হারানো টান
হারানো টান


জ্যোতিষের বিধান মতে চব্বিশ প্রহর হরিনাম শেষ হইলেও বৃষ্টি তো দূরাস্ত, এক চিলতে মেঘের অবধি দেখা নাই আকাশে। বাইরে প্রচণ্ড রোদের তাপ, হরিনাম শেষে ক্লান্ত মানুষগুলি নাটমন্দিরে শয়ন করিয়া বিশ্রাম করিতেছে।
সদুদের অবস্থা খানিক ভালো। এমন দুর্ভিক্ষের দিনে গাঁয়ের মানুষজন যখন সামান্য খাবারের অভাবে মারা যাইতেছি, সদুদের বাড়িতে তখনও ভাতের অভাব নাই। আজ একাদশী, রান্না ঝামেলা নাই সদুর। ভিতরের রান্নাঘর হইতে মাছ ভাজার গন্ধ পাইয়াছে। বহুবছর হইল সব ছাড়িয়াছে, মাছের গন্ধ আর সহ্য করিতে পারেনা সদু।
গতকাল হরিনাম শুনিতে আসিয়াছিল যখন মানুষটিকে দেখিয়াছিল সদু। মল্লিকদের ভাঙাবাড়ির রোয়াকে একখানা ছেঁড়া চাদর মুড়ি দিয়া পড়িয়া ছিল। কেহ কেহ বলিতেছিল প্রাণ নাই। ভালো করিয়া পর্যবেক্ষণ করিলে খুব ধীরে কঙ্কালসার বুকের ওঠানামা বোঝা যা
য়।
এই প্রখর রৌদ্রে পথঘাট শুনশান। তথাপি চারিপাশ দেখিয়া লইয়া ঘোমটা ভালো করিয়া টানিয়া আঁচলের আড়াল হইতে মাটির সরাখানা বাহির করিয়া মানুষটির মাথার নিকট রাখিল।
বেশ কয়েকবার ডাকিতে মানুষটি জাগিয়া উঠিয়া বসিল। খাবারটুকু রইল, খাইয়া নিবেন। নিজেকে ঘোমটার আড়ালে রাখিয়া অঙ্গুলি নির্দেশ করে সদু।
চলিয়া আসিবার পূর্বে ক্ষুধার্ত মানুষটার চোখে আনন্দের ঝলকানিটুকু একটিবার ফিরিয়া দেখে সদু।
আজ প্রায় তেইশ-চব্বিশ বৎসর পিতৃগৃহে। বিবাহের আট মাসের মাথায় ঘর ছাড়িয়াছিল মানুষটি। সদু তখন এগারো কি বারো। তবু মানুষটিকে চিনিতে অসুবিধা হয় নাই।
ফসলহীন রিক্ত মাঠের আল ধরিয়া গৃহের পথে চলিতেছে সদু। নদীর জল তো শুকায়েছে। গোয়ালে গঙ্গা করিয়া শুদ্ধ হতে হইবে।
ভাজদের অলক্ষ্যে আজ বহুবছর পর আমিষ হেঁসেলে ঢুকিয়াছিল সদু।