দুই পৃথিবী
দুই পৃথিবী
আজ ক্লাসে ঢুকতেই যথারীতি সেই চার-পাঁচটা হাঁচির শব্দ ভেসে আসে লাস্ট বেঞ্চ থেকে। সাথে সারা ক্লাসের হো হো হাসি।
প্রথম যেদিন এদের ক্লাস নিতে এসেছিল কিংশুক, সেদিন প্রচণ্ড ঠাণ্ডা লেগেছিল। পড়াবে কি?ঘন ঘন হেঁচেই অস্থির! তারপর থেকে ক্লাসে ঢুকলেই ঐ হাঁচি আর হাসির কোন অন্যথা হয়না। নাটের গুরু লাস্ট বেঞ্চের বিশ্বজিৎ। অনেক বকা-মার-শাস্তি কিছুতেই শোধরায় নি ঐ ছেলে।
আজ মেজাজটা আগে থেকেই খারাপ ছিল কিংশুকের। নাম ডাকা শেষ করেই গম্ভীর গলায় বলেন,
"তিনদিন মিড-ডে-মিল বন্ধ বিশ্বজিতের। যদি অন্যথা হয়েছে...."
অন্যথা হলে কি বলবেন ভাবছেন কিংশুক। তার আগেই কাঁদতে কাঁদতে উঠে এসেছে বিশ্বজিৎ।
"মা তিনমাস কাজে যেতে পারেনা। দিদি কাজ করে নিজের আর মায়ের খাবারটুকু জোটায়।ইস্কুলের খাবারটুকুই আমার ভরসা স্যার। ঐ খাওয়াটুকু বন্ধ করে দেবেন না। আমি আর কোনদিন ক্লাসে দুষ্টুমি করবো না।"
বিশ্বজিৎ তো প্রায় কোকোরই বয়সী। মেয়ের খাওয়ার বায়নাক্কা সামলাতে হিমসিম খায় পরমা!
দুই পৃথিবীর সীমারেখায় দাঁড়িয়ে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে কিংশুকের!