা করতো, বারবার বিয়ে ভাঙা নিয়ে রঙ্গ তামাসা করতো তারাও এসেছে। পেটপুরে খাওয়া দাওয়া হয়েছে। গোধুলি লগ্নে বিয়ে।
কনে সেজে বসে আছে সরস্বতী। চোখে হাজারো স্বপ্ন। আজ সত্যিই তার বিয়ে হচ্ছে, কথাটা ভাবতেই যেনো গায়ে কাটা দেয়।
ওদিকে বরপক্ষ এসে গিয়েছে। কনেকে ঘিরে বসে ছিলো তার কয়েকজন বান্ধবী। এমন সময় বাইরে চেঁচামেচি শুনে তার বান্ধবীরা দরজার পাশে ভীর করে। সরস্বতী কিছুই বোঝে উঠতে পারছিলো না। খানিকবাদে সেও বান্ধবীদের আড়ালে বাহিরে তাকায়। কনেপক্ষের সাথে বরপক্ষের ঝামেলা চলছে। বরপক্ষ বর নিয়ে চলে যাবে যাবে। ওদিকে তার বাবা হাত পা ধরছে। সরস্বতীর বোঝতে অসুবিধে হচ্ছিল না যে, এই ঝামেলা যৌতুক নিয়েই। এর আগেও যারা সরস্বতীকে বিয়ে করতে এসেছিলো, তারাও বেশ মোটা অংকের যৌতুকের দাবী করেছিলো। বৃদ্ধ পিতার পক্ষে তা সম্ভব নয়। সামান্য দিনমজুর এর কাজ করেন তিনি। ওদিকে এক পর্যায়ে বরপক্ষ বর নিয়ে চলেই যায়। পিতার মাথায় হাত পড়ে। সব থমথমে হয়ে যায়। যদিও সরস্বতী সদা সর্বদাই থমথমে। এবার পিতা তার মেয়েকে মুখ দেখাবে কি করে? মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়ে সরস্বতীর বাবার।
পরক্ষণেই সরস্বতীর মা চিৎকার দিয়ে উঠেন। সরস্বতীকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। সবাই জানতো, সরস্বতী এখন পুকুরপাড়েই থাকবে। তাই পুকুরপাড়ে জড়ো হয় সবাই। কিন্তু কই? সরস্বতী তো এখানেও নেই।
কিছুক্ষণ পর লাল রঙের শাড়ির আঁচল ভেসে উঠে পুকুরের মাঝখানে।
-