"দেবালোকে করোনা "- শারদ সংখ্যা
"দেবালোকে করোনা "- শারদ সংখ্যা
----------------------------(1)-----------------------------------
দূর্গা: উফফ আর পারিনা এত্তো কাজ , কোয়ারেন্টাইন এর নামে ছুটি নিলো ভিড়িঙ্গি -নন্দী ,
কি - ভাবে ! আমি বুঝিনা এসব ফাঁকি মারার ফন্দি!
ওগো শুনছো, সারাদিন তো একটু নড়োনা , বলি আমি আর কত করবো? হাতে হাতে করোনা
শিব : সেকি , হাতে হাতে করোনা?? আমি যে হিমালয়ে ধুয়ে এলাম হাত , ভাবলাম সব ব্যাটা করোনা হবে কুপোকাত, কাজ হয়নি ?কি বলো ?
দূর্গা: উফফ সাধে কি তোমায় ভোলা বলে! নিজের খেয়ালে চলো !!! সারাদিন খালি খাওয়া আর ঘুম - ঘুম আর খাওয়া , এভাবেই তো দিনগুলো সব হাওয়া,
রূপচর্চা তো উঠেছে মাথায় , বলি ঝি এর কাজ কি আমায় শোভা পায়?
এই! আপনার কি চাই? এমনিতেই মন মেজাজ ভালো নাই |
রিপোর্টার : খোঁজখবর নিচ্ছি সব কেমন চলছে এদিক সেদিক, নমস্কার আমি একজন সাংবাদিক |
corona প্রকোপেও আমি অটল সৈনিক, অফিস আমার নারোদা দৈনিক |
দূর্গা: আর বলবেন না কাজ করে করে হিমশিম, গা - হাত - পা করে ঝিমঝিম | কবে যে যাবে হতভাগা করোনা, আমার বুঝি আর এবার বাপের বাড়ি যাওয়া হলোনা |
রিপোর্টার: না না ও কথা বলবেন না, বছরে তো ওই একবারই .. , ট্যুরটা ক্যানসেল করবেন না |
দূর্গা: আর কি যাবো , লোকে দ্যাখে তো খালি আমার রুপসজ্জা - গয়নাগাটি , ওসব এবার সেগুড়ে বালি
বাসন মেজে ঘর ঝেড়ে রূপের যা হাল, লোকে দেখে চিনতে পারবেনা বলবে এ দূর্গা না কালী???
শিব: রাগ করছো কেন পার্বতী ? বলোনা কি হেল্প করতে হবে? কেটে দেব আলু ,বেগুন বরবটি .....
দূর্গা: থাক থাক ! বাইরের লোকের সামনে আর করতে হবেনা ঢং, গিরিগিটি তো নও যে ক্ষনে ক্ষনে বদলাও রং
রিপোর্টার: এই রে কোন্দল বুঝি একেই বলে , মানে মানে কাটি এখান থেকে ,
এসব শুনলে আবার আমার... ও মাগো ... কান জ্বলে !
-------------------------(2)--------------------------------------
রিপোর্টার: মা লক্ষ্মী , আপনার তো অনেক ফ্যান , মন্দা ঠেকাতে তাদের উদেশ্যে যদি কিছু উপদেশ দ্যান
লক্ষ্মী : ধুর ,সবাই খালি আমাকে ডাকে বলে দে মা কিছু টাকা,
এদিকে আমার যে কি হাল আমি জানি পকেট পুরো ফাঁকা
যত রাজ্যের টাকা তো সব যায় প্রধান মন্ত্রীর ভাণ্ডারে,
অথচ আমি কিনা মা লক্ষ্মী কোষাগার আমার আন্ডারে.... (কান্না )
রিপোর্টার : আহা , কাঁদবেন না, কান্না দেখলে আমার মনে পরে ক্রশ -বিদ্ধ যীশু ,
এই নিন আপনি বরঞ্চ রাখুন কটা টিসু |
---------------------------(3)-------------------------------------
ইন্দ্র : নৈস্বর্গ না নেই-স্বর্গ নেটওয়ার্ক বোঝা দায়, এভাবে ইন্টারনেট ছাড়া কি বাঁচা যায় ?? এই আসে এই যায় এইতো এদের টাওয়ার .....
রিপোর্টার: কি হয়েছে স্যার?
ইন্দ্র: কি আর হবে .. হয়েছে যা হওয়ার | সোশ্যাল ডিস্ট্যানসিং এর জেরে মেনকা - উর্বসীদের আসাও মানা, আহা সেসব ইতিহাস কতকাল হয়না নাচা - গানা
তবু মন্দের ভালো দিন কাটছিলো ইউ টিউব , ইন্টারনেটে ,
ব্যাস কাল থেকে সেটাও মরতে বসেছে, মেজাজটাই গেছে ঘেঁটে |
আচ্ছা মর্তে যেন কিসব চলে -
রিপোর্টার: লোকে বলে - vodafone, airtel, জিও
ইন্দ্র: হ্যা - হ্যা ,সবাইকে এবার দেবো বলে, এদের ছাড়ো ওদের নিও |
ছিঃ ছিঃ জীবনটা একেবারে শুকনো সুপারী, কোথায় শীত, গ্রীষ্ম ,বসন্ত ....
আমার না আর ভালো লাগছেনা , আপনি এবার আসুনতো
---------------------------(4)-------------------------------------
নারদ : নারায়ণ নারায়ণ...উনি তো নিয়েছে শয়ন ,
এদিকে আমার ঘোড় বিপদ, কোথা থেকে যে আসলো এই আপদ,
দেবরাজের করা বিধান, মানতে হবে আইসোলেশান | হুঁহ ....
এই বেটা নচ্ছার এখানে কি চাই ? ঘুরে ঘুরে আমার ভাত মারছিস, তোদের আর কাজ নাই??
রিপোর্টার: আমরা যা করছি তা অনভিপ্রেত, মাপ করবেন স্যার আপনিই আসল আমরা ডুপ্লিকেট!
নারদ: থাক আর মারতে হবেনা তেল , খুব জানি তোমাদের খেল....
রিপোর্টার: হে হে! কি যে বলেন, নারোদা দৈনিক বিটকেল - জঘন্য, আপনার কাছে অতি নগন্য |
স্যার? আপনি এতো অস্থির কেন ? মনে হচ্ছে কিছু হয়েছে যেন ?
নারদ: হয়েছেই তো | আমার কি আর এভাবে ঘরে বসে থাকলে চলে ? আমি হচ্ছি নারদ, খবর রাখি, একটা মাছিও যদি গলে !
চারিদিকে এত খবরের গোলাগুলি, করোনার বার বাড়ন্ত, হায় কপাল! এর মধ্যে আমার কিনা বন্ধ বুলি, TRP পড়ন্ত |
রিপোর্টার: দুঃখ করবেন না স্যার , আমরা তো ছেলে -ছোকরা, এই কদিন ; corona মিটলে , নারায়ণ নারায়ণ , ফিরবে আপনার সুদিন |
-------------------------(5)--------------------------------------
যমরাজান: আগে পাতা ভোরতোনা ভাবতাম কখন কেস আসে , এখন কয়েক লক্ষ মাসে মাসে
ওরে বাবা আরো কত্ত নাম লিস্ট এ , একটু লিখতে তো পারো জিস্ট এ,
একটার জায়গায় দুটো নিচ্ছি , ওভারটাইম ডিউটি দিচ্ছি
ওহে চিত্রগুপ্ত , করোনায় কি আমায় করবে বিলুপ্ত ?
চিত্রগুপ্ত : ছিঃ! ছিঃ! আপনি হচ্ছেন যমপুরীর রাজ , আমি সামান্য কেরানি, খাতা লেখা আমার কাজ
অঙ্কে আমি বরাবরই খুব পাকা, হিসেব আমার নির্ভুল, ব্যাটা করোনা এসে ধরিয়ে দিলো, সবই ছিল ভুল! (স্বগক্তি )
বয়স তো আর কম হলোনা , বোধহয় পড়েছে ছানি , একটু যে গরমিল হয়েছে সেটা আমিও মানি |
অবস্থা ভারী বেগতিক ,সামলাবো কি উপায়?? বুড়ো বয়সে চলবে কি করে চাকরিটা যদি যায়! (স্বগক্তি )
রিপোর্টার: স্যার আস্তে পারি?
যমরাজান: উঃ! কাকে রাখি - কাকে ধরি , আমি পড়েছি বিপাকে , এর মধ্যে আবার আমায় কে ডাকে |
রিপোর্টার: অনেকদিন তো আমাদের ওদিকে যাচ্ছেন না, তাই হয়তো চিনতে পারছেন না... আমি হলাম .....
যমরাজান: খুব চিনেছি , খুব চিনেছি ,নেহাত একটু ব্যাস্ত, নাহলে তোমারও দিন গুনেছি!
রিপোর্টার: হে হে সে আর বলতে , তা আপনি যা ব্যাস্ত , চলুন না কথা বলি চলতে চলতে....
যমরাজান: না থাক , বলো তোমার কি প্রশ্ন আছে মনে, তবে এমন কিছু জানতে চেওনা যা কেও না জানে
রিপোর্টার: চারিদিকে কোরোনার যা ঠেলা, কি মনে হয় বসবে ভোটের মেলা?
যমরাজান: হেঃ ! এদিকে চলছে যমে - মানুষে টানাটানি , তুমি কি না শুনতে চাও ভোটের ভবিষ্যৎবাণী
দেখো জানিনা কটা পড়বে ভোটের কালি, তবে আমার হিসেব corona-টা মরবে দিওয়ালী
খবরদার! এসব আবার ছেপে বোসোনা কাগজে, অবশ্য তোমাদের যা ঘিলু কিছুই ঢোকেনা মগজে !
*****ফোনে মেসেজ *******
যমরাজান: একে তো মহামারি তার মধ্যে একি কেলেঙ্কারী,
ধুর আজ ও বাজলো বারোটা, নাও গুপ্ত তুমিই গেলো আমার সাধের পরোটা |
চিত্রগুপ্ত: আমার তো আবার ওসব বারণ, পেটে সয়না, গ্যাস -অম্বল; সকালে দু-মুঠো মুড়ি আর দুপুরে পাতলা ঝোল |
যমরাজান: ওহ হ্যা, তাও তো ঠিক, আমার কপালেই যত রাজ্যের বেল্লিক ?
যমদূতেরা নাকি করবেনা কাজ! করছে মস্ত বিবাদ,
এমন করলে তো ভারী মুশকিল , আমার হবে অপবাদ |
একে লোক কম, কাজের কত প্রেসার, এভাবে কিভাবে চলে?
না না, ব্যাপারটা মেটাতে হবে যেকোনো মন্ত্রবলে
মাইনে না বাড়ালে লাগাতার লড়বে , নাহঃ এখুনি যেতে হবে মর্তে,
ওহে ছোকরা খবরটা ছাপলে ঝামেলায় পড়বে, তুলে নেবো যেকোনো শর্তে
রিপোর্টার: চিন্তা করবেন না আমি কোনো ঝামেলায় থাকিনা, উড়ো খবর ভুয়ো খবর ভুলেও ছাপিনা | আপনি এ ব্যাপারে থাকতে পারেন নির্বিবাদ , চলি তালে, সময় দেবার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ |