Scarlett MonaLiza

Fantasy Thriller horror

4  

Scarlett MonaLiza

Fantasy Thriller horror

এএরোনটিক্স অফ্ সোভিয়েত ইউনিট

এএরোনটিক্স অফ্ সোভিয়েত ইউনিট

10 mins
400


যান্ত্রিক আওয়াজটা আবার কানে যেতেই নার্ভ গুলো সয়ংক্রিয় হয়ে ওঠে মর্গানের। সে ধীরে ধীরে চোখ খোলে আর হাত কএক দূরে রাখা শাটেলটা দেখতে পায়। ওঠার চেষ্টা করে কিন্তু ভুষভুষে কাদায় বহুক্ষণ পড়ে থাকার ফলে স্পেস হেলমেটের কাঁচটা ঝাপসা হয়ে গেছে। তাউ স্পেসক্রাফটটা দেখে সে বাঁচার তাগিদ খুঁজে পায়। কিন্তু সে এটা বুঝতে পারেনা যে তাকেও অনুসরণ করছে কএক চোঁখের রাশি। কাদামাখা স্পেসসুট পড়ে শাটেলটার কাছে যখন সে পৌঁছায় তখন তার নিয়তিকে দেখতে পায়। স্পেসশাটেলের পিছনের অংশটা গায়েব। তার বেরিয়ে আছে বিচ্ছিরি ভাবে। সেগুলি দিয়ে স্পার্ক হচ্ছে, ইত্যাদি। অবশ্য সে যা পাপ করেছে তাতে তার এমন পরিণতি হওয়াটাই যথার্থ ছিলো। যখন সে আবার কান ফাটানো যান্ত্রিক শব্দগুলি শুনতে পায় তখন শব্দকারদেরও দেখতে পায়। অতঃপর মর্গান বুঝতে পারে মৃত্যু তার খুব কাছে। এবার চোখদুটো বন্ধ হয়ে যায় তার আপনাআপনি।

হাডসন স্পেসক্রাফটটা গতো তৃষে জুলাই রওনা হয়েছিল সোভিয়েত এএরোনটিকাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট অ্যান্ড স্পেস স্টেশন অরোফে সারিস থেকে। ঘণ্টায় আঠাশ হাজার কিলোমিটার রফতার বেগে উড়ছিল এই হাডসন মহাকাশ যানটা। পৃথিবীর কক্ষপথ ছেড়ে বেরোতেই রাডারে সেটা ধরা পড়ে। পাইলট কাম ক্যাপ্টেন মর্গান ছিলো এই মিশনের হেড। তারই নেতৃত্বে তৈরি হয় টিম ডেমন। বাছাই করা মহাকাশচারীদের নিয়ে গঠিত এই দলের মধ্যে মিলানার এটা প্রথম মিশন। যদিও সে এই দলে যোগ দেওয়ার আগেই তৈরি হইছিলো 'টিম ডেমন', ডনষ্টন, এডগার, মার্কো, অনিসিম আর নিকোলাইকে নিয়ে। অনিসিমের সুপারিশে মিলানা টিম ডেমনের সাথে মর্গানের নেতৃত্বে তার প্রথম মিশন শুরু করে। কিন্তু হটাৎ যাত্রার তেত্রিশ দিনে শাটেলে বিভ্রাট দেখা যায়। রাডারে ধরা পড়তেই ইনস্টিটিউট থেকে যোগাযোগ করে কিন্তু ট্রান্সমিটারেও কিছু গন্ডগোল দেখা দেয় যার ফলে অডিও ক্লিয়ার হচ্ছেনা। ডনষ্টন আর নিকোলাইকে ককপিটে রেখে মর্গান একভাবে ইনস্টিটিউটে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। ওইদিকে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণ খুঁজে না পেয়ে নিকোলাইএর কপাল ঘামে ভিজে যায়। ডনষ্টন তাকে আশ্বাস দেয় আর অ্যান্টি অ্যাঞ্জাইটির একটা ট্যাবলেট ধরে তার মুখের সামনে। মর্গান আবার ককপিটে ফিরে যায় ও নিকোলাইকে বেসমেন্টে যাওয়ার আদেশ দেয়। সে স্থান ত্যাগ করলে ডনষ্টনের কাছে জানতে চায় মর্গান তাদের যানের গতিবিধির ব্যাপারে। হটাৎ করে যানটি চালানোর নির্দেশ দেওয়ায় ডনষ্টন প্রথমে ক্যাপ্টেনের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়। তারপর বলে ঘন্টাখানেকের মধ্যেই তারা গোলাপী আভার যে উপগ্রহটার উপর এতদিন ধরে রিসার্চ করছিল তাতে ল্যান্ড করবে। বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করেই সে প্রমাণ করে দেবে গোলাপী আভা মানেই বিষাক্ত গ্যাস নয়। সাহায্য সঙ্গী ও সঙ্গিনী হিসেবে মার্কো ও তার বোন মিলানারও নাম থাকবে। কথাগুলো শুনতে শুনতে মর্গানের চোখ ঝিলিক দিয়ে ওঠে। বাচ্চা ছেলেমেয়েরাই দেশের ভবিষ্যত কিন্তু এতে তার লাভ কি। বইয়ের কোনো কোনেও তার নাম তো থাকবে না। অথচ সে টিম লিডার। বাছাই করা ছেলেমেয়ে গুলোকে নিয়ে দল নির্মাণ তারই। কিন্তু কি বেঈমান এই ভবিষ্যত প্রজন্ম। যে আলো দেখায় তাকেই অন্ধকারে ঠেলে দেয় এরা। ডনষ্টন তখনও কথা বলে যাচ্ছিল কিন্তু মর্গানের কান আর সেসব কথা শুনতে পাচ্ছে না। সে কোনো মিশন আজ অপদি হারেনি আর আজ কটা শিশু তাকে গোহারান হারাবে এটা সে কিছুতেই হতে দেবেনা। তাই ডনষ্টনকে ধমকের সুরে বলল, "তোমার এই ঔদ্ধত্য তোমায় বরবাদ করবে আর ক্যাপ্টেনের আদেশের তোয়াক্কা না করে নিজে একজন সহ পাইলট হয়ে ক্যাপ্টেনকে অপমান করা তোমার প্রাণহানির কারণ হবে"। ডনষ্টন কিছু বুঝতে পারেনা শুধু এইটুকু বোঝে যে মর্গান হয়তো তার নামে ইনস্টিটিউটে কমপ্লেইন করবে তাকে সাসপেন্ড করার জন্য।

বেসল্যাবে নেমে মার্কোকে দেখতে না পেয়ে একটু অবাকই হয় নিকোলাই। তার ব্যাপারে প্রশ্ন করতেই এডগার বলে, "সত্যি কথা বলতে কি, আমরা সবাই জানি, যে 'দি বেস্ট ডুও' বলতে মার্কো আর ডনষ্টন। শুধু আমাদের মধ্যে নয়, গোটা ইনস্টিটিউটের গর্ব ওরা। কিন্তু কি জানো তো ভাই নিকোলাই মার্কো একটু ভুল করে ফেলেছে। ছেলেটা মর্গানের সাথে ঝামেলায় জড়িয়ে সাসপেন্ড হয়ে গেছে। এবার শাস্তি হিসেবে তাকে মর্গান নিজের রেস্টরুমেই আটকে রেখেছে"। অনিসিম বলে, "আমাদের ভুল বুঝোনা নিকোলাই, ও তোমার একার নয় আমাদেরও খুব ভালো বন্ধু ও পার্টনার কিন্তু ওর তরফে কথা বলতে ও নিজেই বারণ করেছিল আর তার কারণটা আশাকরি তুমি জানো। তবে আমি, মানে আমরা মার্কোর কোনো ক্ষতি হতে দেবনা। আমি মিলানাকেও প্রমিস করেছি, ওদের দুই ভাইবোনকে সুস্থ ভাবে বাড়ি ফেরানোর দাইত্ত আমার"। একটা চেয়ার টেনে ওদের সামনে বসে পড়ে নিকোলাই। সবার চোখেই বিরক্তির ছাপ দেখে সে। তারপর মিলানাকে বলে, "তোমার সবকটা টেস্টের রেজাল্ট আমি দেখেছি। তোমার প্রতিটা ট্রেনিং সাকসেসফুল। তুমি ইনস্টিটিউটের একজন সফল মহাকাশচারী হতে পারতে, যদি না......"। "যদি না কি নিকোলাই?" প্রথমবার মিলানা মুখ খোলে। এডগার বলে, "ভুলটা অনিসিমের, তোমার নয়। তুমি শুধু ওর কাছাকাছি থাকতে চাইতে অ্যাম আই রাইট?" মিলানা অনিসিমের দিকে একবার দৃষ্টিপাত করে তারপর এডগারকে বলে, "মার্কো আমাকেও বারণ করেছিল মর্গানের টিম মেম্বার হয়ে কাজ না করতে"। এডগার বলে, "তাহলে বুঝতেই পারছো আমরা কতটা রিস্কে এখানে কাজ করি। আসলে বাইরে থেকে দেখে মনে হয় এমন ভদ্রলোককে টিম লিডার হিসেবে পাওয়া আর স্বর্গ পাওয়া সমান কিন্তু তার আন্ডারে কাজ করলে বোঝা যায়, ইটস ইনফার্ণ অ্যান্ড হি ইজ দি কিং অফ ইনফার্ণ। ও কোনোদিনই আমাদের উঠতে দেবেনা মিলানা। এই মিশনের শেষে আর মার্কো সাসপেন্ড হওয়ার সাথে সাথেই তুমিও কাজ ছেড়ে দাও। প্রয়োজনে কম দক্ষ কোনো টিম লিডারে সাথে কাজ করো কিন্তু মর্গান কখনোই না। আর অনিসিম তুমি কি সত্যিই কিছু বলতে চাওনা?" অনিসিম বলে, "আমিও এই কাজ ছেড়ে দেবো। অন্তত মর্গানকেতো ছেড়েই দেবো। আমি সত্যিই এবার একটু শান্তি চাই, মিলানার সাথে। হয়তো মর্গানকে ছাড়লে ইনস্টিটিউটও ছাড়তে হবে, কিন্তু তাতেও আমি মঞ্জুর। আই অ্যাম রিয়েলি সরি মিলানা, আমি শুধু তোমার কাছাকাছি থাকতে চাইতাম। মার্কো ঠিকই বলতো, আসলে ও ছোটো থেকে তোমাকে পরম যত্নে বড়ো করেছে তো, তাই তোমার ক্ষতি ও চায়নি। ভুলটা আমারই। ও যখন তোমার সুপারিশ করেনি তখন আমার খুব রাগ হয়েছিল, আসলে আমি ভেবেছিলাম হাফ সিস্টার বলে, তোমার ট্যালেন্টটা জগতের থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চায় কিন্তু আজ আমি আর সবটা মুখ বুঝে সহ্য করবো না। তোমরা ওয়েট করো আমি মার্কোকে নিয়ে আসি"। এতক্ষনে নিকোলাই তার একটা হাত চেপে ধরে। ঘাড় নেড়ে তাকে বলে, "মর্গানের রেস্টরুম অর্থাৎ পানিশিং গ্যাস চেম্বার। নামেই ওটা রেস্টরুম, কিন্তু মর্গানকে কখনো সেখানে রেস্ট নিতে দেখেছো তুমি? দেখনি। সে ঠিক পাশের রুমে বিশ্রাম নেয়। এনিওয়েজ তুমি একা কেনো যাবে, আমরাও যাবো। ও কি আমাদের কেউ হয়না"।

সবে মাত্র নিকোলাই কথাটা শেষ করেছে আর সাথে সাথেই কান ফাটানো দুটো গুলির আওয়াজ। কানে তালা লাগার জোগাড়। মিলানা বললো, "কিন্তু স্পেসে তো মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নেই তাহলে কি আমাদের রিসার্চ সাকসেসফুল? ডিড ডনষ্টন রিয়েলি বিকেম দি হিরো অফ দা মিশন?" মিলানার কোথায় এডগার বলে ওঠে, "ডনষ্টন......হিরো অফ দা মিশন......বাই দা ওয়ে, ভাই নিক মর্গান কোথায়"? বেসমেন্ট থেকে ওঠার সিঁড়ির দিকে দৌড়াতে দৌড়াতে জবাব দেয় নিকোলাই, "উইথ ডনষ্টন, অ্যাট ককপিট"। তাকে অনুসরণ করে এডগার। ওদের পিছনে মিলানা আর অনিসিম।

ককপিটের মুখে মর্গানকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে এডগার বলে, "ডনষ্টন"। এডগারের অসম্পূর্ণ কথা মিলানা পুরো করে সে বলে, "স্যার ডনষ্টনের সাথে দেখা করতে চাই। একটা এয়ারগানের আওয়াজ পেয়েছি। ডন ঠিক আছে তো?" মর্গান হাসে তারপর মিলানার মাথায় একটা হাত রেখে বলে, "তোমার কি মনে হয় কিড?" বিদ্যুৎ বেগে অনিসিম মর্গানের হাতটা সরিয়ে দেয় আর সাথে সাথে ক্ষমাও চেয়ে নেয়। তখনই একটা শক্তি টানে শাটেলটাকে। সবাই এদিকওদিক ছিটকে পড়ে আর ককপিট থেকে গড়িয়ে আসা রক্ত ভিজিয়ে দেয় ওদের পোশাকের কিছু অংশ।

এডগার ছুটে গিয়ে স্পেসসুটের গলার কাছটা চেপে মর্গানের। রাগের মাথায় কেউ খেয়ালই করেনা স্পেসক্রাফটের বাইরেটা ভরে উঠেছে গোলাপী আভায়। অবশ্য এডগার বেশিক্ষন তাকে ধরে রাখতেও পারেনা। মর্গান পাশে রাখা স্পেসগানটা হাতে নিয়ে এডগারের একটা পা লক্ষ করে চালিয়ে দেয়। তারপর স্পেসগানের নলটা বাকি তিনজনের সামনে ধরে বলে ওঠে, "মূর্খ মেয়ে। তোমায় যে কীকরে এএরন্টিকাল ইনস্টিটিউট এতো ভুরি ভুরি নম্বর দিয়ে পাস করলো জানিনা"। তারপর অনিসিমকে বললো, "যে একটা স্পেসগান আর এয়ারগানের পার্থক্য বোঝেনা তার সুপারিশ আমার কাছে করলে কেনো"। নিকোলাই ট্রান্সমিটারের ব্যবহার করার বৃথা চেষ্টা করলো। মর্গান বললো, "তখন ইনস্টিটিউটের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে না পারার যে মিথ্যে কাহিনীটি শুনিয়ে তোমার আর ডনের ট্রান্সমিটার দুটো নিয়েছিলাম, সেই সময়ই দুটোকে ড্যামেজ করে দিয়েছিলাম। এডগার গুলি খেয়ে একটু দূরে ছিটকে পড়েছিল। এবার সেখান থেকেই চেচিয়ে উঠলো, "ইউ ফ্রড, কেনো এমন করলে আমাদের সাথে? এখন তো মনে হচ্ছে স্পেসশাটেলে কোনো যান্ত্রিক বিভ্রাট ঘটেইনি, সেটাও ঘটানো হয়েছে আর ঘটিয়েছো তুমি। তুমিই মর্গান তুমি"। এবার মর্গান অট্টহাসিতে ফেটে পরে। তারপর বলে, "এই হাফ সিস্টার এসেই তার হাফ ব্রাদারের সাথে মিলে আমায় ফুল কেস খাওয়াতে ব্যাস্ত হয়ে উঠেছিল আর ওদের সি.পি.ইউ., মাদার বোর্ড সবই ছিল ডনষ্টন। তার বুদ্ধিতেই রিসার্চ ম্যাটেরিয়ালস আমায় না দেখিয়ে তুমি ইন্সটিটিউটে পাঠাচ্ছিলে কিড, তাইনা। আর মার্কোও তোমায় একভাবে পাহারা দিয়ে গেছে যাতে রিসার্চের ত্রিশ শতাংশ খবরই শুধু আমি পাই। কারণ বাকি সত্তর শতাংশ খবর নিয়েই কর্যুপি তো তোমার চলছিলো। কিন্তু আমিও মর্গান, দি স্পেস এক্সপার্ট মর্গান। আমায় বোকা বানানো অতো সহজ নয়। তাই মার্কোর তোমায় নিয়ে আহনবদটা আমি চিরদিনের জন্য মিটিয়ে দিয়েছি। আর ডন তো নিজের মুখেই সবটা বলেছে। ছেলেটা বেশ খুশিই ছিল বলার সময়। যায় হোক এবার তোমার পালা কিড। এবার বাইরে চেয়ে দেখো। এই প্ল্যানেটের উপরেই তো রিসার্চ করছিলে তোমরা। এবার ঝটপট নেমে পরো দেখি নিজের আবিষ্কৃত গ্রহে, ওহ উপগ্রহে"। এটা যে কোনো গ্রহ নয়, একটা উপগ্রহ মাত্র সেই ক্রেডিটটাও নিজেই নেবে তুমি কিড। বয়স তোমার যাই হোক বুদ্ধিতে তুমি অপ্রয়োজনিও চালাক। যদিও আমার সামনে তোমার এই চালাকি ধোপে টেকেনি। যায় হোক এবার নামো দেখি। কুইক"। অনিসিম বলে, "তাহলে আমিও নামবো"। মর্গান গর্জে উঠে, "শাট আপ অ্যান্ড ফলো মাই অর্ডারস্। যাকে বলেছি শুধু সেই নামবে। কাম অন কিড"। মিলানা ধীরে ধীরে স্পেসক্রাফটের দরজার দিকে এগিয়ে যায়। পিছন থেকে মর্গানের গম্ভীর স্বর শোনা যায়, "ইচ অ্যান্ড এভরি ইনফরমেশন অফ্ দিস প্ল্যানেট। একটা কোনাও ছাড়বে না কিড"। মিলানা রোবটের মত শুধু অর্ডার ফলো করে। কিন্তু নিকোলাই এবার একটা দুশ্বাদ্ধ কাজ করে বসে, অবশ্য নিজের প্রাণের বিনিময়, তাউ সে মেয়েটাকে বেরোতে দেখে ঝাঁপিয়ে পড়ে মর্গানের উপর। আর চিৎকার করে অনিসিমকেও বেরিয়ে যেতে বলে। কিন্তু অনিসিম বোধয় তার ক্রিউমেটদের ছেড়ে যেতে চায়নি, তাই নিকোলাইকে বাঁচাতে যায় কিন্তু বাধা প্রাপ্ত হয় এডগারের কথার দ্বারা। সে জোর হস্তে অনুরোধ করে অনিসিমের কাছে যাতে সে মিলানার কাছে যায়, কারণ মেয়েটা নতুন আর নাম না জানা প্ল্যানেটে অজানা বিপদ একজন লার্নারের পক্ষে কখনোই মিনিমাম রিসার্চ করে একা যাওয়া উচিত না। সে আরো বলে অনিসিমকে যে তারা অর্থাৎ সে ও নিকোলাই মর্গানকে একাই দেখে নিতে পারবে।

এরপর এক দ্বন্দ্বও সময় আর ব্যয় না করে গোলাপী উপগ্রহটিতে তার পদযুগল ফেলে দাড়ায়। উপগ্রহটিতে কিছু থাকুক আর না থাকুক ভূষভুষে কাদায় মাটি ভরাট। মিলানার যা কিছু ইনফরমেটিভ মনে হয় সব কিছুরই নোট করতে থাকে সে। কোনো কিছু রিসার্চের শুরুই হলো গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলোকে নোট করে রাখা। কিন্তু হটাৎ একটা হাত তার কাঁধে পড়তেই সে চমকে ওঠে।

এদিকে শাটেলের মধ্যে একজন বনাম দুজনের লড়াই হচ্ছে। কিন্তু এডগার তার পা নিয়ে বেশিক্ষন দাড়াতে পারছে না, ফলে সে ক্রমাগত মার খাচ্ছে। মার খেলেও তার দাপট যায়নি। তার হাতে মর্গানেরও কপালে দুতিনটে চর জুটে গেছে। আর নিকোলাই স্পেসগাণটা প্রায় কেরেই নিয়েছিল, পুরোটাই নিতে পারতো যদি মর্গান ঘরাটা না টিপে দিতো। বুলেটটা নিকোলাইর বুকের বাঁদিক ভেদ করতেই গলগলিয়ে রক্তধারা নামতে শুরু হলো। তারপর পিস্তলটা এডগারের বুকে ঠেকাতেই সে বলে ওঠে, "মার্কোকে আর শাস্তি দিয়ে কি হবে। ও তো এতক্ষনে আধমরা হয়ে গেছে। তুমি ওকে ওদের তিনজনকে ছেড়ে দাও মর্গান"। মর্গান শুধু বলে, "ওই প্রথম আমার রোশের শিকার হয়েছে, বোনকে দার করাবে বলে আমার সাথে ঝগড়া করেছিল" তারপরই ঘরাটা আবার টিপে দেয়। এডগারের নিষ্প্রাণ দেহের ওপর কিছুক্ষন বসে নিশ্বাস নিয়ে উঠে দাড়িয়ে শাটেল থেকে নেমে পড়ে। যদিও মর্গানের নামার কোনো ইচ্ছাই ছিলোনা কিন্তু উপায় নেই। প্রত্যেকটা ট্রান্সমিটার সে নিজে নষ্ট করেছে তাই তাকে নামতেই হয়। পা রাখতেই হয় অজানা উপগ্রহে। তার মাথায় আরো একটা ভয়ংকর চিন্তা কাজ করছে। সে ভাবছে যদি মিলানার নোট নিয়ে সে অনিসিম আর মিলানার সাহায্যে শাটেলটা রিপেয়ার করে ওদের এখানে রেখে রওনা দেয় পৃথিবীর উদ্দেশ্য তাহলে তো মন্দ হয়না। দুটো তরতাজা প্রাণ এই মহাশূন্যে নিজেদের ব্যবস্থা ঠিক করে নেবে। আর যদি ন করতে পারে তাহলেই বা তার কি। এমনিতেও সোভিয়েত যুদ্ধে কতো ক্ষুদে স্বাধীনতা সংগ্রামীরই তো প্রাণ গেছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। তাদের অধিকাংশের নামও তো কেউ জানেনা। আর এরা তো কএকটা চুনোপুটি এইরোনট মাত্র।

পিছন ফিরে তাকাতেই মিলানা আশ্বস্ত হয় অনিসিমকে দেখে। হেলমেটের কাঁচের ভিতর দিয়েও সে অনিসিমের চোখ দুটো চিনতে পেরেছে। তাকে বোধয় একবার জড়িয়ে ধরতে চেয়েছিল মিলানা কিন্তু অনিসিম তাকে সেই সময়টুকুও দিলোনা। সে স্পষ্ট বললো, "আমাদের এখন ছুটতে হবে। যেভাবেই হোক শাটেলের ভিতরে পৌঁছে সেটাকে স্টার্ট করতে হবে। মর্গানকে আমরা এভাবে ছেড়ে দিতে পারিনা"। মিলানা বলে, "এই কাদার মধ্যে ছোটা প্রাই অসম্ভব, আর মার্কোর কোনো খবর পেলে তোমরা?" অনিসিম বললো, "আগে শাটেলে চলো, সেখানে গিয়ে নিজের চোখেই দেখো। আসলে তুমি যেখানে আমিও তো......"। একটা কর্কশ যান্ত্রিক আওয়াজে তার কথা আর পুরো হলোনা, মিলানারও আর মার্কোর করুন অবস্থা নিজের চোখে দেখা হলোনা। তারা দেখতে পেলো তাদের ঘিরে রয়েছে শত শত সাদা অবয়ব। অবশ্য অবয়ব বলাটা ভুল হবে, জিনিসগুলোকে চুনের প্রলেপ লাগানো সাদা মূর্তি বলাই ঠিক হবে। উচ্চতায় অনিসিমের কোমরছুঁই কিন্তু তাদের বীভৎসতার শেষ এখানেই নয়। মসৃণ মুখে, কপাল আর নাকের মাঝ বরাবর একটাই আঁখি আর মুখের জায়গায় একটা অন্ধকার গহ্বর। যান্ত্রিক আওয়াজটা আবার হোলো। ওরা দুজনেই বুঝতে পারলো এবার কি হতে চলেছে। ওই চেরা গহবর কালো বিভীষিকা ছাড়া আর কিছুই না। মূর্তিগুলোকে নিজেদের দিকে ধেয়ে আসতে দেখে মিলানার হেলমেটটা খুলে দিলো অনিসিম, ফলে তার শ্বাস নিতে একটু কষ্ট হলেও নিজের স্পেসে হেলমেটটাও সে খুলে ফেলে আর শেষবারের মতো ঠোঁট ছোঁয়ায় মিলানার ঠোঁটে। মিলানা হাত আলগা করে দেয়, নোটের পাতাটা কাদায় পরে যায়, তারপর দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে।

বেশ কিছুক্ষন অতিবাহিত হয়েছে আর নোটের পাতাটা কাদায় পরে নোংরা হয়ে গেছে কিন্তু সেটা হাতে নিয়ে মর্গান ভাবে, এখানে বোকার মতো হাঁটু গেড়ে বসে থাকলে সে কিছুই জানতে পারবে না বরং ক্রাফটে ফিরে গিয়ে কাগজটা শুকিয়ে সাফ করলে তাউ কিছুটা লেখা উদ্ধার করা যাবে। কিন্তু তার একবারও মিলানা বা অনিসিমের কথা মনে হলো না। তারা উধাও না উপগ্রহের অন্য প্রান্তে আছে সেই নিয়ে তার কোনো মাথা ব্যাথা নেই। অবশ্য তার ইচ্ছাটাও তার পূরণ হলোনা, কারণ একটা কান ফাটানো যান্ত্রিক আওয়াজে সে জ্ঞ্যান হারালো।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy