Chiranjit Saha

Classics

2.5  

Chiranjit Saha

Classics

দশমী

দশমী

2 mins
654


কাজের বাড়ি থেকে পুজোয় পাওয়া নতুন শাড়িটা পরে , রক্তজবা সিঁদুরে সিঁথি রাঙিয়ে , দুর্গাবরণের থালাটা যত্নে সাজিয়ে নিল মালতী । শারদীয়াটা ওর কাছে খুব একটা মধুর নয় । প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ঢাক নিয়ে স্বামী বাদল গেছে কৃষ্ণনগর হাতারপাড়া বারোয়ারিতে , ফিরতে ফিরতে সেই দশমীর রাত । তাই গোটা পুজোটা একরকম একাকী, গৃহবন্দি দশাতেই কেটেছে মালতীর । তবে আজ দশমীতে বরণডালা হাতে পাড়ার মণ্ডপমুখী সে । রাতে স্বামীর ফেরার কথা ; মনে তাই বাড়তি আনন্দ ,হৃদয়ের জমাট বুদবুদগুলো যেন ভেসে উঠতে চাইছে !


ভক্তি ভরে মাকে প্রণাম করে মাতৃমূর্তিতে সিঁদুর ছোঁয়াতেই লাল একটা ম্যাটাডোর এসে থামল মণ্ডপের সামনে । উপস্থিত হাতারপাড়া বারোয়ারির সভাপতি উমাপদ সেন এবং সাদা কাপড়ে ঢাকা একটি নিথর দেহ । নবমীর রাতে মণ্ডপে ঢাক বাজাতে বাজাতে হঠাৎই স্ট্রোকের শিকার বাদল ঢাকি । মৃতদেহ ও ডেথ সর্টিফিকেট নিয়ে কাশিপুরে হাজির তাই উমাপদবাবু। স্বামীর মৃত্যুসংবাদ কানে যেতে না যেতেই মালতীর হাতের বরণডালা লাভা উদগিরণের মতো ছিটকে পড়ল উঠোনে । সিঁদুরে লাল হয়ে গেছে দুর্গা মূর্তি । কোনো এক অচিন কান্নার সুর বিজয়ার বিষাদকেও যেন মলিন করে দিয়েছে। বছর তিনেক আগে বাড়ির অমতেই বাদলের হাত ধরে ঘর ছেড়েছিল মালতী, কথা দিয়েছিল আজীবন পাশে থাকার । কিন্তু আজ মালতীর পাশ থেকে বাদল সরিয়ে নিল নিজেকে । সদ্য বিধবা মেয়েটি দিগ্বিদিকজ্ঞানশূন্য হয়ে হঠাৎই ঝাঁপ দিল মণ্ডপের পাশের পুকুরে ।





কাশিপুরের একমাত্র বারোয়ারি এখন ভাসানের পথে । বাদলের চিতার আগুনও দাউদাউ করে জ্বলছে । শেষকৃত্যের সমস্ত আয়োজন করে গেছেন উমাপদবাবু নিজেই । আপন মনে কি যেন বিড়বিড় করে চলেছে মালতী ! জল থেকে তুলে পাড়ার ছেলেরাই ওকে ভর্তি করে স্থানীয় হাসপাতালে । পরশু লক্ষ্মীপুজো । ডাক্তারবাবু বলেছেন, " মালতী প্রেগন্যান্ট । " গর্ভে ওর বেড়ে উঠছে বাপ-মরা এক লক্ষ্মীমাতা ।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics