দ্বিতীয় বিশ্ব
দ্বিতীয় বিশ্ব
দ্বিতীয় বিশ্ব
-নূর এ তাহির আরাবি
এক
‘কালই যাচ্ছি আমি,’ ফোনে বন্ধুর সাথে কথা বলছেন হ্যারল্ড গিম্পসন।
‘ফর্টারল্যান্ডে এর আগে কখনো গিয়েছেন আপনি?’ জিজ্ঞেস করলেন ডেভিড।
‘না, তা যাইনি,’ বললেন হ্যারল্ড। ‘এই প্রথম যাচ্ছি।’
‘তাহলে পরে কথা হচ্ছে,’ বললেন ডেভিড।
‘আচ্ছা, রাখি,’ ফোন কেটে দিলেন হ্যারল্ড।
চেয়ারে গা এলিয়ে দিলেন হ্যারল্ড। চোখ বন্ধ করে ভাবতে থাকলেন কি কি করবেন ফর্টারল্যান্ডে গিয়ে। হঠাৎ কেমন একটা অদ্ভূত অনুভূতি হতে লাগল তার। চোখ মেললেন। তার হাতে ধরে রাখা কলমটা দেখে চমকে উঠলেন। কলমটা নীল ছিল। কিন্তু এখন হলুদ হয়ে গেছে। সামনের টেবিলটাতেও পরিবর্তন দেখতে পেলেন তিনি। টেবিলটা স্টীলের নয়, কাঠের। মাথা ঘুরে উঠল তার। চোখজুড়ে ভর করল ঘুম। গভীর ঘুমে হারিয়ে গেলেন তিনি।
তার ঘুম ভাঙল পাখির ডাকে। হাতঘড়ি দেখেই চমকে উঠলেন। প্রথমত, এটা তার ঘড়ি নয়। দি¦তীয়ত, সময় দেখাচ্ছে সাতটা ত্রিশ। তার ফ্লাইট আর মাত্র বিশ মিনিট পরে। তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিলেন তিনি। মোবাইলে অ্যালার্ম বাজল না কেন, বুঝতে পারলেন না প্রথমে। পরে আবিষ্কার করলেন, এটা তার মোবাইল নয়। ভীষণ চমকে গেলেন হ্যারল্ড। তবে এইসব নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে সোজা ব্যাগপ্যাক নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। বাইরেও বেশ কিছু পরিবর্তন দেখতে পেলেন। থানার জায়গায় হসপিটাল। কারখানার জায়গায় মার্কেট। এয়ারপোর্টে কিভাবে পৌছলেন, বলতে পারবেন না। তাড়াতাড়ি এনট্র্যান্স দিয়ে ঢুকলেন। প্লেন ছাড়তে আর বাকি তিন মিনিট। হতাশায় নিজের চুল ছিড়তে ইচ্ছা করল তার। তবুও অফিসের দিকে দৌড় দিলেন। তাড়াতাড়ি পাসপোর্ট তুলে দিলেন অফিসারের হাতে। পাসপোর্টটা দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালেন অফিসার।
‘কি হয়েছে?’ সংক্ষেপে জিজ্ঞেস করলেন হ্যারল্ড।
‘আপনি কি তামাশা করতে এসেছেন?’ প্রশ্ন করল অফিসার।
‘মানে?’ কিছুই বুঝলেন না হ্যারল্ড। ‘আপনি না তামাশা করছেন। ফ্লাইটের আর একটু বাকি।’
‘মাইন্ড ইওর ল্যাঙগুয়েজ,’ সাবধান করল অফিসার। ‘কোন দেশে যাবেন আপনি?’
‘ফর্টারল্যান্ড,’ জবাব দিলেন তিনি।
‘আবার মশকরা,’ বিরক্ত হলো অফিসার। ‘এই নামে তো কোনো দেশই নেই।’
‘অ্যাঁ?’ বোকা হয়ে গেলেন হ্যারল্ড। স্পষ্ট শুনতে পারছেন প্লেন ছাড়ার শব্দ।
‘আপনাকে জরিমানা করতে পারি আমি,’ বলল অফিসার।
‘আমার অপরাধ?’ জিজ্ঞেস করলেন হ্যারল্ড।
‘বোকা বানানো,’ কঠিন কন্ঠে বলল অফিসার। ‘এখনই বাসায় যান।’
বোকা বোকা দৃষ্টিতে অফিসারের দিকে তাকালেন হ্যারল্ড। সেই ঘুমের পর থেকে এসব কি ঘটছে, কিছুই মাথায় ঢুকছে না তার। হঠাৎ মাথাটা ভারি হয়ে এল। ঢলে পড়লেন মেঝেতে। হারিয়ে গেলেন গভীর ঘুমে।
*
ঘুম ভাঙলে নিজেকে ওই চেয়ারে আবিষ্কার করলেন তিনি। খেয়াল করে বুঝতে পারলেন, আবার আগের মতো হয়ে গেছে আশপাশ। সম্ভবত অন্য কোনো দুনিয়ায় চলে গিয়েছিলেন তিনি। ঘড়ি দেখলেন। আরও আধঘন্টা মতো আছে। তৈরি হয়ে বেরিয়ে এলেন বাইরে। দশ মিনিটের মাথায় পৌছলেন তিনি। তারপর? আরকি, সোজা রওয়ানা হলেন ফর্টারল্যান্ডের উদ্দেশ্যে।
(শেষ)
